গতবছরের তুলনায় চলিত মৌসূমে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে আগাম মুড়িকাটা বা শাখা পেয়াজের ভালো ফলন হয়েছে। তবে ক্ষেতের পেয়াজ চুরি হওয়ায় আতংকিত পেয়াজচাষীরা। বাজারে পেয়াজের দাম কমলেও চুরি হচ্ছে কৃষকের ক্ষেতের পেয়াজ। চোরের হাত থেকে পেয়াজ রক্ষায় দিনে ও রাতে পাহারা দিতে হচ্ছে কৃষকদের।
হরিরামপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়,হরিরামপুরে চলিত মৌসূমে সাড়ে ৮০০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেয়াজ এবং প্রায় ২ হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে হালি পেয়াজ আবাদ করা হয়েছে। গত বছরের চেয়ে চলিত মৌসূমে দেড়শ হেক্টর জমিতে বেশি মুড়িকাটা ও হালি পেয়াজ আবাদ হয়েছে। বাজারে আগাম মুড়িকাটা পেয়াজ ৪ হাজার টাকায় প্রতিমণ পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে। মাটি উপযোগী হওয়ায় দিন দিন পেয়াজ আবাদ বাড়ছে।
সরেজিমে দেখা যায়, পেয়াজ ক্ষেতের পাশে ছোট করে পলিথিন দিয়ে অস্থায়ী ঘর তৈরি করা হয়েছে। দিন ও রাতে পালাক্রমে হাতে লাঠি নিয়ে কৃষক-কৃষাণী পাহারা দিচ্ছে। চোরের হাত থেকে ক্ষেতের পেয়াজ রক্ষায় কনকনে শীত আর কুয়াশায় রাত জেগে ক্ষেতের কোণে কোণে লকিয়ে পাহারা দিচ্ছেন পেয়াজ চাষীরা।
উপজেলার পেয়াজচাষী আব্দুল মালেক জানান, বেশি লাভের আশায় ৫বিঘাজমিতে আগাম মুড়িকাটা পেয়াজ আবাদ করেছি। কিন্তু ইতিমধ্যে আমার ৪-৫ শতাংশ জমির পেয়াজ রাতের আধারে চুরি হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে লাভের পরিবর্তে লোকসান গুনতে হবে। দিনের গাধার খাটনি আর রাতে চোরকে পাহারা দিতে হচ্ছে। চোরের ভয়ে ক্ষেতেই বসবাস করতে হচ্ছে।
বাহিরচর এলাকার পেয়াজচাষী হারুনার রশিদ জানান,গতবার পেয়াজ ভালো আবাদ হওয়ায় চলিত মৌসূমে ৪০ শতাংশ জমিতে শাখা বা মুড়িকাটা পেয়াজ আবাদ করেছি। পেয়াজের ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজারে পেয়াজের দাম বেশি হওয়ায় আমার খেতের পেয়াজ চুরি করতে শুরু করে চোরেরা। পরে আমাদের মেম্বারের কাছে পরামর্শ নিয়ে চুরি বন্ধ করতে রাতে পেয়াজ ক্ষেত পাহারা দেওয়া শুরু করেছি। শুরু আমি না আশপাশের পেয়াজচাষীরাও রাতে পাহারা দিতে শুরু করেছে।
রামকৃষ্ণপুর এলাকার পেয়াজচাষী মামুনুর রহমান জানান, পেয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাজারে পেয়াজ দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর বাজারে শাখা বা মুড়িকাটা পেয়াজ ওঠতে শুরু করে। বর্তমানে বাজারে মুড়িকাটা পেয়াজ ৪ হাজার টাকায় মণ বিক্রি করা হচ্ছে। তবে আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে মুড়িকাটা পেয়াজে বাজার ভরে যাবে। পেয়াজের দাম বাড়ার কারনে কিছু পেয়াজচাষী পরিপক্ক হওয়ার আগেই কিছু পেয়াজ বাজারে বিক্রি করছে। তবে ফলন ভালো হওয়ায় পেয়াজচাষীরা খুশি। তবে চোর আতংকে দিন-রাত পার করতে হচ্ছে আমাদের (পেয়াজচাষী)।
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার কুদ্দস আলী বেপারী জানান,পেয়াজ চুরির ঘটনার পর পেয়াজ চুরির বন্ধের জন্য চাষীদের পেয়াজ ক্ষেত পাহারা দিতে বলা হয়। দিনে-রাতে পাহারা দেওয়ায় আগের মতো চুরি হয় না। চুরি অনেক কমে গেছে। তবে চুরির বিষয়টি প্রশাসনকে গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিৎ।
হরিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ তৌহিদুজ্জামান খান জানান, চলিত মৌসূমে মুড়িকাটা বা শাখা পেয়াজের ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছে এবং লাভবানও হচ্ছে। গতবছরের তুলনায় চলিত বছরে দেড়শ হেক্টর জমিতে পেয়াজ বেশি আবাদ হয়েছে।


























