০৭:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বীমা খাতে আস্থা সংকট, ঝুলে আছে গ্রাহকের ৩ হাজার কোটি টাকা

  • ৪৬ বীমা কোম্পানিতে ৯০ শতাংশ দাবিই অনিষ্পন্ন
  • দাবি পরিশোধে গড়িমসি, ক্ষতিগ্রস্ত লাখো গ্রাহক
  • ‘সোনার হরিণ’ সার্ভে রিপোর্ট, অজুহাতের শেষ নেই
  • বীমাকারীর স্বার্থরক্ষায় অধ্যাদেশ আনছে সরকার

বাংলাদেশের বীমা খাতে আস্থাহীনতা ও দুর্ব্যবস্থার চিত্র বহু পরানো। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকেই সাধারণ বীমা খাতে ৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকার বেশি দাবি ঝুলে আছে, যা মোট বীমা দাবির প্রায় ৯০ শতাংশ। এর ফলে লাখো পলিসিধারী বিভিন্ন প্রকার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরও ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না বরং বছরের পর বছর ঘুরছেন কাগজপত্র, আবেদন আর কর্তৃপক্ষের দরজায়। আইডিআরএ (বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ প্রান্তিকেই দেশে ৪৬টি সাধারণ বীমা কোম্পানির কাছে জমা হওয়া দাবির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৪৪৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে মাত্র ২৯৫ কোটি টাকা পরিশোধ হয়েছে। অর্থাৎ মোট দাবির ৯ শতাংশও পরিশোধ হয়নি। বছরের শেষ (ডিসেম্বর ২০২৪) পর্যন্ত এই দাবির পরিমাণ ছিল ৩৮৭১ কোটি টাকা। নতুন বছরে তিন মাসেই প্রায় ৫১৫ কোটি টাকার অতিরিক্ত দাবি জমা হয় কিন্তু পুরনো বকেয়া নিষ্পত্তি হয়নি। ফলে এ খাতে আস্থার সংকট চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে।
সেনাকল্যাণ, সিকদার, স্ট্যান্ডার্ড ও নর্দান ইসলামী ইনস্যুরেন্সের মতো কোম্পানিগুলো ১ শতাংশেরও কম বা সামান্য ওপরে দাবি পরিশোধ করেছে, যেখানে জনতা ইনস্যুরেন্স, ইউনিয়ন ইনস্যুরেন্স ও প্রাইম ইনস্যুরেন্স কিছুটা ব্যতিক্রম। বীমা কোম্পানিগুলোর দাবি, সার্ভে রিপোর্ট দেরি হওয়া বা না পাওয়া দাবির নিষ্পত্তির প্রধান অন্তরায়। অনেক সময় সার্ভে খরচ এতটাই বেশি হয় যে তা মূল দাবির চেয়েও বড় হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে পলিসিধারীরা বছরজুড়ে অভিযোগ দিয়েও কাক্সিক্ষত ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে আইডিআরএ গ্রেডিং পদ্ধতি চালু করেছে, যার মাধ্যমে খারাপ পারফর্ম করা কোম্পানিগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে এ ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক তৎপরতা এখনও আশানুরূপ ফল দিচ্ছে না।
প্রথম প্রান্তিকের হিসাবে দেখা গেছে, ২৩টি কোম্পানি ২০ শতাংশের নিচে বীমা দাবি পরিশোধ করেছে, বাকিরা ২১ থেকে সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত পরিশোধ করেছে। তবে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম জনতা ইনস্যুরেন্স, যারা ৮৫.৮১% দাবি পরিশোধ করেছে (৭ কোটি ২১ লাখ টাকার মধ্যে ৬ কোটি ১৮ লাখ)। এরপর রয়েছে ইউনিয়ন ইনস্যুরেন্স (৮১.১৬%), প্রাইম (৬৮.১০%), মেঘনা (৬৬.০৪%) এবং তাকাফুল ইসলামী ইনস্যুরেন্স (৬১.০৫%)।
বিমা কোম্পানিগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, দাবির নিষ্পত্তিতে প্রধান বাধা হলো সার্ভে রিপোর্ট না পাওয়া। একাধিক কোম্পানির সিইও অভিযোগ করেছেন, ক্ষয়ক্ষতির পরপরই ঘটনা ঘটে গেলেও সার্ভে রিপোর্ট সময়মতো মেলে না, আবার অনেক সময় এর খরচ মূল দাবি ছাড়িয়ে যায়। তাই সার্ভে রিপোর্টকেই তারা অভিহিত করেছেন ‘সোনার হরিণ’ হিসেবে। বীমা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) পরিচালক এস এম নুরুজ্জামান বলেন, দাবি পরিশোধে বীমা কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করতে আইডিআরএ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে আরও সক্রিয় হতে হবে। দ্রুত আইনি পদক্ষেপ জরুরি।
এই সংকট সমাধানে আইডিআরএ ‘বীমাকারীর রেজল্যুশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ শিরোনামে একটি নতুন অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করেছে। খসড়া অনুযায়ী, কোনো দুর্বল বীমা কোম্পানিকে সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় নেওয়া যাবে এবং পরে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি বা একীভূতকরণ করা যাবে। এই অধ্যাদেশের অধীনে সরকার ও আইডিআরএ প্রয়োজনে পরিচালনা পর্ষদ, সিইও, চেয়ারম্যান বা পরিচালকদের অপসারণ করতে পারবে। এই নীতির অন্যতম লক্ষ্য হলো, সময়মতো দাবি নিষ্পত্তি নিশ্চিত করে পলিসিধারীর স্বার্থরক্ষা এবং খাতটির প্রতি গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনা।
আইডিআরএ সূত্র জানিয়েছে, জারি হতে যাওয়া অধ্যাদেশের আলোকে রেজল্যুশন বা নিষ্পত্তির জন্য এরই মধ্যে সমস্যাগ্রস্ত ১৫টি বীমা কোম্পানিতে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ দিয়েছে আইডিআরএ। প্রাথমিকভাবে সরকার এসব প্রতিষ্ঠানের সাময়িক মালিকানা নিতে পারে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, বীমা আইন-২০১০ অনুযায়ী একটি পলিসির মেয়াদ পূর্তির পর কাগজপত্র জমা দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে দাবি নিষ্পত্তি করতে হবে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ নিয়ম মানছে না অনেক কোম্পানি। ৩২টি জীবন বীমা কোম্পানিতে ১১ লাখের বেশি গ্রাহকের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার দাবি আটকে আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় যুক্তদের একটি অংশ এখন পলাতক। বিগত সরকারের সময়ে অনৈতিক বিভিন্ন সুবিধা নেওয়ার তালিকায় তাদের নাম রয়েছে।
জানা গেছে, বিপুল পরিমাণ বীমা দাবি নিষ্পত্তি না করা ১৫টি জীবন বীমা কোম্পানির ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিন বছরের বিশেষ নিরীক্ষা করাচ্ছে আইডিআরএ। এ জন্য গত সপ্তাহে অডিট ফার্ম নিয়োগ করেছে কর্তৃপক্ষ। বীমা দাবি পরিশোধ না করাসহ বিভিন্ন মানদণ্ডের ভিত্তিতে খারাপ অবস্থায় পড়া এসব প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হয়েছে। আগামী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে আইডিআরএর কাছে এসব প্রতিষ্ঠানের অডিট রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এসব কোম্পানি হলো- সানফ্লাওয়ার লাইফ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন, সানলাইফ, পদ্মা ইসলামী লাইফ, প্রগ্রেসিভ লাইফ, প্রটেক্টিভ ইসলামী লাইফ, বেস্ট লাইফ, হোমল্যান্ড লাইফ, প্রাইম ইসলামী লাইফ, যমুনা লাইফ, ডায়মন্ড লাইফ, স্বদেশ লাইফ, গোল্ডেন লাইফ, বায়রা লাইফ ও এনআরবি ইসলামিক লাইফ।
‘বীমাকারীর রেজল্যুশন অধ্যাদেশ-২০২৫’-এর বিষয়ে আইডিআরএর সদস্য মো. আপেল মাহমুদ বলেন, বীমা রেজল্যুশন অধ্যাদেশের খসড়ার প্রাথমিক উদ্দেশ্য পলিসিধারীর স্বার্থরক্ষা করা। সময়মতো দাবি নিষ্পত্তি নিশ্চিত করা এর অন্যতম লক্ষ্য। বীমা খাতে আইনি পদক্ষেপের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন ছিল না। এ অধ্যাদেশের ফলে আশু পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। এর ফলে বীমা খাতে আস্থা ফিরে আসবে। তিনি আরও বলেন, আইডিআরএ সম্প্রতি বীমা ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে দুর্বল কোম্পানিগুলোর ওপর বিশেষ নিরীক্ষা পরিচালনা করেছে। অডিটের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে দ্রুত বীমা দাবি নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। বীমাশিল্পে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সানজিদা তন্বীর বিয়ের খবর জানালেন ফেসবুকে নিজের হৃদয়গ্রাহী পোস্টে

বীমা খাতে আস্থা সংকট, ঝুলে আছে গ্রাহকের ৩ হাজার কোটি টাকা

আপডেট সময় : ০৭:৪৫:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
  • ৪৬ বীমা কোম্পানিতে ৯০ শতাংশ দাবিই অনিষ্পন্ন
  • দাবি পরিশোধে গড়িমসি, ক্ষতিগ্রস্ত লাখো গ্রাহক
  • ‘সোনার হরিণ’ সার্ভে রিপোর্ট, অজুহাতের শেষ নেই
  • বীমাকারীর স্বার্থরক্ষায় অধ্যাদেশ আনছে সরকার

বাংলাদেশের বীমা খাতে আস্থাহীনতা ও দুর্ব্যবস্থার চিত্র বহু পরানো। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকেই সাধারণ বীমা খাতে ৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকার বেশি দাবি ঝুলে আছে, যা মোট বীমা দাবির প্রায় ৯০ শতাংশ। এর ফলে লাখো পলিসিধারী বিভিন্ন প্রকার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরও ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না বরং বছরের পর বছর ঘুরছেন কাগজপত্র, আবেদন আর কর্তৃপক্ষের দরজায়। আইডিআরএ (বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ প্রান্তিকেই দেশে ৪৬টি সাধারণ বীমা কোম্পানির কাছে জমা হওয়া দাবির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৪৪৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে মাত্র ২৯৫ কোটি টাকা পরিশোধ হয়েছে। অর্থাৎ মোট দাবির ৯ শতাংশও পরিশোধ হয়নি। বছরের শেষ (ডিসেম্বর ২০২৪) পর্যন্ত এই দাবির পরিমাণ ছিল ৩৮৭১ কোটি টাকা। নতুন বছরে তিন মাসেই প্রায় ৫১৫ কোটি টাকার অতিরিক্ত দাবি জমা হয় কিন্তু পুরনো বকেয়া নিষ্পত্তি হয়নি। ফলে এ খাতে আস্থার সংকট চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে।
সেনাকল্যাণ, সিকদার, স্ট্যান্ডার্ড ও নর্দান ইসলামী ইনস্যুরেন্সের মতো কোম্পানিগুলো ১ শতাংশেরও কম বা সামান্য ওপরে দাবি পরিশোধ করেছে, যেখানে জনতা ইনস্যুরেন্স, ইউনিয়ন ইনস্যুরেন্স ও প্রাইম ইনস্যুরেন্স কিছুটা ব্যতিক্রম। বীমা কোম্পানিগুলোর দাবি, সার্ভে রিপোর্ট দেরি হওয়া বা না পাওয়া দাবির নিষ্পত্তির প্রধান অন্তরায়। অনেক সময় সার্ভে খরচ এতটাই বেশি হয় যে তা মূল দাবির চেয়েও বড় হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে পলিসিধারীরা বছরজুড়ে অভিযোগ দিয়েও কাক্সিক্ষত ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে আইডিআরএ গ্রেডিং পদ্ধতি চালু করেছে, যার মাধ্যমে খারাপ পারফর্ম করা কোম্পানিগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে এ ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক তৎপরতা এখনও আশানুরূপ ফল দিচ্ছে না।
প্রথম প্রান্তিকের হিসাবে দেখা গেছে, ২৩টি কোম্পানি ২০ শতাংশের নিচে বীমা দাবি পরিশোধ করেছে, বাকিরা ২১ থেকে সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত পরিশোধ করেছে। তবে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম জনতা ইনস্যুরেন্স, যারা ৮৫.৮১% দাবি পরিশোধ করেছে (৭ কোটি ২১ লাখ টাকার মধ্যে ৬ কোটি ১৮ লাখ)। এরপর রয়েছে ইউনিয়ন ইনস্যুরেন্স (৮১.১৬%), প্রাইম (৬৮.১০%), মেঘনা (৬৬.০৪%) এবং তাকাফুল ইসলামী ইনস্যুরেন্স (৬১.০৫%)।
বিমা কোম্পানিগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, দাবির নিষ্পত্তিতে প্রধান বাধা হলো সার্ভে রিপোর্ট না পাওয়া। একাধিক কোম্পানির সিইও অভিযোগ করেছেন, ক্ষয়ক্ষতির পরপরই ঘটনা ঘটে গেলেও সার্ভে রিপোর্ট সময়মতো মেলে না, আবার অনেক সময় এর খরচ মূল দাবি ছাড়িয়ে যায়। তাই সার্ভে রিপোর্টকেই তারা অভিহিত করেছেন ‘সোনার হরিণ’ হিসেবে। বীমা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) পরিচালক এস এম নুরুজ্জামান বলেন, দাবি পরিশোধে বীমা কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করতে আইডিআরএ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে আরও সক্রিয় হতে হবে। দ্রুত আইনি পদক্ষেপ জরুরি।
এই সংকট সমাধানে আইডিআরএ ‘বীমাকারীর রেজল্যুশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ শিরোনামে একটি নতুন অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করেছে। খসড়া অনুযায়ী, কোনো দুর্বল বীমা কোম্পানিকে সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় নেওয়া যাবে এবং পরে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি বা একীভূতকরণ করা যাবে। এই অধ্যাদেশের অধীনে সরকার ও আইডিআরএ প্রয়োজনে পরিচালনা পর্ষদ, সিইও, চেয়ারম্যান বা পরিচালকদের অপসারণ করতে পারবে। এই নীতির অন্যতম লক্ষ্য হলো, সময়মতো দাবি নিষ্পত্তি নিশ্চিত করে পলিসিধারীর স্বার্থরক্ষা এবং খাতটির প্রতি গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনা।
আইডিআরএ সূত্র জানিয়েছে, জারি হতে যাওয়া অধ্যাদেশের আলোকে রেজল্যুশন বা নিষ্পত্তির জন্য এরই মধ্যে সমস্যাগ্রস্ত ১৫টি বীমা কোম্পানিতে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ দিয়েছে আইডিআরএ। প্রাথমিকভাবে সরকার এসব প্রতিষ্ঠানের সাময়িক মালিকানা নিতে পারে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, বীমা আইন-২০১০ অনুযায়ী একটি পলিসির মেয়াদ পূর্তির পর কাগজপত্র জমা দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে দাবি নিষ্পত্তি করতে হবে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ নিয়ম মানছে না অনেক কোম্পানি। ৩২টি জীবন বীমা কোম্পানিতে ১১ লাখের বেশি গ্রাহকের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার দাবি আটকে আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় যুক্তদের একটি অংশ এখন পলাতক। বিগত সরকারের সময়ে অনৈতিক বিভিন্ন সুবিধা নেওয়ার তালিকায় তাদের নাম রয়েছে।
জানা গেছে, বিপুল পরিমাণ বীমা দাবি নিষ্পত্তি না করা ১৫টি জীবন বীমা কোম্পানির ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিন বছরের বিশেষ নিরীক্ষা করাচ্ছে আইডিআরএ। এ জন্য গত সপ্তাহে অডিট ফার্ম নিয়োগ করেছে কর্তৃপক্ষ। বীমা দাবি পরিশোধ না করাসহ বিভিন্ন মানদণ্ডের ভিত্তিতে খারাপ অবস্থায় পড়া এসব প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হয়েছে। আগামী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে আইডিআরএর কাছে এসব প্রতিষ্ঠানের অডিট রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এসব কোম্পানি হলো- সানফ্লাওয়ার লাইফ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন, সানলাইফ, পদ্মা ইসলামী লাইফ, প্রগ্রেসিভ লাইফ, প্রটেক্টিভ ইসলামী লাইফ, বেস্ট লাইফ, হোমল্যান্ড লাইফ, প্রাইম ইসলামী লাইফ, যমুনা লাইফ, ডায়মন্ড লাইফ, স্বদেশ লাইফ, গোল্ডেন লাইফ, বায়রা লাইফ ও এনআরবি ইসলামিক লাইফ।
‘বীমাকারীর রেজল্যুশন অধ্যাদেশ-২০২৫’-এর বিষয়ে আইডিআরএর সদস্য মো. আপেল মাহমুদ বলেন, বীমা রেজল্যুশন অধ্যাদেশের খসড়ার প্রাথমিক উদ্দেশ্য পলিসিধারীর স্বার্থরক্ষা করা। সময়মতো দাবি নিষ্পত্তি নিশ্চিত করা এর অন্যতম লক্ষ্য। বীমা খাতে আইনি পদক্ষেপের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন ছিল না। এ অধ্যাদেশের ফলে আশু পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। এর ফলে বীমা খাতে আস্থা ফিরে আসবে। তিনি আরও বলেন, আইডিআরএ সম্প্রতি বীমা ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে দুর্বল কোম্পানিগুলোর ওপর বিশেষ নিরীক্ষা পরিচালনা করেছে। অডিটের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে দ্রুত বীমা দাবি নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। বীমাশিল্পে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।