গায়ে-গতরে যেমন খুব একটা লম্বা নন, তেমনি খুব একটা স্বাস্থ্যবানও নন। ডান পায়ে ও মাথা দিয়ে তেমন খেলতে পারেন না। কিন্তু বল পায়ে তিনি যেন ফুটবলের এক জাদুকর, বিস্ময় মানব। তার বা পায়ের কারুকাজ দেখলে হয়ে যায় চোখের শান্তি, মনের শান্তি। ড্রিবলিং, পাসিং, শুটিং, বিগ চান্স ক্রিয়েট, প্লেমেকিং, গোল, এ্যাসিস্ট … ফুটবলের সব ধরনের পরিসংখ্যানেই জুড়ে আছেন যিনি, বেশিরভাগ ফুটবলবোদ্ধা ও ফুটবলামোদীদের মতে সর্বকালের সেই সেরা ফুটবলারটি হচ্ছেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি।
অতিমানবীয়-অনুপম ফুটবলশৈলীর কারণে অনেকেই তাকে মজা করে ডাকেন লিওনেল ‘এলিয়েন’ মেসি! আজ ২৪ জুন মেসির ৩৮ বছর পূর্ণ হলো। এই আর্জেন্টাইন গ্রেট পেশাদার-প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল খেলছেন ২১ বছর ধরে। এই সময়টায় তার সঙ্গে তুলনা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে অনেক ফুটবলারের। যেমন : কাকা, ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো, নইমার, এমবাপ্পে, হালান্ড, লেভানডোস্কি, বেনজেমা, সুয়ারেজ, ব্রুইনা, ভিনিসিউস প্রমুখ। সময়ে সময়ে বদল হয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী, কিন্তু এলএম টেন রয়ে গেছেন স্বমহিমাতেই।
কি পাননি মেসি? ব্যক্তিগত ও দলীয় সব অর্জনই লুটোপুটি খেয়েছে তার পদতলে। রেকর্ডকে বানিয়ে ফেলেছেন ‘ডালভাত’। ক্যারিয়ারে ফুটবলার হিসেবে সবচেয়ে বেশি রেকর্ড গড়ার সুবাদে ‘গিনেজ বুক অব রেকর্ডস’-এ উঠে গেছে তাঁর নাম। সেটা অবশ্য অনেক আগেই। এজন্যই বোধকরি অনেক মেসিভক্তরা তার নাম রেখেছেন লিওনেল ‘রেকর্ড’ মেসি!
কোন সন্দেহ নেই, ক্যারিয়ারের গোধূলিলগ্নে চলে এসেছেন মেসি। কিন্তু চর্মগোলকের এই খেলাটি থেকে অবসর নেয়ার আগে ‘গ্রেটেস্ট অব অল টাইম’ এই ফুটবল জাদুকর আরও কত রেকর্ড গড়েন, সেটাই হবে দেখার বিষয়।

৩৮তম জন্মদিনে মেসির ৩৮টি চোখ ধাঁধাঁনো কিছু রেকর্ড :
১. একমাত্র ফুটবলার হিসেবে জাতীয় দল (আর্জেন্টিনা ১১২) ও দুটি ক্লাব দল (বার্সেলোনা ৬৭২ এবং ইন্টার মায়ামি ৫০), অর্থাৎ তিনটি ভিন্ন দলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা।
২. ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অফিসিয়াল শিরোপা জয় (৪৬টি)।
৩. এক ক্লাবের হয়ে সবচেয়ে বেশি শিরোপা জয় (৩৫টি, বার্সেলোনা)।
৪. সবচেয়ে বেশি ব্যালন ডি’র জয় (৮ বার)।
৫. টানা ব্যালন ডি’অর জয় (৪ বার, ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২)।
৬. একমাত্র ফুটবলার হিসেবে ভিন্ন তিনটি দশকে ব্যালন ডি’অর জয়।
৭. সবচেয়ে বেশি গোল্ডেন বুট জয় (৬ বার)।
৮. এক পঞ্জিকাবর্ষে সবচেয়ে বেশি গোল (৯১) করা।
৯. এক পঞ্জিকাবর্ষে এক ক্লাবের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল (৭৯, বার্সেলোনা, ২০১২ সালে) করা।
১০. একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে সর্বোচ্চ ২ বার বিশ্বকাপের গোল্ডেন বল (২০১৪ ও ২০২২ সালে) জেতা।
১১. একটি দলের/ক্লাবের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল (বার্সেলোনার হয়ে ৬৭২ গোল) করা।
১২. এক লিগে সবচেয়ে বেশি গোল (৪৭৪টি, লা লিগায়) করা।
১৩. একটি নির্দিষ্ট ক্লাবের হয়ে (বার্সেলোনা) চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সবচেয়ে বেশি গোল (১২০ গোল) করা।
১৪. টানা লিগ ম্যাচে সর্বোচ্চ গোল (২১ ম্যাচে ৩৩ গোল, ২০১২-১৩, বার্সেলোনা) করা।
১৫. পেশাদার লিগে সব দলের বিরুদ্ধে একটানা গোল করা একমাত্র ফুটবলার।
১৬. ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি এ্যাসিস্ট (৩৮৪) করা।
১৭. বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ২১ গোলে অবদান রাখা (১৩ গোল, ৮ এ্যাসিস্ট)।
১৮. একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে সবচেয়ে বেশি গোল (২টি, বনাম ফ্রান্স, ২০২২) করা।
১৯. বিশ্বকাপে প্রতি রাউন্ডে ম্যান অব দ্য ম্যাচ জেতা একমাত্র খেলোয়াড় (গ্রুপ, রাউন্ড অব সিক্সটিন, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল ও ফাইনাল; ২০২২ সালে)।
২০. সবচেয়ে বেশি প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ হওয়া (৩৯৬ বার)।

২১. সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক হ্যাটট্রিক (১০টি, অংশীদার ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো) করা।
২২. একমাত্র ফুটবলার যিনি ‘লরিয়াস স্পোর্টসম্যান অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার জিতেছেন ২ বার (২০২০ ও ২০২৩ সালে)।
২৩. সবচেয়ে বেশি নন-পেনাল্টি ক্লাব গোল করা (৭৬৮ গোল)।
২৪. পেনাল্টি ছাড়া সবচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিক গোল করা।
২৫. মেজর ইন্টারন্যাশাল টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি ম্যাচসেরা (২৬ বার)।
২৬. মেজর ইন্টারন্যাশাল টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি এ্যাসিস্ট (২৬ বার) করা।
২৭. সবচেয়ে বেশিবার ফিফা বর্ষসেরা হওয়া (৮ বার)।
২৮. সবচেয়ে বেশি গোলে সহায়তা (১২৫০) করা।
২৯. ক্লাব ফুটবলে সবচেয়ে বেশিবার সফল ড্রিবল (৩১৯৫ বার) করা।
৩০.ফিফা আয়োজিত সব ধরনের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোল (২৫) করা।
৩১. বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা (২৬)।
৩২. অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা (১৯)।
৩৩. বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি সময় মাঠে খেলা (২৩১৪ মিনিট)।
৩৪. একমাত্র ফুটবলার হিসেবে ৪টি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে গোল করা (২০০৯, ২০১১, ২০১৫ ও ২০২৫)।
৩৫. ফিফপ্রো বিশ্ব একাদশে সবচেয়ে বেশিবার স্থান পাওয়া (১৭ বার, ২০০৭-২০২৩)।
৩৬. মেজর ইন্টারন্যাশনাল টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশিবার বেস্ট প্লেয়ার এ্যাওয়ার্ড জেতা (৪ বার; ২০১৪ ও ২০২২ বিশ্বকাপ, ২০১৫ ও ২০২১ কোপা আমেরিকা)।
৩৭. একমাত্র ফুটবলার হিসেবে নির্দিষ্ট একটি মেজর ইন্টারন্যাশনাল টুর্নামেন্টে বেস্ট প্লেয়ার, গোল্ডেন বুট, মোস্ট ম্যান অব দ্য ম্যাচ এবং দলীয় শিরোপা জেতা (২০২১ কোপা আমেরিকা)।
৩৮. মেজর ইন্টারন্যাশনাল টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশিবার ব্যক্তিগত পুরস্কার জেতা (৬ বার; বেস্ট প্লেয়ার ২০১৪, ২০১৫, ২০২১, ২০২২; গোল্ডেন বুট ২০২১ এবং বেস্ট ইয়ং প্লেয়ার ২০০৭)।
আরকে/সবা


























