* শ্রমিক অসন্তোষেও সচল বড় কারখানা
* উৎপাদনে এগিয়ে পোশাক খাত
* চলতি অর্থবছরে আয় বেড়েছে ১২ শতাংশ, জানুয়ারিতে রপ্তানি বেড়েছে ৫.৭ শতাংশ
‘শ্রমিকদের দক্ষতায় কারখানাগুলোয় উৎপাদন বাড়ায় আগের তুলনায় রপ্তানি আয় বেড়েছে’
-মহিউদ্দিন রুবেল, সাবেক পরিচালক, বিজিএমইএ
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নানা কারণে সংকটে পড়েছে তৈরি পোশাক খাত। শ্রমিক অসন্তোষ ও বিভিন্ন কারণে গভীর সংকটের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছিল রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস এই খাতটি। এই খাতে প্রায় চার মাস অস্থিরতা বিরাজ করায় আস্থার সংকট দেখা দিয়েছিল বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে। ক্রেতাদের আস্থা ফেরাতে সরকারের পাশাপাশি তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র নানামুখী উদ্যোগ সত্ত্বেও বহু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তবুও এই সংকটের মধ্যেও দেখা দিয়েছে আশার আলো। নানা সংকট মোকাবিলা করেই এই সময়ে বেড়েছে রপ্তানি আয়। চলতি অর্থবছরেই রপ্তানি আয় বেড়েছে ১২ শতাংশ। আর গত জানুয়ারিতে রপ্তানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্রমিকরা আগের তুলনায় দক্ষ হওয়ার কারণে চালু থাকা বেশির ভাগ কারখানার উৎপাদনশীলতা বেড়েছে। ব্যাংকের অসহযোগিতাসহ বেশ কিছু কারণে অনেক ছোট বা মাঝারি কারখানা বন্ধ হয়ে গেলেও বড় ও দক্ষ কারখানাগুলো উৎপাদন বাড়িয়েছে। ফলে মোট রপ্তানি আয় না কমে কিছু ক্ষেত্রে আরও বেড়েছে, যা দেশের রপ্তানি আয় বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে।
গত ছয় মাসের রপ্তানি আয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ছয় মাসে বন্ধ হয়েছে তৈরি পোশাক খাতে ১০০টির বেশি কারখানা। এর মধ্যে ৮৩টি কোম্পানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। আরও অন্তত ১০টি অস্থায়ী ভিত্তিতে বন্ধ হয়েছে। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এসব কারখানা বন্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, গত ছয় মাসে বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হলেও রপ্তানি আয় কমেনি, বরং গত কয়েক মাস ধরে পোশাক রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। উদ্যোক্তারাও বলছেন, শ্রম অসন্তোষে ও ব্যাংকের অসহযোগিতার কারণে বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হলেও অবিশ্বাস্যভাবে রপ্তানি আয় বাড়ছে।
ইপিবির সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, টানা চার মাস ধরে ৪ বিলিয়ন অর্থাৎ ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। সদ্যবিদায়ী জানুয়ারি মাসে দেশে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৪৪৩ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাস জুলাই-জানুয়ারিতে দেশ থেকে মোট ২ হাজার ৮৯৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১২ শতাংশ। নিট পোশাকে ১২ ও ওভেন পোশাকে ১১ দশমিক ৯৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। আলোচ্য সময়ে সাড়ে ২৩ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এছাড়া প্লাষ্টিক পণ্যে ২৪ দশমিক ২২ শতাংশ, চামড়ায় ৮ দশমিক ০৮ শতাংশ, প্রক্রিয়াজাত পণ্যে ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ, কৃষিজাত পণ্যে ১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ, হিমায়িত পণ্যে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
এদিকে পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যে আস্থার সংকট দানা বেঁধেছিল তা ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে। আর অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই রপ্তানি প্রবৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে বেশ খানিকটা স্বস্তি এনে দিয়েছে। কারণ সম্প্রতি মার্কিন ডলার সংকটসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বাংলাদেশে অর্থনীতি। যদিও এই পরিস্থিতির মধ্যে টানা ৫ মাসই রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গার্মেন্ট খাতের এই পরিস্থিতির মধ্যে রপ্তানি আয়ের উল্লম্ফনে অনেকে প্রশ্ন তুললেও কারখানার মালিকরা বলছেন অন্তত গুরুত্বপূর্ণ ৬টি কারণে রপ্তানি আয় বাড়ছে। এদিকে বাংলাদেশ কিছু নির্দিষ্ট দেশে তুলা ও কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু বিকল্প বাজার থেকে কাঁচামাল আমদানি করার কারণেও উৎপাদন ব্যাহত হয়নি বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বেশ কয়েকটি কারণে রপ্তানি আয় বেড়েছে। কর্মীদের দক্ষতা বেড়েছে। শ্রমিকরা আগের তুলনায় দক্ষ হওয়ার কারণে চালু থাকা বেশির ভাগ কারখানার উৎপাদনশীলতা বেড়েছে। ব্যাংকের অসহযোগিতাসহ বেশ কিছু কারণে অনেক ছোট বা মাঝারি কারখানা বন্ধ হয়ে গেলেও বড় ও দক্ষ কারখানাগুলো উৎপাদন বাড়িয়েছে। ফলে মোট রপ্তানি আয় কমেনি, বরং কিছু ক্ষেত্রে বেড়েছে।























