#পার্কের জায়গা, পাবলিক টয়লেট দখল করে রেস্টুরেন্ট
#সিটি করপোরেশনের উদ্ধার করা জায়গা পুনরায় দখল
#খালের জায়গা দখল করে ট্রাক স্ট্যান্ড
রাজধানী ঢাকাতে দখলদারদের দৌরাত্ম্য নতুন কিছু নয়। সরকারি জায়গা থেকে নদী, খাল, পার্ক, ফুটপাথ, সড়ক, ড্রেন সবকিছুতেই পড়ে দখলদারদের থাবা। তবে ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের পর নাগরিকদের উপযুক্ত পরিবেশ ও বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা গড়ার যে প্রত্যয় ছিল, তা ৫ মাস পার হতেই ফিকে হতে শুরু করেছে। পুরাতন দখলদারদের জায়গায় এখন নতুন দখলাদাররা হানা দিচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে ওভারব্রিজ, ফ্লাইওভারের নিচের অংশ, খালের সীমানা, নদীর তীর, পার্কের জায়গা সব দখল হয়েছে, এমনি পাবলিক টয়লেটও বাদ পড়েনি। উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা সিটি করপোরেশনের জায়গাও ছাড় দিচ্ছে না দখলদাররা। দখলদারদের এমন দৌরাত্ম্য যেন অসহায় খোদ সিটি করপোরেশনই।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ও তার অংগ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দখলের সাথে জড়িত ছিল। পট পরিবর্তনে তারা এখন বেশিরভাগই পলাতক। এই সুযোগে নতুন করে দখলে জড়িয়েছে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নামধারী কিছু নেতাকর্মী। তবে দখলদারত্ব রুখতে নীরব ভূমিকায় রয়েছে দুই সিটি করপোরেশন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দায়িত্বে গাফিলতি, সঠিক তদারকি এবং প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে দখল হয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই দখলদারদের লাগাম টানা দরকার বলে জানান তারা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন রামচন্দ্রপুর খালের বিভিন্ন অংশদখলের অভিযোগ উঠেছে, মোহাম্মদপুরের স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে। সেখানে ছোট ছোট টিনের ঘরের পাশাপাশি ইট-বালি-সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করেছে পাকা স্থাপনা। আন্তঃজেলা চালক সমিতির নামে খালের জমি ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে ট্রাক স্ট্যান্ড। উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সুতিভোলা খালেরও অনেকাংশ দখল করেছে স্থানীয়রা। এছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন কাজলা খালের উপর তৈরি হয়েছে নতুন দোকানপাট। তার দায়িত্বে আছেন ওয়ার্ড যুবদলের নেতাকর্মীরা। এর আগে তার দায়িত্বে ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তবে চলতিবছরই রামচন্দ্রপুর ও সুতিভোলা খালে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছিলো সিটি করপোরেশন।
শুধু খাল নয় খোদ সিটি করপোরেশনের জায়গাতেও চোখ দখলদারদের। এমনকি উচ্ছেদ করে সিটি করপোরেশন জায়াগার দখল বুঝে নেওয়ার পরও আবারও দখলের ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছর অভিযান চালিয়ে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে ৪২ নং ওয়ার্ডের কবি নজরুল কলেজের পাশে থাকা সিটি করপোরেশন মার্কেটের জায়গা উদ্ধার করেছে ডিএসসিসি। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর তার দখল নিয়েছে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। সিটি করপোরেশনের এই জায়গাটি কবি নজরুল কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রিন্টু ও তার সহযোগীরা দখল করেছেন। এছাড়াও সিটি করপোরেশন মার্কেটের রুম দখল করে বানিয়েছেন ওয়ার্ড বিএনপির কার্যালয়।
দখলদারদের হানা থেকে বাদ যায়নি পার্ক ও পাবলিক টয়লেটও। ডিএসসিসির ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত নবাব সিরাজউদ্দৌলা পার্কটির জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে রেস্টুরেন্ট। সরেজমিনে দেখা যায়, সিটি করপোরেশন কফি শপের জন্য ছোট যে দোকান ইজারা দিয়েছে তা সরকার পরিবর্তনের পরপর তড়িঘড়ি করে জায়গা প্রশস্ত করে আগের ঠিকাদার থেকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে পার্কের পরিসর সরু হয়ে গেছে। ডিএসসিসির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন সিক্কাটুলি এলাকায় অবস্থিত শহীদ বুদ্ধিজীবী খালেক সরদার পার্ক। সিক্কাটুলি পঞ্চায়েত কমিটি দখল করে রেখেছে পার্কের একমাত্র পাবলিক টয়লেটটি। বিগত সরকারের সময় তারা প্রভাব খাটিয়ে টয়লেটটি দখল করে। এখন সেই পঞ্চায়েতের বিএনপি সমর্থিত লোকজনের কাছে টয়লেটের গেটের চাবি। এছাড়াও নবাব সিরাজউদ্দৌলা পার্কের টয়লেট, সাঈদ খোকন পার্কের টয়লেটসহ দক্ষিণ সিটির বেশ কয়েকটি পার্কের টয়লেট দখল হয়ে গেছে। জানা যায়, নবাব সিরাজউদ্দৌলা পার্কের জায়গা দখল করে রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করা ব্যক্তিরাই সেখানকার পাবলিক টয়লেটটি দখল করেছে। আগে টয়লেটটি রেস্টুরেন্টের স্টোর রুম হিসেবে ব্যবহার করা হলেও এখন শুধু রেস্টুরেন্টের স্টাফরা এটি ব্যবহার করছেন।
দখল হয়ে যাওয়া খালের জায়গা পুনরুদ্ধারে বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খাইরুল আলম বলেন, খাল শুধু উদ্ধার করলেই হবে না, এর জন্য আমাদের অনেক পরিকল্পনা আছে। খাল উদ্ধার করে আমরা প্যাকেজ অনুযায়ী কাজ করবো। খাল দখল মুক্ত করে আমরা ওয়াকওয়ে, বৃক্ষ রোপণসহ খালে নৌকা চলাচলের উদ্যোগ নিয়েছি।
দখল হয়ে যাওয়া পার্কের জায়গা, পাবলিক টয়লেট এবং সিটি করপোরেশনের জায়গা উদ্ধারের বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইজার ফারাবী বলেন, দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য আমরা নিয়মিত উদ্ধার অভিযান চালানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এখনও আগের পর্যায়ে আসতে পারেনি। পুলিশ ফোর্স এভেইলেভেল না। আজকেও আমাদের ধানমন্ডিতে অভিযান চালানোর কথা ছিল। ম্যাজিস্ট্রেটকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছিল। কিন্তু থানা থেকে জানানো হলো পুলিশের সংকট আছে।


























