০৮:০৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দারিদ্রতাকে সঙ্গী করে শাহিদার চাকার ঘূর্ণিতে সোনাজয়ের স্বপ্ন

জীবনের লক্ষ্য অর্জনে দারিদ্রতা কখনো বাধা হতে পারেনা। বরং যারা দারিদ্রতার ছোঁয়া পেয়েছে, তারাই জীবনে বেশি সফলতা অর্জন করেছে। তাই বড় হতে হলে বিত্তশালী লোকের সন্তান হতে হয়না। হতে হয় অধ্যবসায়ী, পরিশ্রমী, আত্মবিশ্বাসী।
গোপালগঞ্জের মেয়ে শাহিদা খানম হতে পারে তেমনই এক ব্যক্তি। সে পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। এই বয়সেই সে তার জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে ফেলেছে। আর সেটা হলো বড় হয়ে সে একজন সফল সাইক্লিস্ট হবে। সাইকেলের দুই চাকার যে ঘূর্ণি, সেই চাকার ঘূর্ণিতে সে গড়তে চায় তার সুনীল স্বপ্নের মানচিত্র।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ১০টি খেলার জন্য তৃণমূল পর্যায়ে দশ খেলায় অনুর্ধ-১৬ প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচির আয়োজন করেছিল দশ দিনের জন্য। এই খেলাগুলোর একটি হচ্ছে সাইক্লিং। বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় এসে যেসব সাইক্লিস্ট ট্রায়ার দিয়েছিল, তাদের মধ্যে টিকে যায় ১৬ জন। এদের ৫ জন মেয়ে। এরা একেকজন একেক জেলার। তারা ঢাকায় বেসিক প্রশিক্ষণ নিয়ে আবারও জেলা ফিরে যাবে। ‘সেখানে আরও প্রশিক্ষণ পেলে আরও ভালো করবে।’ জানান তাদের প্রশিক্ষক সাইদুর রহমান।

পাঁচ নারী সাইক্লিস্টের একজন শাহিদা। সবুজ বাংলাকে সে জানায়, ‘পড়াশোনার পাশাপাশি এই সাইক্লিংটাই আমার বেশি ভাল লাগে। তাছাড়া সাইক্লিংটা ভালোই পারি। তাই এই খেলাটিই খেলি।’ গ্রামের মেয়ে সাইকেল চালায়, সেটাকে সবাই কিভাবে দেখে? ‘আমার ফ্যামিলি থেকে সবাই আমার সাপোর্টে আছে। কারণ আমি এ পর্যন্ত যে কয়বারই সাইক্লিং কম্পিটিশন করেছি, সেই কয়বারই গোল্ড মেডেল জিতেছি, সেটা স্কুল পর্যায়ে। এ পর্যন্ত সাত থেকে আটটা খেলায় প্রথম হয়েছি। এ কারণেই আমার ফ্যামিলি জানে যে আমি বাজে কোন পথে যাইনি। আর আমিও সাইক্লিংটাকে বেছে নিয়েছি।’ চটপটে শাহিদার জবাব।

একর্যায়ে নিজের দুঃখের কথা জানায় শাহিদা, ‘আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না। আমার বাবা ফলের ব্যবসা করে। আমার মা বাবাকে সাহায্য করে। আব্বুর দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে! দোকানটাও চলে গেছে। আম্মু দোকানের পাশে ফুটপাথে একটু জায়গা নিয়ে বসে ফলমুল বিক্রি করে। যে টাকা পায় সেটা দিয়ে আব্বুর ঔষধের টাকাটা জোগাড় করে।’ এরপর শাহিদা কাষ্ঠ হাসি হেসে বলে, ‘দুই বেলা খেলে এক বেলা খেতে পারি না, এক বেলা খেলে দুই বেলা খেতে পারি না!’


শাহিদারা চার বোন। শাহিদা তৃতীয়। বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট বোনের বয়স তিন। পল্টন ময়দানে হাড়ভাঙ্গা অনুশীলনের পর কপালের ঘাম মুছে সে জানায়, ‘এতদিন সাইক্লিংয়ের যতটা শিখেছিলাম, এবার ঢাকায় এসে ট্রেনিং করে তার চেয়ে বেশি শিখেছি। আগে যেমন কখনও রোলার চালাইনি, এবার রোলার চালাচ্ছি। আগে কখনও রেসিং সাইকেল চালাইনি, এবার চালিয়েছি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার—আগের চেয়ে স্পিডটা একটু বাড়াতে পেরেছি। আর আমার যে ভুলগুলো আগে ছিল, সেগুলো এখানে ট্রেনিং করে শুধরে নিতে পেরেছি। ফলে আগের চেয়ে আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে।’

শাহিদার নিজের কোন সাইকেল নেই। এ ব্যাপারে তার দৃঢ়প্রত্যয়ী কণ্ঠ, ‘কিন্তু আমার আত্মবিশ্বাস আছে এখানে যদি ভালো করতে পারি, তাহলে অবশ্যই একদিন নিজের যোগ্যতায় সাইকেল পেয়ে যাব।’ গোপালগঞ্জে বাড়ির পাশে এক প্রতিবেশী বড় ভাইয়ের একটা সাইকেল আছে। তার কাছ থেকে ধার নিয়েই শাহিদা সাইকেল চালায় এবং সাইকেল প্রতিযোগিতাগুলোতে অংশ নেয়।
সবশেষে শাহিদা জানায় তার স্বপ্ন-লক্ষ্যের কথা, ‘সাইক্লিস্ট হিসেবে আমার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য হচ্ছে আগামীতে দেশের জন্য ইন্টারন্যাশনাল গোল্ড আনা।’

আরকে/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

সানজিদা তন্বীর বিয়ের খবর জানালেন ফেসবুকে নিজের হৃদয়গ্রাহী পোস্টে

দারিদ্রতাকে সঙ্গী করে শাহিদার চাকার ঘূর্ণিতে সোনাজয়ের স্বপ্ন

আপডেট সময় : ১০:৪৭:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

জীবনের লক্ষ্য অর্জনে দারিদ্রতা কখনো বাধা হতে পারেনা। বরং যারা দারিদ্রতার ছোঁয়া পেয়েছে, তারাই জীবনে বেশি সফলতা অর্জন করেছে। তাই বড় হতে হলে বিত্তশালী লোকের সন্তান হতে হয়না। হতে হয় অধ্যবসায়ী, পরিশ্রমী, আত্মবিশ্বাসী।
গোপালগঞ্জের মেয়ে শাহিদা খানম হতে পারে তেমনই এক ব্যক্তি। সে পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। এই বয়সেই সে তার জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে ফেলেছে। আর সেটা হলো বড় হয়ে সে একজন সফল সাইক্লিস্ট হবে। সাইকেলের দুই চাকার যে ঘূর্ণি, সেই চাকার ঘূর্ণিতে সে গড়তে চায় তার সুনীল স্বপ্নের মানচিত্র।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ১০টি খেলার জন্য তৃণমূল পর্যায়ে দশ খেলায় অনুর্ধ-১৬ প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচির আয়োজন করেছিল দশ দিনের জন্য। এই খেলাগুলোর একটি হচ্ছে সাইক্লিং। বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় এসে যেসব সাইক্লিস্ট ট্রায়ার দিয়েছিল, তাদের মধ্যে টিকে যায় ১৬ জন। এদের ৫ জন মেয়ে। এরা একেকজন একেক জেলার। তারা ঢাকায় বেসিক প্রশিক্ষণ নিয়ে আবারও জেলা ফিরে যাবে। ‘সেখানে আরও প্রশিক্ষণ পেলে আরও ভালো করবে।’ জানান তাদের প্রশিক্ষক সাইদুর রহমান।

পাঁচ নারী সাইক্লিস্টের একজন শাহিদা। সবুজ বাংলাকে সে জানায়, ‘পড়াশোনার পাশাপাশি এই সাইক্লিংটাই আমার বেশি ভাল লাগে। তাছাড়া সাইক্লিংটা ভালোই পারি। তাই এই খেলাটিই খেলি।’ গ্রামের মেয়ে সাইকেল চালায়, সেটাকে সবাই কিভাবে দেখে? ‘আমার ফ্যামিলি থেকে সবাই আমার সাপোর্টে আছে। কারণ আমি এ পর্যন্ত যে কয়বারই সাইক্লিং কম্পিটিশন করেছি, সেই কয়বারই গোল্ড মেডেল জিতেছি, সেটা স্কুল পর্যায়ে। এ পর্যন্ত সাত থেকে আটটা খেলায় প্রথম হয়েছি। এ কারণেই আমার ফ্যামিলি জানে যে আমি বাজে কোন পথে যাইনি। আর আমিও সাইক্লিংটাকে বেছে নিয়েছি।’ চটপটে শাহিদার জবাব।

একর্যায়ে নিজের দুঃখের কথা জানায় শাহিদা, ‘আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না। আমার বাবা ফলের ব্যবসা করে। আমার মা বাবাকে সাহায্য করে। আব্বুর দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে! দোকানটাও চলে গেছে। আম্মু দোকানের পাশে ফুটপাথে একটু জায়গা নিয়ে বসে ফলমুল বিক্রি করে। যে টাকা পায় সেটা দিয়ে আব্বুর ঔষধের টাকাটা জোগাড় করে।’ এরপর শাহিদা কাষ্ঠ হাসি হেসে বলে, ‘দুই বেলা খেলে এক বেলা খেতে পারি না, এক বেলা খেলে দুই বেলা খেতে পারি না!’


শাহিদারা চার বোন। শাহিদা তৃতীয়। বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট বোনের বয়স তিন। পল্টন ময়দানে হাড়ভাঙ্গা অনুশীলনের পর কপালের ঘাম মুছে সে জানায়, ‘এতদিন সাইক্লিংয়ের যতটা শিখেছিলাম, এবার ঢাকায় এসে ট্রেনিং করে তার চেয়ে বেশি শিখেছি। আগে যেমন কখনও রোলার চালাইনি, এবার রোলার চালাচ্ছি। আগে কখনও রেসিং সাইকেল চালাইনি, এবার চালিয়েছি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার—আগের চেয়ে স্পিডটা একটু বাড়াতে পেরেছি। আর আমার যে ভুলগুলো আগে ছিল, সেগুলো এখানে ট্রেনিং করে শুধরে নিতে পেরেছি। ফলে আগের চেয়ে আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে।’

শাহিদার নিজের কোন সাইকেল নেই। এ ব্যাপারে তার দৃঢ়প্রত্যয়ী কণ্ঠ, ‘কিন্তু আমার আত্মবিশ্বাস আছে এখানে যদি ভালো করতে পারি, তাহলে অবশ্যই একদিন নিজের যোগ্যতায় সাইকেল পেয়ে যাব।’ গোপালগঞ্জে বাড়ির পাশে এক প্রতিবেশী বড় ভাইয়ের একটা সাইকেল আছে। তার কাছ থেকে ধার নিয়েই শাহিদা সাইকেল চালায় এবং সাইকেল প্রতিযোগিতাগুলোতে অংশ নেয়।
সবশেষে শাহিদা জানায় তার স্বপ্ন-লক্ষ্যের কথা, ‘সাইক্লিস্ট হিসেবে আমার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য হচ্ছে আগামীতে দেশের জন্য ইন্টারন্যাশনাল গোল্ড আনা।’

আরকে/সবা