- ইউনের ভাগ্য এখন আদালতে
- প্রেসিডেন্ট ইউন আনুষ্ঠানিকভাবে বরখাস্ত
- ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে প্রধানমন্ত্রী হান
দক্ষিণ কোরিয়ার আইনপ্রণেতারা গত শনিবার দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় স্বল্প সময়ের জন্য সামরিক আইন জারি করা প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে অভিশংসন করতে পেরেছেন। তিনি এখন তার দায়িত্ব থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বরখাস্ত হয়েছেন এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী হান দক-সু ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট এখন দেশটি পরিচালনা করছেন।
ইউনকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরানো হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত এখন নির্ভর করছে দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক আদালতের ওপর। ছয় মাসের মধ্যে তারা এ বিষয়ে রায় জানাবে। আজ স্থানীয় সময় সকালে সাংবিধানিক আদালত বসবে। এ সময় আদালত ইউনের অভিশংসন বিচারের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করবে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। আদালত শুনানির তারিখ নির্ধারণ করবেন। তবে শুনানির সময় ইউন আদালতে উপস্থিত থাকবেন কি না, তা পরিষ্কার হয়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি। আদালতের নয় সদস্য বিশিষ্ট কাউন্সিলের অন্তত ছয় জন যদি ইউনের অভিশংসনের পক্ষে রায় দেন, তাহলে স্থায়ীভাবে প্রেসিডেন্ট পদ হারাবেন তিনি। সেক্ষেত্রে পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে আগাম নির্বাচন দিয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নিতে হবে দক্ষিণ কোরিয়াকে। আর সাংবিধানিক আদালত যদি তার অভিশংসনের বিপক্ষে রায় দেয়, সেক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুরো ক্ষমতা ফিরে পাবেন ইউন। দক্ষিণ কোরিয়ায় টানা অভিশংসিত হতে যাওয়া দ্বিতীয় রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট ইউন। এর আগে ২০১৭ সালে আরেক রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট পার্ক গুয়েন হাই অভিংশনের মাধ্যমে তার দায়িত্ব থেকে অপসারিত হয়েছিলেন।
গত ৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিকে সমূলে উৎপাটনের কথা বলে হঠাৎ করেই সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেন ইউন। তার এ ঘোষণায় পুরো দক্ষিণ কোরিয়া স্তম্ভিত হয়ে যায়। পরে জনতা ও আইনপ্রণেতাদের প্রবল বিরোধিতার মুখে সামরিক আইন প্রত্যাহারে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট।
এদিকে সংসদে আইনপ্রণেতাদের ভোটাভুটিতে অভিশংসিত হওয়া ইউন সুক-ইওলকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পদের দায়িত্ব থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। গত শনিবার দক্ষিণ কোরিয়ার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ২৪ মিনিটে তাকে বরখাস্ত করার তথ্য নিশ্চিত করেছে দেশটির প্রেসিডেন্টের কার্যালয়। অভিশংসিত হলেও জটিল আইনি প্রক্রিয়ার কারণে প্রেসিডেন্ট পদে থাকবেন তিনি। তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোনও নির্বাহী ক্ষমতা থাকবে না তার। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক আইন জারি করার স্বল্পকালীন প্রচেষ্টার ঘটনায় শনিবার অভিশংসিত হয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। অভিশংসনের পর প্রেসিডেন্টের পদ থেকেও তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে তার দায়িত্ব ও ক্ষমতা থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তবে সাংবিধানিক আদালত তার ভাগ্য নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকবেন তিনি। দেশটির সংবিধান, আইন ও প্রটোকল অনুযায়ী, ইউন সুক-ইওল কিছু ক্ষমতা হারালেও তার কিছু ক্ষমতা অব্যাহত থাকবে। বরখাস্তের পর ইউনের প্রধান সাংবিধানিক ক্ষমতা ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী হ্যান ডাক-সুর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কূটনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষর, কূটনীতিক নিয়োগ এবং পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত ক্ষমতা। এছাড়াও দুই কোরিয়ার একত্রীকরণ বিষয়ক জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে গণভোটে দেওয়ার অধিকার থাকবে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের। ফলে সামরিক আইন ঘোষণা ও বিদেশি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার একক ক্ষমতা হারাবেন ইউন। পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব ও ফৌজদারি অপরাধের বিচার থেকে রেহাই পাওয়ার সুযোগ হারাবেন তিনি। মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং সাংবিধানিক আদালতের তিনটি শূন্যপদসহ সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগের ক্ষমতাও স্থগিত করা হয়েছে তার। সামরিক আইন জারি ঘিরে গত সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়ার সংসদে প্রেসিডেন্ট ইউনের বিরুদ্ধে প্রথম অভিশংসনের প্রচেষ্টা চালান বিরোধীরা।
তবে সামান্য ভোটের ব্যবধানে সেই দফায় বেঁচে যান তিনি। ওই সময় তার রাজনৈতিক দল ভোট বয়কট করায় অভিশংসনের পক্ষে সংসদে বিরোধীদের কোরাম করা সম্ভব হয়নি। রয়টার্স বলছে, ইউনের পিপল পাওয়ার পার্টির অন্তত ১২ জন আইনপ্রণেতা বিরোধী শিবিরে যোগ দেওয়ার পর শনিবার দক্ষিণ কোরিয়ার সংসদে অভিশংসন প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। ৩০০ আসনের জাতীয় পরিষদে বিরোধীদের ১৯২ আসনে নিয়ন্ত্রণ তৈরি হয়। যা অভিশংসনের জন্য প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের পথ পরিষ্কার করে। গত শনিবার সংসদে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন মোট ২০৪ জন আইনপ্রণেতা। বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন ৮৫ জন। এছাড়া তিনজন আইনপ্রণেতা সংসদে অনুপস্থিত ছিলেন এবং আটটি ভোটকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এখন, ইউনের ভাগ্য নির্ভর করছে সাংবিধানিক আদালতের রায়ের ওপর। এই আদালতই স্থির করবে ইউনের অপসারণ বহাল থাকবে কি না। দক্ষিণ কোরিয়ার নিয়ম অনুযায়ী, পার্লামেন্টে অভিশংসনের ছয় মাসের মধ্যে এই বিষয়ে সাংবিধানিক আদালতের রায় জানাতে হবে যে প্রেসিডেন্ট ইউন প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকবেন নাকি বরখাস্ত হবেন। ইউনের দল পিপলস পাওয়ার পার্টির প্রধান হান ডং-হোন বলেছেন, তিনি ভোটের ফলাফল মেনে নিয়েছেন এবং এটাকে খুবই গুরুত্বের সাথে দেখছেন।পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হওয়ার আগে তিনি প্রেসিডেন্টকে রাজি করানোর চেষ্টা করেছিলেন যেন তিনি ভোটের আগেই পদত্যাগ করেন। তিনি বলেন, তার দল ‘ভুল সংশোধনের পক্ষে এবং সংবিধান ও গণতন্ত্রের সুরক্ষায় কাজ করে যাবে। এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ইউন ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মতো অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে।

























