◉কাশিমপুরে বিগবস কারখানায় আগুন
◉সাভার-আশুলিয়া ও গাজীপুরে ১১৪ পোশাক কারখানা বন্ধ
◉শ্রমসংক্রান্ত অভিযোগ পর্যবেক্ষণে কমিটি গঠন
◉শ্রমিকের বকেয়া বেতন আজকের মধ্যে পরিশোধ
◉শনিবারের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে : বিজিএমইএ
ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী সরকার। নতুন করে দেশ সংস্কারের দায়িত্বভার গ্রহণ করে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বধীন বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকার। দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে সরকারের এই পথচলাকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে বিভিন্ন মহল তাদের নিজেদের দাবি নিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করেছে। তার ধারাবাহিকতায় দেশের রপ্তানি আয়ের বড় খাত পোশাক শিল্পে হঠাৎ করে বেশ কয়েকদিন ধরে অপ্রীতিকর অবস্থা তৈরি করেছে। দীর্ঘদিন আওয়ামী সরকারের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দখলে ছিল এই পোশাক শিল্প খাত। নানামুখী উদ্যোগেও সাভার ও আশুলিয়ায় থামছে না শ্রমিক অসন্তোষ। তাদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া ও বিক্ষোভের জেরে সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরের ১১৪ পোশাক কারখানা বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে ৫৪টি কারখানা অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিকপক্ষ। বাকিগুলো শ্রমিকরা উপস্থিত হয়েও কাজ না করায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি গাজীপুরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক সংলগ্ন বিগবস নামের একটি কারখানায় আগুন দিয়েছে শ্রমিকরা। আগুন নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার সময় ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। পেশাক শিল্পে চলমান এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন সরকার। তাদের বিভিন্ন অভিযোগ পর্যবেক্ষণের জন্য শ্রম সংক্রান্ত অভিযোগ কমিটি গঠন ও তাদের বকেয়া বেতন আজকের মধ্যে পরিশোধের আশ^াস দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর একজন পরিচালক বলেন, বন্ধ থাকা ১১৪টি কারখানার মধ্যে ১১১টি সাভার, আশুলিয়া ও জিরানি এলাকার। বাকি তিনটি কারখানা গাজীপুরের। বন্ধ ঘোষণা করা কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে আশুলিয়ার অরুনিমা গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান অরুনিমা স্পোর্টস ওয়্যার, ডিএমসি অ্যাপারেলস, এনভয় গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠান মানতা অ্যাপারেলস, এনভয় ফ্যাশন্স, এনভয় ডিজাইন, ফ্লোরেন্স গ্রুপের সিগমা ফ্যাশন্স লি., শারমিন গ্রুপের ইশায়াত অ্যাপারেলস লি., হামীম গ্রুপের ছয়টি প্রতিষ্ঠান দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার, অ্যাপারেলস গ্যালারি লি., রিফাত গার্মেন্ট, এক্সপ্রেস ওয়াশিং অ্যান্ড ডাইং, আর্টিস্টিক ডিজাইন, নেক্সট কালেকশন্স, ডেকো গ্রুপ, এছাড়া ডেবোনেয়ার লি., ক্রসওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ, স্টারলিং স্টাইলস, বান্দো ডিজাইন, মন্ডল নিটওয়্যারস লি., এআর জিন্স প্রডিউসার, সাদ ফ্যাশন্স, টেক্সটাউন, জেড থ্রি কম্পোজিটসহ ৪৫টি কারখানা। জামগড়া এলাকার এনআরএন নিটিং অ্যান্ড গার্মেন্টস লিমিটেড বন্ধ ঘোষণা করা হয় ৪ সেপ্টেম্বর। ৮ সেপ্টেম্বর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় টঙ্গীবাড়ী এলাকার ওয়াশ অ্যান্ড ওয়্যার লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানা ।
গতকাল শ্রমিকদের দাবিদাওয়া ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, সাভার আশুলিয়ায় পোশাক কারখানাগুলোতে যে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সেগুলোতে আজ সকালের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে। ইতোমধ্যে শ্রম সংক্রান্ত অভিযোগ পর্যালোচনা কমিটি করা হয়েছে, যেখানে যে কেউ এ বিষয়ে অভিযোগ জানাতে পারবেন। শ্রমিকদের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান কথা বলে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করব আমরা। শ্রমিকদের আন্দোলনে অনুপ্রবেশকারীরা অসন্তোষ ছড়াচ্ছে বলেও এ সময় মন্তব্য করেন এ উপদেষ্টা।
গাজীপুরের কারখানার আগুনের বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, সকাল থেকে বকেয়া বেতনসহ বিভিন্ন দাবিতে বেক্সিমকোর শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করে। তারা নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক অবরোধ করে রাখে। দুপুর ১২টার দিকে বেক্সিমকোর বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পাশের বীকন গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিগবস করপোরেশনের শ্রমিকদের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানায়। ওই কারখানার শ্রমিকরা বেক্সিমকো শ্রমিকদের আহ্বানে সাড়া না দেওয়ায় ওই কারখানায় হামলা চালায়। এক পর্যায়ে তারা কারখানার ঝুট ও কেমিক্যাল গুদামে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিকাল ৫টা পর্যন্ত ওই গুদামে আগুন জ্বলছিল।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, বিগবস নামে একটি কারখানায় আগুন লাগার খবর পেয়ে আমাদের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা একটি গাড়ি ভাঙচুর করলে কর্মীরা চলে আসেন। পরে কাশিমপুর ও ডিবিএল ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
পোশাক কারখানায় চলমান এই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিজিএমইএর নেতারা গত মঙ্গলবার পর্ষদ সভা করে গতকাল কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তবে নেতাদের একটি অংশ আশুলিয়ার মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে শ্রম আইনের নির্দিষ্ট ধারায় কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী গতকাল কারখানা খোলা হয়নি।
চলমান এ বিষয়ে শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, যারা পারছেন, তারা কারখানা চালাচ্ছেন। আর যাঁরা পারছেন না, কারখানা ছুটি দিয়ে দিচ্ছেন। তবে শিল্পাঞ্চলের কোথাও থেকে কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।
শনিবারের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে- বিজিএমইএ : আগামী শনিবারে মধ্যে কারখানাগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম। গতকাল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আরএমজি এবং নন-আরএমজি সেক্টরের শ্রম অসন্তোষ পরিস্থিতি পর্যালোচনাপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ আশা প্রকাশ করেন।
খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার বিশ্বাস, আগামী শনিবার থেকে সব কারখানা নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে পারবে। একই সঙ্গে এই সময়ে প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ অর্ডার অন্য দেশে চলে গেছে বলেও জানান তিনি।


























