➤ ভরা মৌসুমেও বাড়তি দাম চালের বাজারে
➤ সপ্তাহের ব্যবধানে সবজিতে দাম বেড়েছে ১০-২০ টাকা
➤ বেগুন-পেঁয়াজে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে
বছর জুড়ে বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার। সরকার বিভিন্ন সময় নানা কর্মসূচি নিলেও তারা কোন প্রভাব থাকে না বাজারে। ঈদের পর হঠাৎ করে আবারও নতুন করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে বাজারে। সবজি থেকে শুরু করে নিত্যপণ্যের সবকিছুর দাম বাড়তি। ভরা মৌসুমে সবজির পাশাপাশি বাড়তি দাম চালের বাজারে। সরবরাহের ঘাটতি ও পরিবহণের সমস্যা দেখিয়ে বাজারে নতুন করে দাম বাড়াচ্ছে ব্যবসায়ীরা। সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের সবজিতে দাম বেড়েছে ১০-২০ টাকা। গত সপ্তাহের তুলনায় ১০-২০ বেড়ে বেগুন পেঁয়াজে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে। তবে ভালোই বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম, ঈদের পরে এই পণ্যের দাম ছিল প্রায় ৪০০ কাছাকাছি । তবে বর্তমানে কিছুটা কমে বর্তমান বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০০টাকায়। সবজির পাশাপাশি তবুও চড়া চাল, মাছ, ব্রয়লার মুরগি, ডিম, আলু, শসা, টমেটোসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যের দর।
ব্যবসায়ীদের দাবি, ঈদের ছুটির কারণে কৃষকরা ক্ষেত থেকে সবজি তুলছেন না। ব্রয়লারের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ কম। সে জন্য পণ্যগুলোর দাম বাড়তি। সরবরাহ স্বাভাবিক হলে দাম কমে আসবে। ক্রেতাদের অভিযোগ, সিন্ডিকেট করে প্রতিনিয়ত সবকিছুর দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মালিবাগ বাজার, রামপুরা কাঁচাবাজার, বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
লাগামছাড়া সবজির দাম : সপ্তাহের ব্যবধানে অধিকাংশ সবজির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা করে বেড়ে গেছে। ৬০-৮০ টাকার বেগুন ৮০-১০০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। ঈদের পরপর কাঁচা মরিচ ৪০০ কাছাকাছি গেলেও বর্তমানে তা ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৪০-৫০ টাকার পটোল, ঝিঙে ও ধুন্দুল ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। ৪০-৫০ টাকার করলা এখন ৭০-৮০ টাকা। ঈদের পর থেকে বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় ৬০-৮০ টাকার শসা ১৪০-১৬০ টাকা, ২০-৩০ টাকার লেবুর হালি ৪০-৫০ টাকা। এভাবে অধিকাংশ সবজি বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। পেঁপে ৫০ টাকা, টমেটোর কেজি ১২০ টাকা। ঢ্যাঁড়শ ৪০-৫০, মিষ্টিকুমড়া ৩০-৪০, সজনে ডাঁটা ৮০-১২০ টাকা কেজি। লাউ ও চালকুমড়ার পিস ৬০-৭০ টাকা, লাল শাক, পাট ও কচু শাকের আঁটি ১৫-২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে বলে খুচরা বিক্রেতারা জানান। আগামী সপ্তাহ থেকে শসা ও লেবুর দাম কমে আসতে পারে বলে ধারণা বিক্রেতাদের।
বাজারে অতিরিক্ত দামের কারণ জানতে চাইলে কাওরান বাজারের ব্যবসায়ী আলী আহমদ বলেন, ঈদের সময় থেকে এখন পর্যন্ত রাস্তায় যানজট, ট্রাকে করে পরিবহন করার ভাড়া অনেক বেশি, সে কারণে ঢাকায় সরবরাহ তুলনামূলক কম আসছে। যার ফলে আমাদের দাম বাড়তি রাখতে হচ্ছে।
বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আমিন উল্লাহ্ বলেন, কয়েকদিন টানা মাংসা খাওয়া হয়েছে। এখন সবজি কেনা দরকার। কিন্তু সব সবজির দামই বাড়তি। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে দাম প্রতিনিত বেড়ে যায়। সরকারের তদারকির কোন খোঁজ খবর নাই। আমাদের মত সাধারণ মানুষের জীবনযাপন করতে হাফিয়ে যাচ্ছি।
অন্যদিকে, আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে ৬০-৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৮-৭০ টাকা কেজি দরে। ভালো মানের আলুর দাম কেউ কেউ ৭৫ টাকা কেজিও হাঁকছেন। বিক্রেতারা বলছেন, আলুর দাম সামনে আরও বাড়তে পারে। আদা ও রসুনের দামও ঈদের আগে হু হু করে বেড়েছিল। বর্তমানে তা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ঈদের আগে আদার দাম কেজিপ্রতি ৩৩০-৩৫০ টাকা উঠলেও তা কমে এখন ২৮০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রসুনের দামও কেজিতে কিছুটা কমেছে। ঈদের আগে রসুন বিক্রি হচ্ছিল ২৫০ টাকায়, যা বর্তমানে ২২০-২৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমানে পেঁয়াজের কেজি ৮৫-৯০ টাকা। ঈদের আগে মুরগির দাম কিছুটা কমলেও তা বাড়তে শুরু করেছে। ঈদের আগে ও পরে ব্রয়লার মুরগি ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কিনতে হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকায়। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৫০ টাকা কেজি দরে। বাজারে দেশি মুরগি খুবই কম, দামও চড়া। দেশি মুরগির কেজি ৭৫০-৮০০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের মুরগি বিক্রেতা আজিজ বলেন, ‘যে দরে এনেছি, সেই দরের সঙ্গে সীমিত লাভ করে বিক্রি করছি। দাম এখন তুলনামূলক কম। আগামী সপ্তাহ থেকে মুরগির চাহিদা বাড়বে, দামও বাড়বে।’ কোরবানির ঈদের পর গরুর মাংসের চাহিদা কম। তবে দামে হেরফের নেই। ৮০০ টাকা কেজি দরেই গরুর মাংস বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। দর-দাম করলে ৫-১০ টাকা কম রাখছেন। মুরগি ও মাংসের বাজারে কেনাবেচা কম হলেও মাছের বাজারে ক্রেতাদের ভিড় অনেক। ঈদের পর মাছের চাহিদা বেড়েছে। ফলে দামও কিছুটা বেশি। বাজারে এক থেকে দেড় কেজি ওজনের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি। এর চেয়ে বড় রুই কিনতে হলে ৩৫০-৩৮০ টাকা গুনতে হবে ক্রেতাকে। ইলিশের দাম বাড়তিই রয়েছে। ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম কেজিপ্রতি ১৪০০ টাকা হাঁকছেন বিক্রেতারা। এক কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ টাকা দরে। কাতল মাছের কেজি ৩২০-৩৩০ টাকা, পাঙ্গাশ ২০০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, চিংড়ি ৬০০-৮০০ টাকা, বোয়াল ১০০০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, বি আর-আটাশ ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা, পাইজাম ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। মাঝারি মানের চিকন চালের কেজি ৭৫ টাকা। আর ভালো মানের চিকন চালের কেজি ৮৫ টাকা। বাজারগুলোতে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ডাল। দেশি ও আমদানি করা মসুর ডাল ১৫০ টাকা, আমদানি করা মোটা ডালের কেজি ১২০ টাকা, ছোলার ডাল ১৩০ টাকা, অ্যাংকর ডালের কেজি ৯০ টাকা।


























