◉ সরকারের পতনের পর বড় ব্যবসায়ীরা গ্রেপ্তার হয়েছেন
◉ এই পরিস্থিতি চলমান থাকলে বিনিয়োগ বাড়বে না
➥ সরকারকে আস্থার জায়গা তৈরি করতে হবে, আতঙ্কে থাকলে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে যাবে না : ফজলে শামীম এহসান, নির্বাহী সভাপতি, বিকেএমইএ
➥ অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের স্বার্থে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া উচিত নয় : আবদুল্লাহিল রাকিব, সিনিয়র সহ-সভাপাতি, বিজিএমইএ
ছাত্র জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পতন হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকারের। নতুন করে দেশে গঠিত হয় ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। ক্ষমতার পালাবদলে অস্থীতিশীল অবস্থা তৈরি হয়েছিল অর্থনীতি খাতে। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অর্থনীতিকে গতিধারায় ফেরাতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। তবে এর মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক বা সরাসরি পদধারী কয়েকজন ব্যবসায়ী গত দুই মাসে গ্রেপ্তার হয়েছেন। অন্যরাও খুব স্বস্তিতে নেই। তাদেরও কাটছে না গ্রেপ্তার আতঙ্ক, যা ব্যবসা ও নতুন বিনিয়োগকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী নেতারা। এতে আরও থমকে যেতে পারে কিছুটা ধুঁকতে থাকা ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি। আর এই পরিস্থিতি চলমান থাকলে বিনিয়োগ বাড়বে না, আর বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে না। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা বিনিয়োগে ধীরগতি এবং নতুন বিনিয়োগে আস্থা ক্ষয় হওয়ার আশঙ্কা করছেন। তারা মনে করেন, বিষয়গুলো সতর্কতার সঙ্গে পরিচালনা করা উচিত।
আওয়ামী লীগের পতনের পর কয়েকজন বড় ব্যবসায়ী এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তারদের অধিকাংশই ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হলেও অন্য ব্যবসায়ীদের জন্যও বিষয়টি উদ্বেগের। এসব ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠানে কাজ করে হাজার হাজার মানুষ। তাদের গ্রেপ্তারে যদি ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে তার প্রভাব পুরো অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে পড়বে। যেটা কারও জন্যই খুব সুখকর হবে না। ৫ আগস্টের পর গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদী। তবে সালমান এফ রহমান ও নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ অনেক ব্যবসায়ী আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ক্ষমতাচ্যুত সরকার ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান। সরাসরি বড় পদে না থাকলেও ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন কমিটিতে সক্রিয় ছিলেন তারা। ফলে কিছুটা হলেও ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রপ্তানিমুখী ব্যবসায়ী বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছি। কিন্তু আমি কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করিনি। যদি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আমার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অপরাধ প্রমাণ করতে পারে, আমি বিনা দ্বিধায় যে কোনো ধরনের শাস্তি গ্রহণ করতে রাজি। কিন্তু সঠিক তদন্ত বা প্রমাণ ছাড়া এটা করলে ক্রেতাদের কাছে এবং সমাজে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত করবে, যেখানে শত শত লোক কাজ করে।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা বিনিয়োগে ধীরগতি এবং নতুন বিনিয়োগে আস্থা ক্ষয় হওয়ার আশঙ্কা করছেন। তারা মনে করেন, বিষয়গুলো সতর্কতার সঙ্গে পরিচালনা করা উচিত।
এ বিষয়ে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, আমরা যদি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে না পারি এবং কারখানা চালাতে না পারি তাহলে তা অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এমনকি নতুন বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে প্রভাব পড়তে পারে। সরকারকে আস্থার জায়গা তৈরি করতে হবে। কারণ আতঙ্কে থাকলে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকারকে একটা পরিষ্কার বার্তা দিতে হবে যে তারা কীভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ করে দেবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল্লাহিল রাকিব বলেন, ‘রাজনৈতিক মতাদর্শ যাই হোক না কেন, একজন উদ্যোক্তাকে রাজনৈতিক ব্যক্তির পরিবর্তে ব্যবসায়ী হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। যদি একজন ব্যবসায়ীকে রাজনৈতিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে এটি তার প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করতে পারে, যেখানে কয়েকশ বা হাজার হাজার লোক কাজ করে। অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের স্বার্থে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া উচিত নয়, যা সংস্থার কার্যক্রমকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যদি তারা দোষী প্রমাণিত হয় তবে সংস্থা এবং জীবনধারণের জন্য নির্ভরশীল ব্যক্তিদের ক্ষতি না করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অর্থনীতিবিদ বলেন, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত এমন একজনকেও আমাদের রেহাই দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু একটি যুক্তি আছে যে, আমাদের সেই লোকদের ব্যবসা বন্ধ করা উচিত নয়। কারণ এটি অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থানের ক্ষতি করবে। ন্যায়বিচারের মাধ্যমে সরকারকে ব্যবসায়িক পরিবেশে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে হবে। সরকারকে সুস্পষ্ট বার্তা দিতে হবে যে তারা রাজনৈতিক বিবেচনা করবে না বরং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে। দুর্নীতিবাজদের শাস্তি না হলে তা অন্যদের অন্যায় কাজে উৎসাহিত করবে। দুর্নীতিবাজদের দমন ও ভালো ব্যবসায়ীদের পুরস্কৃত করার এখনই সময়।
এস আলমদের জন্য পুরো ব্যবসায়ী সমাজকে সন্দেহের মধ্যে রাখা হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আজ ব্যবসায়ী সমাজ আস্থা পাচ্ছে না। গ্যাস নেই, বিদ্যুৎ নেই ব্যবসায়ীদের কেউই স্বস্তিতে নেই। পোশাক খাতে ১৮ দফা দাবি এল, যে দাবির মধ্যে অনেক কিছুই আইনের মধ্যে পড়ে না। আইনের বাইরে থাকলে কি বাহবা দেব?’























