উদযাপনের পেশাদারিত্ব এই প্রথমবার দেখালেন ঋতুপর্ণা চাকমা, মনিকা চাকমারা- ব্যাপারটা এমন নয়। গত বছর অক্টোবরে যখন নারী সাফের গ্রুপ পর্বে একের পর এক জয় পাচ্ছিলেন ফুটবলাররা তখনও বলেছিলেন, ‘শিরোপা জিতে কেক কাটতে চাই আমরা।” নারী এশিয়া কাপের বাছাইপর্বের শেষ গ্রুপ ম্যাচে আজ বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে দুর্বল তুর্কমেনিস্তানের। ইয়াঙ্গুনে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়।
এরই মধ্যে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই বাংলাদেশ পৌঁছে গেছে স্বপ্নের চূড়ান্ত পর্বে। কিন্তু তারপরও ফুটবলারদের মুখে একটাই কথা, শেষ ম্যাচ জিতে উদযাপন করতে চান। এর আগে জাতীয় দলের ম্যাচে কখনও তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে দেখা হয়নি বাংলাদেশের। যদিও বয়সভিত্তিক দলে তুর্কমেনিস্তানকে হারানোর অভিজ্ঞতা আছে মনিকা, ঋতুপর্ণাদের।
২০২৩ সালের মার্চে কমলাপুরে এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে তুর্কমেনিস্তানকে ৪-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ। আর ওই বছরেই এপ্রিলে সিঙ্গাপুরে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইয়ে বাংলাদেশ তুর্কমেনিস্তানের জালে ৬ গোল দেয়। এবার তুর্কমেনিস্তান এশিয়ান কাপের প্রথম ম্যাচে মিয়ানমারের কাছে ৮-০ গোলে হারে। যদিও পরের ম্যাচে বাহরাইনের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করে।
র্যাঙ্কিংয়ে গ্রুপের সবচেয়ে দুর্বল দল তুর্কমেনিস্তান। যাদের র্যাঙ্কিং ১৪১। বাংলাদেশের ১২৮। এই ম্যাচে বাংলাদেশ বড় ব্যবধানে জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামবে এমনটাই প্রত্যাশিত। এশিয়ান কাপের মূল পর্বের মঞ্চে ওঠার উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া নয়, জয়ের হাসি দিয়ে এশিয়ান কাপের বাছাই শেষ করার আগের অবস্থানেই আছে বাংলাদেশ। জাতীয় নারী ফুটবল দলের গোলকিপার কোচ মাসুদ আহমেদ উজ্জ্বলও বললেন, তুর্কমেনিস্তান ম্যাচ নিয়ে তাই মেয়েরা ভীষণ সিরিয়াস এবং মনোযোগী।
গ্রুপের দুই শক্তিশালী দল বাহরাইনকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে, স্বাগতিক মিয়ানমারকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলা বাংলাদেশ নিশ্চিত করেছে আগেই। তবে গ্রুপের তলানির দল হলেও তবে প্রতিপক্ষকে মোটেও হালকাভাবে মেয়েরা নিচ্ছে না বলে জানালেন উজ্জ্বল।
তিনি বলেন, “দলের পরিস্থিতি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। ছোটখাট কিছু চোট সমস্যা আছে, কোচ ওই ফুটবলারদের রিকভারি করার সময় দিয়েছে এবং বাকিদের নিয়ে আমরা মাঠ কাজ করেছি। আগামীকালের ম্যাচ নিয়ে মেয়েরা খুবই সিরিয়াস এবং মনোযোগী। আমরাও তাদের প্রতিনিয়ত বলছি, আমাদের বাছাই এখনও শেষ হয়নি এবং যেহেতু উদযাপন করিনি, ইনশাল্লাহ আগামীকালের ম্যাচে জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করে আমরা উদযাপনটা করতে চাই।”
ইতিহাস গড়ে বাঁধনহারা উদযাপনে মেয়েরা মাতেনি বটে, তবে অধিনায়ক আফঈদা খন্দকারের কণ্ঠে ঠিকই মিলল উচ্ছ্বাসের ছোঁয়া। শুক্রবার অনুশীলনের ফাঁকে এই ডিফেন্ডার বললেন, বাছাইয়ের শেষটা তারা করতে চান শতভাগ জয় দিয়ে।
তিনি বলেন, “মূল পর্বে জায়গা পাওয়ার এই আনন্দ আসলে বলে বোঝানোর মত নয়। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল ইতিহাসে এই প্রথম এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করেছে, এটা খুবই আনন্দের। গর্ববোধ করছি। দেশের মানুষ আমাদের অনেক সমর্থন দিয়েছে। দলের পরিস্থিতি খুবই ভালো। সবাই খুব ফুরফুরে মেজাজে আজ ভালোই অনুশীলন করলাম। আগামীকাল আমাদের শেষ ম্যাচ, এ ম্যাচের জন্য সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।”
এশিয়ান কাপের মূল পর্ব আগামী মার্চে অনুষ্ঠিত হবে অস্ট্রেলিয়ায়। সেরা ছয় দলের মধ্যে থাকলে মিলবে ২০২৭ বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ। কাজটা সহজ নয় মোটেও। তবে আফঈদা দেখছেন বড় স্বপ্ন। বাংলাদেশকে দেখতে চান ব্রাজিল অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপে।
তিনি বলেন, “সমর্থকদের বলব, সবাই যেভাবে আমাদের সমর্থন করছেন, সেভাবেই সাপোর্ট করবেন। আমরা যেন আরও এগিয়ে যেতে পারি, সবাই দোয়া করবেন। দলকে আমি বিশ্বকাপের মঞ্চে দেখতে চাই। যেহেতু আমাদের সামনে সুযোগটা আসছে, আমরা অবশ্যই চেষ্টা করব সুযোগ কাজে লাগাতে।”
ঋতুপর্ণা বলেন, “যখন আমরা আমাদের গ্রুপ দেখেছিলাম, তখন আমাদের লক্ষ্য ছিল, আমরা সবাই যদি চায়, হৃদয় দিয়ে চায়, খেলি, তাহলে আমরা কোয়ালিফাই করতে পারব। এখনও আমাদের একটা ম্যাচ বাকি আছে। তাই আমরা ওভাবে উদযাপন করিনি। শেষ ম্যাচ খেলে আমরা পুরোপুরি (পুরোদমে) উদযাপন করব।”


























