এতদিন দূর থেকে পরস্পরকে বাক্যবাণ ছুড়েছেন। এবার শুরু হচ্ছে মুখোমুখি লড়াই। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম বিতর্কে অংশ নিচ্ছেন। আগামী ২৭ জুন আটলান্টায় ওই বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। চলতি বছরের নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনী প্রচার এখন তুঙ্গে। জনমত জরিপগুলোতে এখন পর্যন্ত বাইডেন-ট্রাম্পের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। উভয় প্রার্থী বিভিন্ন সমাবেশে পরস্পরকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে বয়স নিয়ে।
এই বিতর্ক নিয়ে নিউইয়র্কের বিংহামটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ও রাজনীতি বিশ্লেষক ডোনাল্ড নিম্যান বলেন, এই বিতর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই বিতর্কে জনগণের পরিচিত দুই প্রার্থী নিজেদের আবার নতুন করে চেনানোর সুযোগ পাবেন। তাদের জনগণ ভালো করেই চেনে কিন্তু গুরুত্ব দিচ্ছে না। তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, রাজনীতির প্রতি আগ্রহী ব্যক্তি ছাড়া আগাম এই বিতর্ক সাধারণ মানুষকে কতটা আকৃষ্ট করতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিম্যান।
৯০ মিনিটের ওই বিতর্কে ট্রাম্প তার ৮১ বছর বয়সী প্রতিদ্বন্দ্বীর মানসিক সক্ষমতা নিয়ে আক্রমণের সুযোগ নেবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ট্রাম্পের বয়সও ৭৮ বছর। তাই বয়স নিয়ে বাইডেনও ট্রাম্পকে খোঁচা দিতে ছাড়েন না। বিতর্কে বাইডেন ফৌজদারি মামলা নিয়ে ট্রাম্পকে আক্রমণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগেই ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নন বলে মন্তব্য করেছিলেন বাইডেন।
২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে যৌন সম্পর্কের বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখতে পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়া ও ব্যবসায়িক নথিপত্রে এ-সংক্রান্ত তথ্য গোপন করায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় গত মাসের শেষ দিকে ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করে নিউইয়র্কের একটি আদালত। আগামী ১১ জুলাই ওই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্দলীয় বিতর্ক আয়োজক কমিশন সিপিডি সেই ১৯৮৮ সাল থেকে নির্বাচনে বিতর্কের আয়োজন করে আসছে। এবারও তার অন্যথা হচ্ছে না। আগামী বৃহস্পতিবার প্রথম বিতর্কের আয়োজন করেছে সিএনএন। দ্বিতীয় বিতর্কের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর। এবিসি ওই বিতর্কের আয়োজন করেছে।
বিতর্কে নারীদের গর্ভপাতের অধিকার, মূল্যস্ফীতি এবং সীমান্তে নিরাপত্তা ও অভিবাসনের মতো বিষয়গুলো উঠে আসবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ সালে ট্রাম্প-বাইডেন সর্বশেষ বিতর্কগুলো রীতিমতো ঝগড়ায় পরিণত হয়েছিল। বাইডেনের বক্তব্য দেওয়ার সময় ট্রাম্প বারবার তাতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে একপর্যায়ে বাইডেন বলে ওঠেন, ‘আপনি কি মুখ বন্ধ রাখতে পারেন?’ এবার অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা এড়াতে আয়োজকদের হাতে অনেক ব্যবস্থা থাকবে। তারা বক্তা ছাড়া বাকিদের মাইক্রোফোন বন্ধ রাখতে পারবেন।
এদিকে নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে জো বাইডেনকে ছাড়িয়ে গেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তথ্য অনুযায়ী, গেল দুই মাসে প্রায় ৮১ মিলিয়ন ডলার অনুদান সংগ্রহ করেছেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। যার মধ্যে পাঁচ কোটি ডলার দিয়েছেন মার্কিন ধনকুবের টিমোথি মেলন। ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার প্রচারণার জন্য জনসংযোগের পাশাপাশি তহবিল সংগ্রহেও দেখা যাচ্ছে তার চনমনে ভাব।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাত্র দুই মাস আগেও তহবিল সংগ্রহে ট্রাম্পের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেয়ার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তহবিল সংগ্রহ বেড়ে গেছে সাবেক এই প্রেসিডেন্টের। ট্রাম্প গত দুই মাসে প্রায় আট কোটি ১০ লাখ ডলার অনুদান সংগ্রহ করে বাইডেনকে ছাড়িয়ে গেছেন। জুন মাসের শুরুর হিসাব অনুযায়ী বাইডেনের হাতে তহবিল ছিল ২১ কোটি ২০ লাখ ডলার এবং ট্রাম্পের সংগ্রহে একই সময়ে ছিল ২৩ কোটি ৫ লাখ মিলিয়ন ডলার।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের তথ্যমতে, টিমোথি মেলন নামের এক ধনকুবের ট্রাম্পের প্রচারণা তহবিলে পাঁচ কোটি ডলার দান করেছেন, যা ২০২৪ সালের নির্বাচনের এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অনুদান বলে ধারণা করা হচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, কয়েকজন ধনী দাতা রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মূল সমর্থক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। ডেমোক্র্যাটিক পদপ্রার্থী জো বাইডেনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পকে সমর্থন দিতে কয়েক মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছেন তারা। অন্যদিকে, বাইডেনকে প্রায় দুই কোটি ডলার দান করেছেন নিউইয়র্ক সিটির সাবেক মেয়র মাইকেল আর ব্লুমবার্গ।


























