০৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্বাচনের সময় ঘোষণা করলেন মিয়ানমারের জান্তা প্রধান

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা প্রধান মিন অং হ্লেইং বলেছেন, দেশে চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর দেশটিতে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠানের এই সময় ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

শনিবার মিন অং হ্লেইংয়ের বরাত দিয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। দেশটির জান্তা প্রধান বলেছেন, ‘‘আমরা ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে অথবা… ২০২৬ সালের জানুয়ারির মাঝে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করছি।’’

শুক্রবার বেলারুশ সফরকালে তিনি বলেন, মিয়ানমারে এবার ‘‘অবাধ ও নিরপেক্ষ’’ ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে দেশের ৫৩টি রাজনৈতিক দল তালিকা জমা দিয়েছে বলে জানান তিনি।

মিনস্কে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে বৈঠকে মিন অং হ্লেইং বলেন, আমরা বেলারুশের নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলগুলোকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তাদের মিয়ানমারে এসে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার আহ্বান জানিয়েছি।

২০২০ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলে নেয় সেনাবাহিনী। ওই নির্বাচনে দেশটির গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে।

অভ্যুত্থানের পর থেকে ভিন্ন মতাবলম্বী ও এনএলডির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত অভিযান শুরু করে জান্তা বাহিনী। সেই সময় দেশটির গণতন্ত্রকামী নেত্রী অং সান সুচিকে ক্ষমতাচ্যুত করে গৃহবন্দি করে জান্তা সরকার। তখন থেকেই দেশটিতে জান্তা বিরোধী বিক্ষোভ-প্রতিবাদ অব্যাহত আছে। বিক্ষোভ দমনে জান্তা সরকার ব্যাপক বলপ্রয়োগ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

দেশজুড়ে চলমান অস্থিরতার কারণে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে জান্তা প্রধান বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের কথা বলেছেন। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর থেকে মিন অং হ্লেইং বারবার বহুদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গত জুনে তিনি বলেছিলেন, ২০২৫ সালে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চলমান সহিংসতার কারণে আগের নির্বাচনের সময়সীমা স্থগিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। মিন অং হ্লেইং জোর দিয়ে বলেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতা ধরে রাখার পরিকল্পনা নেই জান্তার।

এদিকে, জান্তার অধীনে কোনও বৈধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে না। আর বিশ্লেষকরা বলেছেন, নির্বাচনে সামরিক বাহিনীবিরোধী গোষ্ঠীগুলো এই নির্বাচনকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারে। এতে দেশজুড়ে আরও রক্তপাতের সূত্রপাত ঘটবে।

মিয়ানমারের রাজনৈতিক বন্দিদের সহায়তা দানকারী সংস্থা অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন অব পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) বলছে, দেশটিতে অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত সামরিক বাহিনীর হাতে ৬ হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষ নিহত ও ২৮ হাজারের বেশি আটক হয়েছেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

নির্বাচনের সময় ঘোষণা করলেন মিয়ানমারের জান্তা প্রধান

আপডেট সময় : ০৫:৩২:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা প্রধান মিন অং হ্লেইং বলেছেন, দেশে চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর দেশটিতে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠানের এই সময় ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

শনিবার মিন অং হ্লেইংয়ের বরাত দিয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। দেশটির জান্তা প্রধান বলেছেন, ‘‘আমরা ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে অথবা… ২০২৬ সালের জানুয়ারির মাঝে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করছি।’’

শুক্রবার বেলারুশ সফরকালে তিনি বলেন, মিয়ানমারে এবার ‘‘অবাধ ও নিরপেক্ষ’’ ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে দেশের ৫৩টি রাজনৈতিক দল তালিকা জমা দিয়েছে বলে জানান তিনি।

মিনস্কে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে বৈঠকে মিন অং হ্লেইং বলেন, আমরা বেলারুশের নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলগুলোকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তাদের মিয়ানমারে এসে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার আহ্বান জানিয়েছি।

২০২০ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলে নেয় সেনাবাহিনী। ওই নির্বাচনে দেশটির গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে।

অভ্যুত্থানের পর থেকে ভিন্ন মতাবলম্বী ও এনএলডির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত অভিযান শুরু করে জান্তা বাহিনী। সেই সময় দেশটির গণতন্ত্রকামী নেত্রী অং সান সুচিকে ক্ষমতাচ্যুত করে গৃহবন্দি করে জান্তা সরকার। তখন থেকেই দেশটিতে জান্তা বিরোধী বিক্ষোভ-প্রতিবাদ অব্যাহত আছে। বিক্ষোভ দমনে জান্তা সরকার ব্যাপক বলপ্রয়োগ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

দেশজুড়ে চলমান অস্থিরতার কারণে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে জান্তা প্রধান বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের কথা বলেছেন। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর থেকে মিন অং হ্লেইং বারবার বহুদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গত জুনে তিনি বলেছিলেন, ২০২৫ সালে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চলমান সহিংসতার কারণে আগের নির্বাচনের সময়সীমা স্থগিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। মিন অং হ্লেইং জোর দিয়ে বলেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতা ধরে রাখার পরিকল্পনা নেই জান্তার।

এদিকে, জান্তার অধীনে কোনও বৈধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে না। আর বিশ্লেষকরা বলেছেন, নির্বাচনে সামরিক বাহিনীবিরোধী গোষ্ঠীগুলো এই নির্বাচনকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারে। এতে দেশজুড়ে আরও রক্তপাতের সূত্রপাত ঘটবে।

মিয়ানমারের রাজনৈতিক বন্দিদের সহায়তা দানকারী সংস্থা অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন অব পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) বলছে, দেশটিতে অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত সামরিক বাহিনীর হাতে ৬ হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষ নিহত ও ২৮ হাজারের বেশি আটক হয়েছেন।