বিশ্ব ফুটবলজুড়ে শোকের ছায়া। গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন লিভারপুল ও পর্তুগালের তারকা ফরোয়ার্ড ডিয়োগো জোটা। বয়স হয়েছিল মাত্র ২৮ বছর। বিয়ের মাত্র দুই সপ্তাহ পরই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন এই প্রতিভাবান ফুটবলার। রয়টার্স জানিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর স্পেনের জামোরা প্রদেশের সারনাদিল্লা অঞ্চলে। স্থানীয় সময় ভোরে এ পর্তুগিজ ফুটবলার তার ভাই আন্দ্রেকে নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি রাস্তা থেকে ছিটকে পড়ে। এতে মুহূর্তেই গাড়িতে আগুন ধরে যায়। মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটেছে স্পেনের জামোরা প্রদেশের এ-৫২ মহাসড়কে। এতে জোটার সঙ্গে তার ২৬ বছর বয়সী ভাই আন্দ্রে সিলভাও ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। জোটার মত সিলভাও ফুটবলার ছিলেন। পর্তুগালের দ্বিতীয় বিভাগের ক্লাব পেনাফিয়েলে খেলতেন ২৬ বছর বয়সী সিলভা। তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম নিশ্চিত করতে পারেনি, কে গাড়ি চালাচ্ছিলেন বা কী ভাবে দুর্ঘটনা হয়েছে মাত্র দুই সপ্তাহ আগেই শৈশবের প্রেমিকা রুতে কারদোসোকে বিয়ে করেন জোতা। এই জুটির তিনটি সন্তান আছে। গত ২২ জুন পোর্তোয় বিয়ের ছবি সামাজিক কিছুদিন আগে (২৮ জুন) পোস্ট করেন জোতা। এরপর নিয়মিতই নিজেদের ছবি পোস্ট করেছেন। এর মধ্যেই ভেসে এল এমন মর্মান্তিক খবর। দুর্ঘটনার মাত্র একদিন আগেই একটি সাক্ষাৎকারে স্ত্রী রুতে কারদোসো ও তিন সন্তানকে নিয়ে জোটা বলেছিলেন, ‘আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যবান মানুষ।’ মাত্র দুই সপ্তাহ আগে পর্তুগালের পোর্তোতে ঘরোয়া আয়োজনে বিয়ে করেন তিনি। পর্তুগাল ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি পেদ্রো প্রোএঞ্জা জোতা ও তার ভাইয়ের মৃত্যু নিশ্চিত করে শোকবার্তায় বলেন, ‘ডিয়োগো শুধু একজন অসাধারণ খেলোয়াড়ই নয়, ছিলেন একজন দারুণ মানুষ। জাতীয় দলের হয়ে প্রায় ৫০টি ম্যাচ খেলেছেন। তার প্রাণবন্ততা ও আন্তরিকতা সবসময়ই মনে রাখবে পর্তুগাল।’ ২০২০ সালে উলভারহ্যাম্পটন থেকে লিভারপুলে যোগ দিয়েছিলেন জোটা। তার পরেই তৎকালীন কোচ জার্গেন ক্লপের দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে ওঠেন। নিয়মিত প্রথম একাদশে সুযোগ পেতে থাকেন। গত মৌসুমে লিভারপুলের লিগ জয়ী দলেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ২৬টি ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি।
শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াও। নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন, ‘শান্তিতে থেকো দিয়োগো জোটা (১৯৯৬-২০২৫)। কদিন আগেই সে লিভারপুলের হয়ে প্রিমিয়ার লিগ জিতেছে, আবার পর্তুগালের হয়ে জিতেছে নেশন্স লিগ। ভাইসহ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে সে। খুব দুঃখজনক ঘটনা।’ রোনালদো ও জামালের মতোই স্তব্ধ বিশ্ব ফুটবল। ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে থাকা এক প্রতিভাবান ফুটবলারের এমন প্রস্থান বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনেই শোকের ছায়া নামিয়েছে।
পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টেনেগ্রোও জোটার মৃত্যুতে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন। তিনি প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘পর্তুগালের গৌরব বাড়ানো একজন ক্রীড়াবিদ ডিয়োগো জোটা এবং তার ভাইয়ের মৃত্যু অপ্রত্যাশিত ও হৃদয়বিদারক। তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। ফুটবল এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনের জন্য শোকের দিন।’
জোটার মৃত্যুতে ইতোমধ্যেই শোক জানিয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। পর্তুগালের হয়ে লম্বা সময় জোটার সঙ্গে খেলেছেন রোনালদো। সতীর্থের এমন আকস্মিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তিনি। জোটার পরিবারের প্রতিও সমবেদনা জানিয়েছেন এই তারকা ফুটবলার। সামাজিক যোগাযোমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে রোনালদো লিখেছেন, ‘এসবের কোনো মানে হয় না। আমরা একসঙ্গে জাতীয় দলে খেলেছি, সম্প্রতি তুমি বিয়ে করেছো।’ ‘তোমার পরিবার, তোমার স্ত্রী এবং তোমার সন্তানদের প্রতি আমি সমবেদনা জানাই এবং তাদের জন্য বিশ্বের সমস্ত শক্তি কামনা করি। আমি জানি তুমি সবসময় তাদের সঙ্গে থাকবে।’ ‘শান্তিতে ঘুমাও, দিয়েগো এবং আন্দ্রে। আমরা সবাই তোমাদের মিস করব।’


























