- বিদ্যুৎ-জ্বালানির অভাবে শিল্প কাজে ব্যাঘাত
- প্লাস্টিক শিল্পখাতে ১২০০ কারখানা বন্ধ
- কাঁচামালের ওপর শুল্কহার ১ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি
- জ্বালানি নিরাপত্তা ও বায়ুমান উন্নয়নে বাংলাদেশকে ৬৪ কোটি ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চরম ঘাটতির কারণে দেশের শিল্পখাত মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় প্লাস্টিক শিল্পখাতে ইতোমধ্যে প্রায় ১২০০ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, স্থায়ী সমাধান না এলে কর্মসংস্থান ও রপ্তানি উভয়ই হুমকিতে পড়বে। একই সঙ্গে কাঁচামালের ওপর বিদ্যমান শুল্কহার ব্যবসায়ীদের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করছে। তাই তারা শুল্কহার ১ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাংক জ্বালানি নিরাপত্তা ও বায়ুমান উন্নয়নে বাংলাদেশকে ৬৪ কোটি ডলার সহায়তা দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে যা পরিস্থিতি সামাল দিতে কিছুটা সহায়ক হতে পারে।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ) জানিয়েছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির অভাবে গত এক বছরে প্লাস্টিক শিল্পখাতে এক হাজার ২০০ কারখানা বন্ধ হয়েছে। এ ছাড়া নতুন কোনো বিনিয়োগও নেই। উদ্যোক্তারা জানান, একসময় এ খাতের ছয় হাজারেরও বেশি কারখানা ছিল। গত বুধবার রাজধানীর পল্টন টাওয়ারের বিপিজিএমইএ সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি সামিম আহমেদ এ তথ্য জানান। গত বুধবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে বিপিজিএমইএর গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব অন্তর্ভুক্তির জন্য এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। এ সময় নেতারা প্লাস্টিক শিল্পের জন্য নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার করার দাবি জানিয়েছেন। এ ছাড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবে রপ্তানিমুখী প্লাস্টিক শিল্পের জন্য আমদানি যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও কাঁচামালের ওপর শুল্কহার টেক্সটাইল শিল্পের মতো ১ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (এসএমই) বিশেষ বিবেচনায় নেওয়ার দাবি জানানো হয়। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আমদানি যন্ত্রপাতির ওপর শুল্ক সুবিধা চেয়ে সরকারের কাছে ১৫টি সংশোধিত প্রস্তাব দিয়েছে বিপিজিএমইএ।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এনার্জি সেক্টর সিকিউরিটি এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট ও বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রজেক্ট নামের এই দুটি প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের অস্থির জ্বালানি সরবরাহ ও ঝুঁকিপূর্ণ বায়ু মানের মতো দুটি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা। এই চ্যালেঞ্জগুলোকে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বড় বাধা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ হিসেবে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি ও মারাত্মক বায়ু দূষণ রোধে মোট ৬৪০ মিলিয়ন ডলারের দুটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা ও বায়ুর মান উন্নয়ন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন অগ্রাধিকার। গ্যাস সরবরাহ সংকট ও শহরাঞ্চলের বায়ু দূষণের মূল কারণগুলো নিরসনের মাধ্যমে এই দুটি প্রকল্প বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, উৎপাদনশীলতা এবং কর্মসংস্থান বাড়াতে সহায়তা করবে।
এনার্জি প্রকল্পে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার : ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের ‘এনার্জি সেক্টর সিকিউরিটি এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট’-এর আওতায় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলাকে দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি আমদানির সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করা হবে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) গ্যারান্টির আওতায় এই প্রকল্পের মাধ্যমে সাত বছরের মধ্যে ২.১ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে দেশের মোট গ্যাস ব্যবহারের ২৫ শতাংশেরও বেশি আমদানিকৃত এলএনজি থেকে আসে, যার মধ্যে ৪২ শতাংশ চাহিদা বিদ্যুৎ খাতের। গ্যাস সরবরাহে ঘনঘন ঘাটতি বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত করে যা শিল্প কার্যক্রম ও অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে। এই প্রকল্প পেট্রোবাংলাকে সাশ্রয়ী অর্থায়ন, আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ব্যয়বহুল স্পট মার্কেট নির্ভরতা কমাতে সহায়তা করবে। বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও প্রকল্পের প্রধান ওলায়িনকা বিসিরিয়ু এদেবিরি বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যয়-সাশ্রয়ী উপায়ে গ্যাস সরবরাহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে। এর ফলে শিল্প ও গৃহস্থালি খাতে নিরবচ্ছিন্ন ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হবে যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
বায়ু বিশুদ্ধকরণে ২৯০ মিলিয়ন ডলার : ২৯০ মিলিয়ন ডলারের ‘বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রজেক্ট’ পরিবেশ মনিটরিং, আইন প্রয়োগ এবং পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেবে। ২০১৯ সালে বায়ু দূষণ দেশের ১ লাখ ৫৯ হাজার অকাল মৃত্যুর কারণ ছিল এবং এতে জিডিপির ৮.৩ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। ঢাকায় পিএম ২.৫ মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকার চেয়ে ১৮ গুণ বেশি। এই প্রকল্পের আওতায় পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করা হবে, বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন নির্গমন পর্যবেক্ষণ চালু করা হবে এবং এসব তথ্য ব্যবহার করে দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া একটি সমন্বিত পরিচালনা মডেলের আওতায় ৪০০ শূন্য নির্গমন বৈদ্যুতিক বাস চালু করা হবে এবং সেগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় চার্জিং ও রক্ষণাবেক্ষণ অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। প্রকল্পের আওতায় আরও পাঁচটি নতুন যানবাহন পরিদর্শন কেন্দ্র নির্মাণ, দুটি বিদ্যমান কেন্দ্র আধুনিকায়ন এবং ২০টি মোবাইল নির্গমন পরীক্ষণ ইউনিট চালু করা হবে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসব সমন্বিত পদক্ষেপের ফলে প্রতিবছর প্রায় ২,৭৩৪ মেট্রিক টন ক্ষতিকর পিএম ২.৫ নির্গমন হ্রাস পাবে।























