◉ আয়করে ধনীদের ছাড়, সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশই থাকছে
◉ প্রস্তাবিত বাজেটকে গতানুগতিক হিসেবেই দেখছেন রাজনীতিবিদরা
◉ অর্থনীতির চলমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় নতুনত্ব আনা হয়নি
⤷ একটি ধারাবাহিক বাজেট পাস হতে যাচ্ছেÑ এমএ মান্নান, সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী
২০২৪-২৫ অর্থবছরের ঋণনির্ভর বাজেট পাস হচ্ছে আজ। প্রস্তাবিত বাজেটের উপর নানা আলোচনা-সমালোচনার পরও থাকছে না বড় কোনো পরিবর্তন। নেই গুরুত্বপূর্ণ কোন সংশোধনীও। রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সমালোচনা করেছেন। তাতেও কাজ হয়নি।
এদিকে সরকারের আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য অর্থবিল জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। গতকাল স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে কণ্ঠভোটে পাস হয় এ বিলটি।
এদিন বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদের। পরে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রণীত বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
এ সময় অর্থবিলের ওপর কয়েকজন সদস্যের আনা কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। বাকিগুলো কণ্ঠভোটে বাতিল হয়ে যায়। পরে তিনি অর্থবিল পাসের অনুরোধ জানালে স্পিকার তা ভোটে দেন। এ সময় উপস্থিত সদস্যদের কণ্ঠভোটে পাস হয় অর্থবিল।
জানা গেছে, এবারের বাজেটে উত্থাপিত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি। বিষয়টি নিয়ে সংসদের ভেতরে-বাইরে নানা মহলে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হলেও এ প্রস্তাবে কোনো পরিবর্তন আনা হবে না। এছাড়া, বাজেট প্রস্তাবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের ওপর ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স বসানোর কথা বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী। এতে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আপত্তি থাকলেও তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না। সংশোধনী বাজেটে আগের মতোই ৫০ লাখ টাকা লাভের ওপর কর আরোপের সিদ্ধান্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
বড় কোনো সংশোধনী ছাড়াই জাতীয় সংসদে বাজেট পাস হচ্ছে আজ। এর আগে গতকাল শনিবার অর্থবিল উত্থাপন হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ১ জুলাই নতুন অর্থবছরের বাজেট কর্যকর হবে। এর আগে গত ৬ জুন দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে আসন্ন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানা গেছে, শনিবার ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট, বাজেটের মঞ্জুরি দাবি এবং দায়যুক্ত ব্যয় নির্দিষ্টকরণ সম্পর্কে সাধারণ আলোচনা করা হয়। এদিন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী প্রস্তাব করেন সরকারের আর্থিক প্রস্তাবাবলি কার্যকর করা এবং কতিপয় আইন সংশোধন করে আনীত বিলটি (অর্থবিল, ২০২৪) অবিলম্বে বিবেচনার জন্য গ্রহণ করা হোক। এরপর অর্থমন্ত্রী প্রস্তাব করেন সরকারের আর্থিক প্রস্তাবাবলি কার্যকর করা এবং কতিপয় আইন সংশোধন করে আনীত বিলটি (অর্থবিল, ২০২৪) পাস করা হোক।
বাজেট উত্থাপনের সময় সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। তবে শেষমেষ এই প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন নাও হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সব নাগরিককে কর প্রদানে উৎসাহিত করতে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। তবে সংসদ সদস্যদের চাপে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাবটি বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
সংসদে বিরোধী দলের সদস্যরা প্রস্তাবিত বাজেটকে গতানুগতিক হিসেবেই দেখছেন। তাদের ভাষ্যমতে, অর্থনীতির চলমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় এতে কোনো নতুনত্ব আনা হয়নি।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এটি একটা গতানুগতিক বাজেট। এতে নতুনত্বের কিছুই নেই। সেই কালো টাকা সাদা, সেই আয়-ব্যয়-রাজস্ব, নতুন কিছুই নেই। দুর্নীতি প্রতিরোধ বা জবাবদিহিতার কোনো অপশন নেই।
তবে নতুন অর্থ বিলে আয়কর ও কাস্টমস সংক্রান্ত সামান্য কিছু পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। বিশেষ করে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের চাপে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলোর কর অবকাশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থাৎ এসব অঞ্চল ও পার্কের কর অবকাশ সুবিধা আগের মতোই বহাল থাকছে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থাপিত শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি শুল্কও আগের মতো শূন্য শতাংশ রাখা হচ্ছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ বা উন্নয়নের জন্য ডেভেলপারদের আমদানি করা যন্ত্রপাতির শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। শিল্প স্থাপনের মূলধনি যন্ত্রপাতিতেও ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা বাতিল করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গত সপ্তাহে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর সুবিধা প্রত্যাহারসহ ব্যবসায়ীদের দাবির বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। তখন প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী এসব সুবিধা বহাল রাখার নির্দেশনা আসে।
কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নিতে রিটার্ন জমার স্লিপ প্রদর্শনের শর্তে পরিবর্তন আসছে। সেক্ষেত্রে পৌর এলাকা বা গ্রামাঞ্চলে এ স্লিপ প্রদর্শনের প্রয়োজন পড়বে না। তবে সিটি করপোরেশন এলাকায় তা প্রদর্শন করতে হবে।
সার্বিক বিষয়ে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি বলেন, ঘাটতি বাজেটও ৫ শতাংশের ঘরে ধরে রাখা হয়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে না। আর প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যও পূরণ হবে না। আমরা দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অপচয়ের জৌলুস নিয়ে কথা বলেছি। গ্রামে বিদ্যুৎ নিয়ে মানুষের দুর্ভোগের কথা বলেছি। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোয় বাধ্যতামূলকভাবে ডাক্তারদের দুই বছর নিয়োগের বিধান করতে বলেছি। যতটা পেরেছি যেসব বিষয় বলা দরকার, সেগুলো আমরা তুলে ধরেছি। সর্বোপরি একটি ধারাবাহিক বাজেট পাস হতে যাচ্ছে।


























