০৩:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাবিতে এক দশকের অচলায়তন ভেঙে ফিরছে সিনেট

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের উত্তাপ ক্যাম্পাসজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে হল প্রাঙ্গণ পর্যন্ত চলছে জোরালো প্রচারণা।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদ সিনেটের পাঁচটি ছাত্র প্রতিনিধি পদে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ এখনও তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। এই পাঁচটি পদের জন্য লড়ছেন মোট ৫৮ জন প্রার্থী।

সিনেট কী, কেন গুরুত্বপূর্ণ?

উপাচার্য নির্বাচনের অনুমোদন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট অনুমোদন, নতুন বিভাগ খোলা বা আইন সংশোধন—সবই সিনেট অধিবেশনে হয়। ১০৪ সদস্যের সিনেটে শিক্ষার্থীদের হয়ে কথা বলার সুযোগ পান মাত্র পাঁচজন নির্বাচিত প্রতিনিধি।

সদস্যদের মধ্যে থাকেন—উপাচার্য, দুইজন উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, ২৫ জন রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট, ৫ জন গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধি, রাষ্ট্রপতি ও সরকার মনোনীত কর্মকর্তা, সংসদ সদস্য, অধ্যক্ষদের প্রতিনিধি, কলেজ শিক্ষক ও শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান। শিক্ষকদের ভোটে নির্বাচিত ৩৩ জন এবং শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত ৫ জন শিক্ষার্থী সদস্য হিসেবে অধিবেশনে অংশ নেন।

প্রার্থীরা বলছেন—সিনেট কেবল মর্যাদা নয়, দায়িত্বও

মোস্তাকুর রহমাব জাহিদ (সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের ভিপি ও সিনেট প্রার্থী) বলেন, “সিনেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরুদণ্ড। নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীবান্ধব বাজেট, হল সিটসংকট সমাধান, গ্রন্থাগার মানোন্নয়ন, আইসিটি সুবিধা উন্নয়ন এবং ক্রীড়া-সংস্কৃতি বরাদ্দ বৃদ্ধিতে কাজ করব। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত মতামত সংগ্রহ করে তা সিনেটে তুলে ধরব।”

শেখ নূর উদ্দীন আবীর (ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম) বলেন, “সিনেটে শিক্ষার্থীদের দাবি বাজেটে প্রতিফলিত হবে। আবাসন সংকট, গবেষণা তহবিলের অভাব, লাইব্রেরির বইয়ের ঘাটতি—এসব সমস্যা সরাসরি সিনেটে উত্থাপন করা সম্ভব।”

মনির হোসেন মাহিন (সিনেট প্রার্থী ও রাবি প্রেসক্লাব সভাপতি) বলেন, “সিনেটের মাধ্যমে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বার্থ সুরক্ষায় কাজ করা সম্ভব। সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় আরও স্বচ্ছ ও শিক্ষার্থীবান্ধব করতে চাই।”

সৈয়দ সাকিব (সিনেট প্রার্থী) বলেন, “২০০০ সনের পর সিনেট অকার্যকর রাখা হয়েছে। নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের কল্যাণ, স্বচ্ছ বাজেট বাস্তবায়ন, প্রশাসনিক দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করব।”

ইরফান তামিম (সিনেট প্রার্থী) বলেন, “সিনেট এমন একটি মঞ্চ যেখানে শিক্ষার্থী স্বপ্ন ও প্রশাসনের নীতি একসাথে দাঁড়ায়। আমি শিক্ষার্থীদের দাবি তুলে ধরে শিক্ষক ও প্রশাসনের মধ্যে ভরসাযোগ্য সেতুবন্ধন গড়ে তুলব।”

তাসিন খান (সিনেট প্রার্থী, জুলাই আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক) বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের মতো। সিনেট ছাত্র প্রতিনিধির দায়িত্ব হলো—ন্যায়বিচার, সমতা ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা। শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা, আবাসন, স্বাস্থ্য, খাদ্য সুবিধা ও প্রান্তিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ নিশ্চিত করা আমার মূল লক্ষ্য।”

সিনেটের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল প্রশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এবার প্রার্থীরা দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে ক্যাম্পাসে পরিবর্তনের আগুন জ্বালাতে প্রস্তুত।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

রাবিতে এক দশকের অচলায়তন ভেঙে ফিরছে সিনেট

আপডেট সময় : ০৬:৫৯:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের উত্তাপ ক্যাম্পাসজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে হল প্রাঙ্গণ পর্যন্ত চলছে জোরালো প্রচারণা।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদ সিনেটের পাঁচটি ছাত্র প্রতিনিধি পদে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ এখনও তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। এই পাঁচটি পদের জন্য লড়ছেন মোট ৫৮ জন প্রার্থী।

সিনেট কী, কেন গুরুত্বপূর্ণ?

উপাচার্য নির্বাচনের অনুমোদন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট অনুমোদন, নতুন বিভাগ খোলা বা আইন সংশোধন—সবই সিনেট অধিবেশনে হয়। ১০৪ সদস্যের সিনেটে শিক্ষার্থীদের হয়ে কথা বলার সুযোগ পান মাত্র পাঁচজন নির্বাচিত প্রতিনিধি।

সদস্যদের মধ্যে থাকেন—উপাচার্য, দুইজন উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, ২৫ জন রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট, ৫ জন গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধি, রাষ্ট্রপতি ও সরকার মনোনীত কর্মকর্তা, সংসদ সদস্য, অধ্যক্ষদের প্রতিনিধি, কলেজ শিক্ষক ও শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান। শিক্ষকদের ভোটে নির্বাচিত ৩৩ জন এবং শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত ৫ জন শিক্ষার্থী সদস্য হিসেবে অধিবেশনে অংশ নেন।

প্রার্থীরা বলছেন—সিনেট কেবল মর্যাদা নয়, দায়িত্বও

মোস্তাকুর রহমাব জাহিদ (সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের ভিপি ও সিনেট প্রার্থী) বলেন, “সিনেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরুদণ্ড। নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীবান্ধব বাজেট, হল সিটসংকট সমাধান, গ্রন্থাগার মানোন্নয়ন, আইসিটি সুবিধা উন্নয়ন এবং ক্রীড়া-সংস্কৃতি বরাদ্দ বৃদ্ধিতে কাজ করব। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত মতামত সংগ্রহ করে তা সিনেটে তুলে ধরব।”

শেখ নূর উদ্দীন আবীর (ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম) বলেন, “সিনেটে শিক্ষার্থীদের দাবি বাজেটে প্রতিফলিত হবে। আবাসন সংকট, গবেষণা তহবিলের অভাব, লাইব্রেরির বইয়ের ঘাটতি—এসব সমস্যা সরাসরি সিনেটে উত্থাপন করা সম্ভব।”

মনির হোসেন মাহিন (সিনেট প্রার্থী ও রাবি প্রেসক্লাব সভাপতি) বলেন, “সিনেটের মাধ্যমে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বার্থ সুরক্ষায় কাজ করা সম্ভব। সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় আরও স্বচ্ছ ও শিক্ষার্থীবান্ধব করতে চাই।”

সৈয়দ সাকিব (সিনেট প্রার্থী) বলেন, “২০০০ সনের পর সিনেট অকার্যকর রাখা হয়েছে। নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের কল্যাণ, স্বচ্ছ বাজেট বাস্তবায়ন, প্রশাসনিক দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করব।”

ইরফান তামিম (সিনেট প্রার্থী) বলেন, “সিনেট এমন একটি মঞ্চ যেখানে শিক্ষার্থী স্বপ্ন ও প্রশাসনের নীতি একসাথে দাঁড়ায়। আমি শিক্ষার্থীদের দাবি তুলে ধরে শিক্ষক ও প্রশাসনের মধ্যে ভরসাযোগ্য সেতুবন্ধন গড়ে তুলব।”

তাসিন খান (সিনেট প্রার্থী, জুলাই আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক) বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের মতো। সিনেট ছাত্র প্রতিনিধির দায়িত্ব হলো—ন্যায়বিচার, সমতা ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা। শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা, আবাসন, স্বাস্থ্য, খাদ্য সুবিধা ও প্রান্তিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ নিশ্চিত করা আমার মূল লক্ষ্য।”

সিনেটের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল প্রশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এবার প্রার্থীরা দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে ক্যাম্পাসে পরিবর্তনের আগুন জ্বালাতে প্রস্তুত।

এমআর/সবা