খুব আবেগী প্রাণী মানুষ। বিশেষত বাংলাদেশের জনগণ। যুক্তিবোধের চেয়ে এ অনুভূতি দ্বারা তারা তাড়িত হন বেশি। চলমান রাজনৈতিক ভজঘটে অতিষ্ট হয়ে একজন আজ জানালেন, তিনি আগামী নির্বাচনে জামায়াতকে ভোট দেবেন। প্রয়োজনে দলটির পক্ষে ক্যাম্পেইনে অংশ নেবেন। বিএনপির সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলছিলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের মূল স্পিরিট ধারণ করে এই রাজনৈতিক দলটি। একইসঙ্গে চিরশত্রু ভারতের ব্যাপারে তারা প্রশ্নহীনভাবে লড়াকু।
দীর্ঘ ১৭ বছরের ফ্যাসিস্ট আমলে সবচেয়ে চরমভাবে মূল্য দিতে হয়েছে জামায়াতকে। তাদের নেতৃত্বের প্রথম সারিকে ঝুলতে হয়েছে ফাঁসির দড়িতে। দলটির মধ্যম ও নিম্ন সারির নেতাকর্মীদের উপর হামলা, মামলা নির্যাতন ক্ষান্ত ছিল না এক মুহূর্তের জন্য। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন শুরু মাত্রই দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া জামায়াত সর্বশক্তি নিয়োগ করে অল আউট রাজপথে নামে। আওয়ামী লীগ বাধ্য হয়েছিল ক্ষমতার শেষ পর্যায়ে নির্বাহী আদেশে দলটিকে নিষিদ্ধ করতে।
বাংলাদেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জামাতের পার্থক্য হচ্ছে তারা যে আদর্শের রাজনীতি করে তার প্রতি দৃঢ়তা ও সংগঠন বিস্তারে ক্যাডার ভিত্তিক পলিসি নির্ধারণ। দেশের তৃণমূল পর্যন্ত শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তি এভাবেই তারা গড়ে তুলেছে। আওয়ামী লীগহীন পরিবেশে বর্তমানে তাদের রাজনৈতিক বিস্তার পেয়েছে গতিশীল চেহারা।
স্ট্র্যাটেজিগতভাবে তাদের দূরদর্শীতা আন্দাজ করা যায় নির্বাচন বিষয়ে দলটির বক্তব্য শুনে। সবাই যেখানে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে উদ্বিগ্ন, জামায়াত সেখানে চাইছে আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এর ফলে তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত ক্ষমতা কাঠামো কব্জা করা তাদের জন্য সহজ হবে। বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার কাঠামো এমন যে একজন আইন প্রণেতার চেয়ে ক্ষেত্রবিশেষে ইউপি চেয়ারম্যানের দাপট বেশি।
এখনের রাজনীতিতে জামায়াতকে কোনো ধরনের শক্তি ক্ষয় করতে দেখা যাচ্ছে না। সত্যিকার অর্থে একমাত্র নির্বাচনমুখী রাজনীতি নিভৃতে তারাই করছে। আগামী নির্বাচনে এটি প্রকাশ্যে দৃশ্যমান হবে। ফাঁকা মাঠের এ লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করে প্রথমবারের মতো দলটি সরকার গঠন করলে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই থাকবে না।

























