ধানখেতের পাশে প্রাণ বাঁচাতে কাকুতি–মিনতি করছে এক শিক্ষার্থী। ঘিরে থাকা কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা নির্মমভাবে তাঁকে পেটাচ্ছে। কারও হাতে লাঠি, কারও হাতে ধারালো রামদা। দৌড়ে পালাতে না পারলে হয়তো প্রাণ বাঁচানোই কঠিন হয়ে যেত তাঁর।
এ দৃশ্য কেবল একটিই নয়—এমন আরও অন্তত চারটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কোথাও শিক্ষার্থীকে মাটিতে ফেলে রক্তাক্ত করে মারধর, কোথাও আবার ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার পরও ইট ছুড়ে মারছে কয়েকজন। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে এক তরুণের, কাঁধে এখনও ঝুলছে তাঁর ব্যাগ। আবার আরেকটিতে সাদা শার্ট পরা এক শিক্ষার্থীকে ছাদ থেকে লাথি মেরে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।

শনিবার গভীর রাত থেকে টানা রোববার দুপুর পর্যন্ত চলে সংঘর্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন জোবরা গ্রাম মুহূর্তেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের হাতে লাঠি, রড, পাইপ, রামদা। ইটপাটকেলের বৃষ্টি আর ধাওয়া–পাল্টাধাওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। অলিগলিতে আটকে পড়ে অসহায় শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়।
এই সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ২২০ জন, তাঁদের মধ্যে প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থী। গুরুতর আহত কয়েকজন এখনো আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। একজনকে পাঠানো হয়েছে ঢাকায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া বাসার এক দারোয়ান ছাত্রীকে মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া এই সহিংসতা থামাতে শিক্ষক–প্রশাসন এগিয়ে এলেও কোনো লাভ হয়নি। অবশেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে।
তবে ঘটনার ভয়াবহতা এখানেই থেমে নেই
ভিডিওগুলোতে যে নির্মমতা ধরা পড়েছে, তা সমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছে। কারও মায়ের বুক ফেটে যাচ্ছে সন্তানের এভাবে রক্তাক্ত হওয়ার দৃশ্য দেখে, কারও ভাইয়ের চিৎকার ধানখেত থেকে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে।
এখন প্রশ্ন একটাই—শিক্ষার অঙ্গন যেখানে হওয়া উচিত শান্তি ও জ্ঞানের কেন্দ্র, সেখানে কেন এত রক্ত, এত আক্রোশ, এত অমানবিকতা?
এমআর/সবা


























