আমাদের আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ নির্বাহী আদেশে স্পষ্ট বলা আছে, কিছু দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তি আলোচনা এখনো চলমান- মাহমুদ হাসান খান, সভাপতি, বিজিএমইএ
বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্র সম্পূরক শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিলেও ঢাকার জন্য ‘আত্মতুষ্টির’ সুযোগ দেখছে না পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনের সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, আমাদের আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ নির্বাহী আদেশে স্পষ্ট বলা আছে, কিছু দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বা নিরাপত্তা চুক্তি আলোচনা এখনো চলমান রয়েছে। চুক্তিগুলো হয়ে গেলে এসব দেশের পণ্যে শুল্ক আরও কমে যেতে পারে। তাই বাংলাদেশকে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।
গতকাল শনিবার ঢাকায় বিজিএমইএ সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর গত ২ এপ্রিল শতাধিক দেশের ওপর চড়া হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশের ঘাড়ে পড়ে ৩৫ শতাংশ। এরপর দুই দেশের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনুযায়ী বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয় বাংলাদেশ। দুই দেশের প্রতিনিধি দলের কয়েক দফা বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার সম্পূরক শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয় ওয়াশিংটন। ওয়াশিংটনের এ ঘোষণার বিষয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানাতে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে আসে বিজিএমইএ।
শুল্ক কমানোয় যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, দেশের রপ্তানি পণ্যে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক অবধারিতভাবে আমাদের পণ্য উৎপাদনের খরচ বাড়াবে। এক্ষেত্রে সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলো যেন ব্যবসা থেকে ছিটকে না পড়ে, তা সরকারকে নজরদারিতে রাখতে হবে। আমরা একান্তভাবে আশা করি, শিল্প ও দেশের স্বার্থে সরকারের সব নীতি সহায়তা চলমান থাকবে; এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের দক্ষতা বাড়বে এবং শিল্প নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ পাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ পুনর্নিধারণ করা হয়েছে, যা আমাদের প্রধান পোশাক রপ্তানিকারী প্রতিযোগীদের তুলনায় সমান বা কাছাকাছি। কিছু প্রধান প্রতিযোগী যেমন চীন ও ভারতের তুলনায় কম। বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ২০ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে, আর দেশটিতে মোট রপ্তানির ৮৭ শতাংশই তৈরি পোশাক বলেও মাহমুদ হাসান সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন। এসময় তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় এসে প্রথমে বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক আরোপ করে; এটি পরে তিনমাসের জন্য মওকুফ করে আলোচনার সুযোগ দিলেও বাংলাদেশ প্রথম দফায় কী করতে পারে, তা নিয়ে ‘অনিশ্চয়তা’ তৈরি হয় রপ্তানিকারকদের মধ্যে। পরে যুক্তরাষ্ট্র ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশে আটকে রাখে। আর গোপনীয়তা রক্ষার চুক্তি থাকায় বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করেনি বাংলাদেশ সরকার। এমনকি কী খসড়া চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়, তাও তুলে ধরেনি।
দেশের রপ্তানিকারক ও উদ্যোক্তাদের এখন সব মিলিয়ে কত শুল্ক দিতে হবে, তাও তুলে ধরেন বিজিএমইএ সভাপতি। তিনি বলেন, আগে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ হারে এমএফএন (মোস্ট ফেডারড নেশন) শুল্ক দিতাম। এখন যে ২০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক নির্ধারিত হয়েছে, এর ফলে আমাদের মোট শুল্কের হার দাঁড়াল গড়ে ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ, যা সুনির্দিষ্টভাবে বিভিন্ন পণ্যের জন্য বিভিন্ন হারে প্রযোজ্য হবে। আমাদের মার্কিন রপ্তানির প্রায় ৭৫ শতাংশ হচ্ছে তুলাভিত্তিক পোশাক। শুল্কসংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে বলা আছে, যদি ন্যূনতম ২০ শতাংশ আমেরিকার কাঁচামাল (যেমন তুলা) ব্যবহার করা হয়, তাহলে আমেরিকার কাঁচামালের মূল্যের ওপর এই অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ আমেরিকার কাঁচামাল ব্যবহার করলে আমরা বাড়তি কিছু শুল্ক ছাড় পাব।


























