চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ও পার্শ্ববর্তী এলাকা নিজেদের ‘পৈত্রিক সম্পত্তি’ দাবি করে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম-৫ আসনের জামায়াত ইসলামী মনোনীত এমপি প্রার্থী ও হাটহাজারী উপজেলা আমীর ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম।
গতকাল শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। এর পরপরই গত রাত ২টার দিকে জিরো পয়েন্ট, এ এফ রহমান হল ও শহীদ ফরহাদ হোসেন হলের সামনে বিক্ষোভে করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।
এ ঘটনায় শাখা ছাত্রশিবিরও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। ওই বিবৃতিতে জামায়াত নেতা সিরাজুল ইসলামের বক্তব্য প্রত্যাখান করেছে সংগঠনটি।
ওই ভিডিওতে সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তির ওপর, তাই আমরা গর্বিত। আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মালিক, আমরা জমিদার। জমিদারের ওপর কেউ হস্তক্ষেপ করবে, এটা আমরা মেনে নিতে পারি না। আমরা অতীতেও মেনে নিইনি, সামনেও নেব না।
তিনি আরও বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে আমাদের বুকের ওপর। আমরা এ জায়গার মালিক। এজন্য আমরা অন্যায় কোনোকিছুই মেনে নেব না। আমাদের সম্মান করতে হবে। সম্মান দেওয়ার মতো পরিবেশ আমরা গড়ে নেব। বিশ্ববিদ্যালয় যদি আমাদের যথাযথ সম্মান না করে, তাহলে আমরা জনগণ নিয়ে যেটা করার দরকার, এটাই ইনশাআল্লাহ আমরা সামনে করবো।
শাখা ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক সাঈদ বিন হাবিব ফেসবুকে লেখেন, “জনাব সিরাজ সাহেব তার বক্তব্যের জন্য যে ক্ষমা চেয়েছেন, এই ক্ষমা চাওয়াকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে ভোটের আশায় তিনি ঔদ্ধত্যপূর্ণ, মিথ্যা, অহংকারী ও শিক্ষার্থীদের জন্য অপমানজনক যে বক্তব্য দিয়েছেন- এজন্য তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। কেবল ক্ষমা চেয়ে পার পাইয়ে দেওয়া যাবে না।”
এদিকে বিতর্কিত বক্তব্যের জেরে ক্ষমা চেয়ে গত রাতেই নিজের ফেসবুক আইডিতে ক্ষমা পোস্ট দেন সিরাজুল ইসলাম। সেখানে তিনি বলেন, বক্তব্যের কিছু অংশ অনেকের কাছে ভুলভাবে উপস্থাপিত হতে পারে। এটি সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত। আমার শব্দচয়নে কিছুটা ভুল হতে পারে, তবে আমার উদ্দেশ্য এমনটি ছিলো না। আমি গত ১৬ বছর ধরে চবিতে চাকরি করেছি। শিক্ষার্থীরা জানে আমি তাদের কতটুকু স্নেহ করি। আহত ছাত্রদের খোঁজ খবর নিয়েছি এবং সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি। আমার বক্তব্যে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে, তাদের কাছে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি এবং ক্ষমা চাচ্ছি। ভবিষ্যতে আমি আমার শব্দচয়নের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকবো।
জামায়াত নেতার ওই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছে শাখা ছাত্রশিবির। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) প্রচার সম্পাদক ইসহাক ভূঁঞা স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, হাটহাজারী উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর নেতা ও দলীয় এমপি পদপ্রার্থী সিরাজুল ইসলাম অহংকারী ভাষায় শিক্ষার্থীদের অপমান করেছেন। আমরা এই বক্তব্যকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। এটি প্রকৃত সন্ত্রাসীদের অপকর্ম আড়াল করার চেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। আমরা তাঁর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট চবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার মীমাংসা বৈঠকে এমন বিতর্কিত বক্তব্য দেন সিরাজুল ইসলাম।


























