- আলোচনা না করেই পোশাক খাতের রোডম্যাপ তৈরি সরকারের
- শ্রমিক অসন্তোষে প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কার্যাদেশ বাতিল
- কার্যাদেশগুলো যাচ্ছে ভারত, ভিয়েতনামসহ অন্য প্রতিযোগী দেশে
নিরাপত্তাহীনতায় বাতিল হচ্ছে ক্রয়াদেশ। এমন পরিস্থিতিতে বহু পোশাক কারখানা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই পোশাক খাতের রোডম্যাপ তৈরি করেছে সরকার। নিরাপত্তাহীনতা এবং জ্বালানি সংকটও রয়েছে। এতে অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। বিজিবিএ এর সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন পাভেল বলেন, যখন আমরা বিভিন্ন ক্লায়েন্টের সঙ্গে কথা বলি, একটা কথাই বলছেন, তারা ট্রাস্ট পাচ্ছেন না। তারা আমাদের চেয়ে বেশি দামে পাশের দেশে অর্ডার প্লেস করছেন, শুধু নিরাপত্তাহীনতার কারণে। বিটিএমএএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, আপনারা প্লিজ নির্বাচন দিয়ে আমাদের মুক্তি দিন। আমরা একটু ভালোভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চাই। ফ্যাক্টরির সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকও বন্ধ করছেন আপনারা। তাহলে ইকোনমি কোথায় যাবে? এদিকে, শ্রমিক অসন্তোষের প্রেক্ষিতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কার্যাদেশ বাতিল হয়ে গেছে বলে গত ১২ সেপ্টেম্বরের সংবাদ সম্মেলনে জানান শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। কার্যাদেশ বাতিল হওয়ার বিষয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, আমরা ইতোমধ্যে এমন কিছু তথ্য পেয়েছি যেটা ওই বিষয়টিই ইঙ্গিত করে। এটা একটি সিজনাল বিজনেস। মার্কেটে যে প্রোডাক্ট যাবে সেটা তিন মাস আগেই প্রস্তুত করতে হয়। সেই অর্ডারগুলো অনেক জায়গায় বাতিল হয়ে যাচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি কিছু নির্দিষ্ট দেশের ব্যবসায়ীরা অর্ডারটা নেওয়ার জন্য লবিং করছে, উঠে পড়ে লেগেছে। তবে এসরোটেক্স গ্রুপের এমডি আসাদুল ইসলামের ভাষ্য, কার্যাদেশ কমে যাওয়ার চেয়েও বড় শঙ্কা অপেক্ষা করছে সামনের দিনে। তার ভাষায়, এভাবে চলতে থাকলে ইন্ডাস্ট্রিই চলবে না। একই সুরে কথা বললেন স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলামের। পৃথিবীর ২০টি দেশের ৪০টি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে পোশাক রপ্তানি করে এই গ্রুপ। শোভন বলেন, ক্রেতারা সাধারণত এমন সমস্যা হলে ভাবেন ৪-৫ দিনেই সমাধান হবে। বেশি গেলে ৭ দিনে হবে। অথচ মাস পেরিয়ে গেছে, কোনো সমাধান হয়নি। আমরা শ্রমিকদের ১৮ দফা মেনেছিলাম। কিন্তু দিন দিন দফা বাড়ছেই। খুবই হতাশাজনক। এমন চলতে থাকলে ‘অস্তিত্ব সংকট’ তৈরি হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সত্যি বলতে ওভারনাইট ক্রয়াদেশ পড়ে না। অর্ডার তিনমাস আগেই বুকিং দেওয়া থাকে। কিন্তু আমরা উৎপাদন করতে পারছি না। অর্ডার এক্সিকিউট না করা গেলে অর্ডার পেয়েই বা কী! রপ্তানিকারকরা বলছেন, বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে যে আস্থার সংকট তৈরি হল, সেটাই সবচেয়ে বড় ক্ষতি।
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই ভালো যাচ্ছে না বাংলাদেশের। জুলাই জুড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নৈরাজ্য, সহিংসতা আর সংঘাতের পর কারফিউ জারি হয়। প্রথমবারের মত দীর্ঘ সময়ের জন্য ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের কবলে পড়ে সারা পৃথিবীর সঙ্গে দেশের বাণিজ্য যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিশ্ব বাজারে তৈরি হয় ‘আস্থার সংকট’। আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুৎ হলে হাল ধরেন মুহাম্মদ ইউনূস। পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক থাকায় আশার আলো দেখেছিলেন পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা। তবে আশার প্রদীপ নিভে যায় ক্ষমতার পালাবদলের পর আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে। বিভিন্ন শিল্প কারখানায় হামলা হয়। ঝুট ব্যবসার দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজি নিয়ে এ খাতে ফের অস্থিরতা তৈরি হয়। আর শ্রমিক অসন্তোষ যেন কফিনে ‘শেষ পেরেক’ ঠোকে। প্রতিযোগিতামূলক দেশগুলো এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে বা ক্রেতারাও তাদের দিকে ঝুঁকছে। এ খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলছেন, ৩০ শতাংশের মত কার্যাদেশ অন্যান্য দেশে চলে গেছে। স্প্যারো গ্রুপের শোভনও একই কথা বলেছেন। তার ভাষ্য, যখন ক্রেতারা বলছেন এখন আর লাগবে না। আমরা বুঝি তারা অন্য দেশে এ কার্যাদেশ দিয়েছেন। এক কোটি ৭০ লাখ পোশাকের একটি কার্যাদেশ হাতছাড়া হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি পোশাকের মূল্য ৪ ডলার করে হলেও সবগুলোর মূল্য কত হয় তা হিসাব করে দেখুন। এ আদেশটি ২-৩টি কোম্পানি মিলে পেত। দ্য এন্টায়ার অর্ডার হ্যাভ অলরেডি মুভড। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাতছাড়া হওয়া কার্যাদেশগুলো বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ ভারত, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া এবং পাকিস্তানে যাচ্ছে। পোশাক খাতের সংকট ও পুনরুদ্ধার নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করে গার্মেন্টস বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশন (বিজিবিএ)। নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা। এ সময় বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মন্তব্য করেন, অনির্বাচিত সরকারের কাছে ভালো কিছু আশা করা যায় না। বিএনপি আমলে অর্থনীতিতে কোনো বিপর্যয় হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি। অনুষ্ঠানে আমীর খসরু বলেন, আমাদের (বিএনপি) প্রথম কাজ হবে আমি এটা সরাসরিই বলছি ডিরেগুলেট করা। আমি সিরিয়াস ডিরেগুলেশনের কথা বলছি। বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আরও বলেন, ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে অর্থের মূল উৎস পুঁজিবাজার, যা লুটপাট করেছে বিগত সরকার। দেউলিয়া করেছে ব্যাংকগুলো। ভবিষ্যতে ব্যবসায়ীদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। তিনি আরও জানান, ব্যবসা-বাণিজ্যের দাপ্তরিক কাজ অনলাইনে করার পরিকল্পনা রয়েছে।


























