চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকস) নির্বাচনে প্রথম ইশতেহার ঘোষণা করেছে শাখা বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব স্টুডেন্ট ফ্রন্ট সমর্থিত `রেভ্যুলেশন ফর স্টেট অব হিউম্যানিটি’ প্যানেল।
আজ শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় চাকসু ভবনের সামনে এ ইশেতহার ঘোষণা করেন প্যানেলটির ভিপি প্রার্থী কেফায়েত উল্লাহ ও জিএস প্রার্থী কাজী মো. শাহারিয়ার উল্যাহ।
১৭টি ইশতেহারে তাদের প্রতিশ্রুতিগুলো হলো- ১. দলীয় আধিপত্য, দলীয় জবরদখল ও দলীয় সংঘাতমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তোলা। সে লক্ষ্যে চাকসু নির্বাচন একাডেমিক ক্যালেন্ডারে অর্ন্তভুক্ত করা, সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন চালু করা এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও ছাত্রপ্রতিনিধিদের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
২. মুক্ত জ্ঞান চর্চার ও স্বাধীন জীবন বিকাশের শান্তিপূর্ণ নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলা। ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রশাসনিক সহায়তার মাধ্যমে প্রশিক্ষিত এবং দক্ষ নিরাপত্তাবাহিনী প্রণয়ন করা। শিক্ষার্থীদের ইমিডিয়েট সাপোর্ট দেওয়ার জন্য ইমারজেন্সি সিকিউরিটি সেল গঠন করা।
৩. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষকমন্ডলী ও ছাত্রসংসদকে সকল ছাত্রছাত্রীর কল্যাণে সবার প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা এবং দলীয় বৈষম্য দূর করা। চাকসু নির্বাচনে ছাত্রদের মেন্ডেট শতভাগ কার্যকর হওয়ার জন্য ও অধিকার সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সভাপতি পদে ছাত্রপ্রতিনিধিত্ব। তাই সভাপতি পদে ছাত্রপ্রতিনিধি নির্বাচনের রীতি চালু করার জন্য সাংবিধানিক অধ্যাদেশ পরিবর্তনের লক্ষ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৪. সবার মত প্রকাশের গণতান্ত্রিক মানবিক পরিবেশ বজায় রাখা এবং বিশেষভাবে ধর্মের নামে উগ্রবাদি সন্ত্রাসী চক্রের নিপীড়ন থেকে ছাত্রীদের স্বাধীন ও মুক্ত জীবনের বিকাশ নিশ্চিত করা।
৫. আবাসন সংকট নিরসণের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে হলসমূহে ডাবল-ডেকার সিট ব্যবহার, এক্সটেনশনসমূহ সংস্কার, স্টাফ কোয়াটার, পরিত্যাক্ত ও অব্যবহৃত ভবনসমূহ অতিদ্রুত সংস্কার, জোবরা এলাকার বাড়িওয়ালাদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আলোচনার মাধ্যমে ভাড়া হ্রাস করা। চূড়ান্তভাবে শতভাগ আবাসনের জন্য চলতি অর্থবছরেই বাজেট ব্যবস্থা করা।
৬. টিচার্স এফিশিয়েন্সি রেটিং এর যথাযথ বাস্তবায়ন করা, বিজ্ঞানভিত্তিক ও প্রেক্টিক্যাল পড়াশোনার ব্যবস্থা করা। সেশনজট নিরসনে একাডেমিক ক্যালেন্ডার বাধ্যতামূলক করা, গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা।
৭. পরিবহন সংকট সমাধানে প্রাথমিক পর্যায়ে শাটল ট্রেনের ইঞ্জিন পরিবর্তন করে যাত্রাকালীন সময় কমিয়ে আনা। দ্রুতযান বাস সার্ভিস সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আসা-যাওয়ার বাস সার্ভিস চালু করা। দূরবর্তী উপজেলাসমূহে স্পেশাল বাস সার্ভিস ব্যবস্থা করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ই-কার্ট, বাই-সাইকেল ও চক্রাকার বাস ব্যবস্থা করার মাধ্যমে রিকশা-সিএনজি সিন্ডিকেটের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা।
৮. হলসমূহে মিল সিস্টেম বাতিল করে পুনরায় ডাইনিং-ক্যান্টিন সিস্টেম চালু করা। খাদ্যের মান উন্নতকরণে ভর্তুকি বৃদ্ধি করা, নিউট্রিয়াশনিস্ট এর মাধ্যমে গুণগত মান নিশ্চিত করা। মনিটরিং সেল গঠন করে ক্যাম্পসস্থ সকল খাবার দোকান, ঝুপড়ি, ক্যান্টিন, ডাইনিং, দোকানের খাদ্যমান যাচাই করা ও রিপোর্ট পেশ করা।
৯. মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধি করা, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ইউনিট করা ও নিয়মিত কাউন্সিলিং এর ব্যবস্থা করা, এম্বুলেন্স এর সংখ্যা বৃদ্ধি, নিম্নমানের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে গুণগত মানসম্পন্ন ওষুধপত্র ব্যবস্থাপনা করা ও নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষার ব্যবস্থা করা। মেয়েদের হলসমূহে ও একাডেমিক ভবনগুলোতে লেডিস ওয়াশরুমে সেনিটারী ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করা।
১০. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পরিপূর্ণ ডাটাবেইজ প্রস্তুত করা। সমস্ত প্রশাসনিক ও একাডেমিক কাগজপত্রের কাজ অনলাইনভিত্তিক করা। ফলশ্রুতিতে ব্যাংকিং কার্যক্রম শতভাগ অনলাইনকরণ করা। ভর্তির সাথে সাথে স্টুডেন্ট মেইল প্রদান করা। বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইট উন্নয়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীবান্ধব করা।
১১. সকল পরীক্ষার ফি বন্ধ করা। ছাত্র-সংসদ তহবিলের দুই তৃতীয়াংশ গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের কল্যাণে ব্যয় করা। পোষ্য কোটা, সেমিনার ফি, উন্নয়ন ফি সহ অযৌক্তিক ফি ও কোটা শতভাগ বাতিল করা।
১২. বিশেষ সুবিধাসম্পন্ন শিক্ষার্থী ভাই-বোন, পাহাড়, সমতল, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে মানবিক সাম্যের ক্যাম্পাস গড়ে তোলা।
১৩. ছাত্রপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত কার্যনির্বাহী কমিটি সহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ/পরামর্শ সরাসরি শেয়ার করার জন্য কম্পেইন সেল প্রস্তুত করা ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধান করা।
১৪. বিশ্ববিদ্যালয়ে গুপ্ত বা পেশিশক্তির রাজনীতি বিলুপ্ত করার লক্ষ্যে প্রতি মাসে ১-২ বার করে বিভিন্ন ছাত্রনেতাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে প্রতিটি ইস্যু নিয়ে বির্তক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেন একাডেমিক রাজনীতির কালচার গঠিত হয়। ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতির চর্চা বন্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের রাজনীতি চালু হয়। মত প্রকাশ ও মুক্ত জ্ঞান চর্চার পরিবেশ গড়ে তোলা।
১৫. সমগ্র ক্যাম্পাসে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য রিসাইকেল সিস্টেম চালু করা, পচনশীল বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা এবং জীববৈচিত্র ও পরিবেশ রক্ষায় প্রাণীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলা।
১৬. লাইব্রেরীতে বই সংগ্রহ বৃদ্ধি করা। সেমিনার ও রিডিংরুমে বই, বিদেশী জার্নাল, গবেষণাপত্র সরবরাহ বৃদ্ধি করা। লাইব্রেরী ফ্যাসিলিটিসমূহ শিক্ষার্থীবান্ধব করে গড়ে তোলা।
১৭. পরবর্তী চাকসু নির্বাচনে অনলাইন ভোটিং সিস্টেম চালু করা। (যেখানে শিক্ষার্থীদের ডাটাবেইজ থাকবে এবং শিক্ষার্থীরা তাদের আইডিতে লগিন করার মাধ্যমে ভোট প্রদান করবে। এতে স্বল্প ব্যয়ে এবং সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করার পাশাপাশি একাডেমিক কার্যক্রমকে সচল রাখবো।


























