১১:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কাবাডির খেলোয়াড়-কোচ কল্যাণ ফান্ডের এফডিআর ১ কোটি টাকা!

সব কিছু চুড়ান্ত ছিল; ব্রডকাস্টার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি দলও দুই দফা ঢাকায় কাবাডির অবকাঠামো দেখে গেছেন; সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেছেন। তাই দিল্লি ও আবুধাবীর মতো বিত্তশালী শহর আয়োজক হওয়ার তালিকায় থাকলেও কাবাডির পরের বিশ্বকাপ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়া নিশ্চিত ছিল বলে জানা গেছে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন সূত্রে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের কারণে অনিশ্চিত কাবাডি বিশ্বকাপ। একই কারণে ইতোমধ্যে মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও কারাতের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট সরে গেছে বাংলাদেশ থেকে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে ক্রীড়াঙ্গনেও। আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫-১৬ বছর বঞ্চিত সংগঠকরা ফেডারেশনের নির্বাচিত কমিটি ভেঙে এডহক করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। নিজেদের আলোচনা করে এডহক কমিটির তালিকা করে অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়ার চেষ্টা করছেন সংগঠকরা। কিন্তু ফেডারেশনগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত সার্চ কমিটি।
কাবাডিতেও খো যাচ্ছে এমন তৎপরতা। কিন্তু বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর নবীণ-প্রবীণ সংগঠকরা মিলে কাবাডিকে রীতিমত ঈর্ষনীয় পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর পুলিশের আইজিপিকে সভাপতি করে গঠিত এডহক কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার সময় ফেডারেশনের তহবিলে ছিল ৭৭ হাজার টাকা। আর পরবর্তীতে নির্বাচিত কমিটি মিলিয়ে গত আট বছরে তহবিলে রয়েছে ৮ কোটি ১ লাখ টাকা। ফিক্সড ডিপোজিট (এফডিআর) করা হয়েছে আড়াই কোটি টাকা। চতুর্থ বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্ট আয়োজন করে প্রাপ্ত অর্থ থেকে আরও ৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা এফডিআর করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। খেলোয়াড়, কোচ, রেফারি, সংগঠকদের জন্য গঠন করা কল্যাণ সমিতির নামে এফডিআর করা হয়েছে ১ কোটি ৮ লাখ টাকা। এফডিআর থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ েিয় করোনা মহামারী সহ বিভিন্ন সময়ে খেলোয়াড়, সংগঠক, কোচ ও রেফারিরে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। দেশে ক্রিকেটার ও ফুটবলারদের কল্যাণ সমিতি থাকলেও কোনো তহবিল না থাকায় চাইলেও প্রয়োজনীয় সময়ে আর্কি সহায়তা পান না।


পুলিশের আইজিপি ও শীর্ষ কর্মকর্তারা ফেডারেশনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করায় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কোনো আয়োজন বন্ধ থাকেনি। বিেেশ টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি কোটি টাকা ব্যয়ে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছে। ২ লাখ টাকা ব্যয়ে টোকাই কাবাডি কিংবা ধরে-বেঁধে আনা বিভিন্ন ইভেন্টের খেলোয়াড় দিয়ে গড়া ল নিয়ে আয়োজিত বিভিন্ন টুর্নামেন্টের পরিবর্তে মেয়েদের লিগই হয়েছে ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে। দ্বিতীয় বিভাগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়াতে বিভিন্ন জেলার দলকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। খেলোয়াড়দের খেলার সুযোগ সৃষ্টি করতে প্রিমিয়ার লিগ, সার্ভিসেস লিগ, স্বাধীনতা কাপ, বিজয় দিবস কাবাডির পাশাপাশি জুনিয়র সার্ভিসেস লিগ, যুব কাবাডি, প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগ এবং নারী কাবাডি লিগ নিয়মিত আয়োজন করা হয়েছে। নতুন খেলোয়াড় সৃষ্টির লক্ষ্যে অনূর্ধ্ব-১৭ বয়সভিত্তিক আইজিপি কাপ ও স্বাধীনতা কাপ ইউনিয়ন পর্যায়ে আয়োজন করা হয়। বাংলা নববর্ষে প্রতিটি উপজেলায় অনুষ্ঠিত হয় নারী ও পুরুষদের প্রীতি কাবাডি। ফলে প্রতি বছর নতুন নতুন খেলোয়াড় উঠে আসছে। ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে নারী-পুরুষ মিলিয়ে নিবন্ধিত কাবাডি খেলোয়াড় ১ লাখ ৩৭ হাজার, ল রয়েছে চার হাজারেরও বেশি। প্রতিটি গেমস বা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার আগে নারী ও পুরুষ খেলোয়াড়দের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বিেেশ প্রেরণ করা হতো কিংবা বিদেশি কোচ এনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়েছে।
আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুরুষ ও নারী দলের শীর্ষ খেলোয়াড়দের একাধিক ক্যাটাগরী করে বেতন কাঠামোয় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও এখন সেটি অনিশ্চিত। তেমনি অনিশ্চিত পূর্বাচলের পাশে ৬ একর জমির ওপর প্রস্তাবিত কাবাডি কমপ্লেক্স নির্মাণও। খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক নিশ্চিত করতে নারী করপোরেট লিগ চালু করা হয়েছে। গেল বছর সেপ্টেম্বরে প্রথম আসর অনুষ্ঠিত হয়েছিল। চলতি অক্টোবরে এই লিগের দ্বিতীয় আসরে অংশ নিতে দলগুলোকে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল, সেটিও বন্ধ। কোচ, রেফারিদের মানোন্নয়ণ ও নতুন কোচ-রেফারি সৃষ্টির জন্য দুই বছর পর পর কোর্স অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শোনা যাচ্ছে পুলিশের আইজিপির পরিবর্তে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের মহাপরিচালককে কাবাডির সভাপতি করতে চেষ্টা করছে কিছু সংগঠক। তাতে আবার পৃষ্ঠপোষকতা সঙ্কট যে সৃষ্টি হবে না, তার নিশ্চয়তা নেই।

জনপ্রিয় সংবাদ

সব রেকর্ড ভেঙে স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস, ভরি ছাড়াল দুই লাখ ২৭ হাজার

কাবাডির খেলোয়াড়-কোচ কল্যাণ ফান্ডের এফডিআর ১ কোটি টাকা!

আপডেট সময় : ১০:৫৫:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪

সব কিছু চুড়ান্ত ছিল; ব্রডকাস্টার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি দলও দুই দফা ঢাকায় কাবাডির অবকাঠামো দেখে গেছেন; সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেছেন। তাই দিল্লি ও আবুধাবীর মতো বিত্তশালী শহর আয়োজক হওয়ার তালিকায় থাকলেও কাবাডির পরের বিশ্বকাপ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়া নিশ্চিত ছিল বলে জানা গেছে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন সূত্রে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের কারণে অনিশ্চিত কাবাডি বিশ্বকাপ। একই কারণে ইতোমধ্যে মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও কারাতের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট সরে গেছে বাংলাদেশ থেকে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে ক্রীড়াঙ্গনেও। আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫-১৬ বছর বঞ্চিত সংগঠকরা ফেডারেশনের নির্বাচিত কমিটি ভেঙে এডহক করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। নিজেদের আলোচনা করে এডহক কমিটির তালিকা করে অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়ার চেষ্টা করছেন সংগঠকরা। কিন্তু ফেডারেশনগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত সার্চ কমিটি।
কাবাডিতেও খো যাচ্ছে এমন তৎপরতা। কিন্তু বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর নবীণ-প্রবীণ সংগঠকরা মিলে কাবাডিকে রীতিমত ঈর্ষনীয় পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর পুলিশের আইজিপিকে সভাপতি করে গঠিত এডহক কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার সময় ফেডারেশনের তহবিলে ছিল ৭৭ হাজার টাকা। আর পরবর্তীতে নির্বাচিত কমিটি মিলিয়ে গত আট বছরে তহবিলে রয়েছে ৮ কোটি ১ লাখ টাকা। ফিক্সড ডিপোজিট (এফডিআর) করা হয়েছে আড়াই কোটি টাকা। চতুর্থ বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্ট আয়োজন করে প্রাপ্ত অর্থ থেকে আরও ৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা এফডিআর করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। খেলোয়াড়, কোচ, রেফারি, সংগঠকদের জন্য গঠন করা কল্যাণ সমিতির নামে এফডিআর করা হয়েছে ১ কোটি ৮ লাখ টাকা। এফডিআর থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ েিয় করোনা মহামারী সহ বিভিন্ন সময়ে খেলোয়াড়, সংগঠক, কোচ ও রেফারিরে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। দেশে ক্রিকেটার ও ফুটবলারদের কল্যাণ সমিতি থাকলেও কোনো তহবিল না থাকায় চাইলেও প্রয়োজনীয় সময়ে আর্কি সহায়তা পান না।


পুলিশের আইজিপি ও শীর্ষ কর্মকর্তারা ফেডারেশনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করায় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কোনো আয়োজন বন্ধ থাকেনি। বিেেশ টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি কোটি টাকা ব্যয়ে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছে। ২ লাখ টাকা ব্যয়ে টোকাই কাবাডি কিংবা ধরে-বেঁধে আনা বিভিন্ন ইভেন্টের খেলোয়াড় দিয়ে গড়া ল নিয়ে আয়োজিত বিভিন্ন টুর্নামেন্টের পরিবর্তে মেয়েদের লিগই হয়েছে ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে। দ্বিতীয় বিভাগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়াতে বিভিন্ন জেলার দলকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। খেলোয়াড়দের খেলার সুযোগ সৃষ্টি করতে প্রিমিয়ার লিগ, সার্ভিসেস লিগ, স্বাধীনতা কাপ, বিজয় দিবস কাবাডির পাশাপাশি জুনিয়র সার্ভিসেস লিগ, যুব কাবাডি, প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগ এবং নারী কাবাডি লিগ নিয়মিত আয়োজন করা হয়েছে। নতুন খেলোয়াড় সৃষ্টির লক্ষ্যে অনূর্ধ্ব-১৭ বয়সভিত্তিক আইজিপি কাপ ও স্বাধীনতা কাপ ইউনিয়ন পর্যায়ে আয়োজন করা হয়। বাংলা নববর্ষে প্রতিটি উপজেলায় অনুষ্ঠিত হয় নারী ও পুরুষদের প্রীতি কাবাডি। ফলে প্রতি বছর নতুন নতুন খেলোয়াড় উঠে আসছে। ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে নারী-পুরুষ মিলিয়ে নিবন্ধিত কাবাডি খেলোয়াড় ১ লাখ ৩৭ হাজার, ল রয়েছে চার হাজারেরও বেশি। প্রতিটি গেমস বা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার আগে নারী ও পুরুষ খেলোয়াড়দের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বিেেশ প্রেরণ করা হতো কিংবা বিদেশি কোচ এনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়েছে।
আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুরুষ ও নারী দলের শীর্ষ খেলোয়াড়দের একাধিক ক্যাটাগরী করে বেতন কাঠামোয় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও এখন সেটি অনিশ্চিত। তেমনি অনিশ্চিত পূর্বাচলের পাশে ৬ একর জমির ওপর প্রস্তাবিত কাবাডি কমপ্লেক্স নির্মাণও। খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক নিশ্চিত করতে নারী করপোরেট লিগ চালু করা হয়েছে। গেল বছর সেপ্টেম্বরে প্রথম আসর অনুষ্ঠিত হয়েছিল। চলতি অক্টোবরে এই লিগের দ্বিতীয় আসরে অংশ নিতে দলগুলোকে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল, সেটিও বন্ধ। কোচ, রেফারিদের মানোন্নয়ণ ও নতুন কোচ-রেফারি সৃষ্টির জন্য দুই বছর পর পর কোর্স অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শোনা যাচ্ছে পুলিশের আইজিপির পরিবর্তে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের মহাপরিচালককে কাবাডির সভাপতি করতে চেষ্টা করছে কিছু সংগঠক। তাতে আবার পৃষ্ঠপোষকতা সঙ্কট যে সৃষ্টি হবে না, তার নিশ্চয়তা নেই।