১০:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘প্রত্যাশার শূন্যখাতা কিংবা চাকরি-বাকরি বুলি ’

পুনরায় পাখি হয়ে জন্মানোর ইচ্ছে আছে, পাখির মতো সহজ-সরল জীবনে অল্প হায়াতে শান্তির পরশ থাকে, হোক না তা অল্পদিনের। পাখি সেই কাকডাকা ভোরবেলায় উদাস মনে বেড়িয়ে পড়ে, পাখি জানে না বাসা থেকে বেরিয়ে গেলে আরেকবার নিজ বাসায় ফিরতে পারবে কিনা। তার দিন আদৌ ভালো নাকি খারাপ যাবে।
পাখি বিশ্বাসের বলে বলিয়ান হয়ে বেড়িয়ে পড়ে অজানা গন্তব্যে, আকাশের পানে  পাখি ছুটে চলে, জীবনের কোনো চিন্তা নেই, নেই কোনো পিছুটান, খাবার পেলে খাবে নাহলে ফিরে যাবে আপন নিবাসে । তার এক থলিতে যতটুকু খাবার প্রয়োজন ঠিক ততটুকু সে আহার করে।
একটি পাখি যতদিন জীবিত থাকে ততদিন সে খেয়ে বেঁচে থাকে। তার সেই বিশ্বাস তাকে নিরাশ করেনা। পৃথিবীর কোনো মানুষ আজ পর্যন্ত বলতে পারবে না যে একটিও পাখি মারা গিয়েছে খাবারের অভাবে। মানুষের আনাড়ি, তুচ্ছ, মূল্যহীন, জীবন যদি পাখির মতো হতো! তার কোনো পৈশাচিক আকাঙ্খা থাকতো না। সরল উপাখ্যানে পরিচালিত হতো জীবনের থৈ থৈ সংসার।সংসারের বোঝা টানতে গিয়ে কারো ক্ষতি করবে না ~আকাশের পাখিটির মতো মানুষের বিশ্বাস হবে অনড়, যাকে চাইলেই ভাঙা যায় না।সমগ্র পৃথিবীর মানুষের উচিত পাখির মতো উপরওয়ালার বিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে নিজের কাজ করে যাওয়া৷
প্রত্যাশার চাপে সবাই আমরা আহত , আর সেই প্রত্যাশার হিসাব-নিকাশ যদি একজন ছাত্রের সাথে হয় তাহলে তার জীবনের হতাশা  দেখবে কে? কার কাছে গেলে এর  সমাধান পাওয়া যাবে? কে দেখাবে সঠিক পথ?  কে বলবে চাকরি মানেই জীবন নয়! জীবন ভিন্ন ব্যপার।  চাকরিতে আসল সম্মান নয়, মানুষের আসল সম্মান তার চরিত্রে, বিনয়ী হওয়াতে, আমরা পড়াশোনা করছি স্বীকৃত গোলামী’কে সামনে রেখে। যারা স্বীকৃত  গোলামীতে সম্মান খোঁজেন তারা সম্মানের কিছুই বুঝেন না, তারা সার্টিফাইড মূর্খ, ছাত্র জীবনের পাওয়া বা না পাওয়া,লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, তথাকথিত চাকরি-বাকরি বুলি,ভবিষ্যতের সময়, পাখির সাথে জীবনের সম্পৃক্ততা নিয়ে আলোকপাত, নিম্নে……
যে সত্য আমাদের সামনে আসে না কখনো, যে সত্য ঢাকা পড়ে আছে বহু শতাব্দী থেকে এখনও পর্যন্ত তা কি মানুষ জানে? “পড়ালেখা করে যে, গাড়ি-ঘোড়ায় চড়ে সে ” এই কথার যৌক্তিকতা কতটুকু!  পড়াশোনা করলেই কি গাড়ি-ঘোড়ায় চড়া সম্ভব? আমার আসলে তা মনে হয় না ।  এই স্লোগান আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে ব্রিটিশ শাসকদের একদল। যারা আমাদের গাড়িতে চড়ার লোভ দেখিয়ে আসল জায়গা থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছে৷
আমাদের পড়ালেখা করার আসল উদ্দেশ্য কখনো গাড়ি-ঘোড়ায় চড়া হতে পারে না। আসল কথা কিংবা সত্য হলো পড়ালেখা নিজের জন্য,নিজেকে জানার জন্য, সক্রেটিস বলে গিয়েছেন — “know Thy self ” কিন্তু তিনি কখনো এর পন্থা বলে যান নি। নিজেকে জানার পন্থা হলো পড়াশোনা করা। ভেতরগত দিক না জানলে গোলামী করায় হয়ে উঠে মানুষের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
প্রতিদিন হাজার স্বপ্ন নিয়ে ঘুমাতে যায় লক্ষ্য-লক্ষ্য, পিতা-মাতা,একটি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যালয়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি, রক্ত – রক্ত খেলা, অন্যদিকে বাংলার নীল সংসার কায়েম হচ্ছে দিনকে দিন। যে ছেলেটিকে পাঠিয়েছে পড়াশোনার জন্য তার হাতে আজ মদের বোতল, তার হাতে ছিলো লাঠি,রামদা,হরেকরকমের অস্ত্র। এমন পরিবেশ হবে কেন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে? প্রশ্ন রইলো রাষ্ট্র পক্ষের কাছে।  কারা এমন চিত্রকে স্বাভাবিক করেছে, কারা এর পেছনে ইন্ধন দাতা। যারা মা-বাবার কষ্ট বুঝেন না।তারাই একটি সহজ-সরল ছেলেকে করেছে বেপরোয়া। আমরা যাই একটি কাগজের জন্য ; এর বাইরে আর কোনো সত্য নেই। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই যদি ধরি তাহলে সেখানে দোকানদার, ক্যান্টিন মালিক, তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি,বাদাম বিক্রেতা, শরবত বিক্রেতা, ঝাড়ুদার, পত্রিকা ওয়ালা, স্হানীয় অটোরিকশা ওয়ালা, সবজি ওয়ালা, যতোদিন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকেন ততদিনও একজন শিক্ষার্থী থাকেন না।
তাকে চলে আসতে হয় প্রাণের বিদ্যালয় ছেড়ে। তাই বলায় যায় সবাই চলে যায় থেকে যায় ক্যান্টিন মালিক, সবাই চলে যায় থেকে যায় চা ওয়ালা মামা। পড়াশোনার বাস্তবতা মাথায় না রাখলে পিতা-মাতার সংসার হয়ে উঠে নীল সংসার। নিম্ন মধ্যবিত্তের পড়াশোনা করা এখন বিলাসিতার নামান্তর।
ইতাঙ্গীর খন্দকার
শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
জনপ্রিয় সংবাদ

একনেক সভায় ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকার ২২ প্রকল্প অনুমোদন

‘প্রত্যাশার শূন্যখাতা কিংবা চাকরি-বাকরি বুলি ’

আপডেট সময় : ০৯:৪৭:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪
পুনরায় পাখি হয়ে জন্মানোর ইচ্ছে আছে, পাখির মতো সহজ-সরল জীবনে অল্প হায়াতে শান্তির পরশ থাকে, হোক না তা অল্পদিনের। পাখি সেই কাকডাকা ভোরবেলায় উদাস মনে বেড়িয়ে পড়ে, পাখি জানে না বাসা থেকে বেরিয়ে গেলে আরেকবার নিজ বাসায় ফিরতে পারবে কিনা। তার দিন আদৌ ভালো নাকি খারাপ যাবে।
পাখি বিশ্বাসের বলে বলিয়ান হয়ে বেড়িয়ে পড়ে অজানা গন্তব্যে, আকাশের পানে  পাখি ছুটে চলে, জীবনের কোনো চিন্তা নেই, নেই কোনো পিছুটান, খাবার পেলে খাবে নাহলে ফিরে যাবে আপন নিবাসে । তার এক থলিতে যতটুকু খাবার প্রয়োজন ঠিক ততটুকু সে আহার করে।
একটি পাখি যতদিন জীবিত থাকে ততদিন সে খেয়ে বেঁচে থাকে। তার সেই বিশ্বাস তাকে নিরাশ করেনা। পৃথিবীর কোনো মানুষ আজ পর্যন্ত বলতে পারবে না যে একটিও পাখি মারা গিয়েছে খাবারের অভাবে। মানুষের আনাড়ি, তুচ্ছ, মূল্যহীন, জীবন যদি পাখির মতো হতো! তার কোনো পৈশাচিক আকাঙ্খা থাকতো না। সরল উপাখ্যানে পরিচালিত হতো জীবনের থৈ থৈ সংসার।সংসারের বোঝা টানতে গিয়ে কারো ক্ষতি করবে না ~আকাশের পাখিটির মতো মানুষের বিশ্বাস হবে অনড়, যাকে চাইলেই ভাঙা যায় না।সমগ্র পৃথিবীর মানুষের উচিত পাখির মতো উপরওয়ালার বিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে নিজের কাজ করে যাওয়া৷
প্রত্যাশার চাপে সবাই আমরা আহত , আর সেই প্রত্যাশার হিসাব-নিকাশ যদি একজন ছাত্রের সাথে হয় তাহলে তার জীবনের হতাশা  দেখবে কে? কার কাছে গেলে এর  সমাধান পাওয়া যাবে? কে দেখাবে সঠিক পথ?  কে বলবে চাকরি মানেই জীবন নয়! জীবন ভিন্ন ব্যপার।  চাকরিতে আসল সম্মান নয়, মানুষের আসল সম্মান তার চরিত্রে, বিনয়ী হওয়াতে, আমরা পড়াশোনা করছি স্বীকৃত গোলামী’কে সামনে রেখে। যারা স্বীকৃত  গোলামীতে সম্মান খোঁজেন তারা সম্মানের কিছুই বুঝেন না, তারা সার্টিফাইড মূর্খ, ছাত্র জীবনের পাওয়া বা না পাওয়া,লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, তথাকথিত চাকরি-বাকরি বুলি,ভবিষ্যতের সময়, পাখির সাথে জীবনের সম্পৃক্ততা নিয়ে আলোকপাত, নিম্নে……
যে সত্য আমাদের সামনে আসে না কখনো, যে সত্য ঢাকা পড়ে আছে বহু শতাব্দী থেকে এখনও পর্যন্ত তা কি মানুষ জানে? “পড়ালেখা করে যে, গাড়ি-ঘোড়ায় চড়ে সে ” এই কথার যৌক্তিকতা কতটুকু!  পড়াশোনা করলেই কি গাড়ি-ঘোড়ায় চড়া সম্ভব? আমার আসলে তা মনে হয় না ।  এই স্লোগান আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে ব্রিটিশ শাসকদের একদল। যারা আমাদের গাড়িতে চড়ার লোভ দেখিয়ে আসল জায়গা থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছে৷
আমাদের পড়ালেখা করার আসল উদ্দেশ্য কখনো গাড়ি-ঘোড়ায় চড়া হতে পারে না। আসল কথা কিংবা সত্য হলো পড়ালেখা নিজের জন্য,নিজেকে জানার জন্য, সক্রেটিস বলে গিয়েছেন — “know Thy self ” কিন্তু তিনি কখনো এর পন্থা বলে যান নি। নিজেকে জানার পন্থা হলো পড়াশোনা করা। ভেতরগত দিক না জানলে গোলামী করায় হয়ে উঠে মানুষের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
প্রতিদিন হাজার স্বপ্ন নিয়ে ঘুমাতে যায় লক্ষ্য-লক্ষ্য, পিতা-মাতা,একটি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যালয়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি, রক্ত – রক্ত খেলা, অন্যদিকে বাংলার নীল সংসার কায়েম হচ্ছে দিনকে দিন। যে ছেলেটিকে পাঠিয়েছে পড়াশোনার জন্য তার হাতে আজ মদের বোতল, তার হাতে ছিলো লাঠি,রামদা,হরেকরকমের অস্ত্র। এমন পরিবেশ হবে কেন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে? প্রশ্ন রইলো রাষ্ট্র পক্ষের কাছে।  কারা এমন চিত্রকে স্বাভাবিক করেছে, কারা এর পেছনে ইন্ধন দাতা। যারা মা-বাবার কষ্ট বুঝেন না।তারাই একটি সহজ-সরল ছেলেকে করেছে বেপরোয়া। আমরা যাই একটি কাগজের জন্য ; এর বাইরে আর কোনো সত্য নেই। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই যদি ধরি তাহলে সেখানে দোকানদার, ক্যান্টিন মালিক, তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি,বাদাম বিক্রেতা, শরবত বিক্রেতা, ঝাড়ুদার, পত্রিকা ওয়ালা, স্হানীয় অটোরিকশা ওয়ালা, সবজি ওয়ালা, যতোদিন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকেন ততদিনও একজন শিক্ষার্থী থাকেন না।
তাকে চলে আসতে হয় প্রাণের বিদ্যালয় ছেড়ে। তাই বলায় যায় সবাই চলে যায় থেকে যায় ক্যান্টিন মালিক, সবাই চলে যায় থেকে যায় চা ওয়ালা মামা। পড়াশোনার বাস্তবতা মাথায় না রাখলে পিতা-মাতার সংসার হয়ে উঠে নীল সংসার। নিম্ন মধ্যবিত্তের পড়াশোনা করা এখন বিলাসিতার নামান্তর।
ইতাঙ্গীর খন্দকার
শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়