- অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের শ্লথগতির কারণে ঝুঁকিতে থাকা গরিব মানুষের ওপর বেশি প্রভাব ফেলছে
২০২২ সালে বাংলাদেশে ষভফাপষুা হার ছিল ৫ শতাংশ
২০২৫ সালে হতদরিদ্রের হার ৯ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হতে পারে
অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ধীরগতির কারণে বাংলাদেশে চলতি বছর নতুন করে ৩০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের কবলে পড়তে পারে। আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য সীমা ব্যবহার করে বিশ্বব্যাংক এই পূর্বাভাস দিয়েছে। গত সম্প্রতি প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, চলতি বছরে শ্রমবাজারের দুর্বল অবস্থা অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা মানুষের প্রকৃত আয় কমতে পারে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের শ্লথগতির কারণে ঝুঁকিতে থাকা গরিব মানুষের ওপর বেশি প্রভাব ফেলছে। এতে বৈষম্য আরও বাড়বে বলে বিশ্বব্যাংক মনে করে।
বিশ্বব্যাংকের হিসেবে কোনো মানুষের দৈনিক আয় ২ দশমিক ১৫ ডলারের কম হলে তাকে হত দরিদ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০২২ সালে বাংলাদেশে এ হার ছিল ৫ শতাংশ। ২০২৫ সালে হতদরিদ্রের হার ৯ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হতে পারে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। শুধু অতি দারিদ্র্য হার নয়; জাতীয় দারিদ্র্য হারও বাড়বে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, অতি দারিদ্র্যের হার ৭ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৫ সালে ৯ দশমিক ৩ শতাংশে উঠবে। জাতীয় দারিদ্র্য হার গত বছরে ছিল সাড়ে ২০ শতাংশ। ২০২৫ সালে তা বেড়ে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ হবে। গত জানুয়ারি মাসে ৪ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে জানিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। নতুন পূর্বাভাসে সংস্থাটি জানিয়েছে, আগামী অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে।
অথচ, গত মার্চ মাসে নতুন দরিদ্রের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৪৫ লাখ। অর্থাৎ এই ছয় মাসে আরও ৭৯ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়েছেন। গত এপ্রিল মাস থেকে দেওয়া করোনা বিধিনিষেধের পর দরিদ্রের এই সংখ্যা বেড়েছে। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) যৌথভাবে জরিপটি করে। কোভিডকালে অভাব-অনটনে পড়ে বহু মানুষ রাজধানীসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। এসময় মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর প্রভাব নিয়ে চার দফায় জরিপ করে সংস্থা দুটি।
২০২০ সালেল এপ্রিল মাসে প্রথম দফায় জরিপ করে তারা। পরে ওই বছরের জুন মাসে দ্বিতীয় দফায়, চলতি বছরের জুন মাসে তৃতীয় দফায় এবং সবশেষ গত ২১ আগস্ট থেকে ৮ সেপ্টেম্ববর পর্যন্ত জরিপ চালায় তারা। বিআইজিডি-পিপিআরসির এই জরিপে ৪ হাজার ৮৭২টি পরিবার। এর মধ্যে শহরের ৫৪ শতাংশ, গ্রামের ৪৫ শতাংশ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় এক শতাংশ পরিবার ছিল। ওই সময় জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার কারণে দারিদ্র্যের শিকার দেশের ২৮ শতাংশ মানুষ শহর থেকে গ্রামে চলে যায়। সবশেষ জরিপে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে ১৮ শতাংশ মানুষ শহরে আবার ফিরে এসেছে। অর্থাৎ ১০ শতাংশ মানুষ এখনও শহরে ফিরতে পারেনি। জরিপে দেখা যায়, খাদ্যের ক্ষেত্রে ব্যয় করোনাকালে তুলনামূলক কমে গেছে। শহরে দরিদ্র মানুষের মাথাপিছু ব্যয় ছিল ৬৫ টাকা। এখন তা ৫৪ টাকা। গ্রামে ব্যয় ছিল ৬০ টাকা, এখন ৫৩ টাকা। শুধু খাদ্য নয়, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ব্যয়, শিক্ষা ও যোগাযোগ খাতে দরিদ্র মানুষের ব্যয়ও বেড়েছে। গত মার্চ মাসে শহরের বস্তিতে এ ব্যয় ছিল ৯৩৬ টাকা। গ্রামে এ–সংক্রান্ত ব্যয় ৬৪৭ টাকা থেকে বেড়ে হয় ৭৭৭ টাকা। বাড়তি ব্যয় মেটাতে শহরের দরিদ্র এবং গ্রামের মানুষদের ধার করতে হয়েছে। গ্রাম ও শহর- দুই জায়গার দরিদ্র মানুষ সবচেয়ে বেশি ধার করেছে দোকানিদের কাছ থেকে। গ্রামে এই হার ৬২ শতাংশ, শহরে ৬০ শতাংশ। দৈনন্দিন চলার জন্যই সবচেয়ে বেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে।


























