স্বর্ণ চোরাচালানের মাধ্যমে অর্জিত প্রায় ১০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। অভিযুক্ত শ্যাম ঘোষের নামে থাকা এসব সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন আদালত। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিকের সঙ্গে প্রতারণা, হুন্ডি ও সোনা চোরাচালানের মাধ্যমে প্রায় ৬০৮ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ ঘটনায় আরও কয়েকজন অজ্ঞাতপরিচয় আসামিকে এজাহারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান।
তিনি বলেন, স্বর্ণ চোরাকারবারের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে শ্যাম ঘোষের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করা হয় (মামলা নং-১২)। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, স্বর্ণ ব্যবসায়ী শ্যাম ঘোষ ঢাকার সূত্রাপুরে বাবার হোটেলে কর্মজীবন শুরু করলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন স্বর্ণের দোকানে চাকরির আড়ালে চোরাই স্বর্ণের কারবার চালাতেন। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া গোপনে স্বর্ণ কেনাবেচা করে বিপুল সম্পদ অর্জন করেন তিনি।
সিআইডির তদন্তে আরও উঠে আসে, চোরাচালানের অর্থ দিয়ে শ্যাম ঘোষ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে একাধিক দোকান ও ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে- যমুনা ফিউচার পার্কের সি-ব্লকের ষষ্ঠ তলায় তিনটি দোকান (দোকান নং ৫ঈ-০৫৪, ৫ঈ-০৫৫, ৫ঈ-০৫৬), একই স্থানে ‘ইন্ডিয়ান ডোমেস্টিক স্পাই’ নামের একটি রেস্টুরেন্ট, কোতোয়ালি থানার ওয়াইজঘাটে ‘বাবুলী স্টার সিটি’ ভবনের পঞ্চম তলায় একটি ফ্ল্যাট, স্বামীবাগের ‘স্বর্ণচাপা’ ভবনের ষষ্ঠ তলায় নিজ ও ভাইয়ের যৌথ মালিকানাধীন একটি ফ্ল্যাট, বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে ‘নন্দন জুয়েলার্স’ নামের স্বর্ণের দোকান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সিনিয়র মহানগর স্পেশাল জজ আদালত এসব সম্পত্তির ওপর ক্রোকাদেশ দেন। ক্রোক করা সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ডিএমপি কমিশনারকে রিসিভার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট জানিয়েছে, স্বর্ণ চোরাচালান ও মানিলন্ডারিংয়ের এ মামলার তদন্ত এখনো অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে অপর ঘটনায় সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিকের সঙ্গে প্রতারণা, হুন্ডি ও সোনা চোরাচালানের মাধ্যমে প্রায় ৬০৮ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ ঘটনায় আরও কয়েকজন অজ্ঞাতপরিচয় আসামিকে এজাহারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- মনীন্দ্র নাথ বিশ্বাস (৫০), ওয়াহিদুজ্জামান (৫২), মো. গোলাম সারওয়ার আজাদ (৫১), মো. তরিকুল ইসলাম ওরফে রিপন ফকির (৪৯), রাজীব সরদার (৩৭) এবং উজ্জ্বল কুমার সাধু (৩৮)।
তিনি বলেন, এক মার্কিন নাগরিক প্রতারণার শিকার হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ‘ডিইআই’র মাধ্যমে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এরপর তদন্ত শুরু করে সিআইডি। সিআইডির তদন্তে উঠে আসে, মার্কিন নাগরিক ডেবোরাহ জন্সটন রামলো ওরফে ডেবির সঙ্গে প্রতারকচক্র বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে সখ্য গড়ে তোলে। পরে নিজেদের ডিইআই’র পরিচয় দিয়ে তাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ২ লাখ ২২ হাজার মার্কিন ডলার আত্মসাৎ করে। অভিযুক্তরা ভুক্তভোগীকে জোর করে ওই অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠাতে বাধ্য করেন। পরে বাংলাদেশে থাকা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা নেন।
সিআইডির অনুসন্ধানে দেখা যায়, অভিযুক্তরা আইনক্স ফ্যাশন, ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ, জামান এন্টারপ্রাইজ ও নোহা এন্টারপ্রাইজ নামে ভুয়া প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করছিলেন। এসব অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অবৈধ লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া অভিযুক্ত মনীন্দ্র নাথ বিশ্বাসের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টেও অবৈধ লেনদেন হয়েছে। তদন্তে আরও বেরিয়ে এসেছে, এ চক্র মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগত যাত্রী ও ঢাকার তাঁতীবাজারসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ভাঙারি সোনা সংগ্রহ করতো। পরে সেগুলো গলিয়ে বার তৈরি করে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করতো।
বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রতারণা, হুন্ডি ও সোনা চোরাচালানের মাধ্যমে অভিযুক্তরা প্রায় ৬০৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকার বেশি লেনদেন করেছেন। এই টাকায় তারা ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়েছেন এবং নামে-বেনামে সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন। ঘটনার পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা (নং-২৪) দায়ের করা হয়।
সিআইডি বলছে, মামলার পূর্ণ রহস্য উদঘাটন, অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের শনাক্ত ও সবাইকে আইনের আওতায় আনতে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
শিরোনাম
মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে প্রতারণা-মানিলন্ডারিংয়ে মামলা
চোরাই স্বর্ণের অর্থে ফ্ল্যাট-দোকান, ১০ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ
-
নিজস্ব প্রতিবেদক - আপডেট সময় : ০৭:৪২:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫
- ।
- 79
জনপ্রিয় সংবাদ


























