
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলিনার অ্যাশভিলের অ্যাশভিল আঞ্চলিক বিমানবন্দরে হারিকেন হেলিনে বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন এবং পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টা পর্যালোচনা করার জন্য হ্যাঙ্গারে একটি দুর্যোগ ব্রিফিং চলাকালীন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প এবং সামারিটানস পার্সের প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন গ্রাহামের সাথে কথা বলছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প -রয়টার্স
- দুর্যোগ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প
- ক্যালিফোর্নিয়াকে ভোটাধিকার সংশোধনের আলটিমেটাম ট্রাম্পের
- অভিবাসীবাহী মার্কিন ফ্লাইট অবতরণের অনুমতি দেয়নি মেক্সিকো
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত শুক্রবার দেশটির দুর্যোগপীড়িত নর্থ ক্যারোলাইনা ও ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য পরিদর্শন করেছেন। ক্ষমতায় ফিরেই এই সফরের মাধ্যমে তিনি জরুরি সাহায্য প্রদানের বিষয়টিকে রাজনৈতিক লক্ষ্যপূরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন।
তিনি বলেছেন, তিনি এমন একটি অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করবেন, যা কেন্দ্রীয় দুর্যোগ সংস্থাকে বন্ধ করে দিতে পারে। তিনি বলেন, এটি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা প্রয়োগ করার এবং কোন রাজ্যগুলো ওয়াশিংটন থেকে অর্থ পাবে, সে বিষয়টি নির্ধারণ করতে তার প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। এ সময় এই রিপাবলিকান ধনকুবের ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে তহবিল বন্ধেরও হুমকি দেন। তিনি বলেন, ভয়াবহ দাবানল মোকাবিলায় যদি তার নির্দেশ সঠিকভাবে অনুসরণ করা না হয়, তবে তিনি সে পদক্ষেপ নেবেন।
এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই সফর এমন একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হলো যখন তার প্রতিশ্রুতি অনুসারে লাখ লাখ অনিবন্ধিত লোকজনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে গেছে। এদের মধ্যে অনেককে সামরিক বিমানে করে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার কাজও চলছে। নর্থ ক্যারোলাইনাতে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা (ফেমা) সত্যিকারভাবেই আমাদের ডোবাচ্ছে। এই রাজ্যটিতে গত বছর হারিকেন হেলেনের আঘাতে সৃষ্ট বন্যায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়।
তিনি আরও বলেন, তিনি একটি নির্বাহী আদেশে সই করতে পারেন, যেটির মাধ্যমে ফেমাকে পুনর্গঠনের বা ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হতে পারে অথবা ফেমাকে বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। তিনি বলেন, আমরা ফেমাকে চলে যেতে সুপারিশ করব। এ সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রলয়াঙ্করী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের সঙ্গে দেখা করে। লোকজন কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর ব্যর্থতার কথা এবং বিমা কোম্পানির ব্যর্থতার বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন। অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানলের ফলে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তার দায় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বি ডেমোক্র্যাটদের ওপর তুলে দিতে চান। ভয়াবহ এই দাবানলে ২৪ জনেরও বেশি লোক মারা যায় এবং শত শত কোটি ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়।
তিনি বলেন, তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় সাহায্য প্রদান বন্ধ করে দেবেন যদি না রাজ্যটি তাদের ভোটাধিকার আইন পরিবর্তন না করে। তিনি বলেন, ক্যালিফোর্নিয়ার যদি কোনো শর্ত থাকে, তবে আমি দুটো বিষয় চাই, আমি ক্যালিফোর্নিয়ার নাগরিকদের জন্য ভোটার আইডি চাই এবং আমি দেখতে চাই, পানি ছাড়া হচ্ছে এবং তা নেমে আসছে। আর এরপরই আমি ক্যালিফোর্নিয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো প্রেসিডেন্ট হব, যা তারা আগে কখনো দেখেননি।
এদিকে, অভিবাসীদের তাড়িয়ে দিতে ব্যবহার করা মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি পরিবহন উড়োজাহাজ অবতরণে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে প্রতিবেশী দেশ মেক্সিকো। যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর কর্মকর্তাদের বরাতে এনবিসি নিউজে এমন খবর উঠে এসেছে। গত শুক্রবার মধ্য আমেরিকার দেশ গুয়েতেমালায় এমন তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে মার্কিন সামরিক বিমান, প্রতিটি ফ্লাইটে প্রায় ৮০ জনের মতো অভিবাসী ছিলেন। অনুমতি না মেলায় সি-১৭ পরিবহন উড়োজাহাজটি পরিকল্পনা অনুসারে মেক্সিকোয় অবতরণ করতে পারেনি। ট্রাম্প প্রশাসনের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করার বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি মেক্সিকো সরকার। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকোর সম্পর্ক এখন আলোচনায়। দুই দেশের যৌথ সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন তিনি। সীমান্তে অতিরিক্ত দেড় হাজার সেনা মোতায়েনেরও নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
এছাড়াও আরও কয়েক হাজার সেনা সীমান্তে যুক্ত হবেন বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা। মেক্সিকোর মাদক চক্রকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মেক্সিকো উপসাগরের নাম বদলে আমেরিকা উপসাগর করা হয়েছে। এছাড়াও মেক্সিকোর সব পণ্যে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কারোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প, যা আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর করা হতে পার।
তবে পরিস্থিতি যাতে উত্তপ্ত না হয়, সেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম। এমনকি ফিরে আসা মেক্সিকোর নাগরিকদের পুনর্বাসনের বিষয়েও তার মনোভাব খোলামেলা। কিন্তু এই বামপন্থি নেতা বলেন, অভিবাসীদের সবাইকে তাড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে তার সম্মতি নেই। মার্কিন অর্থনীতির জন্য মেক্সিকোর অভিবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ। সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর অভিবাসনপ্রত্যাশীদের স্থানান্তরিত করতে মার্কিন সামরিক বাহিনী উড়োজাহাজ পরিচালনা করছে। এরআগে লোকজনকে এক দেশ থেকে অন্য দেশে নিয়ে যেতে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বাহিনী পরিবহন উড়োজাহাজ ব্যবহার করতো, যেমনটা ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে সেনাপ্রত্যাহারের সময় ঘটেছে।
কিন্তু স্মরণাতীতকালে এই প্রথমবারের মতো অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে অন্যত্র সরিয়ে দিতে উড়োজাহাজ ব্যবহার করতে দেখা গেছে মার্কিন সামরিক বাহিনীকে। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর পেন্টাগন জানিয়েছে, ক্যালিফোর্নিয়া, সান দিয়াগো, টেক্সাস ও এল পাসো থেকে পাঁচ হাজার অভিবাসীকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে ফ্লাইট পরিচালনা করবে সেনাবাহিনী। গুয়েতেমালা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার ৮০ অভিবাসী বহনকারী তিনটি মার্কিন ফ্লাইট সেখানে অবতরণ করেছে।

























