- গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি করার কাজ চলছে : হোয়াইট হাউস
- ইসরায়েলে লাউড স্পিকারে আজান দেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা
- দক্ষিণ লেবাননে বাড়ি-ফেরাতে সতর্ক করেছে ইসরায়েল
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গোপন তথ্য ফাঁসের ঘটনায় তদন্ত নিয়ে অভিযোগের জবাবে কঠোর ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেটের প্রধান রোনেন বার। তিনি সমালোচকদের প্রতি অভিযোগ করে বলেছেন, যুদ্ধের সময় সংস্থাকে দুর্বল করার চেষ্টা চলছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইসরায়েল এ খবর জানিয়েছে। শুক্রবার চ্যানেল টুয়েলভ নিউজ জানায়, জায়নবাদী কয়েকজন যাজকের অভিযোগের ভিত্তিতে রোনেন বার এই চিঠি লেখেন। মূলত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও তাদের আচরণ নিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রকাশ্য অভিযোগের জবাবে এই চিঠি লেখা হয়। যদিও তার নাম কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। তার সম্পর্কে গুজব রয়েছে যে, তিনি রোনেন বার, আইডিএফের বর্তমান প্রধান হারজি হালেভি ও অ্যাটর্নি জেনারেল বাহারাভ-মিয়ারাকে বরখাস্ত করার পরিকল্পনা করছেন। যদিও এ নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। শিন বেটের তদন্তের ফলস্বরূপ ২১ নভেম্বর তার সহকারী এলি ফেল্ডস্টেইন ও এক অজ্ঞাতনামা আইডিএফ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর জাতীয় নিরাপত্তা অভিযোগে মামলা দায়ের হয়। তিনি আরও বলেন, তদন্তে পক্ষপাতিত্ব বা অমানবিক আচরণ করা হয়নি। তদন্ত হয়েছে যথাযথ বিচারিক তত্ত্বাবধানে। তাকে পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত করে বার বলেন, যুদ্ধের ব্যর্থতার দায়ভার নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা প্রতিরক্ষা বিভাগের সদস্যরাই প্রথম স্বীকার করেছি। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই শিন বেট একটি জাতীয় তদন্ত কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়ে এসেছে। চিঠিতে বার সমালোচকদের উদ্দেশ্যে উল্লেখ করেন, কিছু ব্যক্তি বিশেষ স্বার্থের জন্য প্রকৃত ঘটনা বিকৃত করে ষড়যন্ত্র ছড়াচ্ছে। এতে সংস্থার প্রতি জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি করছে। তবে শিন বেট যথাসম্ভব ধৈর্য ধরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তদন্তের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বার বলেন, এই ঘটনার কারণে জাতীয় নিরাপত্তা, যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন ও সেনাদের সুরক্ষায় ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে হোয়াইট হাউস গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির জন্য একটি চুক্তি নিয়ে কাজ করছে। তবে এখনো এটি অর্জিত হয়নি। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান গত রবিবার এনবিসিকে এ কথা বলেছেন। অন্যদিকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আঞ্চলিক নেতারা আলোচনা করতে মিলিত হলেও সংঘর্ষ চলছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সক্রিয়ভাবে এটি (চুক্তি) বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছি। আমরা আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ শক্তিগুলোর সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত এবং গতকালও এই বিষয় নিয়ে কাজ চলছে। তিনি আরো বলেন, এখনো সেখানে (চুক্তিতে) পৌঁছনো হয়নি, তবে আমাদের আশা, আমরা একটি যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির চুক্তি করতে পারব। তার এই মন্তব্য লেবাননে হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে ইসরায়েল হামলা করার পর এলো। ইসরায়েল ও ইরান সমর্থিত এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে যুদ্ধবিরতি একটি অত্যন্ত ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। এই সংঘাত সম্পর্কে সুলিভান এনবিসিকে বলেন, আমরা যুদ্ধবিরতি চুক্তিটির প্রশংসা করি এবং যুক্তরাষ্ট্র লেবাননের সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করছে, যাতে এটি ‘কার্যকরভাবে’ বাস্তবায়ন হয়। আমরা এটি রক্ষা করতে চাই এবং এটি যেন পুরোপুরি কার্যকর হয় তা নিশ্চিত করতে চাই।
আবার দখলদার ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গিভির মসজিদগুলোতে লাউড স্পিকারে আজান না দিতে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। স্পিকারে আজান দেওয়া হলে সেখানে সরাসরি বাধা দিতে বলেছেন এই কট্টর ডানপন্থি। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, যে মসজিদে স্পিকার ব্যবহার করতে দেখা যাবে সেটিতে ইসরায়েলি পুলিশকে প্রবেশ করে স্পিকার জব্দ করার অনুমতিও দিয়েছেন উগ্রপন্থি ইতামার বেন গিভির। তবে ইসরায়েলি বিরোধী দলীয় নেতারা ইতামার বেন গিভিরের এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। যার মধ্যে আছেন লেবার পার্টির গিলাদ কারিভ। তিনি মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে লিখেছেন, বেন গিভির ইসরায়েলের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছেন। ব্যারেল গুলোতে একটি ম্যাচ আগুন না ধরানো পর্যন্ত বেন গিভির থামবে না। হাদেস-টা’আলের নেতা আহমেদ তিবিও এই নিষেধাজ্ঞার কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বেন গিভির ঘৃনা ও আরবদের নিপীড়নের ওপর তার ঘাঁটি তৈরি করেছেন। এই মুসলিম ইসরায়েলি সাংসদ সতর্কতা দিয়ে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দাঙ্গাবাজ মন্ত্রীর কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী।
এছাড়াও লেবাননে লোকজনকে বাড়ি-ফেরার বিষয়ে ফের সতর্ক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার কারণে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে নিজেদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে সেখানকার বাসিন্দারা। সেখানে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ায় দলে দলে বেসামরিক লোকজন নিজেদের নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরতে শুরু করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনী দক্ষিণ লেবাননের বাসিন্দাদের নিজেদের বাড়ি-ঘরে ফিরে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আভিচায় আদরাই সামাজিক মাধ্যম এক্সে এক বিবৃতিতে বলেন, আমি আপনাদের মনে করিয়ে দিচ্ছি যে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিম্নলিখিত গ্রাম এবং এর আশেপাশের লাইনের দক্ষিণ অংশ যেতে নিষেধ করা হয়েছে। শেবা, আল-হাব্বারিয়েহ, মারজায়ুন, আরনৌন, ইয়োহমোর, কানতারা, চাকরা, বারাচিত, ইয়াটার এবং আল-মানসুরি এলাকায় লোকজনকে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, যারা দক্ষিণাঞ্চলের এই এলাকায় প্রবেশ করবেন তারা নিজেদেরকেই বিপদে ফেলবেন। আদরাই আরও ৬০টির বেশি গ্রামে প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তিনি বলেন, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত আপনাদের বাড়ি-ঘরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী আপনাদের ওপর কোনো ধরনের হামলা চালাতে চায় না।

























