১১:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জিয়াফতের রাজনৈতিক প্রয়োগ

‍‌‌ফার্সি শব্দ জিয়াফত। এর অর্থ ভোজ বা ভোজসভা। গ্রাম বাংলা থেকে শহর এলাকায় পর্যন্ত বহু আদি সময় ধরে জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে, সুন্নতে খাৎনা এমন ধরনের উপলক্ষে জিয়াফত আয়োজনের প্রচলন আছে। জিয়াফতের খাওয়ার একটি বিশেষ অনুষঙ্গ হচ্ছে গরুর মাংসের উপস্থিতি। গরু কিনতে যাওয়া থেকে এর মাংস রান্নায় থাকে বিশেষ যত্নের ছাপ।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ববাংলায় গরুর মাংস খাওয়া এক প্রকাশ নিষিদ্ধ ছিল দীর্ঘ সময়। কারণ, উচ্চবর্ণের হিন্দু জমিদাররা এটি পছন্দ করতেন না। এই গরু জবাই ও খাওয়া নিয়ে বহু সাম্প্রদায়িক বিবাদের কথা ইতিহাস মাফিক জানা যায়। এমন কি দীর্ঘ সময় ধরে কুরবানির ঈদকে আমাদের অঞ্চলে বলা হতো বকরি ঈদ। গরুর পরিবর্তে ছাগল কুরবানি চলত বলে ঈদের এমন নামকরণ।

গরুর মাংসের অনুপস্থিতির আরেকটি কারণ হচ্ছে এর উচ্চমূল্য। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সারা বছর গরুর মাংস কিনে খাওয়ার অবস্থায় থাকেন না। কোথাও জিয়াফতের আয়োজন হলে সে বরাতে তারা বিনামূল্যে এ আমিষ আহারের সুযোগ পান। আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী সবাই মিলে একত্রে ভোজ বাংলার সামাজিক সম্পর্কের বন্ধন অটুট রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ ঐতিহ্যবাহী মেজবানের অনুষ্ঠান আয়োজনও এক প্রকার বিশেষ জিয়াফত। পারিবারিক, সামাজিক আয়োজনের পাশাপাশি চট্টগ্রামের রাজনীতিতেও এই মেজবানের একটি ভূমিকা আছে। ভোটের সময় বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ নেতা এলাকায় এলে এ আয়োজন বিরাট পরিসরের মাত্রা পেয়ে থাকে।

তবে বাংলাদেশে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে জিয়াফত পেয়েছে নতুন রাজনৈতিক ভাষা। প্রথম আলো কার্যালয় ঘেরাওয়ের পর সেখানে জিয়াফত অনুষ্ঠান আয়োজন করে কর্মসূচির আয়োজকরা। এরপর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া কর্মসূচি সফল হওয়ার পরও সেখানে জিয়াফত আয়োজিত হয়। সবশেষ রাজধানীর শাহবাগে তীব্র দাবির মুখে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারির ঘোষণার পরও আন্দোলনে বিজয়ের প্রেক্ষিতে জিয়াফত অনুষ্ঠিত হয়।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে জিয়াফতের এমন আয়োজনে বিশেষ উৎসাহী দেখা যায় ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থকদের। সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার ও প্যারিস প্রবাসী অ্যাকটেভিস্ট ডা. পিনাকী ভট্টাচার্যকে জিয়াফতের সমকালীন এমন প্রয়োগের মূল ব্যক্তি হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করা যায়।

এভাবেই সামাজিক ভোজ উৎসব থেকে সমকালের রাজনীতিতে হঠাৎ করে যেন চলে এসেছে জিয়াফত। প্রতিপক্ষকে নির্মূল করে বিজয় উদযাপনে এর প্রয়োগ হচ্ছে এখন অহরহ। সামনে আসছে ভোটের মৌসুম। তখন কাঁচা টাকার ঝনঝনানিতে জিয়াফত সংস্কৃতি আরও বিস্তৃত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

জনপ্রিয় সংবাদ

একনেক সভায় ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকার ২২ প্রকল্প অনুমোদন

জিয়াফতের রাজনৈতিক প্রয়োগ

আপডেট সময় : ০২:০৯:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

‍‌‌ফার্সি শব্দ জিয়াফত। এর অর্থ ভোজ বা ভোজসভা। গ্রাম বাংলা থেকে শহর এলাকায় পর্যন্ত বহু আদি সময় ধরে জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে, সুন্নতে খাৎনা এমন ধরনের উপলক্ষে জিয়াফত আয়োজনের প্রচলন আছে। জিয়াফতের খাওয়ার একটি বিশেষ অনুষঙ্গ হচ্ছে গরুর মাংসের উপস্থিতি। গরু কিনতে যাওয়া থেকে এর মাংস রান্নায় থাকে বিশেষ যত্নের ছাপ।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ববাংলায় গরুর মাংস খাওয়া এক প্রকাশ নিষিদ্ধ ছিল দীর্ঘ সময়। কারণ, উচ্চবর্ণের হিন্দু জমিদাররা এটি পছন্দ করতেন না। এই গরু জবাই ও খাওয়া নিয়ে বহু সাম্প্রদায়িক বিবাদের কথা ইতিহাস মাফিক জানা যায়। এমন কি দীর্ঘ সময় ধরে কুরবানির ঈদকে আমাদের অঞ্চলে বলা হতো বকরি ঈদ। গরুর পরিবর্তে ছাগল কুরবানি চলত বলে ঈদের এমন নামকরণ।

গরুর মাংসের অনুপস্থিতির আরেকটি কারণ হচ্ছে এর উচ্চমূল্য। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সারা বছর গরুর মাংস কিনে খাওয়ার অবস্থায় থাকেন না। কোথাও জিয়াফতের আয়োজন হলে সে বরাতে তারা বিনামূল্যে এ আমিষ আহারের সুযোগ পান। আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী সবাই মিলে একত্রে ভোজ বাংলার সামাজিক সম্পর্কের বন্ধন অটুট রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ ঐতিহ্যবাহী মেজবানের অনুষ্ঠান আয়োজনও এক প্রকার বিশেষ জিয়াফত। পারিবারিক, সামাজিক আয়োজনের পাশাপাশি চট্টগ্রামের রাজনীতিতেও এই মেজবানের একটি ভূমিকা আছে। ভোটের সময় বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ নেতা এলাকায় এলে এ আয়োজন বিরাট পরিসরের মাত্রা পেয়ে থাকে।

তবে বাংলাদেশে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে জিয়াফত পেয়েছে নতুন রাজনৈতিক ভাষা। প্রথম আলো কার্যালয় ঘেরাওয়ের পর সেখানে জিয়াফত অনুষ্ঠান আয়োজন করে কর্মসূচির আয়োজকরা। এরপর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া কর্মসূচি সফল হওয়ার পরও সেখানে জিয়াফত আয়োজিত হয়। সবশেষ রাজধানীর শাহবাগে তীব্র দাবির মুখে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারির ঘোষণার পরও আন্দোলনে বিজয়ের প্রেক্ষিতে জিয়াফত অনুষ্ঠিত হয়।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে জিয়াফতের এমন আয়োজনে বিশেষ উৎসাহী দেখা যায় ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থকদের। সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার ও প্যারিস প্রবাসী অ্যাকটেভিস্ট ডা. পিনাকী ভট্টাচার্যকে জিয়াফতের সমকালীন এমন প্রয়োগের মূল ব্যক্তি হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করা যায়।

এভাবেই সামাজিক ভোজ উৎসব থেকে সমকালের রাজনীতিতে হঠাৎ করে যেন চলে এসেছে জিয়াফত। প্রতিপক্ষকে নির্মূল করে বিজয় উদযাপনে এর প্রয়োগ হচ্ছে এখন অহরহ। সামনে আসছে ভোটের মৌসুম। তখন কাঁচা টাকার ঝনঝনানিতে জিয়াফত সংস্কৃতি আরও বিস্তৃত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।