১২:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তৈরি পোশাক খাতে সংকট পিছু ছাড়ছে না

  • সাইফ আশরাফ
  • আপডেট সময় : ০৭:৫৮:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • 120

#দাম কমাচ্ছেন বিদেশি ক্রেতারা
#কাটছে না শ্রমিক অসন্তোষ, বন্ধ ১৫৫ কারখানা
#ক্রেতা হারানোর শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা

দীর্ঘসময় ধরে শ্রমিক অসন্তোষ ছাড়াও জ্বালানির সংকট, ব্যাংক খাতের অস্থিতিশীলতায় গভীর সংকটে দেশের তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল ও নিট পোশাক খাত। উৎপাদন খরচ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ, ফলে মুনাফা করতে পারছেন না শিল্প মালিকরা। এতসব সংকটের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশের পোশাকের দাম কমিয়েছেন। সব মিলিয়ে সংকট যেন পিছু ছাড়ছে না দেশের জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই খাতের। এর সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশে রপ্তানি বাজারে ভাগ বসাচ্ছে প্রতিবেশী দেশগুলো। এতে কারখানার মালিক যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি দীর্ঘ মেয়াদে দেশের রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব সংকটের সরাসরি প্রভাবে গত এক বছরে তৈরি পোশাক, নিটওয়্যার ও টেক্সটাইলশিল্পের ১৪০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে ৭৬টি, নিট খাতে ৫০টি এবং টেক্সটাইল খাতের ১৪টি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার মোট ৯৪ হাজার কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। সম্প্রতি বেক্সিমকো গ্রুপ তাদের ১৫টি পোশাক কারখানার প্রায় ৪০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে। সব মিলিয়ে বন্ধ ১৫৫ কারখানায় এক লাখ ৩৪ হাজার কর্মী চাকরি হারিয়েছেন।
কারখানা বনএধর কারণ হিসেবে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দায়ি করছেন, কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার, কাঁচামাল আমদানিতে এলসি সমস্যা, শিল্পে অব্যাহত গ্যাস সংকট, গ্যাস ট্যারিফ বৃদ্ধি করা, বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ না পাওয়া, অব্যাহতভাবে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ বাড়ায় অনেকে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না। আবার অনেকে কারখানায় শ্রমিকদের বেতন দিতে না পেরে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন।

সবশেষ গতকাল গাজীপুর মহানগরের কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের নিট কম্পোজিট ডিভিশন, স্পিনিং ডিভিশন, কটন ডিভিশন ও ইয়ার্ন মিলস কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেইসঙ্গে আগামী ১৫ জানুয়ারি কারখানার এসব বিভাগের শ্রমিকদের সব পাওনা পরিশোধ করার আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বড় ধরনের বিশৃঙ্খলার শঙ্কায় এবং জানমালের নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বিষয়টি শ্রমিকদের নজরে আসলে বিকাল থেকে শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে কোনাবাড়ী (বাইমাইল) সাইনবোর্ড এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে সড়কের উভয় পাশে যানবাহন আটকা পড়ে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই নতুন করে উদ্বেগ বাড়িয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের দাম কমে যাওয়া। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্রেতারা রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশের পোশাকের দাম কমিয়েছেন প্রায় ৫ শতাংশ। আর যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের দাম প্রায় ৮ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়েছে। উদ্যোক্তারা জানান, পোশাকের দাম বাড়ানো না হলে বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাতে বিপর্যয় নেমে আসবে। খরচ বেড়ে যাওয়ায় নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন এবং ৯ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দেওয়া তার জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। শ্রমিকদের বেতন দিতে গিয়েই তিনি হিমশিম খাচ্ছেন।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে ৩.৩৩ শতাংশ। এর বিপরীতে ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া থেকে পোশাক আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। গত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আগের বছরের তুলনায় ভারতের পোশাক রপ্তানি ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রয়প্রবণতার এই পরিবর্তনকে ব্যবসায়ীরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে দেখছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই প্রবণতা মোকাবিলায় বাংলাদেশের পোশাক খাতকে নতুন কৌশল নিতে হবে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বাংলাদেশের পোশাকের দাম কমানোর পর আমাদের উৎপাদন খরচ আরও বেড়েছে। এটি দেশের পোশাকশিল্পের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেক কারখানা মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন করতে পারেনি। পোশাকের দাম না বাড়ানো হলে অনেক কারখানাই ৯ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট বাস্তবায়ন করতে পারবে না। কমমূল্যের কারণে অনেক ক্রয়াদেশই নেওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো না গেলে ক্রয়াদেশ থাকলেও রফতানি বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। তাছাড়া ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে বেশিদিন টিকে থাকা যাবে না।

বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, দেশের পোশাক খাতে প্রায় ৭৬টি কারখানা চলতি বছরই বন্ধ হয়েছে। ছয় মাসে ৫০টির বেশি কোম্পানি বন্ধ হয়েছে। বন্ধ কারখানার ৫১ হাজারের বেশি শ্রমিক চাকরি হারিয়েছে। শ্রমিক অসন্তোষ ও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল মালিকরা টিকে থাকতে পারেনি। গ্যাস সংকট, উচ্চ সুদহার, এলসি জটিলতাসহ নানা কারণে ছোট ও মধ্যম কোম্পানিগুলো বন্ধ হয়েছে। সম্প্রতি বড় কিছু কোম্পানিও বন্ধ হয়েছে রাজনৈতিক ইস্যুর কারণে। আবার অনেকে শ্রমিকদের বেতন দিয়ে টিকতে পারছে না। রপ্তানিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা পোশাক খাত যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও অস্থিতিশীল হবে। এতে আমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় থাকা দেশগুলো বেশি লাভবান হবে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, সরকার নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার পরও কারখানা চালু রাখা যাচ্ছে না। তাই কর্তৃপক্ষ মজুরি দিতে না পেরে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে। বেক্সিমকো শিল্পগোষ্ঠীর রপ্তানি আয়ের প্রকৃত চিত্র না থাকায় মজুরি পরিশোধে সরকারকে গত চার মাসে দায় নিতে হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার। প্রতিষ্ঠানটি একটি সরকারি ব্যাংক থেকে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা উধাও করে দিয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সব রেকর্ড ভেঙে স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস, ভরি ছাড়াল দুই লাখ ২৭ হাজার

তৈরি পোশাক খাতে সংকট পিছু ছাড়ছে না

আপডেট সময় : ০৭:৫৮:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

#দাম কমাচ্ছেন বিদেশি ক্রেতারা
#কাটছে না শ্রমিক অসন্তোষ, বন্ধ ১৫৫ কারখানা
#ক্রেতা হারানোর শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা

দীর্ঘসময় ধরে শ্রমিক অসন্তোষ ছাড়াও জ্বালানির সংকট, ব্যাংক খাতের অস্থিতিশীলতায় গভীর সংকটে দেশের তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল ও নিট পোশাক খাত। উৎপাদন খরচ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ, ফলে মুনাফা করতে পারছেন না শিল্প মালিকরা। এতসব সংকটের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশের পোশাকের দাম কমিয়েছেন। সব মিলিয়ে সংকট যেন পিছু ছাড়ছে না দেশের জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই খাতের। এর সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশে রপ্তানি বাজারে ভাগ বসাচ্ছে প্রতিবেশী দেশগুলো। এতে কারখানার মালিক যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি দীর্ঘ মেয়াদে দেশের রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব সংকটের সরাসরি প্রভাবে গত এক বছরে তৈরি পোশাক, নিটওয়্যার ও টেক্সটাইলশিল্পের ১৪০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে ৭৬টি, নিট খাতে ৫০টি এবং টেক্সটাইল খাতের ১৪টি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার মোট ৯৪ হাজার কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। সম্প্রতি বেক্সিমকো গ্রুপ তাদের ১৫টি পোশাক কারখানার প্রায় ৪০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে। সব মিলিয়ে বন্ধ ১৫৫ কারখানায় এক লাখ ৩৪ হাজার কর্মী চাকরি হারিয়েছেন।
কারখানা বনএধর কারণ হিসেবে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দায়ি করছেন, কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার, কাঁচামাল আমদানিতে এলসি সমস্যা, শিল্পে অব্যাহত গ্যাস সংকট, গ্যাস ট্যারিফ বৃদ্ধি করা, বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ না পাওয়া, অব্যাহতভাবে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ বাড়ায় অনেকে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না। আবার অনেকে কারখানায় শ্রমিকদের বেতন দিতে না পেরে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন।

সবশেষ গতকাল গাজীপুর মহানগরের কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের নিট কম্পোজিট ডিভিশন, স্পিনিং ডিভিশন, কটন ডিভিশন ও ইয়ার্ন মিলস কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেইসঙ্গে আগামী ১৫ জানুয়ারি কারখানার এসব বিভাগের শ্রমিকদের সব পাওনা পরিশোধ করার আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বড় ধরনের বিশৃঙ্খলার শঙ্কায় এবং জানমালের নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বিষয়টি শ্রমিকদের নজরে আসলে বিকাল থেকে শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে কোনাবাড়ী (বাইমাইল) সাইনবোর্ড এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে সড়কের উভয় পাশে যানবাহন আটকা পড়ে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই নতুন করে উদ্বেগ বাড়িয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের দাম কমে যাওয়া। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্রেতারা রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশের পোশাকের দাম কমিয়েছেন প্রায় ৫ শতাংশ। আর যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের দাম প্রায় ৮ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়েছে। উদ্যোক্তারা জানান, পোশাকের দাম বাড়ানো না হলে বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাতে বিপর্যয় নেমে আসবে। খরচ বেড়ে যাওয়ায় নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন এবং ৯ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দেওয়া তার জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। শ্রমিকদের বেতন দিতে গিয়েই তিনি হিমশিম খাচ্ছেন।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে ৩.৩৩ শতাংশ। এর বিপরীতে ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া থেকে পোশাক আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। গত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আগের বছরের তুলনায় ভারতের পোশাক রপ্তানি ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রয়প্রবণতার এই পরিবর্তনকে ব্যবসায়ীরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে দেখছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই প্রবণতা মোকাবিলায় বাংলাদেশের পোশাক খাতকে নতুন কৌশল নিতে হবে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বাংলাদেশের পোশাকের দাম কমানোর পর আমাদের উৎপাদন খরচ আরও বেড়েছে। এটি দেশের পোশাকশিল্পের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেক কারখানা মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন করতে পারেনি। পোশাকের দাম না বাড়ানো হলে অনেক কারখানাই ৯ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট বাস্তবায়ন করতে পারবে না। কমমূল্যের কারণে অনেক ক্রয়াদেশই নেওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো না গেলে ক্রয়াদেশ থাকলেও রফতানি বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। তাছাড়া ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে বেশিদিন টিকে থাকা যাবে না।

বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, দেশের পোশাক খাতে প্রায় ৭৬টি কারখানা চলতি বছরই বন্ধ হয়েছে। ছয় মাসে ৫০টির বেশি কোম্পানি বন্ধ হয়েছে। বন্ধ কারখানার ৫১ হাজারের বেশি শ্রমিক চাকরি হারিয়েছে। শ্রমিক অসন্তোষ ও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল মালিকরা টিকে থাকতে পারেনি। গ্যাস সংকট, উচ্চ সুদহার, এলসি জটিলতাসহ নানা কারণে ছোট ও মধ্যম কোম্পানিগুলো বন্ধ হয়েছে। সম্প্রতি বড় কিছু কোম্পানিও বন্ধ হয়েছে রাজনৈতিক ইস্যুর কারণে। আবার অনেকে শ্রমিকদের বেতন দিয়ে টিকতে পারছে না। রপ্তানিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা পোশাক খাত যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও অস্থিতিশীল হবে। এতে আমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় থাকা দেশগুলো বেশি লাভবান হবে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, সরকার নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার পরও কারখানা চালু রাখা যাচ্ছে না। তাই কর্তৃপক্ষ মজুরি দিতে না পেরে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে। বেক্সিমকো শিল্পগোষ্ঠীর রপ্তানি আয়ের প্রকৃত চিত্র না থাকায় মজুরি পরিশোধে সরকারকে গত চার মাসে দায় নিতে হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার। প্রতিষ্ঠানটি একটি সরকারি ব্যাংক থেকে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা উধাও করে দিয়েছে।