০৮:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নতুন পথে প্রথম পা: তরুণ গবেষকদের জন্য নির্দেশিকা

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় প্রত্যেক তরুণ শিক্ষার্থীর মনে থাকে একরাশ স্বপ্ন— কেউ হতে চায় দক্ষ বিজ্ঞানী, কেউবা সমাজ পরিবর্তনের পথপ্রদর্শক। কিন্তু বাস্তবতায় এসে দেখা যায়, অনেকেই সঠিক দিকনির্দেশনা ও কৌশলের অভাবে গবেষণার মতো সৃজনশীল মেধাক্ষেত্র থেকে দূরে সরে গিয়ে মুখস্থনির্ভর শিক্ষায় আটকে পড়ে। অথচ প্রথম বর্ষ থেকেই যদি সঠিকভাবে গবেষণার প্রতি আগ্রহ তৈরি করা যায়, তবে একজন শিক্ষার্থী তার একাডেমিক ও পেশাগত জীবনে শক্ত ভিত গড়ে তুলতে পারে।

এই বিষয় নিয়েই আমরা ( আদিব হাসান প্রান্ত, দৈনিক সবুজ বাংলা প্রতিনিধি) কথা বলেছি সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন, প্রফেসর ড. মুক্তারুন ইসলামের সাথে।

দৈনিক সবুজ বাংলা : প্রথম বর্ষ থেকেই একজন শিক্ষার্থী কীভাবে গবেষণার প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে পারে?

প্রফেসর : প্রথম বর্ষ সম্পন্ন হওয়ার পরেই একজন শিক্ষার্থী কৃষি বিজ্ঞান, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, প্রাথমিক ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের শক্ত ভিত্তি গড়ে উঠে। এই মৌলিক জ্ঞানের ভিত্তি গবেষণার পাথেয়। পাঠ্যক্রমের বাইরের বিষয়গুলো সম্পকে তীব্র কৌতুহল থাকা ভীষণ জরুরি। এই কৌতূহলই গবেষণার প্রাথমিক চালিকাশক্তি।নিয়মিত সায়েন্টিফিক জার্নাল বা পপুলার রিসার্চ ব্লগ এ ছোট ছোট রিভিউ আর্টিকেল পড়ার অভ্যেস করা যেটা সহজ ভাষায় গবেষণা বুঝতে সাহায্য করে যেমন: গুগল স্কলার, রিসার্চ গেট,সাইন্টিফিক অ্যামেরিকান ইত্যাদির সাহায্য নেওয়া । এছাড়া সিনিয়রদের অভিজ্ঞতা শোনা যারা আগে থেকেই গবেষণায় যুক্ত, তাদের কাজ দেখা এবং কথা বলা। রিসার্চ বেইসড কোর্স বা ওয়ার্কশপে অংশ নেওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত সেমিনার, ওয়ার্কশপ বা আলোচনা সভায় অংশ গ্রহন করা। এগুলোতে গবেষকদের কাজ শুনলে আগ্রহ জন্মাবে।

দৈনিক সবুজ বাংলা : শিক্ষার্থীরা গবেষণায় যুক্ত হওয়ার জন্য প্রথম ধাপে কী করা উচিত?

প্রফেসর: প্রথমত আগ্রহের ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে হবে কোন বিষয় আপনাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে? (যেমন: সেচ প্রযুক্তির অপ্টিমাইজেশন, পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা, মাটির স্বাস্থ্য ও উর্বরতা, ফসলের পোস্ট-হারভেস্ট লস কমানো, কৃষি রোবোটিক্স, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কৃষি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু সহনশীল ফসলের ব্যবস্থা ইত্যাদি)। কোন কোর্সের প্রজেক্ট বা ল্যাব ওয়ার্ক আপনি সবচেয়ে উপভোগ করেছিলেন? সেখান থেকেই আগ্রহের সূত্র পেতে পারেন।বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের গবেষণার ক্ষেত্রগুলো দেখুন (বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইট/ডিপার্টমেন্টাল নোটিশ বোর্ড)। অধ্যাপকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করুন, এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আপনার আগ্রহের ক্ষেত্রের সাথে মিল আছে এমন অধ্যাপকদের (যাদের আপনি ক্লাস করেছেন বা শুনেছেন) অফিসে সরাসরি ভিজিট করুন অথবা ইমেইল।

দৈনিক সবুজ বাংলা : গবেষণা শুরু করতে হলে কি বিশেষ কোনো দক্ষতা আগে তৈরি করা জরুরি?

প্রফেসর : হ্যাঁ, কিছু প্রাথমিক দক্ষতা সাহায্য করে। বেসিক ল্যাব স্কিল অর্জন করুন এক্ষেত্রে আপনার বিভাগের ল্যাবগুলোতে সময় কাটান, প্রয়োজনে বেসিক যন্ত্রপাতি চালনা শিখুন। গবেষণায় প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার (যেমন:R, Python, MATLAB, GIS,AutoCARD,STATISTICAইত্যাদি ) শেখার উদ্যোগ নিন। সাহিত্য পর্যালোচনা (Literature Review )আগ্রহের বিষয়ে সাম্প্রতিক গবেষণাপত্র (Journal) কিভাবে খুঁজবেন, পড়বেন এবং সারমর্ম করবেন তা শিখুন। জনপ্রিয় রেফারেন্স ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার শিখে রাখা ভালো যেমন জোটেরো বা মেন্ডেলি ব্যবহারের মাধ্যমে উদ্ধৃতি সংগ্রহ, সংগঠন এবং তৈরি করা অত্যন্ত সহজ হয়। এটি গবেষণাপত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায় এবং সময় সাশ্রয় করে। ইংরেজি পড়া ও লেখার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত চর্চা করা খুবই জরুরি কারণ বেশিরভাগ রিসার্চ পেপার ইংরেজিতে।

দৈনিক সবুজ বাংলা : শিক্ষার্থীরা কি ছোট প্রজেক্ট বা সার্ভের মাধ্যমে গবেষণা শুরু করতে পারে?

প্রফেসর : অবশ্যই পারে। বরং এটাই সবচেয়ে ভালো উপায়। ছোট স্কেল প্রজেক্ট বা ফিল্ড সার্ভে দিয়ে শুরু করলে হাতে-কলমে শিখতে সুবিধা হয়। ক্লাসের প্রেজেন্টশন/প্রজেক্ট/টার্ম পেপার কে গবেষণার বীজ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। পরবর্তীতে এই প্রজেক্ট থেকে বড় থিসিস বা প্রকাশযোগ্য গবেষণা তৈরি করা সম্ভব।

দৈনিক সবুজ বাংলা : শিক্ষকদের কাছ থেকে মেন্টরশিপ বা দিকনির্দেশনা পাওয়ার প্রক্রিয়া কেমন

প্রফেসর : প্রথমে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোনো শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করে নিজের আগ্রহের কথা জানানো উচিত। এরপর সরাসরি দেখা করে বা ইমেইলের মাধ্যমে সংক্ষিপ্তভাবে নিজের পরিচয়, আগ্রহ এবং শেখার আগ্রহ প্রকাশ করে যোগাযোগ করা উচিত। পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে তা উল্লেখ করা যায়, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শেখার আন্তরিকতা, আগ্রহ ও প্রস্তুতি প্রদর্শন। যদি আগ্রহ দেখানো যায়, অধিকাংশ শিক্ষকই মেন্টর করতে রাজি হন। শিক্ষক যদি আগ্রহ দেখান, তাহলে চলমান কোনো প্রজেক্টে ছোট কোনো সহকারী ভূমিকা বা টার্ম পেপার নিয়ে কাজ করতে আগ্রহ দেখালে শিক্ষক উৎসাহিত হতে পারেন। মোট কথা, সম্মান, আগ্রহ ও আন্তরিকতা এই তিনটি গুণের সমন্বয়েই একজন শিক্ষার্থী শিক্ষকের কাছ থেকে গঠনমূলক মেন্টরশিপ পেতে পারে। একবার মেন্টরশিপ শুরু হলে সময়নিষ্ঠতা, দায়িত্ববোধ ও নিয়মিত ফলো-আপের মাধ্যমে সম্পর্কটি আরও দৃঢ় ও ফলপ্রসূ হয়ে ওঠে।

দৈনিক সবুজ বাংলা : গবেষণায় অংশগ্রহণ শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারে কীভাবে সাহায্য করে?

প্রফেসর : গবেষণায় অংশগ্রহণ শিক্ষার্থীদের ক্যারিায়ার গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি উচ্চশিক্ষা যেমন এমএস বা পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য একটি শক্তিশালী প্রোফাইল তৈরি করতে সহায়তা করে, যা ভর্তি ও বৃত্তি প্রাপ্তির সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। গবেষণার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিশ্লেষণী দক্ষতা, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা এবং একাডেমিক লেখার দক্ষতা উন্নত হয়, যা শিল্পখাতে তথ্য-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ অথবা নীতি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এছাড়াও, গবেষণাপত্র প্রকাশ পেশাগত পরিচিতি ও সুনাম বৃদ্ধি করে, যা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন, কর্মশালা, ইন্টার্নশিপ এবং চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করে। সামগ্রিকভাবে, গবেষণার অভিজ্ঞতা কেবল একটি সনদ নয়; এটি চিন্তার ধরন, বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি ও ব্যবহারিক দক্ষতার সমন্বয়, যা একজন শিক্ষার্থীকে তার পেশাগত জীবনের জন্য প্রস্তুত করে এবং ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারে সাফল্য অর্জনে সহায়তা করে।

দৈনিক সবুজ বাংলা : ধন্যবাদ আপনাকে সময় দেওয়ার জন্য।

প্রফেসর : আপনাকেও ধন্যবাদ।
এসএস/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

নতুন পথে প্রথম পা: তরুণ গবেষকদের জন্য নির্দেশিকা

আপডেট সময় : ০৮:৫৩:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় প্রত্যেক তরুণ শিক্ষার্থীর মনে থাকে একরাশ স্বপ্ন— কেউ হতে চায় দক্ষ বিজ্ঞানী, কেউবা সমাজ পরিবর্তনের পথপ্রদর্শক। কিন্তু বাস্তবতায় এসে দেখা যায়, অনেকেই সঠিক দিকনির্দেশনা ও কৌশলের অভাবে গবেষণার মতো সৃজনশীল মেধাক্ষেত্র থেকে দূরে সরে গিয়ে মুখস্থনির্ভর শিক্ষায় আটকে পড়ে। অথচ প্রথম বর্ষ থেকেই যদি সঠিকভাবে গবেষণার প্রতি আগ্রহ তৈরি করা যায়, তবে একজন শিক্ষার্থী তার একাডেমিক ও পেশাগত জীবনে শক্ত ভিত গড়ে তুলতে পারে।

এই বিষয় নিয়েই আমরা ( আদিব হাসান প্রান্ত, দৈনিক সবুজ বাংলা প্রতিনিধি) কথা বলেছি সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন, প্রফেসর ড. মুক্তারুন ইসলামের সাথে।

দৈনিক সবুজ বাংলা : প্রথম বর্ষ থেকেই একজন শিক্ষার্থী কীভাবে গবেষণার প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে পারে?

প্রফেসর : প্রথম বর্ষ সম্পন্ন হওয়ার পরেই একজন শিক্ষার্থী কৃষি বিজ্ঞান, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, প্রাথমিক ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের শক্ত ভিত্তি গড়ে উঠে। এই মৌলিক জ্ঞানের ভিত্তি গবেষণার পাথেয়। পাঠ্যক্রমের বাইরের বিষয়গুলো সম্পকে তীব্র কৌতুহল থাকা ভীষণ জরুরি। এই কৌতূহলই গবেষণার প্রাথমিক চালিকাশক্তি।নিয়মিত সায়েন্টিফিক জার্নাল বা পপুলার রিসার্চ ব্লগ এ ছোট ছোট রিভিউ আর্টিকেল পড়ার অভ্যেস করা যেটা সহজ ভাষায় গবেষণা বুঝতে সাহায্য করে যেমন: গুগল স্কলার, রিসার্চ গেট,সাইন্টিফিক অ্যামেরিকান ইত্যাদির সাহায্য নেওয়া । এছাড়া সিনিয়রদের অভিজ্ঞতা শোনা যারা আগে থেকেই গবেষণায় যুক্ত, তাদের কাজ দেখা এবং কথা বলা। রিসার্চ বেইসড কোর্স বা ওয়ার্কশপে অংশ নেওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত সেমিনার, ওয়ার্কশপ বা আলোচনা সভায় অংশ গ্রহন করা। এগুলোতে গবেষকদের কাজ শুনলে আগ্রহ জন্মাবে।

দৈনিক সবুজ বাংলা : শিক্ষার্থীরা গবেষণায় যুক্ত হওয়ার জন্য প্রথম ধাপে কী করা উচিত?

প্রফেসর: প্রথমত আগ্রহের ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে হবে কোন বিষয় আপনাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে? (যেমন: সেচ প্রযুক্তির অপ্টিমাইজেশন, পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা, মাটির স্বাস্থ্য ও উর্বরতা, ফসলের পোস্ট-হারভেস্ট লস কমানো, কৃষি রোবোটিক্স, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কৃষি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু সহনশীল ফসলের ব্যবস্থা ইত্যাদি)। কোন কোর্সের প্রজেক্ট বা ল্যাব ওয়ার্ক আপনি সবচেয়ে উপভোগ করেছিলেন? সেখান থেকেই আগ্রহের সূত্র পেতে পারেন।বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের গবেষণার ক্ষেত্রগুলো দেখুন (বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইট/ডিপার্টমেন্টাল নোটিশ বোর্ড)। অধ্যাপকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করুন, এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আপনার আগ্রহের ক্ষেত্রের সাথে মিল আছে এমন অধ্যাপকদের (যাদের আপনি ক্লাস করেছেন বা শুনেছেন) অফিসে সরাসরি ভিজিট করুন অথবা ইমেইল।

দৈনিক সবুজ বাংলা : গবেষণা শুরু করতে হলে কি বিশেষ কোনো দক্ষতা আগে তৈরি করা জরুরি?

প্রফেসর : হ্যাঁ, কিছু প্রাথমিক দক্ষতা সাহায্য করে। বেসিক ল্যাব স্কিল অর্জন করুন এক্ষেত্রে আপনার বিভাগের ল্যাবগুলোতে সময় কাটান, প্রয়োজনে বেসিক যন্ত্রপাতি চালনা শিখুন। গবেষণায় প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার (যেমন:R, Python, MATLAB, GIS,AutoCARD,STATISTICAইত্যাদি ) শেখার উদ্যোগ নিন। সাহিত্য পর্যালোচনা (Literature Review )আগ্রহের বিষয়ে সাম্প্রতিক গবেষণাপত্র (Journal) কিভাবে খুঁজবেন, পড়বেন এবং সারমর্ম করবেন তা শিখুন। জনপ্রিয় রেফারেন্স ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার শিখে রাখা ভালো যেমন জোটেরো বা মেন্ডেলি ব্যবহারের মাধ্যমে উদ্ধৃতি সংগ্রহ, সংগঠন এবং তৈরি করা অত্যন্ত সহজ হয়। এটি গবেষণাপত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায় এবং সময় সাশ্রয় করে। ইংরেজি পড়া ও লেখার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত চর্চা করা খুবই জরুরি কারণ বেশিরভাগ রিসার্চ পেপার ইংরেজিতে।

দৈনিক সবুজ বাংলা : শিক্ষার্থীরা কি ছোট প্রজেক্ট বা সার্ভের মাধ্যমে গবেষণা শুরু করতে পারে?

প্রফেসর : অবশ্যই পারে। বরং এটাই সবচেয়ে ভালো উপায়। ছোট স্কেল প্রজেক্ট বা ফিল্ড সার্ভে দিয়ে শুরু করলে হাতে-কলমে শিখতে সুবিধা হয়। ক্লাসের প্রেজেন্টশন/প্রজেক্ট/টার্ম পেপার কে গবেষণার বীজ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। পরবর্তীতে এই প্রজেক্ট থেকে বড় থিসিস বা প্রকাশযোগ্য গবেষণা তৈরি করা সম্ভব।

দৈনিক সবুজ বাংলা : শিক্ষকদের কাছ থেকে মেন্টরশিপ বা দিকনির্দেশনা পাওয়ার প্রক্রিয়া কেমন

প্রফেসর : প্রথমে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোনো শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করে নিজের আগ্রহের কথা জানানো উচিত। এরপর সরাসরি দেখা করে বা ইমেইলের মাধ্যমে সংক্ষিপ্তভাবে নিজের পরিচয়, আগ্রহ এবং শেখার আগ্রহ প্রকাশ করে যোগাযোগ করা উচিত। পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে তা উল্লেখ করা যায়, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শেখার আন্তরিকতা, আগ্রহ ও প্রস্তুতি প্রদর্শন। যদি আগ্রহ দেখানো যায়, অধিকাংশ শিক্ষকই মেন্টর করতে রাজি হন। শিক্ষক যদি আগ্রহ দেখান, তাহলে চলমান কোনো প্রজেক্টে ছোট কোনো সহকারী ভূমিকা বা টার্ম পেপার নিয়ে কাজ করতে আগ্রহ দেখালে শিক্ষক উৎসাহিত হতে পারেন। মোট কথা, সম্মান, আগ্রহ ও আন্তরিকতা এই তিনটি গুণের সমন্বয়েই একজন শিক্ষার্থী শিক্ষকের কাছ থেকে গঠনমূলক মেন্টরশিপ পেতে পারে। একবার মেন্টরশিপ শুরু হলে সময়নিষ্ঠতা, দায়িত্ববোধ ও নিয়মিত ফলো-আপের মাধ্যমে সম্পর্কটি আরও দৃঢ় ও ফলপ্রসূ হয়ে ওঠে।

দৈনিক সবুজ বাংলা : গবেষণায় অংশগ্রহণ শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারে কীভাবে সাহায্য করে?

প্রফেসর : গবেষণায় অংশগ্রহণ শিক্ষার্থীদের ক্যারিায়ার গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি উচ্চশিক্ষা যেমন এমএস বা পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য একটি শক্তিশালী প্রোফাইল তৈরি করতে সহায়তা করে, যা ভর্তি ও বৃত্তি প্রাপ্তির সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। গবেষণার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিশ্লেষণী দক্ষতা, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা এবং একাডেমিক লেখার দক্ষতা উন্নত হয়, যা শিল্পখাতে তথ্য-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ অথবা নীতি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এছাড়াও, গবেষণাপত্র প্রকাশ পেশাগত পরিচিতি ও সুনাম বৃদ্ধি করে, যা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন, কর্মশালা, ইন্টার্নশিপ এবং চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করে। সামগ্রিকভাবে, গবেষণার অভিজ্ঞতা কেবল একটি সনদ নয়; এটি চিন্তার ধরন, বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি ও ব্যবহারিক দক্ষতার সমন্বয়, যা একজন শিক্ষার্থীকে তার পেশাগত জীবনের জন্য প্রস্তুত করে এবং ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারে সাফল্য অর্জনে সহায়তা করে।

দৈনিক সবুজ বাংলা : ধন্যবাদ আপনাকে সময় দেওয়ার জন্য।

প্রফেসর : আপনাকেও ধন্যবাদ।
এসএস/সবা