০৬:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জব্বারের বলীখেলায় জনস্রোত

 

বৈশাখের তপ্ত দুপুর। হাজারো মানুষের উপচেপড়া ভিড় চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি ময়দানে। উদ্দেশ্য ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলা দেখা। বলীখেলাকে ঘিরে চলছে তিন দিনব্যাপী শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা। মেলার দ্বিতীয় দিনে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে নগরের লালদীঘি মাঠে শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী এই খেলার ১১৬তম আসর। এই খেলা উপভোগ করতে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন হাজারো মানুষ। সরেজমিনে দেখা গেছে, বৈশাখী মেলায় শত শত বাহারি পণ্যের দোকান বসেছে। মেলায় নানা বয়সী ক্রেতা বিক্রেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। সিনেমা প্যালেস থেকে লালদীঘি মোড় হয়ে শাহ আমানত মাজার গেট। অন্যদিকে টেরি বাজার এলাকা থেকে কোতোয়ালী মোড় পর্যন্ত বসেছে মেলার দোকানপাট। নারী-পুরুষ, শিশু সবাই ঘুরে ঘুরে পছন্দ মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনছেন মেলা থেকে।এদিকে বলীখেলার আসর বসেছে ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে। লালদীঘি ময়দানের একপাশে করা হয়েছে খেলার মাঠ। মাঠের চারদিকে দর্শকদের উপচেপড়া ভিড়।খেলার আসল লড়াই শুরু হয় বিকেল ৫টা থেকে। বলীদের শক্তি ও কৌশলের লড়াইয়ে চলতে থাকে কুস্তি খেলা। এ যেন সেয়ানে সেয়ানে লড়াই! অপরদিকে দর্শনার্থীরাও কড়তালিতে মুখরিত চারদিক।একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী শফিকুর রহমান। ছেলেকে নিয়ে এসেছেন জব্বারের বলীখেলা দেখতে। তিনি বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ট, তারপরও ছেলের বায়না রাখতে বলীখেলা দেখাতে নিয়ে এসেছি। গরমে সিদ্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।’ রুবেল এসেছেন বাঁশখালী থেকে। তিনি বলেন, বন্ধুদের সাথে বলীখেলা দেখতে এসেছি। আমরা সকালে রওনা দিয়েছি। সামনে বসে খেলা দেখবো। এখানে এসে দেখি আমাদের আগেও লোক এসে মাঠে ভিড় করছে। রোদ আর গরমে মাথা ঘুরাচ্ছে। এতো মানুষ নড়াচড়ার জায়গাও নাই।’নগরের পতেঙ্গা এলাকা থেকে এসেছেন সাকিব, তাসিন আর ইফতেখার। তবে ভিড়ের কারণে তারা মাঠে প্রবেশ করতে পারেননি। তাই লালদীঘি ময়দানের সীমানা প্রাচীরের উপর উঠে ঝুঁকি নিয়েই খেলা দেখছেন। ঝুঁকির বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে তারা বলেন, বছরে একবার বলীখেলা দেখার সুযোগ হয়। ঝুঁকি না নিলে তো দেখতেই পারবো না। রোদে গরমে কষ্ট হলেও খেলা দেখবো। বলীখেলাকে কেন্দ্র করে লালদীঘি ময়দানের আশপাশের এলাকাজুড়ে বৈশাখীমেলার আয়োজন। ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর এই বলীখেলার সূচনা করেন। তার মৃত্যুর পর এটি জব্বারের বলীখেলা নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯০৯ সাল থেকে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে প্রতি বছরের ১২ বৈশাখ অনুষ্ঠিত হয় এই জব্বারের বলীখেলা। জানা গেছে, ব্যতিক্রমধর্মী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য ব্রিটিশ সরকার আবদুল জব্বার মিয়াকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও বার্মার আরাকান অঞ্চল থেকেও নামি-দামি বলীরা এ খেলায় অংশ নিতেন।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

সপরিবারে হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন তারেক রহমান

জব্বারের বলীখেলায় জনস্রোত

আপডেট সময় : ০৭:৩১:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

 

বৈশাখের তপ্ত দুপুর। হাজারো মানুষের উপচেপড়া ভিড় চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি ময়দানে। উদ্দেশ্য ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলা দেখা। বলীখেলাকে ঘিরে চলছে তিন দিনব্যাপী শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা। মেলার দ্বিতীয় দিনে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে নগরের লালদীঘি মাঠে শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী এই খেলার ১১৬তম আসর। এই খেলা উপভোগ করতে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন হাজারো মানুষ। সরেজমিনে দেখা গেছে, বৈশাখী মেলায় শত শত বাহারি পণ্যের দোকান বসেছে। মেলায় নানা বয়সী ক্রেতা বিক্রেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। সিনেমা প্যালেস থেকে লালদীঘি মোড় হয়ে শাহ আমানত মাজার গেট। অন্যদিকে টেরি বাজার এলাকা থেকে কোতোয়ালী মোড় পর্যন্ত বসেছে মেলার দোকানপাট। নারী-পুরুষ, শিশু সবাই ঘুরে ঘুরে পছন্দ মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনছেন মেলা থেকে।এদিকে বলীখেলার আসর বসেছে ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে। লালদীঘি ময়দানের একপাশে করা হয়েছে খেলার মাঠ। মাঠের চারদিকে দর্শকদের উপচেপড়া ভিড়।খেলার আসল লড়াই শুরু হয় বিকেল ৫টা থেকে। বলীদের শক্তি ও কৌশলের লড়াইয়ে চলতে থাকে কুস্তি খেলা। এ যেন সেয়ানে সেয়ানে লড়াই! অপরদিকে দর্শনার্থীরাও কড়তালিতে মুখরিত চারদিক।একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী শফিকুর রহমান। ছেলেকে নিয়ে এসেছেন জব্বারের বলীখেলা দেখতে। তিনি বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ট, তারপরও ছেলের বায়না রাখতে বলীখেলা দেখাতে নিয়ে এসেছি। গরমে সিদ্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।’ রুবেল এসেছেন বাঁশখালী থেকে। তিনি বলেন, বন্ধুদের সাথে বলীখেলা দেখতে এসেছি। আমরা সকালে রওনা দিয়েছি। সামনে বসে খেলা দেখবো। এখানে এসে দেখি আমাদের আগেও লোক এসে মাঠে ভিড় করছে। রোদ আর গরমে মাথা ঘুরাচ্ছে। এতো মানুষ নড়াচড়ার জায়গাও নাই।’নগরের পতেঙ্গা এলাকা থেকে এসেছেন সাকিব, তাসিন আর ইফতেখার। তবে ভিড়ের কারণে তারা মাঠে প্রবেশ করতে পারেননি। তাই লালদীঘি ময়দানের সীমানা প্রাচীরের উপর উঠে ঝুঁকি নিয়েই খেলা দেখছেন। ঝুঁকির বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে তারা বলেন, বছরে একবার বলীখেলা দেখার সুযোগ হয়। ঝুঁকি না নিলে তো দেখতেই পারবো না। রোদে গরমে কষ্ট হলেও খেলা দেখবো। বলীখেলাকে কেন্দ্র করে লালদীঘি ময়দানের আশপাশের এলাকাজুড়ে বৈশাখীমেলার আয়োজন। ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর এই বলীখেলার সূচনা করেন। তার মৃত্যুর পর এটি জব্বারের বলীখেলা নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯০৯ সাল থেকে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে প্রতি বছরের ১২ বৈশাখ অনুষ্ঠিত হয় এই জব্বারের বলীখেলা। জানা গেছে, ব্যতিক্রমধর্মী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য ব্রিটিশ সরকার আবদুল জব্বার মিয়াকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও বার্মার আরাকান অঞ্চল থেকেও নামি-দামি বলীরা এ খেলায় অংশ নিতেন।