পঞ্চগড় জেলা সদর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অমরখানা ইউনিয়নে অবস্থিত এক ঐতিহাসিক পুকুরের নাম মহারাজার দীঘি। ধারণা করা হয়, ভিতরগড় নামের ১৫০০ বছরের প্রাচীন ঐতিহাসিক এক রাজ্যে মহারাজা পৃথু রাজত্ব করাকালীন এই দীঘিটি খনন করেন।
পঞ্চগড়ে মোগল আমলের মহারাজার দীঘিটি এখনো জেলার সৌন্দর্য বর্ধন করছে। প্রায় ২৫ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে ঐতিহাসিক ভিতরগড় দুর্গনগরীর স্থাপনাগুলো কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেলেও টিকে রয়েছে শত শত বছরের পুরানো মহারাজার দীঘি। দীঘির স্বচ্ছ পানি, টিলার মতো উঁচু পাড় আর বছরজুড়ে সবুজের সমারোহে পাখির কলকাকলিমুখর থাকে দীঘির চারপাশ, যা এখনো পর্যটকের মন কাড়ে।
দীঘির চারপাশের সুউচ্চ প্রশস্ত পাড় দিয়ে বৃক্ষরাজির ছায়ায় হেঁটে হেঁটে পর্যটকরা যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেন প্রকৃতির মধ্যে। কেউ বা নৌকায় ঘুরে বেড়ান দীঘির পানিতে। শীতকালে দীঘির পাড়ের সবুজ গাছগাছালিতে অতিথি পাখির কলকাকলি দীঘির পাড়ে তৈরি করে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। সেই সঙ্গে দীঘির সৌন্দর্য বাড়িয়েছে এর প্রবেশপথের দুই পাড়ের দুটি সিঁড়ি।
প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে দীঘির পাড়ে মেলা বসে। মেলায় ঢল নামে নানা বয়সি মানুষের। প্রাচীন আমলের অনেক নিদর্শনই দীঘির চারপাশে বিদ্যমান। একটা সময় ছিল যখন মনোবাসনা পূরণ করতে দীঘিতে মানত করতেন স্থানীয়রা। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দীঘির সৌন্দর্য দেখার জন্য দর্শনার্থী আসেন। কথিত আছে, পৃথু রাজা তার পরিবার-পরিজন ও ধনরত্ন সঙ্গে নিয়ে ‘কীচক’ নামক এক নিম্নশ্রেণি দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়ে তাদের সংস্পর্শে ধর্মনাশের ভয়ে এই দীঘিতে আত্নহনন করেছিলেন।
স্থানীয়দের দাবি, পর্যটকের জন্য আবাসন ও স্যানিটেশনব্যবস্থা সংরক্ষণ করা হলে পর্যটন খাতসহ স্থানীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে এ মহারাজার দীঘি। পঞ্চগড় সদর উপজেলা থেকে ১৪ কিলোমিটার উত্তর দিকে অমরখানা ইউনিয়নের ভিতরগড় এলাকায় প্রায় ৫৩ একর জমিতে মহারাজার দীঘিটি অবস্থিত। দীঘিটির সঠিক ইতিহাস এখনো অজানা।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুল হক জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মহারাজার দীঘিতে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। যাতে দীঘির পানি স্বচ্ছ থাকে ও দীঘির পাড়ের ইটগুলো নষ্ট হয়। সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য প্রবেশ পথে তোরণ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আধুনিক স্যানিটেশনব্যবস্থার জন্য এ বছরই প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। শীতকালে দীঘির পাড়ের সবুজ গাছগাছালিতে অতিথি পাখির কলকাকলি দীঘির পাড়ে তৈরি করে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। সেই সঙ্গে দীঘির সৌন্দর্য বাড়িয়েছে এর প্রবেশপথের দুই পাড়ের দুটি সিঁড়ি। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে দীঘির পাড়ে মেলা বসে। মেলায় ঢল নামে নানা বয়সি মানুষের।
স/মিফা


























