১০:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিএনপিতে চাই হাইব্রিডবিরোধী শুদ্ধি অভিযান

এবার ঢাকায় অবস্থানকালে জন্মভূমি আর বেড়ে ওঠার এলাকা শাহজাহানপুরে বেশ কিছু সময় কাটানোর সৌভাগ্য হয়। পুরো বদলে গেছে সে এলাকা। আগের অনেকে এলাকায় নেই। তবু দেখা পেলাম কিছু মুরুব্বি আর ছোটবেলার ক’জন বন্ধুর।
ঝিলপাড় মসজিদ এলাকায় একদিন আড্ডা দিচ্ছিলাম। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানালেন, ৫ অগাস্টের পর এলাকায় আর কাউকে চাদা দিতে হয় না। ব্যবসা চলছে নির্বিঘ্নে। বড় পরিসরে একটি অভ্যুত্থান অনেক বদল ঘটিয়েছে দেশের। শাহজাহানপুরের ব্যবসায়ীদের যে ভাষ্য জানালাম তা বেশ ক্ষুদ্র মাপের পরিবর্তনের সূচক।
তবে অবাক লাগে আমাদের প্রাণপ্রিয় দলের কিছু নেতা জুলাই অভ্যুত্থানকে এক রকম স্বীকৃতির বাইরেই রাখতে চান। তাদের অনেককে আমেরিকায় দেখেছি প্রতি বছর। সেখানে তাদের সন্তানরা লেখাপড়া করেন। কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। তাদের সঙ্গে দেখা করতে প্রতি বছর একবার হলেও বিদেশে আসতেন বহু নেতা। ১৭ বছরের দুঃশাসনে বিএনপি যখন ছিন্নভিন্ন, গণতন্ত্রের জননী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যখন কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারছেন না, তখন এমন সব নেতাদের বিদেশ গমনে কোনো বাঁধা ছিল না। সাদা চোখে একে আমার ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আঁতাত বলেই মনে হয়েছে।
আমি নিজে গত ১৭ বছর দেশে ব্ল্যাকলিস্টেড ছিলাম। বাবা, মা’র কবর জিয়ারতের জন্যও দেশে ফিরতে পারিনি। আমার অপরাধ ছিল আমি দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন চাইতাম। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে বিএনপির সকল কর্মকাণ্ডের জন্য নিজের দুয়ার খোলা রেখেছিলাম। প্রবাসী গণমাধ্যম যোদ্ধা, খুনী হাসিনা সরকারের আতঙ্ক এখন মেক্সিকোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারীর সঙ্গে আমার সখ্যতার সম্পর্ক ছিল। এগুলো কোনো অপরাধ কিনা জানি না। কিন্তু গত ১৭ বছর আমি বাংলাদেশে ফিরতে পারিনি।
২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থান আমার কাছে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিকতা। আমি ৭১ দেখিনি। জুলাই আমার কাছে তাই মুক্তির সংজ্ঞা। অভ্যুত্থানের পর এ নিয়ে দুবার ঘুরে গেলাম বাংলাদেশ থেকে। বাবা, মা কবর জিয়ারত করতে পেরেছি। সঙ্গে দেশের অগ্রযাত্রা তো দেখেছি নিজ চোখে।
এবার দলের কিছু বিষয় না বলে পারছি না। শহীদ জিয়ার হাতে গড়া যে দলের মন্ত্র ‍”নেতার চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়” – সেই দলের বর্তমান কর্মকাণ্ড আমার কাছে অস্পষ্ট মনে হচ্ছে। আজকে দেশনেত্রীর দেশে ফেরার দিন লাখো মানুষের জমায়েত ঘটান আমাদের নেতারা। কিন্তু নেত্রীকে যখন কারাবরণ করতে হয়েছিল তখন এক হাজার নেতাকর্মীকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিনা ভোটে একটার পর একটা নির্বাচন করে পার পেয়ে গেছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ। তিনশ আসনে আমাদের ৩০০ এমপিকেও এর বিরুদ্ধে জোরদার প্রতিবাদে সামিল হতে দেখেনি।
আজকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সবচেয়ে বড় সুফলভোগী আমাদের দল বিএনপি। কিন্তু এখন কয়েক মাসে দলে অনুপ্রবেশ ঘটেছে অসংখ্য হাইব্রিড নেতাকর্মীর। ফলে দলের মূল ত্যাগী নেতারা বঞ্চিত হচ্ছেন। যারা জঙ্গলে পালিয়ে ছিলেন আওয়ামী লীগের অত্যাচার থেকে প্রাণ বাঁচাতে, যাদের না পেয়ে মিথ্যা মামলার আসামী হিসেবে তাদের বাবা, মা’কে ঘর থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেই অত্যাচার সহ্য করা বিএনপি নেতাদের এখন সামনের সারিতে দেখি না।
এজন্য আমার মনে হয়েছে নিজের ঘর ঠিকভাবে সামলাতে এখন দরকার দলের মধ্যে সংস্কার। আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা তারেক রহমান দেশকে বাঁচাতে ৩১ দফা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু এই দফাগুলো সহজবোধ্য ভাষায় মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে অধিকাংশ নেতার ভেতর কোনো উদ্যোগ দেখছি না। ফ্যাসিস্ট আমলে যেমন একদিন মুজিব জন্মশতবর্ষ, একবার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এসব নিয়ে ব্যবসা চলত, তেমনই এখন প্রিয় নেতা তারেক রহমানের ৩১ দফা নিয়ে দলের অনেক নেতারা ব্যবসা করে চলেছেন।
জননেতা তারেক রহমান তৃণমূল থেকে উঠে আসা একজন রাজনৈতিক নেতা। কিন্তু তাকে যেন হজম করে ফেলেছে দলে নতুন ঢোকা হাইব্রিড নেতারা। দেশ ও দলের বাস্তবতা নেতার সামনে উপস্থাপন করছে না এই সুফলভোগীর দল।
আওয়ামী দেশ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়েছে তাদের দলের হাইব্রিড নেতাদের কারণে, সেই হাইব্রিডরা এবার ভর করেছে বিএনপির ওপর। এতে দলের মঙ্গল হবে না কোনোভাবেই।
নতুন পরিস্থিতিতে একের পর এক ষড়যন্ত্র নিয়ে দেশ ও বিএনপির ওপর হামলে পড়ছে পতিত স্বৈরাচারের দল আওয়ামী লীগ। তাদের আছে দেশ থেকে লুটে নেওয়া অগণিত টাকার ভাণ্ডার। সেই টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছেন আমাদের দল বিএনপির নেতারা পর্যন্ত। যে আওয়ামী লীগ তার সাথে কোনো অবস্থায় বিএনপির ঐক্য হতে পারে না। তাই ক্লিন ইমেজের আওয়ামী লীগ বলে কোনো শব্দ রাজনীতির অভিধানে থাকতে পারে না। কারণ, আওয়ামী লীগ মানেই ফ্যাসিস্টের প্রতিশব্দ। খুনের সমার্থক। দেশবিরোধী অপশক্তির প্রতীক।
তাই চিহ্নিত হাইব্রিডদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বার্থের রাজনীতিতে মনোযোগ দিতে আমাদের দলের ভেতর সংস্কারের বিকল্প নেই। আমাদের বুঝতে হবে বিএনপি ব্যর্থ হলে, দেশ ব্যর্থ হবে। আমরা কি এই ভয়াবহ বিপদ টের পাচ্ছি?
জনপ্রিয় সংবাদ

একনেক সভায় ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকার ২২ প্রকল্প অনুমোদন

বিএনপিতে চাই হাইব্রিডবিরোধী শুদ্ধি অভিযান

আপডেট সময় : ০৪:২৪:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
এবার ঢাকায় অবস্থানকালে জন্মভূমি আর বেড়ে ওঠার এলাকা শাহজাহানপুরে বেশ কিছু সময় কাটানোর সৌভাগ্য হয়। পুরো বদলে গেছে সে এলাকা। আগের অনেকে এলাকায় নেই। তবু দেখা পেলাম কিছু মুরুব্বি আর ছোটবেলার ক’জন বন্ধুর।
ঝিলপাড় মসজিদ এলাকায় একদিন আড্ডা দিচ্ছিলাম। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানালেন, ৫ অগাস্টের পর এলাকায় আর কাউকে চাদা দিতে হয় না। ব্যবসা চলছে নির্বিঘ্নে। বড় পরিসরে একটি অভ্যুত্থান অনেক বদল ঘটিয়েছে দেশের। শাহজাহানপুরের ব্যবসায়ীদের যে ভাষ্য জানালাম তা বেশ ক্ষুদ্র মাপের পরিবর্তনের সূচক।
তবে অবাক লাগে আমাদের প্রাণপ্রিয় দলের কিছু নেতা জুলাই অভ্যুত্থানকে এক রকম স্বীকৃতির বাইরেই রাখতে চান। তাদের অনেককে আমেরিকায় দেখেছি প্রতি বছর। সেখানে তাদের সন্তানরা লেখাপড়া করেন। কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। তাদের সঙ্গে দেখা করতে প্রতি বছর একবার হলেও বিদেশে আসতেন বহু নেতা। ১৭ বছরের দুঃশাসনে বিএনপি যখন ছিন্নভিন্ন, গণতন্ত্রের জননী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যখন কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারছেন না, তখন এমন সব নেতাদের বিদেশ গমনে কোনো বাঁধা ছিল না। সাদা চোখে একে আমার ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আঁতাত বলেই মনে হয়েছে।
আমি নিজে গত ১৭ বছর দেশে ব্ল্যাকলিস্টেড ছিলাম। বাবা, মা’র কবর জিয়ারতের জন্যও দেশে ফিরতে পারিনি। আমার অপরাধ ছিল আমি দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন চাইতাম। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে বিএনপির সকল কর্মকাণ্ডের জন্য নিজের দুয়ার খোলা রেখেছিলাম। প্রবাসী গণমাধ্যম যোদ্ধা, খুনী হাসিনা সরকারের আতঙ্ক এখন মেক্সিকোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারীর সঙ্গে আমার সখ্যতার সম্পর্ক ছিল। এগুলো কোনো অপরাধ কিনা জানি না। কিন্তু গত ১৭ বছর আমি বাংলাদেশে ফিরতে পারিনি।
২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থান আমার কাছে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিকতা। আমি ৭১ দেখিনি। জুলাই আমার কাছে তাই মুক্তির সংজ্ঞা। অভ্যুত্থানের পর এ নিয়ে দুবার ঘুরে গেলাম বাংলাদেশ থেকে। বাবা, মা কবর জিয়ারত করতে পেরেছি। সঙ্গে দেশের অগ্রযাত্রা তো দেখেছি নিজ চোখে।
এবার দলের কিছু বিষয় না বলে পারছি না। শহীদ জিয়ার হাতে গড়া যে দলের মন্ত্র ‍”নেতার চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়” – সেই দলের বর্তমান কর্মকাণ্ড আমার কাছে অস্পষ্ট মনে হচ্ছে। আজকে দেশনেত্রীর দেশে ফেরার দিন লাখো মানুষের জমায়েত ঘটান আমাদের নেতারা। কিন্তু নেত্রীকে যখন কারাবরণ করতে হয়েছিল তখন এক হাজার নেতাকর্মীকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিনা ভোটে একটার পর একটা নির্বাচন করে পার পেয়ে গেছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ। তিনশ আসনে আমাদের ৩০০ এমপিকেও এর বিরুদ্ধে জোরদার প্রতিবাদে সামিল হতে দেখেনি।
আজকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সবচেয়ে বড় সুফলভোগী আমাদের দল বিএনপি। কিন্তু এখন কয়েক মাসে দলে অনুপ্রবেশ ঘটেছে অসংখ্য হাইব্রিড নেতাকর্মীর। ফলে দলের মূল ত্যাগী নেতারা বঞ্চিত হচ্ছেন। যারা জঙ্গলে পালিয়ে ছিলেন আওয়ামী লীগের অত্যাচার থেকে প্রাণ বাঁচাতে, যাদের না পেয়ে মিথ্যা মামলার আসামী হিসেবে তাদের বাবা, মা’কে ঘর থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেই অত্যাচার সহ্য করা বিএনপি নেতাদের এখন সামনের সারিতে দেখি না।
এজন্য আমার মনে হয়েছে নিজের ঘর ঠিকভাবে সামলাতে এখন দরকার দলের মধ্যে সংস্কার। আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা তারেক রহমান দেশকে বাঁচাতে ৩১ দফা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু এই দফাগুলো সহজবোধ্য ভাষায় মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে অধিকাংশ নেতার ভেতর কোনো উদ্যোগ দেখছি না। ফ্যাসিস্ট আমলে যেমন একদিন মুজিব জন্মশতবর্ষ, একবার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এসব নিয়ে ব্যবসা চলত, তেমনই এখন প্রিয় নেতা তারেক রহমানের ৩১ দফা নিয়ে দলের অনেক নেতারা ব্যবসা করে চলেছেন।
জননেতা তারেক রহমান তৃণমূল থেকে উঠে আসা একজন রাজনৈতিক নেতা। কিন্তু তাকে যেন হজম করে ফেলেছে দলে নতুন ঢোকা হাইব্রিড নেতারা। দেশ ও দলের বাস্তবতা নেতার সামনে উপস্থাপন করছে না এই সুফলভোগীর দল।
আওয়ামী দেশ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়েছে তাদের দলের হাইব্রিড নেতাদের কারণে, সেই হাইব্রিডরা এবার ভর করেছে বিএনপির ওপর। এতে দলের মঙ্গল হবে না কোনোভাবেই।
নতুন পরিস্থিতিতে একের পর এক ষড়যন্ত্র নিয়ে দেশ ও বিএনপির ওপর হামলে পড়ছে পতিত স্বৈরাচারের দল আওয়ামী লীগ। তাদের আছে দেশ থেকে লুটে নেওয়া অগণিত টাকার ভাণ্ডার। সেই টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছেন আমাদের দল বিএনপির নেতারা পর্যন্ত। যে আওয়ামী লীগ তার সাথে কোনো অবস্থায় বিএনপির ঐক্য হতে পারে না। তাই ক্লিন ইমেজের আওয়ামী লীগ বলে কোনো শব্দ রাজনীতির অভিধানে থাকতে পারে না। কারণ, আওয়ামী লীগ মানেই ফ্যাসিস্টের প্রতিশব্দ। খুনের সমার্থক। দেশবিরোধী অপশক্তির প্রতীক।
তাই চিহ্নিত হাইব্রিডদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বার্থের রাজনীতিতে মনোযোগ দিতে আমাদের দলের ভেতর সংস্কারের বিকল্প নেই। আমাদের বুঝতে হবে বিএনপি ব্যর্থ হলে, দেশ ব্যর্থ হবে। আমরা কি এই ভয়াবহ বিপদ টের পাচ্ছি?