কুড়িগ্রামের উলিপুরে কমলা ও মাল্টাসহ দেশি-বিদেশি ফলের বাণিজ্যিক চাষে সফল হয়েছেন মাইদুল ইসলাম যুবরাজ নামের এক চাষী। বর্তমানে ৪০ শতক জমিতে দুই শতাধিক কমলা ও মাল্টা গাছ লাগিয়েছেন তিনি। সেসব গাছ থেকে বাণিজ্যিকভাবে কমলা ও মাল্টা বাজারজাত শুরু করছেন তিনি। উৎপাদন ব্যয় বাদে দ্বিগুণ লাভ হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
যুবরাজের ফল বাগানটি অবস্থিত উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের রাজারাম ক্ষেত্রী গ্রামে।বর্তমান তার বাগানের বয়স পাঁচ বছর। পেশায় একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক যুবরাজ ঐ গ্রামের আবদুল আজিজের ছেলে।
প্রায় ১ একর জমিতে রয়েছে দেশি-বিদেশি নানান জাতের ফলের গাছ রোপণ করেছেন তিনি। আম, মাল্টা, আঙুর, লটকন, পেয়ারা, ড্রাগন ও আজোয়া খেজুর চাষের পাশাপাশি কমলা চাষের উদ্যোগও নেন তিনি। প্রথমে ঝিনাইদহ শহর থেকে ৩০টি চায়না ঝুড়ি কমলা জাতের গাছ সংগ্রহ করেন তিনি।এছাড়াও ভারত থেকে বিভিন্ন জাতের কমলা ও মাল্টার চারা সংগ্রহ করে প্রায় ২’শ টি চারা রোপণ করেছেন। এছাড়াও সংগ্রহকৃত গাছ থেকে কলম পদ্ধতি ব্যবহার করে ১০ শতক জমিতে ২ হাজার কমলা ও মাল্টা গাছের কলম চারা রোপণ করেন।মিশ্র ফলের বাগানের গাছগুলোর মধ্যে কমলাই ২২ জাতের, তার মধ্যে দার্জিলিং, ছাতক, ছাতকী, চায়না (রামরঙ্গন), চায়না, জাপানি ডেকোপেন, ওয়ারি শাকসুমা, নাকপুরি, খাশিয়া মেন্ডারিসহ আরও অনেক। মাল্টাজাতের মধ্যে বাড়ি ওয়ান, সাউত আফ্রিকা ইয়োলো, বাউ থ্রি, মিশোরীয়। আপেলের মধ্যে এইচআরএম নাইনটি নাইন (ভারত), ট্রপিকাল বিউটি (আমিরিকা) ও রেড লাভ। আঙ্গুর ফলের চারার নাম সুপার সোলাকা। আমের চারার নাম আফ্রিকান বারো সাথি, কাটিমন, বারি-৪,গৌরমতি, খিরসাপাত, মোহনভোগ ও আম্রপালি। পেয়ারার মধ্যে সুপার টেন, থাই সেভেন। সরিফার মধ্যে এমএমকে ওয়ান (ভারত), এরাবিয়ান সাদা, এরাবিয়ান লাল। খেজুর গাছের মধ্যে আজোয়া। ড্রাগনের মধ্যে রেড ভেলভেট, আমিরিকান বিউটি, পিংরোজ, বারি-১ ও বারি-২। বেদেনা ফলের মধ্যে এস সিটি, সুপার ভাগোয়া।
মাঈদুল ইসলাম যুবরাজ বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার পাশাপাশি আমি আত্নকর্মসংস্থানের পথ বেছে নেই। কমলা চাষের পাশাপাশি বাগানে বিভিন্ন রকমের ফলের গাছ আছে। তবে বাজারে চাহিদা ভালো থাকায় কমলা চাষের আগ্রহ বেড়ে গেছে। আমার ৮০ শতক জমিতে চায়না ঝুড়ি কমলা ও মাল্টা জাতের ২শতাধিক গাছ রয়েছে। এটি মিষ্টি জাতের কমলা ও মাল্টা। খেতে অনেক সুস্বাদু। বর্তমান বাগানের বয়স ৫ বছর। শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৬ লক্ষ টাকা খরচ করেছি।
গত বছর এ বাগান থেকে আয় হয়েছে ২০ হাজার টাকা। আশা করছি এ বছর কমলা বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা আয় হবে। আগামী বছর দ্বিগুণ টাকা লাভের আশা করছেন।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হক সরকার বলেন, বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন সম্পর্কে নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হয়েছে । উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। কমলা, মাল্টাসহ বিভিন্ন ফলের চাষ করে সফল হয়ে বেকার যুবকদের আশার আলো হয়েছেন যুবরাজ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, কমলা ও মাল্টা সহ বিভিন্ন ধরনের ফলের চাষ উপজেলায় কৃষিক্ষেত্রে নতুন এক সম্ভাবনা তৈরি করেছে। যুবরাজের কমলা ও মাল্টার বাগানে আমাদের কৃষি অফিস থেকে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিয়মিত দেখাশোনা করছেন। তাকে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।ফল বাগানে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।


























