➤ ইইউর ৮১টি গণমাধ্যমে রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা
➤ ইইউ সদস্য হওয়ার পথে আরো এগোলো ইউক্রেন
➤ ২ রুশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
রাশিয়ার হামলা শুরু হওয়ার পর দুই বছর অতিবাহিত হয়েছে। বহু ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছে ইউক্রেন। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি এলাকা হাতছাড়া হয়েছে। দেশটির হাজার হাজার সৈন্যের মৃত্যুও হয়েছে। এমন দুর্দশার মধ্যে অস্ত্র সরবরাহ, কূটনৈতিক সহায়তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পশ্চিমা মিত্ররা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির পাশে থাকলেও সেনা পাঠাতে রাজি হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র এতদিন বলে এসেছে যে, তাদের সৈন্যরা ইউক্রেনযুদ্ধ এড়িয়ে চলবে। এমনকি মার্কিনিদের সেখানে ভ্রমণ করার বিষয়েও সতর্কতা জারি রাখা হয়েছে। সেই সিদ্ধান্তে বড় পরিবর্তন আনছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন।
হোয়াইট হাউস ইউক্রেনে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে বলে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত চার মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে হোয়াইট হাউসের সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট ভলোদেমির জেলেনস্কি প্রশাসনের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে এবং তাদের সেনাবাহিনীর হাত সুসংহত করবে। তবে মার্কিন সেনারা ইউক্রেনে গিয়ে সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে নামবেন না বা রুশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত হবেন না। তারা আমেরিকান বিভিন্ন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করবেন। সেখানে মোতায়েন করা মার্কিন বিভিন্ন অস্ত্র দেখভাল করবেন এবং নষ্ট হয়ে যাওয়া সমরাস্ত্র ও সামরিক যান মেরামত করবেন। যাদের বলা হচ্ছে মিলিটারি কনট্রাক্টর তবে বিষয়টি এখনও কর্মকর্তাদের পর্যায়েই রয়েছে। নথিতে চূড়ান্ত স্বাক্ষর করেননি প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তবে একবার সিদ্ধান্তটি অনুমোদন হওয়ার পর এ বছরই তা কার্যকর হতে পারে। একই সঙ্গে প্রথমবারের মতো ইউক্রেনের অভ্যন্তরে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হতে পারে আমেরিকান কোম্পানিগুলোকেও।
ধীরে ধীরে ইউক্রেন যুদ্ধে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে দেশটির পশ্চিমা মিত্ররা। সম্প্রতি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রুশ স্থাপনায় হামলার অনুমতি দেয় তারা। অনেক ভারী ও আধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করলেও সেগুলো পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ইউক্রেনের বাইরে। আবার যুদ্ধের ময়দানে অস্ত্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর সেগুলো সীমান্তবর্তী পোল্যান্ড, রোমানিয়াসহ অন্যান্য ন্যাটো সদস্যভুক্ত দেশে নিয়ে মেরামত করা হয়। এ ছাড়া যেগুলো পরিবহন করা কষ্টসাধ্য, সেগুলো মার্কিন সামরিক কনট্রাক্টররা ভিডিও কলের মাধ্যমে বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বার্তা পাঠিয়ে সংস্কার করার বিষয়ে সহায়তা দিয়ে আসছিলেন। তবে এসব প্রক্রিয়া অনেক সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। একই সঙ্গে শতভাগ ত্রুটিমুক্ত হওয়া নিয়েও শঙ্কা থেকে যায়। এমন প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনে সরাসরি সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তের খবর এলো।
ইইউর ৮১টি গণমাধ্যমে রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ৮১টি গণমাধ্যমে প্রবেশাধিকার ব্লক করার ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। গত মঙ্গলবার ব্রাসেলস রাশিয়ার বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের সম্প্রচার নিষিদ্ধ করার পর ‘প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা’ হিসেবে এ পদক্ষেপ নিল মস্কো। এর আগে মে মাসে ইইউ বলেছিল, তারা ইউক্রেনে মস্কোর আক্রমণকে ‘এগিয়ে নিতে সহায়তা ও সমর্থনের’ জন্য ক্রেমলিন নিয়ন্ত্রিত চারটি গণমাধ্যমে প্রবেশাধিকার ব্লকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইইউর এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এ ঘোষণা দিল মস্কো। মস্কোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ব্লক হওয়া গণমাধ্যমগুলোর তালিকা প্রকাশ এবং বিধি-নিষেধের জন্য ব্রাসেলসকে দায়ী করেছে। তারা এ পদক্ষেপকে ইইউর বিরুদ্ধে পাল্টা নিষেধাজ্ঞা হিসেবে বর্ণনা করেছে। এছাড়া ইইউর নিষেধাজ্ঞাকে ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে নিন্দা করে রাশিয়া বলেছে, ইইউর সিদ্ধান্তগুলো মস্কোকে একই ধরনের পাল্টাব্যবস্থা নিতে বাধ্য করছে। তবে রুশ গণমাধ্যমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলে রুশ নিষেধাজ্ঞাগুলোও ‘সংশোধন’ করা হবে বলে জানিয়েছে রাশিয়া।
ইইউ সদস্য হওয়ার পথে আরো এগোলো ইউক্রেন
ইইউ সদস্য হওয়ার পথে ইউক্রেনের সঙ্গে ব্রাসেলসের আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হচ্ছে। রাশিয়ার হামলার মাঝেই কিছু সংস্কার শুরু করে ২০৩০ সালের আগেই সব পূর্বশর্ত পূরণ করতে চায় দেশটি। প্রায় আড়াই বছর ধরে রাশিয়ার হামলা মোকাবিলা করে চলেছে ইউক্রেন। সে দেশের সরকার যুদ্ধ-পরবর্তী ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে আগে থেকেই পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সমন্বয় করে চলেছে। সামরিক জোট ন্যাটোর পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ণ সদস্যও হওয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে ইউক্রেন। নিজস্ব ভূখণ্ডের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ রাশিয়ার দখলে থাকায় এখনই ন্যাটো সদস্য হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তবে ইইউ সদস্য হওয়ার পথে যথেষ্ট দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে সে দেশ। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার হামলা শুরুর পরেই ইউক্রেন ইইউ-তে যোগদানের আবেদন করেছিল।
গত মঙ্গলবার ইইউ কমিশন ইউক্রেন ও মলদোভার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু করল। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের তিন দেশ লাটভিয়া, লিথুয়েনিয়া ও এস্টোনিয়া আগেই ইইউ-তে যোগ দিয়েছে। এবার আরো দুটি দেশের সেই আবেদনের ভিত্তিতে জটিল প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে জর্জিয়াও প্রার্থী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
২ রুশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিসি) রাশিয়ার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং নেতৃস্থানীয় রুশ জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমভের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। ইউক্রেন অভিযানে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। গত মঙ্গলবার আদালত বলেছেন, শোইগু এবং গেরাসিমভ দু’জনই দুটি যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী। বেসামরিক বিভিন্ন নিশানায় হামলা পরিচালনা করে ওই সব লক্ষ্যবস্তুসহ বেসামরিক নাগরিকদের চরম ক্ষয়ক্ষতি ডেকে এনেছেন তারা। তাছাড়া, মানবতার বিরুদ্ধেও তারা অপরাধ করেছেন বলে অভিযোগ আছে।


























