০৭:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস

নারীর ক্ষমতায়নে উত্তরাধিকার আইন সংস্কারে জোর

◉ সমঅধিকার সমসুযোগ এগিয়ে নিতে এবার গুরুত্ব বিনিয়োগে
◉ জয়িতা সম্মাননা পাচ্ছেন ৪ নারী, ১ হিজড়া
◉দেশের ৭৩ শতাংশ নারী সাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন
◉ ২২ শতাংশ নারী কোনো বিদ্যালয়ে শিক্ষা পাননি

◆আপনার আশপাশের যোগ্য নারীকে ক্ষমতায়নে সহায়তা করুন : সেলিয়া শাহনাজ
◆বাবাদের বলব, আপনার মেয়েকে সন্তান হিসেবে গড়ে তুলুন : ফরিদা ইয়াসমিন
◆নারীর ক্ষমতায়নে আমরা সবকিছু অর্জন করে ফেলেছি বিষয়টি এমন নয় : ড. রুমিন ফারহানা
◆সকলের মানবাধিকার বাস্তবায়ন না হলে স্মার্ট বাংলাদেশ সম্ভব হবে না : সীমা মোসলেম
◆উত্তরাধিকার আইনে সমঅধিকার দিলে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে : নাসিমুন আরা

আজ ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ১১৪তম বার্ষিকী। নারীর অধিকার আদায়ের দিন। বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম অবস্থান ধরে রেখেছে। একইসঙ্গে নারীর উচ্চপদে অবস্থানের পাশাপাশি নারীর কর্মক্ষেত্রে শোভন কর্মপরিবেশের ঘাটতি রয়েছে; যা নারীর বিপন্নতা বাড়িয়েছে। এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘নারীর সমঅধিকার, সমসুযোগ এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ’।

বাংলাদেশের শিক্ষা, কর্মক্ষেত্রে নারী এগিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত অর্জিত হয়নি সম্পদ ও সম্পত্তিতে তার পূর্ণ অধিকার। আজও দেশের বিভিন্ন আইনে নারী পায়নি একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি। অজ্ঞতা, কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি এদেশের নারীকে পিছিয়ে রেখেছে। এখনও নারী হত্যা, কন্যাশিশু হত্যা, কন্যাশিশু ভ্রƒণ হত্যার ঘটনা ঘটছে। পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে লিঙ্গগত পরিচয়ের কারণে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে নারী। এখনও এদেশে প্রতিদিন নারী ধর্ষণ, নির্যাতন, যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। এই অবস্থায় নারীর জীবন সুন্দর ও শান্তিময় করার প্রত্যয় নিয়ে বিশ্বের সব নারীর সঙ্গে বাংলাদেশেও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। আর নারী দিবসকে সামনে রেখে নারীর ক্ষমতায়নে উত্তরাধিকার আইন সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছেন নারী অধিকার আন্দোলনকারীরা।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, বর্তমান সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে আইসিটিতে নারীর অংশগ্রহণ ৩০ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা প্রণয়ন করেছে। দেশের পোশাক খাতে কর্মরত শ্রমিকের ৮০ শতাংশের বেশি নারী মোবাইলের মাধ্যমে বেতন পান। তথ্য আপা প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশের প্রায় ১০ দশমিক ২৫ মিলিয়ন গ্রামীণ নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব হয়েছে। নারীদের সহিংসতা ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষার জন্য ‘জয়’ মোবাইল অ্যাপ, সার্বক্ষণিক হটলাইন সার্ভিস ১০৯ এবং ৯৯৯ প্রবর্তন করা হয়েছে।

কিভাবে এলো নারী দিবস : ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্কের সেলাই কারখানায় ঝুঁকিপূর্ণ ও অমানবিক কর্মপরিবেশ, স্বল্প মজুরি এবং দৈনিক ১২ ঘণ্টা শ্রমের বিরুদ্ধে নারী শ্রমিকরা প্রতিবাদ করেন। ১৯১০ সালে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলনে জার্মান সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা নারীবাদী ক্লারা জেটকিনের প্রস্তাবে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষণা করা হয়। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সাল থেকে এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন শুরু করে। তখন থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি উদযাপন করা হয়। দিনটি উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারি ছুটি রয়েছে। বেশ কিছু দেশে শুধু নারীরা এই ছুটি ভোগ করে। বাংলাদেশে বিভিন্ন সংগঠন এই দিনটিকে সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবি জানিয়ে এলেও সেটি এখন পর্যন্ত বাস্তবে রূপ পায়নি।

সফল নারীদের ভাবনা : দেশের বিভিন্নক্ষেত্রে সফল নারীরা এ দিবস ঘিরে তাদের ভাবনা ব্যক্ত করেছেন। বর্তমান সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক ফরিদা ইয়াসমিন দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, প্রত্যেক নারী সফলতার পথে এগুতে চাইলে তাকে অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়। তাই বলে নারীকে থেমে গেলে চলবে না। এই সমাজে যেমন কিছু মানুষ আছে যারা বাধা তৈরি করে, আবার কিছু মানুষ আছে যারা সহযোগিতার পথ তৈরি করে। সব মেয়েই জীবনে সফল হতে পারবে, যদি তার কোনো টার্গেট থাকে। এখন আমরা দেখছি একেবারে লেখাপড়া না জানাও মা তার মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় কিন্তু অনেক বাবা চায়না। আমি বাবাদের বলব আপনার মেয়েকে সন্তান হিসেবে গড়ে তুলুন। আপনার গাড়ি-বাড়ি করার দরকার নেই। এই মেয়েই আপনার সম্পদ হবে। আপনার পাশে থাকবে। সমাজে নারী-পুরুষ সবাইকে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট গড়ার কাজে হাত দিয়েছেন। এখানে সবাইকে স্মার্ট সিটিজেন হতে হবে। নারীকে বাদ দিয়ে এগুলে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া কখনোই সম্ভব হবে না।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ড. রুমিন ফারহানা দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে আমরা সব অর্জন করে ফেলেছি বিষয়টি এমন নয়। এখনও আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। একজন নারী ঘরের কাজও করছে, বাইরের কাজও করছে। তাকে সুযোগটা দিলে সে প্রমাণ করতে পারে সে কতটা যোগ্য। তাই নারীকে রাজনীতিসহ সর্বক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে যেন সে এগিয়ে যেতে পারে। নারী যেন তার সম্মান রক্ষা করতে পারে, সে যেন তার শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায় এ বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। উত্তরাধিকার আইনে সমানাধিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এখন সবদিক থেকে আধুনিক হচ্ছি। এক্ষেত্রেও আমাদের আধুনিক হতে হবে। রাষ্ট্র অবশ্যই সব নাগরিকের। তাই, নাগরিকের প্রয়োজনে যদি রাষ্ট্রের নতুন কোনকিছু যুক্ত করার প্রয়োজন হয় তা নিয়ে আলাপ আলোচনা করে সমাধানে আসতে পারে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, আমাদের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রবর্তন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে নারীর ক্ষমতায়ন। অভিন্ন পারিবারিক আইন বলতে আমরা বুঝিয়েছি বিয়ে, বিয়ে বিচ্ছেদ, সন্তানের অভিভাবকত্ব, উত্তরাধিকার, নাগরিকত্ব এই পাঁচক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার সংবিধানে নিশ্চিত করা হয়েছে তা দিতে হবে। এদেশের রক্ষণশীল সমাজ বরাবর নারীর এই সাংবিধানিক অধিকারটাকে অস্বীকার করে। যে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নারীকে অধঃস্তন করে দিচ্ছে তার কারণ কি? তার প্রধান কারণ হচ্ছে সম্পদে তার সমঅধিকার নাই, শ্রমের ক্ষেত্রে লিঙ্গ বিভাজন, ঘরের কাজ মেয়েদের, বাইরের কাজ ছেলেদের এই যে অধঃস্তন দৃষ্টিভঙ্গি এটি নারীকে প্রতিমুহূর্তে ঊর্ধ্বতন দৃষ্টিভঙ্গিতে নিয়ে আসতে বাধা দিচ্ছে। এখন সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির কথা বলছে, আমরা যদি নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত না করতে পারি তাহলে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে না। সকলের মানবাধিকার বাস্তবায়ন না হলে স্মার্ট বাংলাদেশ হওয়া কখনই সম্ভব হবে না।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় (বুয়েট) এর তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ওয়ার্ল্ড ওমেন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চেয়ার সেলিয়া শাহনাজ দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, এখন আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষায় ৩০ ভাগ নারী আছে। আবার পেশাজীবী নারী ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যাও ৩০ ভাগ। আমাদের দেশের নারীরা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে জাপান, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। কিন্তু বাংলাদেশের পুরুষের তুলনায় নারীরা পিছিয়ে আছে। এখন যে নারীরা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে তারা পাস করার পর কিভাবে পেশায় টিকে থাকবে, যারা এখন পেশায় আছেন তারা কি করে দক্ষতার সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এগিয়ে যাবেন, নেতৃত্বে ভূমিকা রাখবেন সে বিষয়ে আমাদের জোর দেয়া উচিত। তবেই জেন্ডার সমতার দিকে এগিয়ে যাব বা সমসুযোগের ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে যাব। তিনি বলেন, আমার মনে হয়, কোনরকম আর্গুমেন্ট কোনরকম দাবিদাওয়া না করে আমি যদি আমার নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারি, যেমন আমি একজন গবেষক, আমি আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স নিয়ে গবেষণা করি। এই বিষয়ে যদি আমার পাবলিকেশনের সংখ্যা, আমার প্রজেক্টের সংখ্যা, আমার মাস্টার্স স্টুডেন্টের সংখ্যা, আমার পিএইচডি স্টুডেন্টের সংখ্যা কিছুতেই যদি আমার একজন পুরুষ সহকর্মীর চেয়ে সংখ্যা কম না হয় তাহলে কিন্তু আমাকে দমিয়ে রাখা সম্ভব না। আমাদের মতো যারা আছে তাদেরকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা তৈরি হবে। পুরুষদের সঙ্গে আমাদের টিকে থাকার একমাত্র উপায় হচ্ছে নিজের যোগ্যতাকে প্রমাণ করা। যোগ্যতার ক্ষেত্রে অত্যন্ত যত্নশীল থাকা দরকার। এক্ষেত্রে কোন কমিটির প্রধান হওয়া, চেয়ার হওয়াতে কোন বাধা নেই। যোগ্যতাকে যদি হাইলাইট করি আমাদের যে বাধাগুলো আছে সেগুলো কাটিয়ে উঠতে পারব। তিনি বলেন, আমি নারী দিবসে পুরুষ সহকর্মী ও সবাইকে অনুরোধ করব, আপনার আশপাশে যে যোগ্য নারী আছে তাদের ক্ষমতায়নে সহায়তা করুন। আর আমরা যারা নারীরা আছি তারা কি করে নারীরা দক্ষ হয়ে উঠবে, কিভাবে জেন্ডার গ্যাপটা কমিয়ে নেয়া যায়, কিভাবে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং করা যায়, সেক্ষেত্রে আমরা যারা এগিয়ে আছি তারা জুনিয়রদের ক্ষেত্রে সেই কর্তব্যটা পালন করতে পারি।

বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, আমরা একটি সম্মিলিত সমাজ চাই, যে সমাজ একসঙ্গে এগুবে। আমরা আরো নারী বিজ্ঞানী, নারী বিচারপতি, আইনজীবী চাই। এদেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরাচ্ছে নারী। তারপরও কমবেশি আছে। নারীর উন্নয়ন হয়েছে আবার নারীর প্রতি সহিংসতাও বেড়েছে। আমাদের লক্ষ্য হলো জীবনের সকলক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা, সমসুযোগ, সমঅধিকার। মেয়েরা শিক্ষায় এগিয়েছে কিন্তু বিজ্ঞান শিক্ষায় অনেক পিছিয়ে আছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে মেয়েদের অনেক শিক্ষিত করতে হবে। বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে সমানে নারী নির্যাতন হচ্ছে। এটাকে বন্ধ করতে হবে। সেগুলো বন্ধ করতে হলে উত্তরাধিকার আইনে নারী-পুরুষের সমতা আনতে হবে। যতদিন উত্তরাধিকার আইনে সমতা না আসবে, ততদিন নারীকে সমান মর্যাদা দিতে শিখবে না। সমাজ এখনও নারীকে পূর্ণ মানুষ হিসেবে মনে করে না। বাবা-মায়েরা এখনও ছেলে ও মেয়ে শিশুর মধ্যে পার্থক্য করে। আমাদের সমাজের মানুষের এই দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা বেসরকারি ক্ষেত্রে যারা আছি তাদের সবাইকে নিয়ে সরকারকে এই কাজ করতে হবে। সবাই যেন নারীকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দিতে শিখে। নারীকে বাদ দিয়ে দেশ এগিয়ে যাবে না। উত্তরাধিকার আইনে নারীকে যদি সম অধিকার দিতে পারি তাহলে অর্থনৈতিক দিকে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে এবং সমাজ অনেক বদলাবে। অনেকে মনে করে নারীকে চাকরি দিলে মাতৃত্বকালীন ছুটি দিতে হবে। নারী গর্ভধারণ না করলে পৃথিবীতে মানুষ আসবে কোথা থেকে? কাজেই নারীর জন্য যত বিনিয়োগ করবে তাতে দেশের অর্থনীতি বাড়বে। সমাজের উন্নতি হবে। কাজেই নারীর মাতৃত্বকালীন ছুটি নারীর জন্য দয়া না। এটা দেশের উন্নয়নে বিনিয়োগ।

জয়িতা সম্মাননা পাচ্ছেন ৪ নারী, ১ হিজড়া : আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে নানা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পাঁচজন জয়িতাকে সম্মাননা দেওয়া হবে। উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হওয়ায় ময়মনসিংহের আনারকলি, শিক্ষায় রাজশাহীর সোনাদীঘি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওরাং সম্প্রদায়ের কল্যাণী মিনজি, মাত্র ১৮ টাকা বেতনের চাকরি করে ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করায় সিলেটের চা শ্রমিক কমলী রবিদাশ, যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় এসিডে স্বামী ঝলসে দেবার পর জীবনে সফল নারী বরগুনার জাহানারা বেগম ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করায় খুলনার পাখি দত্ত হিজড়া এ পুরস্কার পাচ্ছেন। সম্মাননা পাওয়া জয়িতাদের সবাইকে এক লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট, উত্তরীয় ও সনদ দেওয়া হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি এ তথ্য জানান।

সাক্ষরতা সূচকে পিছিয়ে নারী : বাংলাদেশ স্যাম্পলভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস-২০২২’ এর তথ্যানুযায়ী, দেশে সাক্ষরতার হার ক্রমেই বাড়লেও পুরুষের তুলনায় এখনো অনেক পিছিয়ে নারীরা। ৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সি পুরুষ জনগোষ্ঠী একই বয়সি নারীদের তুলনায় প্রায় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ সাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন। এ বয়সসীমার ছেলেদের ক্ষেত্রে সাক্ষরতার হার ৭৭ দশমিক ২২ শতাংশ। একই বয়সের মেয়েদের মধ্যে এ অনুপাত ৭৩ দশমিক ৩২। অর্থাৎ নারীদের মধ্যে নিরক্ষরতার হার বেশি। এদিকে, নারীদের মধ্যে ২২ দশমিক ৩ শতাংশ নারী কখনও বিদ্যালয়ে যাবার সুযোগ পায়নি। ১৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ মেয়েশিশু প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা শেষ করতে ব্যর্থ হয়েছে। নারীদের মধ্যে ১১ দশমিক ৫৯ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। ১৯ দশমিক ২৬ শতাংশ নারী মাধ্যমিক এবং উচ্চ স্তরের পড়াশোনা শেষ করতে পারেন।

হিন্দু-বৌদ্ধ নারীদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি : বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ এক বিবৃতিতে এ দাবি জানিয়েছে। বিবৃতিতে সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক ড. ময়না তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক পুলক ঘটক বলেন, বাংলাদেশে প্রচলিত হিন্দু পারিবারিক আইনের আওতাধীন হিন্দু, বৌদ্ধ ও বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীর নারীদের প্রতি বৈষম্য ও অবিচার নিরসন করার জন্য সরকারের প্রতি বিশেষভাবে আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশের হিন্দু নারীরা ২০২৪ সালের নারী দিবস উদযাপন করার সময়ও সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত। পিতার সম্পত্তিতে পুত্র সন্তানের একচ্ছত্র অধিকার, কন্যাসন্তানের অধিকার শূন্য। বিবাহ বিচ্ছেদের সুযোগ নেই। ফলে অসংখ্য নারী বিবাহিত জীবনে নির্যাতিত কিংবা স্বামী পরিত্যক্ত হলেও তারা আইনগতভাবে বিচ্ছেদ নিয়ে পুনরায় বিয়ে করে সংসার জীবন যাপন করতে পারছে না। অথচ পুরুষের জন্য বহু বিবাহের সুযোগ নিয়ন্ত্রণহীন ও অবারিত। বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক না হওয়ায় বহু নারী প্রতারণার শিকার হচ্ছে।
তারা বলেন, হিন্দু ও বৌদ্ধ নারীদের সম্পত্তিতে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা এবং একটি পূর্ণাঙ্গ বিবাহ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা, বহুবিবাহ রোধ ও বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার প্রদান করার জন্য এবং নারীর প্রতি বহুমাত্রিক অন্যায় ও বৈষম্যের পথ রহিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

দিবসের কর্মসূচি : সরকারের পক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় দিবসটি উদযাপন করছে। পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি উদযাপন করছে। অনেকেই ব্যক্তিগত পর্যায়েও দিবসটি উদযাপন করছেন। বেগুনি রংয়ের ফুল সবখানে ফুটে থাকে তাই দিবসটির থিম রং বেগুনি। এদিন নারীরা তাই এই রংয়ের পোশাক পরে নিজেকে সাজায়। যদিও সব রঙেই নারী সবসময় রঙিন। দিবসটি পালন উপলক্ষে গণমাধ্যমগুলোতে রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। টেলিভিশন ও রেডিওগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। পত্রিকাগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও অনলাইনগুলোতে বিশেষ সংবাদ প্রকাশ করছে। সকাল ১০টায় ওসমানী মিলনায়তনে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এসময় জয়িতা সম্মাননাপ্রাপ্ত ৪ নারী ও ১ হিজড়ার হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন। সকাল ১১টায় জাতীয় নারীজোটের উদ্যোগে ‘নারীর জন্য বিনিয়োগ : উন্নয়নে করবে গতিযোগ’ শীর্ষক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। বেলা সাড়ে তিনটায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে বিকাল ৩টায় আলোচনাসভার আয়োজন করা হবে। ১০ মার্চ সকাল ১০টায় সংগঠনের কার্যালয়ে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের উদ্যোগে বিকাল সাড়ে ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)র নেতৃত্বে সকাল ৯টায় ডিআরইউ চত্বর থেকে একটি র‌্যালি বের হবে। র‌্যালির পরে সকাল সাড়ে ৯টায় ডিআরইউ’র নসরুল হামিদ মিলনায়তনে নারী দিবস উপলক্ষে কেক কাটা হবে। ৩০ মার্চ স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে নারী দিবস উপলক্ষে ডিআরইউ থেকে প্রকাশিত কণ্ঠস্বর এর মোড়ক উন্মোচন করবেন। ৯ মার্চ শনিবার জাতীয় পর্যায়ের ১৩টি অধিকারভিত্তিক সংগঠনের উদ্যোগে নারীর ভূমি-কৃষি অধিকার, নারীর নিরাপত্তাহীনতা, নারী-পুরুষ মজুরী বৈষম্য, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও সমতা অর্জনের সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করার অভিপ্রায়ে ঢাকার আসাদ এভিনিউ অভিমুখী সড়কে এক মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।

 

 

 

 

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

একনেক সভায় ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকার ২২ প্রকল্প অনুমোদন

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস

নারীর ক্ষমতায়নে উত্তরাধিকার আইন সংস্কারে জোর

আপডেট সময় : ১০:০৯:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ মার্চ ২০২৪

◉ সমঅধিকার সমসুযোগ এগিয়ে নিতে এবার গুরুত্ব বিনিয়োগে
◉ জয়িতা সম্মাননা পাচ্ছেন ৪ নারী, ১ হিজড়া
◉দেশের ৭৩ শতাংশ নারী সাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন
◉ ২২ শতাংশ নারী কোনো বিদ্যালয়ে শিক্ষা পাননি

◆আপনার আশপাশের যোগ্য নারীকে ক্ষমতায়নে সহায়তা করুন : সেলিয়া শাহনাজ
◆বাবাদের বলব, আপনার মেয়েকে সন্তান হিসেবে গড়ে তুলুন : ফরিদা ইয়াসমিন
◆নারীর ক্ষমতায়নে আমরা সবকিছু অর্জন করে ফেলেছি বিষয়টি এমন নয় : ড. রুমিন ফারহানা
◆সকলের মানবাধিকার বাস্তবায়ন না হলে স্মার্ট বাংলাদেশ সম্ভব হবে না : সীমা মোসলেম
◆উত্তরাধিকার আইনে সমঅধিকার দিলে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে : নাসিমুন আরা

আজ ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ১১৪তম বার্ষিকী। নারীর অধিকার আদায়ের দিন। বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম অবস্থান ধরে রেখেছে। একইসঙ্গে নারীর উচ্চপদে অবস্থানের পাশাপাশি নারীর কর্মক্ষেত্রে শোভন কর্মপরিবেশের ঘাটতি রয়েছে; যা নারীর বিপন্নতা বাড়িয়েছে। এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘নারীর সমঅধিকার, সমসুযোগ এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ’।

বাংলাদেশের শিক্ষা, কর্মক্ষেত্রে নারী এগিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত অর্জিত হয়নি সম্পদ ও সম্পত্তিতে তার পূর্ণ অধিকার। আজও দেশের বিভিন্ন আইনে নারী পায়নি একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি। অজ্ঞতা, কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি এদেশের নারীকে পিছিয়ে রেখেছে। এখনও নারী হত্যা, কন্যাশিশু হত্যা, কন্যাশিশু ভ্রƒণ হত্যার ঘটনা ঘটছে। পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে লিঙ্গগত পরিচয়ের কারণে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে নারী। এখনও এদেশে প্রতিদিন নারী ধর্ষণ, নির্যাতন, যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। এই অবস্থায় নারীর জীবন সুন্দর ও শান্তিময় করার প্রত্যয় নিয়ে বিশ্বের সব নারীর সঙ্গে বাংলাদেশেও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। আর নারী দিবসকে সামনে রেখে নারীর ক্ষমতায়নে উত্তরাধিকার আইন সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছেন নারী অধিকার আন্দোলনকারীরা।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, বর্তমান সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে আইসিটিতে নারীর অংশগ্রহণ ৩০ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা প্রণয়ন করেছে। দেশের পোশাক খাতে কর্মরত শ্রমিকের ৮০ শতাংশের বেশি নারী মোবাইলের মাধ্যমে বেতন পান। তথ্য আপা প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশের প্রায় ১০ দশমিক ২৫ মিলিয়ন গ্রামীণ নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব হয়েছে। নারীদের সহিংসতা ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষার জন্য ‘জয়’ মোবাইল অ্যাপ, সার্বক্ষণিক হটলাইন সার্ভিস ১০৯ এবং ৯৯৯ প্রবর্তন করা হয়েছে।

কিভাবে এলো নারী দিবস : ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্কের সেলাই কারখানায় ঝুঁকিপূর্ণ ও অমানবিক কর্মপরিবেশ, স্বল্প মজুরি এবং দৈনিক ১২ ঘণ্টা শ্রমের বিরুদ্ধে নারী শ্রমিকরা প্রতিবাদ করেন। ১৯১০ সালে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলনে জার্মান সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা নারীবাদী ক্লারা জেটকিনের প্রস্তাবে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষণা করা হয়। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সাল থেকে এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন শুরু করে। তখন থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি উদযাপন করা হয়। দিনটি উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারি ছুটি রয়েছে। বেশ কিছু দেশে শুধু নারীরা এই ছুটি ভোগ করে। বাংলাদেশে বিভিন্ন সংগঠন এই দিনটিকে সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবি জানিয়ে এলেও সেটি এখন পর্যন্ত বাস্তবে রূপ পায়নি।

সফল নারীদের ভাবনা : দেশের বিভিন্নক্ষেত্রে সফল নারীরা এ দিবস ঘিরে তাদের ভাবনা ব্যক্ত করেছেন। বর্তমান সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক ফরিদা ইয়াসমিন দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, প্রত্যেক নারী সফলতার পথে এগুতে চাইলে তাকে অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়। তাই বলে নারীকে থেমে গেলে চলবে না। এই সমাজে যেমন কিছু মানুষ আছে যারা বাধা তৈরি করে, আবার কিছু মানুষ আছে যারা সহযোগিতার পথ তৈরি করে। সব মেয়েই জীবনে সফল হতে পারবে, যদি তার কোনো টার্গেট থাকে। এখন আমরা দেখছি একেবারে লেখাপড়া না জানাও মা তার মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় কিন্তু অনেক বাবা চায়না। আমি বাবাদের বলব আপনার মেয়েকে সন্তান হিসেবে গড়ে তুলুন। আপনার গাড়ি-বাড়ি করার দরকার নেই। এই মেয়েই আপনার সম্পদ হবে। আপনার পাশে থাকবে। সমাজে নারী-পুরুষ সবাইকে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট গড়ার কাজে হাত দিয়েছেন। এখানে সবাইকে স্মার্ট সিটিজেন হতে হবে। নারীকে বাদ দিয়ে এগুলে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া কখনোই সম্ভব হবে না।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ড. রুমিন ফারহানা দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে আমরা সব অর্জন করে ফেলেছি বিষয়টি এমন নয়। এখনও আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। একজন নারী ঘরের কাজও করছে, বাইরের কাজও করছে। তাকে সুযোগটা দিলে সে প্রমাণ করতে পারে সে কতটা যোগ্য। তাই নারীকে রাজনীতিসহ সর্বক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে যেন সে এগিয়ে যেতে পারে। নারী যেন তার সম্মান রক্ষা করতে পারে, সে যেন তার শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায় এ বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। উত্তরাধিকার আইনে সমানাধিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এখন সবদিক থেকে আধুনিক হচ্ছি। এক্ষেত্রেও আমাদের আধুনিক হতে হবে। রাষ্ট্র অবশ্যই সব নাগরিকের। তাই, নাগরিকের প্রয়োজনে যদি রাষ্ট্রের নতুন কোনকিছু যুক্ত করার প্রয়োজন হয় তা নিয়ে আলাপ আলোচনা করে সমাধানে আসতে পারে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, আমাদের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রবর্তন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে নারীর ক্ষমতায়ন। অভিন্ন পারিবারিক আইন বলতে আমরা বুঝিয়েছি বিয়ে, বিয়ে বিচ্ছেদ, সন্তানের অভিভাবকত্ব, উত্তরাধিকার, নাগরিকত্ব এই পাঁচক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার সংবিধানে নিশ্চিত করা হয়েছে তা দিতে হবে। এদেশের রক্ষণশীল সমাজ বরাবর নারীর এই সাংবিধানিক অধিকারটাকে অস্বীকার করে। যে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নারীকে অধঃস্তন করে দিচ্ছে তার কারণ কি? তার প্রধান কারণ হচ্ছে সম্পদে তার সমঅধিকার নাই, শ্রমের ক্ষেত্রে লিঙ্গ বিভাজন, ঘরের কাজ মেয়েদের, বাইরের কাজ ছেলেদের এই যে অধঃস্তন দৃষ্টিভঙ্গি এটি নারীকে প্রতিমুহূর্তে ঊর্ধ্বতন দৃষ্টিভঙ্গিতে নিয়ে আসতে বাধা দিচ্ছে। এখন সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির কথা বলছে, আমরা যদি নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত না করতে পারি তাহলে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে না। সকলের মানবাধিকার বাস্তবায়ন না হলে স্মার্ট বাংলাদেশ হওয়া কখনই সম্ভব হবে না।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় (বুয়েট) এর তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ওয়ার্ল্ড ওমেন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চেয়ার সেলিয়া শাহনাজ দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, এখন আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষায় ৩০ ভাগ নারী আছে। আবার পেশাজীবী নারী ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যাও ৩০ ভাগ। আমাদের দেশের নারীরা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে জাপান, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। কিন্তু বাংলাদেশের পুরুষের তুলনায় নারীরা পিছিয়ে আছে। এখন যে নারীরা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে তারা পাস করার পর কিভাবে পেশায় টিকে থাকবে, যারা এখন পেশায় আছেন তারা কি করে দক্ষতার সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এগিয়ে যাবেন, নেতৃত্বে ভূমিকা রাখবেন সে বিষয়ে আমাদের জোর দেয়া উচিত। তবেই জেন্ডার সমতার দিকে এগিয়ে যাব বা সমসুযোগের ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে যাব। তিনি বলেন, আমার মনে হয়, কোনরকম আর্গুমেন্ট কোনরকম দাবিদাওয়া না করে আমি যদি আমার নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারি, যেমন আমি একজন গবেষক, আমি আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স নিয়ে গবেষণা করি। এই বিষয়ে যদি আমার পাবলিকেশনের সংখ্যা, আমার প্রজেক্টের সংখ্যা, আমার মাস্টার্স স্টুডেন্টের সংখ্যা, আমার পিএইচডি স্টুডেন্টের সংখ্যা কিছুতেই যদি আমার একজন পুরুষ সহকর্মীর চেয়ে সংখ্যা কম না হয় তাহলে কিন্তু আমাকে দমিয়ে রাখা সম্ভব না। আমাদের মতো যারা আছে তাদেরকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা তৈরি হবে। পুরুষদের সঙ্গে আমাদের টিকে থাকার একমাত্র উপায় হচ্ছে নিজের যোগ্যতাকে প্রমাণ করা। যোগ্যতার ক্ষেত্রে অত্যন্ত যত্নশীল থাকা দরকার। এক্ষেত্রে কোন কমিটির প্রধান হওয়া, চেয়ার হওয়াতে কোন বাধা নেই। যোগ্যতাকে যদি হাইলাইট করি আমাদের যে বাধাগুলো আছে সেগুলো কাটিয়ে উঠতে পারব। তিনি বলেন, আমি নারী দিবসে পুরুষ সহকর্মী ও সবাইকে অনুরোধ করব, আপনার আশপাশে যে যোগ্য নারী আছে তাদের ক্ষমতায়নে সহায়তা করুন। আর আমরা যারা নারীরা আছি তারা কি করে নারীরা দক্ষ হয়ে উঠবে, কিভাবে জেন্ডার গ্যাপটা কমিয়ে নেয়া যায়, কিভাবে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং করা যায়, সেক্ষেত্রে আমরা যারা এগিয়ে আছি তারা জুনিয়রদের ক্ষেত্রে সেই কর্তব্যটা পালন করতে পারি।

বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, আমরা একটি সম্মিলিত সমাজ চাই, যে সমাজ একসঙ্গে এগুবে। আমরা আরো নারী বিজ্ঞানী, নারী বিচারপতি, আইনজীবী চাই। এদেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরাচ্ছে নারী। তারপরও কমবেশি আছে। নারীর উন্নয়ন হয়েছে আবার নারীর প্রতি সহিংসতাও বেড়েছে। আমাদের লক্ষ্য হলো জীবনের সকলক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা, সমসুযোগ, সমঅধিকার। মেয়েরা শিক্ষায় এগিয়েছে কিন্তু বিজ্ঞান শিক্ষায় অনেক পিছিয়ে আছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে মেয়েদের অনেক শিক্ষিত করতে হবে। বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে সমানে নারী নির্যাতন হচ্ছে। এটাকে বন্ধ করতে হবে। সেগুলো বন্ধ করতে হলে উত্তরাধিকার আইনে নারী-পুরুষের সমতা আনতে হবে। যতদিন উত্তরাধিকার আইনে সমতা না আসবে, ততদিন নারীকে সমান মর্যাদা দিতে শিখবে না। সমাজ এখনও নারীকে পূর্ণ মানুষ হিসেবে মনে করে না। বাবা-মায়েরা এখনও ছেলে ও মেয়ে শিশুর মধ্যে পার্থক্য করে। আমাদের সমাজের মানুষের এই দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা বেসরকারি ক্ষেত্রে যারা আছি তাদের সবাইকে নিয়ে সরকারকে এই কাজ করতে হবে। সবাই যেন নারীকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দিতে শিখে। নারীকে বাদ দিয়ে দেশ এগিয়ে যাবে না। উত্তরাধিকার আইনে নারীকে যদি সম অধিকার দিতে পারি তাহলে অর্থনৈতিক দিকে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে এবং সমাজ অনেক বদলাবে। অনেকে মনে করে নারীকে চাকরি দিলে মাতৃত্বকালীন ছুটি দিতে হবে। নারী গর্ভধারণ না করলে পৃথিবীতে মানুষ আসবে কোথা থেকে? কাজেই নারীর জন্য যত বিনিয়োগ করবে তাতে দেশের অর্থনীতি বাড়বে। সমাজের উন্নতি হবে। কাজেই নারীর মাতৃত্বকালীন ছুটি নারীর জন্য দয়া না। এটা দেশের উন্নয়নে বিনিয়োগ।

জয়িতা সম্মাননা পাচ্ছেন ৪ নারী, ১ হিজড়া : আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে নানা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পাঁচজন জয়িতাকে সম্মাননা দেওয়া হবে। উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হওয়ায় ময়মনসিংহের আনারকলি, শিক্ষায় রাজশাহীর সোনাদীঘি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওরাং সম্প্রদায়ের কল্যাণী মিনজি, মাত্র ১৮ টাকা বেতনের চাকরি করে ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করায় সিলেটের চা শ্রমিক কমলী রবিদাশ, যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় এসিডে স্বামী ঝলসে দেবার পর জীবনে সফল নারী বরগুনার জাহানারা বেগম ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করায় খুলনার পাখি দত্ত হিজড়া এ পুরস্কার পাচ্ছেন। সম্মাননা পাওয়া জয়িতাদের সবাইকে এক লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট, উত্তরীয় ও সনদ দেওয়া হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি এ তথ্য জানান।

সাক্ষরতা সূচকে পিছিয়ে নারী : বাংলাদেশ স্যাম্পলভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস-২০২২’ এর তথ্যানুযায়ী, দেশে সাক্ষরতার হার ক্রমেই বাড়লেও পুরুষের তুলনায় এখনো অনেক পিছিয়ে নারীরা। ৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সি পুরুষ জনগোষ্ঠী একই বয়সি নারীদের তুলনায় প্রায় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ সাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন। এ বয়সসীমার ছেলেদের ক্ষেত্রে সাক্ষরতার হার ৭৭ দশমিক ২২ শতাংশ। একই বয়সের মেয়েদের মধ্যে এ অনুপাত ৭৩ দশমিক ৩২। অর্থাৎ নারীদের মধ্যে নিরক্ষরতার হার বেশি। এদিকে, নারীদের মধ্যে ২২ দশমিক ৩ শতাংশ নারী কখনও বিদ্যালয়ে যাবার সুযোগ পায়নি। ১৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ মেয়েশিশু প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা শেষ করতে ব্যর্থ হয়েছে। নারীদের মধ্যে ১১ দশমিক ৫৯ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। ১৯ দশমিক ২৬ শতাংশ নারী মাধ্যমিক এবং উচ্চ স্তরের পড়াশোনা শেষ করতে পারেন।

হিন্দু-বৌদ্ধ নারীদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি : বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ এক বিবৃতিতে এ দাবি জানিয়েছে। বিবৃতিতে সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক ড. ময়না তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক পুলক ঘটক বলেন, বাংলাদেশে প্রচলিত হিন্দু পারিবারিক আইনের আওতাধীন হিন্দু, বৌদ্ধ ও বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীর নারীদের প্রতি বৈষম্য ও অবিচার নিরসন করার জন্য সরকারের প্রতি বিশেষভাবে আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশের হিন্দু নারীরা ২০২৪ সালের নারী দিবস উদযাপন করার সময়ও সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত। পিতার সম্পত্তিতে পুত্র সন্তানের একচ্ছত্র অধিকার, কন্যাসন্তানের অধিকার শূন্য। বিবাহ বিচ্ছেদের সুযোগ নেই। ফলে অসংখ্য নারী বিবাহিত জীবনে নির্যাতিত কিংবা স্বামী পরিত্যক্ত হলেও তারা আইনগতভাবে বিচ্ছেদ নিয়ে পুনরায় বিয়ে করে সংসার জীবন যাপন করতে পারছে না। অথচ পুরুষের জন্য বহু বিবাহের সুযোগ নিয়ন্ত্রণহীন ও অবারিত। বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক না হওয়ায় বহু নারী প্রতারণার শিকার হচ্ছে।
তারা বলেন, হিন্দু ও বৌদ্ধ নারীদের সম্পত্তিতে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা এবং একটি পূর্ণাঙ্গ বিবাহ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা, বহুবিবাহ রোধ ও বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার প্রদান করার জন্য এবং নারীর প্রতি বহুমাত্রিক অন্যায় ও বৈষম্যের পথ রহিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

দিবসের কর্মসূচি : সরকারের পক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় দিবসটি উদযাপন করছে। পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি উদযাপন করছে। অনেকেই ব্যক্তিগত পর্যায়েও দিবসটি উদযাপন করছেন। বেগুনি রংয়ের ফুল সবখানে ফুটে থাকে তাই দিবসটির থিম রং বেগুনি। এদিন নারীরা তাই এই রংয়ের পোশাক পরে নিজেকে সাজায়। যদিও সব রঙেই নারী সবসময় রঙিন। দিবসটি পালন উপলক্ষে গণমাধ্যমগুলোতে রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। টেলিভিশন ও রেডিওগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। পত্রিকাগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও অনলাইনগুলোতে বিশেষ সংবাদ প্রকাশ করছে। সকাল ১০টায় ওসমানী মিলনায়তনে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এসময় জয়িতা সম্মাননাপ্রাপ্ত ৪ নারী ও ১ হিজড়ার হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন। সকাল ১১টায় জাতীয় নারীজোটের উদ্যোগে ‘নারীর জন্য বিনিয়োগ : উন্নয়নে করবে গতিযোগ’ শীর্ষক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। বেলা সাড়ে তিনটায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে বিকাল ৩টায় আলোচনাসভার আয়োজন করা হবে। ১০ মার্চ সকাল ১০টায় সংগঠনের কার্যালয়ে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের উদ্যোগে বিকাল সাড়ে ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)র নেতৃত্বে সকাল ৯টায় ডিআরইউ চত্বর থেকে একটি র‌্যালি বের হবে। র‌্যালির পরে সকাল সাড়ে ৯টায় ডিআরইউ’র নসরুল হামিদ মিলনায়তনে নারী দিবস উপলক্ষে কেক কাটা হবে। ৩০ মার্চ স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে নারী দিবস উপলক্ষে ডিআরইউ থেকে প্রকাশিত কণ্ঠস্বর এর মোড়ক উন্মোচন করবেন। ৯ মার্চ শনিবার জাতীয় পর্যায়ের ১৩টি অধিকারভিত্তিক সংগঠনের উদ্যোগে নারীর ভূমি-কৃষি অধিকার, নারীর নিরাপত্তাহীনতা, নারী-পুরুষ মজুরী বৈষম্য, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও সমতা অর্জনের সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করার অভিপ্রায়ে ঢাকার আসাদ এভিনিউ অভিমুখী সড়কে এক মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।