- উ.কোরিয়া-রাশিয়া কৌশলগত চুক্তি কার্যকর
- মার্কিন সরকার ডলারকে শত্রুতার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে
- মার্কিন একতরফা নীতির বিরুদ্ধে এক হচ্ছে ইরান, চীন ও রাশিয়া
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতমূলক পরিবেশের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। এদিকে উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে কম্প্রেহেনসিভ স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ ট্রিটি কার্যকর হয়েছে। এছাড়াও চীন এবং রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমেরিকার একতরফা নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ইরান।
রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ভিটিবি ব্যাংক আয়োজিত এক বিনিয়োগ সম্মেলনে বক্তৃতায় তিনি বলেন, সংকট থেকে বের হতে মস্কোর নতুন লজিস্টিক চিন্তা একটি অনিবার্য প্রক্রিয়া। এতে অর্থনীতি ও বাণিজ্যের বৃদ্ধি এবং ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হবে। ইউক্রেনে সেনা অভিযান শুরুর পর থেকে ইউরোপের নিষেধাজ্ঞায় এখন এশিয়া ও আফ্রিকার সঙ্গে রাশিয়ার তেল বাণিজ্য হচ্ছে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাশিয়াকে মূল্যছাড়ে বিক্রি করতে হচ্ছে জ্বালানি তেল। এশিয়া থেকে ইউরোপে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের পথ লোহিত সাগর আর সুয়েজ খালে খরচ বেড়েছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির অস্থিরতার কারণে কার্গোর পরিমাণও হ্রাস পেয়েছে।
তিনি সুয়েজ খালের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, কার্গোর পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে, এটা তার দেশের জন্য দুঃখজনক। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতমূলক পরিবেশের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন তিনি। প্রাথমিকভাবে ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি তৈরির পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে এবং বেশ আক্রমণাত্মকভাবে মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করছে। তিনি আরও বলেছেন, যে অর্থনীতি এবং লজিস্টিক রুটগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যার ফলে অনেক জাহাজ আফ্রিকা দিয়ে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মার্কিন ডলার থেকে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করে এমন কোনো ব্রিকস দেশের উপর ১০০% শুল্ক আরোপের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যের বিষয়েও পাল্টা জবাব দিয়েছেন তিনি। তার (ট্রাম্পের) উত্তরসূরিরা, তার রাজনৈতিক বিরোধীরা বৈশ্বিক রিজার্ভ কারেন্সি হিসাবে ডলারের মৌলিক ভিত্তিকে ক্ষুণ্ন করার জন্য অনেক কিছু করেছে। তার অভিযোগ, বর্তমান মার্কিন সরকার ডলারকে শত্রুতার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে।
এদিকে উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে কম্প্রেহেনসিভ স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ ট্রিটি কার্যকর হয়েছে। গত বুধবার মস্কোতে চুক্তির অনুমোদন নথি বিনিময়ের মাধ্যমে এটি কার্যকর হয় বলে জানিয়েছে উত্তর কোরীয় বার্তাসংস্থা কেসিএনএ। কেসিএনএ জানিয়েছে, কর্তৃত্ব, অধীনতা ও আধিপত্যবিহীন একটি স্বাধীন ও ন্যায়সংগত বহু মেরুভিত্তিক বিশ্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শক্তিশালী চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে এই চুক্তি। চলতি বছর জুনে পুতিনের পিয়ংইয়ং সফরের সময় উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে একটি শীর্ষ সম্মেলনের পরে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। এতে একটি পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ফলে কোনো পক্ষ সশস্ত্র আক্রমণের শিকার হলে অবিলম্বে উভয়ের জন্যই সামরিক সহায়তা নিশ্চিত করবে এই চুক্তি। ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান সংশ্লিষ্টতার প্রেক্ষাপটে পুতিনের পিয়ংইয়ং সফরের ধারাবাহিকতায় সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির চুক্তিটি কার্যকর হলো।
এছাড়াও চীন এবং রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমেরিকার একতরফা নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। গত বুধবার পেজেশকিয়ান রাজধানী তেহরানে চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী ঝাং গুয়োকিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমেরিকা আন্তর্জাতিক মঞ্চে একতরফা এবং স্বৈরাচারী নীতির অনুসরণ করছে, আমরা রাশিয়া এবং চীনের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি আরও বলেন, তার প্রশাসন ইরান-চীন ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে এবং তিনি অক্টোবর মাসে রাশিয়ার কাজানে ১৬তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের পার্শ্ববর্তী বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা করেছেন।
তিনি তার সরকারি ওয়েবসাইটে বলেন, আমরা শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ভালো সমঝোতায় পৌঁছেছি, এবং আপনার তেহরানে সফর এই সমঝোতাগুলোর অনুসরণে চীনা সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে। এদিকে, ঝাং গুয়োকিং তার সফরকালীন ইরানি প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের প্রতি শি জিনপিংয়ের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও সুস্বাস্থ্য জানান। চীনা উপপ্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সফরের লক্ষ্য হল শি এবং পেজেশকিয়ানের মধ্যে উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা করা। ইরান চীনের জন্য একটি কৌশলগত এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার, ঝাং গুয়োকিং উল্লেখ করে বলেন, চীন ইরানের সঙ্গে তার কৌশলগত এবং দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক শক্তিশালী করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

























