০২:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৩৫ বছর পর ভোটাধিকার ফিরে পেয়ে শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা

চাকসু নির্বাচনে উচ্ছ্বাসের জোয়ার

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। বহুল প্রত্যাশিত এই নির্বাচনে বুধবার সকাল ৯টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ ভবনের ভোটকেন্দ্রগুলোতে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে এসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল প্রবল উৎসাহ ও আনন্দ।

বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে যেন উৎসবের আবহ। অনেক শিক্ষার্থীর জন্য এটি প্রথমবারের মতো ভোটদানের অভিজ্ঞতা, আবার অনেকের কাছে এটি ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠার গর্ব। ভোট দিতে আসা শিক্ষার্থীদের চোখেমুখে ছিল উচ্ছ্বাস, গলায় ছিল গর্বের সুর।

 

মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী তাসনিয়া তনি বলেন, “অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। আজকের এই দিনটির জন্য আমরা অনেক বছর অপেক্ষায় ছিলাম। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে তাই প্রবল আগ্রহ ও উচ্ছ্বাস নিয়ে এসেছি। অনেকের সাথে লাইনে দাঁড়িয়ে এভাবে ভোট দিতে অনেক ভালো লাগছে।”

এবারের নির্বাচনে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ ১৩টি প্যানেল অংশ নিচ্ছে। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৬টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪১৪ জন এবং হল সংসদের ১৪টি পদের জন্য প্রার্থী হয়েছেন ৪৯৩ জন। সব মিলিয়ে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৯০৭ জন। ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৫১৬ জন, যার মধ্যে ১৬ হাজার ১৮৪ জন পুরুষ এবং ১১ হাজার ৩২৯ জন নারী।

ভোটগ্রহণ চলছে পাঁচটি অনুষদের ১৫টি কেন্দ্রে। এসব কেন্দ্রে রয়েছে ৬০টি ভোটকক্ষ এবং ৬৮৯টি বুথ। প্রতিটি কক্ষে সর্বোচ্চ ৫০০ শিক্ষার্থী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন। একজন ভোটার কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য ২৬টি ও হল সংসদের জন্য ১৪টি—মোট ৪০টি পদে ভোট দেবেন। প্রত্যেক ভোটারের গড় সময় লাগছে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট।

নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মোতায়েন রয়েছে প্রায় ১২০০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে রাখা হয়েছে পুরো ক্যাম্পাস। নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন পুলিশ, র‍্যাব, আনসার এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত আছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং সার্বিক তদারকিতে বসানো হয়েছে শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা।

৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়া এই নির্বাচন শুধু একটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া নয়, এটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। শিক্ষার্থীদের চোখেমুখে যে আলোর ঝলক, তা শুধু ভোটের নয়—এটি একটি প্রজন্মের প্রত্যাবর্তনের আলো।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

সব রেকর্ড ভেঙে স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস, ভরি ছাড়াল দুই লাখ ২৭ হাজার

৩৫ বছর পর ভোটাধিকার ফিরে পেয়ে শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা

চাকসু নির্বাচনে উচ্ছ্বাসের জোয়ার

আপডেট সময় : ১০:৩৫:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। বহুল প্রত্যাশিত এই নির্বাচনে বুধবার সকাল ৯টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ ভবনের ভোটকেন্দ্রগুলোতে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে এসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল প্রবল উৎসাহ ও আনন্দ।

বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে যেন উৎসবের আবহ। অনেক শিক্ষার্থীর জন্য এটি প্রথমবারের মতো ভোটদানের অভিজ্ঞতা, আবার অনেকের কাছে এটি ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠার গর্ব। ভোট দিতে আসা শিক্ষার্থীদের চোখেমুখে ছিল উচ্ছ্বাস, গলায় ছিল গর্বের সুর।

 

মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী তাসনিয়া তনি বলেন, “অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। আজকের এই দিনটির জন্য আমরা অনেক বছর অপেক্ষায় ছিলাম। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে তাই প্রবল আগ্রহ ও উচ্ছ্বাস নিয়ে এসেছি। অনেকের সাথে লাইনে দাঁড়িয়ে এভাবে ভোট দিতে অনেক ভালো লাগছে।”

এবারের নির্বাচনে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ ১৩টি প্যানেল অংশ নিচ্ছে। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৬টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪১৪ জন এবং হল সংসদের ১৪টি পদের জন্য প্রার্থী হয়েছেন ৪৯৩ জন। সব মিলিয়ে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৯০৭ জন। ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৫১৬ জন, যার মধ্যে ১৬ হাজার ১৮৪ জন পুরুষ এবং ১১ হাজার ৩২৯ জন নারী।

ভোটগ্রহণ চলছে পাঁচটি অনুষদের ১৫টি কেন্দ্রে। এসব কেন্দ্রে রয়েছে ৬০টি ভোটকক্ষ এবং ৬৮৯টি বুথ। প্রতিটি কক্ষে সর্বোচ্চ ৫০০ শিক্ষার্থী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন। একজন ভোটার কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য ২৬টি ও হল সংসদের জন্য ১৪টি—মোট ৪০টি পদে ভোট দেবেন। প্রত্যেক ভোটারের গড় সময় লাগছে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট।

নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মোতায়েন রয়েছে প্রায় ১২০০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে রাখা হয়েছে পুরো ক্যাম্পাস। নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন পুলিশ, র‍্যাব, আনসার এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত আছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং সার্বিক তদারকিতে বসানো হয়েছে শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা।

৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়া এই নির্বাচন শুধু একটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া নয়, এটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। শিক্ষার্থীদের চোখেমুখে যে আলোর ঝলক, তা শুধু ভোটের নয়—এটি একটি প্রজন্মের প্রত্যাবর্তনের আলো।

এমআর/সবা