১০:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রয়েল বেঙ্গল টাইগার বেঁচে থাকুক সুন্দরবনে

রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাংলার বাঘ আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। বাঘ আমাদের জাতীয় প্রাণী। বাঘ এমন একটি রাজকীয় প্রাণী যা যে কোনো দেশের জন্য গর্বের বিষয়। অরণ্যের বাসিন্দা এই প্রাণীটি সুন্দরবনে বসবাস করে। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের মতো এমন একটি বাদাবন আমাদের দেশে রয়েছে। এটি প্রকৃতির অপার সৃষ্টি, নয়নাভিরাম সবুজের এক অখণ্ড লীলাভূমি। সুন্দরবনই আমাদের দেশে বাঘের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবসৃষ্ট কারণে রাজসিক এই প্রাণী আজ হুমকির মুখে।

পৃথিবীতে তিন হাজারের মতো বাঘ টিকে আছে। এর মধ্যে বিশ্বের একক বৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনে রয়েছে কয়েকশ রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সুন্দর এই প্রাণীটি মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক। একশ বছর আগেও পুরো বিশ্বে প্রায় এক লাখের মতো বাঘের বসবাস ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বনাঞ্চল ধ্বংস, কালোবাজারি ও চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্যে বাঘ হত্যাসহ বিভিন্ন কারণে এই সংখ্যা হ্রাস পেতে পেতে বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৩ হাজার ৯শ বাঘের অস্তিত্ব টিকে আছে। ১৯৩০ সালের দিকে বাংলাদেশের ১৭টি জেলার মধ্যে ১১টি জেলায় বাঘ ছিল। বর্তমানে বাঘ শুধুমাত্র সুন্দরবনেই রয়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ১১৪টি। সমগ্র বিশ্বে বাঘের সংরক্ষণের জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রতি বছর ২৯ জুলাই তারিখে পালন করা হয়। এই দিবস পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো বাঘের প্রাকৃতিক আবাস রক্ষা করা এবং বাঘের সংরক্ষণের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে এর সম্পর্কে থাকা ভুল ধারণা ও ভয় দূর করা। প্রতি বছর ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে থাকে। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম বাঘ সম্মেলনের পর থেকে বাঘ আছে এমন ১৩টি দেশে দিবসটি পালিত হয়। বাঘের বিচরণ রয়েছে বিশ্বের এমন ১৩টি দেশ- বাংলাদেশ, চীন, নেপাল, ভারত, ভুটান, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস ও রাশিয়ায় দিবসটি পালিত হয়। ১৩টি বাঘসমৃদ্ধ দেশকে টাইগার রেঞ্জ বা টিআরসি বলা হয়। সম্ভাব্য বিলুপ্তির হাত থেকে প্রাণীটিকে রক্ষার্থে বিশ্ববাসীকে সচেতন করা এ দিবস পালনের উদ্দেশ্য। বাঘ সংরক্ষণ কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া ও প্রয়োজনীয় সমর্থন আদায়ে বিশ্বসম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করাও দিবসটির লক্ষ্য।

বাঘ বিড়াল গোত্রের বৃহত্তম বনবিড়াল। রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাংলাদেশের জাতীয় পশু। সুন্দরবনের বাঘ বিশ্বব্যাপী রয়েল বেঙ্গল টাইগার বলে পরিচিত। এ বাঘ বাংলাদেশের গর্ব। বনের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বাঘের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাঘ জীববৈচিত্র্য ও খাদ্যশৃঙ্খল প্রক্রিয়ার একটি অংশ। সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বাস্তুতন্ত্রের খাদ্যশৃঙ্খলের শীর্ষে রয়েছে বাঘ। বাঘের সংখ্যা কমে গেলে বনের পরিবেশের ভারসাম্য হারাবে। মধু সংগ্রহ, গোলপাতা সংগ্রহ, মাছ ধরা, বনের কাঠ ও লাকড়ি সংগ্রহ করার জন্য মানুষ অবাধে বনে প্রবেশ করছে। যার ফলে বাঘ যেমন অনিরাপদ বোধ করছে, পাশাপাশি বাঘ ও মানুষের সঙ্গে সংঘর্ষও বাড়ছে। সে কারণে মাঝে মধ্যে বাঘের আক্রমণে মানুষের মৃত্যু হয়।

সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। এর ৬০ শতাংশ আমাদের দেশে আর বাকি ৪০ শতাংশ ভারতের মধ্যে পড়েছে। সে হিসাবে, আমাদের দেশে রয়েছে ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার বনাঞ্চল। ধারণা করা হতো, সুন্দরবনেই আছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বেঙ্গল টাইগার বা বাংলার বাঘ। পৃথিবীর মাত্র ১৩টি দেশে প্রাকৃতিক আবাসে বাঘ বেঁচে আছে। কয়েকটি দেশ থেকে ইতোমধ্যে বাঘ বিলুপ্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই ১৩টি দেশে বর্তমানে বাঘের সংখ্যা প্রায় ৩,৫০০। ভারতেই বাঘের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি যা সর্বমোট সংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ। ১৯০০ সালের দিকে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ১ লাখ। তখন ৩৩টি দেশে প্রাকৃতিক পরিবেশে বাঘ বিচরণ করত। গবেষণায় দেখা যায়, পূর্বে যে সব এলাকায় বাঘ ছিল বর্তমানে তার মাত্র ৭ শতাংশ জায়গায় এটি টিকে রয়েছে। বাঘের একটি প্রজাতি ও ৯টি উপ-প্রজাতি রয়েছে। ইতোমধ্যে ৩টি উপ-প্রজাতি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে উপ-প্রজাতির সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। সুন্দরবনে যে বাঘ রয়েছে সেটি প্যানথেরা টাইগ্রিস উপ-প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত। বিশ্বজুড়ে বাঘের যে ৬টি উপ-প্রজাতি টিকে রয়েছে তার মধ্যে এটির সদস্যই সবচেয়ে বেশি। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেস্কো সুন্দরবনের আওতাধীন তিনটি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য এলাকা বিশ্বঐতিহ্য ঘোষণা করে। ফলে সুন্দরবন বাংলাদেশকে যেমন বিশ্বদরবারে এক অন্যমাত্রায় হাজির করেছে, আবার এই বিশ্বসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের গুরুদায় আমাদের। অন্যদিকে, রামসার কনভেনশনের আওতায় ১৯৯২ সালে সুন্দরবনকে রামসার এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে।

সরকার সুন্দরবন রক্ষায় বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এরমধ্যে অন্যতম সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বাঘ সংরক্ষণ করা। বাঘ যাতে লোকালয়ে ঢুকে স্থানীয় মানুষের কোনো ক্ষতি করতে না পারে, সেজন্য লোকালয় আর বনের সীমানা ধরে ফেন্সিং তৈরি করা হচ্ছে। আবার ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় যাতে বাঘসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী আশ্রয় নিতে পারে, সেজন্য বনের বিভিন্ন জায়গায় মাটির ঢিবি তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া বাঘ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে, এ ধরনের গবেষণা বা জরিপের কাজও এই প্রকল্পের আওতায় চলমান আছে।

বাঘ প্রাণীবৈচিত্র্যের অন্যতম একটি নিদর্শন। আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বাঘের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাঘ আমাদের দেশে মহাসংকটাপন্ন প্রাণী। বাঘ বাঁচার পথে যে সব হুমকি সৃষ্টি হয়েছে তা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে বাঘ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। সুন্দরবনে বাঘ বেঁচে থাকলে সেখানে প্রাণবৈচিত্র্য টিকে থাকবে। বাঘ হারিয়ে গেলে সুন্দরবনের ধ্বংস ত্বরান্বিত হবে। সুন্দরবন বাঁচলে লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার প্রবাহ অব্যাহত থাকবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করে সময় উপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে বাঘের অস্তিত্ব সুন্দরবন থেকে বিলীন হতে পারে। বাংলাদেশে দ্রুততার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, তাতে বন ও সুন্দরবনে বাঘ রক্ষায় মনুষ্যকারণ ও প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনার উপর নজর দিতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

জনপ্রিয় সংবাদ

রয়েল বেঙ্গল টাইগার বেঁচে থাকুক সুন্দরবনে

আপডেট সময় : ০৬:০৭:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুলাই ২০২৪

রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাংলার বাঘ আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। বাঘ আমাদের জাতীয় প্রাণী। বাঘ এমন একটি রাজকীয় প্রাণী যা যে কোনো দেশের জন্য গর্বের বিষয়। অরণ্যের বাসিন্দা এই প্রাণীটি সুন্দরবনে বসবাস করে। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের মতো এমন একটি বাদাবন আমাদের দেশে রয়েছে। এটি প্রকৃতির অপার সৃষ্টি, নয়নাভিরাম সবুজের এক অখণ্ড লীলাভূমি। সুন্দরবনই আমাদের দেশে বাঘের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবসৃষ্ট কারণে রাজসিক এই প্রাণী আজ হুমকির মুখে।

পৃথিবীতে তিন হাজারের মতো বাঘ টিকে আছে। এর মধ্যে বিশ্বের একক বৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনে রয়েছে কয়েকশ রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সুন্দর এই প্রাণীটি মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক। একশ বছর আগেও পুরো বিশ্বে প্রায় এক লাখের মতো বাঘের বসবাস ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বনাঞ্চল ধ্বংস, কালোবাজারি ও চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্যে বাঘ হত্যাসহ বিভিন্ন কারণে এই সংখ্যা হ্রাস পেতে পেতে বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৩ হাজার ৯শ বাঘের অস্তিত্ব টিকে আছে। ১৯৩০ সালের দিকে বাংলাদেশের ১৭টি জেলার মধ্যে ১১টি জেলায় বাঘ ছিল। বর্তমানে বাঘ শুধুমাত্র সুন্দরবনেই রয়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ১১৪টি। সমগ্র বিশ্বে বাঘের সংরক্ষণের জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রতি বছর ২৯ জুলাই তারিখে পালন করা হয়। এই দিবস পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো বাঘের প্রাকৃতিক আবাস রক্ষা করা এবং বাঘের সংরক্ষণের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে এর সম্পর্কে থাকা ভুল ধারণা ও ভয় দূর করা। প্রতি বছর ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে থাকে। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম বাঘ সম্মেলনের পর থেকে বাঘ আছে এমন ১৩টি দেশে দিবসটি পালিত হয়। বাঘের বিচরণ রয়েছে বিশ্বের এমন ১৩টি দেশ- বাংলাদেশ, চীন, নেপাল, ভারত, ভুটান, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস ও রাশিয়ায় দিবসটি পালিত হয়। ১৩টি বাঘসমৃদ্ধ দেশকে টাইগার রেঞ্জ বা টিআরসি বলা হয়। সম্ভাব্য বিলুপ্তির হাত থেকে প্রাণীটিকে রক্ষার্থে বিশ্ববাসীকে সচেতন করা এ দিবস পালনের উদ্দেশ্য। বাঘ সংরক্ষণ কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া ও প্রয়োজনীয় সমর্থন আদায়ে বিশ্বসম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করাও দিবসটির লক্ষ্য।

বাঘ বিড়াল গোত্রের বৃহত্তম বনবিড়াল। রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাংলাদেশের জাতীয় পশু। সুন্দরবনের বাঘ বিশ্বব্যাপী রয়েল বেঙ্গল টাইগার বলে পরিচিত। এ বাঘ বাংলাদেশের গর্ব। বনের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বাঘের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাঘ জীববৈচিত্র্য ও খাদ্যশৃঙ্খল প্রক্রিয়ার একটি অংশ। সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বাস্তুতন্ত্রের খাদ্যশৃঙ্খলের শীর্ষে রয়েছে বাঘ। বাঘের সংখ্যা কমে গেলে বনের পরিবেশের ভারসাম্য হারাবে। মধু সংগ্রহ, গোলপাতা সংগ্রহ, মাছ ধরা, বনের কাঠ ও লাকড়ি সংগ্রহ করার জন্য মানুষ অবাধে বনে প্রবেশ করছে। যার ফলে বাঘ যেমন অনিরাপদ বোধ করছে, পাশাপাশি বাঘ ও মানুষের সঙ্গে সংঘর্ষও বাড়ছে। সে কারণে মাঝে মধ্যে বাঘের আক্রমণে মানুষের মৃত্যু হয়।

সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। এর ৬০ শতাংশ আমাদের দেশে আর বাকি ৪০ শতাংশ ভারতের মধ্যে পড়েছে। সে হিসাবে, আমাদের দেশে রয়েছে ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার বনাঞ্চল। ধারণা করা হতো, সুন্দরবনেই আছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বেঙ্গল টাইগার বা বাংলার বাঘ। পৃথিবীর মাত্র ১৩টি দেশে প্রাকৃতিক আবাসে বাঘ বেঁচে আছে। কয়েকটি দেশ থেকে ইতোমধ্যে বাঘ বিলুপ্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই ১৩টি দেশে বর্তমানে বাঘের সংখ্যা প্রায় ৩,৫০০। ভারতেই বাঘের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি যা সর্বমোট সংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ। ১৯০০ সালের দিকে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ১ লাখ। তখন ৩৩টি দেশে প্রাকৃতিক পরিবেশে বাঘ বিচরণ করত। গবেষণায় দেখা যায়, পূর্বে যে সব এলাকায় বাঘ ছিল বর্তমানে তার মাত্র ৭ শতাংশ জায়গায় এটি টিকে রয়েছে। বাঘের একটি প্রজাতি ও ৯টি উপ-প্রজাতি রয়েছে। ইতোমধ্যে ৩টি উপ-প্রজাতি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে উপ-প্রজাতির সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। সুন্দরবনে যে বাঘ রয়েছে সেটি প্যানথেরা টাইগ্রিস উপ-প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত। বিশ্বজুড়ে বাঘের যে ৬টি উপ-প্রজাতি টিকে রয়েছে তার মধ্যে এটির সদস্যই সবচেয়ে বেশি। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেস্কো সুন্দরবনের আওতাধীন তিনটি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য এলাকা বিশ্বঐতিহ্য ঘোষণা করে। ফলে সুন্দরবন বাংলাদেশকে যেমন বিশ্বদরবারে এক অন্যমাত্রায় হাজির করেছে, আবার এই বিশ্বসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের গুরুদায় আমাদের। অন্যদিকে, রামসার কনভেনশনের আওতায় ১৯৯২ সালে সুন্দরবনকে রামসার এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে।

সরকার সুন্দরবন রক্ষায় বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এরমধ্যে অন্যতম সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বাঘ সংরক্ষণ করা। বাঘ যাতে লোকালয়ে ঢুকে স্থানীয় মানুষের কোনো ক্ষতি করতে না পারে, সেজন্য লোকালয় আর বনের সীমানা ধরে ফেন্সিং তৈরি করা হচ্ছে। আবার ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় যাতে বাঘসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী আশ্রয় নিতে পারে, সেজন্য বনের বিভিন্ন জায়গায় মাটির ঢিবি তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া বাঘ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে, এ ধরনের গবেষণা বা জরিপের কাজও এই প্রকল্পের আওতায় চলমান আছে।

বাঘ প্রাণীবৈচিত্র্যের অন্যতম একটি নিদর্শন। আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বাঘের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাঘ আমাদের দেশে মহাসংকটাপন্ন প্রাণী। বাঘ বাঁচার পথে যে সব হুমকি সৃষ্টি হয়েছে তা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে বাঘ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। সুন্দরবনে বাঘ বেঁচে থাকলে সেখানে প্রাণবৈচিত্র্য টিকে থাকবে। বাঘ হারিয়ে গেলে সুন্দরবনের ধ্বংস ত্বরান্বিত হবে। সুন্দরবন বাঁচলে লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার প্রবাহ অব্যাহত থাকবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করে সময় উপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে বাঘের অস্তিত্ব সুন্দরবন থেকে বিলীন হতে পারে। বাংলাদেশে দ্রুততার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, তাতে বন ও সুন্দরবনে বাঘ রক্ষায় মনুষ্যকারণ ও প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনার উপর নজর দিতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।