০৭:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুস্থতায় ইফতারে যা খাওয়া উচিত

তীব্র গরমের এই সময় রোজা রাখা এবং সুস্থ থাকাটা বেশ চ্যালেঞ্জের বিষয়। আবহাওয়ার ওপর কারও হাত না থাকলেও খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এই কঠিন সময়ে আপনি পেতে পারেন স্বস্তি ও প্রশান্তি। এ জন্য ইফতার ও সেহেরিতে বেশকিছু খাবার এড়িয়ে চলা উত্তম। আবার কিছু খাবার খাদ্য তালিকায় রাখলে প্রায় ১৫ ঘণ্টা ধরে রোজা রাখার সময়টা কিছুটা হলেও সহজ হবে বলে আশা করা যায়। রমজানে আপনি যেসব খাবার খেতে পারেন, সেগুলো নিয়ে আজকের আয়োজন।

বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ফারাহ মাসুদা ইফতারে এমন কিছু খাওয়ার পরামর্শ দেন যা উদরপূর্তির পাশাপাশি শরীরের সার্বিক পুষ্টিচাহিদা পূরণেও সহায়তা করে।

 

তিনি পরামর্শ দেন, “গরমকালে সারা দিন শরীর থেকে প্রচুর পানি ঘামের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। রোজার দিনে শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করা যায় না। তাই ইফতারে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।”

তবে কোনোভাবেই কৃত্রিম রং মেশানো জুস বা কোমল পানীয় খাওয়া ঠিক নয়। এতে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাছাড়া সারাদিন কিছু না খেয়ে ইফতারে আজে বাজে খাবার না খাওয়াই ভালো- বলে মনে করেন এই পুষ্টিবিদ।

 

তিনি বলেন, “ইফতারে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে চাইলে অবশ্যই তেল সমৃদ্ধ ও ভাজাপোড়া-জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে। তাছাড়া অতিরিক্ত মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো। কেউ চাইলে হালকা মিষ্টিজাতীয় খাবার রাখতে পারেন। তবে তার পরিমাণ যেন খুব বেশি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।”

 

তার দেওয়া অন্যান্য পরামর্শগুলো হল-

 

  • সরাসরি মিষ্টি না খেয়ে মিষ্টি ফল, পুডিং খাওয়া যেতে পারে। ঠিক ইফতারের সময় দুধের তৈরি মিষ্টি খাবার যেমন- পায়েস, সেমাই ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে। প্রয়োজনে ইফতারি শেষে এই ধরনের খাবার খাওয়া যেতে পারে।
  • ইফতারে খেজুর একটি আদর্শ খাবার। মিষ্টি ফল হওয়ায় দ্রুতই রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। এছাড়াও এটি ডাইজেস্টিভ এনজাইম বিতরণকারী হিসেবে কাজ করে যা খাবার হজমে সাহায্য করে।
  • কেবল খেজুরই নয় অন্য যে কোনো ফল ইফতারে রাখুন। এতে শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজের চাহিদা সহজে পূরণ হবে। তাছাড়া ফল আঁশ বহুল হওয়ায় তা অন্যান্য খাবার হজমেও সাহায্য করে।
  • ইফতার ও সেহেরিতে আঁশজাতীয় ফল খাওয়া ভালো। কারণ এই ধরনের ফল বেশিক্ষণ পানি ধরে রাখতে পারে। তাই ফলমূল ও সবজি শরীরকে ‘ডিটক্সিফাইন’ হতে সাহায্য করে। ফলে শরীর সুস্থ থাকে ।
  • এই সময় অতিরিক্ত চা বা কফি এবং কোমল পানীয় পান করা থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ অতিরিক্ত চা ও কফি শরীরের পানি শূন্যতার সৃষ্টি করে। অনেক ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা যায়।
  • ইফতারে পেট ঠাণ্ডা থাকে এমন খাবার যেমন দুধচিড়া বা দই-চিড়া অথবা মুড়ি খাওয়া ভালো। দই পেটের সার্বিক সুস্থতা রক্ষা করতে সাহায্য করে।
  • অনেকে ইফতারে তেহারি, বিরিয়ানি ধরনের খাবার খান। যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কোনোভাবেই এই ধরনের খাবার ইফতারিতে খাওয়া উচিত না। কারণ এইগুলো পেট গরম করে, ফলে নানা রকমের পেটের অসুখ দেখা যায়।
  • তাই সুস্থ থাকতে ইফতারের সময় বেশি করে তরল খাবার ও ফলমূল খেতে হবে।
  • তিনি আরও বলেন, ইফতার শুরু করার সময় খুব বেশি তাড়াহুড়া করে খাওয়া উচিত নয়। একটু সময় নিয়ে ধীরে ধীরে খাওয়া উচিত। প্রথমে, দুতিনটি খেজুর খেয়ে পানি পান করা। তারপর কিছু সময়, আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ মিনিট বিরতি দিয়ে ভারি খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
  • কারণ মস্তিষ্কে খাদ্য সংবেদন পৌঁছাতে একটু সময় লাগে। নির্ধারিত সময়ের আগেই যদি খাওয়া শুরু করা হয় তবে অধিক ভোজনের সম্ভাবনা বেড়ে যায় যা ওজন বাড়ার অন্যতম কারণ।

ভুয়া নথিপত্রে মিলছে ঋণ, সঠিকে জটিলতা

সুস্থতায় ইফতারে যা খাওয়া উচিত

আপডেট সময় : ০৮:৪২:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ মার্চ ২০২৪

তীব্র গরমের এই সময় রোজা রাখা এবং সুস্থ থাকাটা বেশ চ্যালেঞ্জের বিষয়। আবহাওয়ার ওপর কারও হাত না থাকলেও খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এই কঠিন সময়ে আপনি পেতে পারেন স্বস্তি ও প্রশান্তি। এ জন্য ইফতার ও সেহেরিতে বেশকিছু খাবার এড়িয়ে চলা উত্তম। আবার কিছু খাবার খাদ্য তালিকায় রাখলে প্রায় ১৫ ঘণ্টা ধরে রোজা রাখার সময়টা কিছুটা হলেও সহজ হবে বলে আশা করা যায়। রমজানে আপনি যেসব খাবার খেতে পারেন, সেগুলো নিয়ে আজকের আয়োজন।

বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ফারাহ মাসুদা ইফতারে এমন কিছু খাওয়ার পরামর্শ দেন যা উদরপূর্তির পাশাপাশি শরীরের সার্বিক পুষ্টিচাহিদা পূরণেও সহায়তা করে।

 

তিনি পরামর্শ দেন, “গরমকালে সারা দিন শরীর থেকে প্রচুর পানি ঘামের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। রোজার দিনে শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করা যায় না। তাই ইফতারে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।”

তবে কোনোভাবেই কৃত্রিম রং মেশানো জুস বা কোমল পানীয় খাওয়া ঠিক নয়। এতে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাছাড়া সারাদিন কিছু না খেয়ে ইফতারে আজে বাজে খাবার না খাওয়াই ভালো- বলে মনে করেন এই পুষ্টিবিদ।

 

তিনি বলেন, “ইফতারে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে চাইলে অবশ্যই তেল সমৃদ্ধ ও ভাজাপোড়া-জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে। তাছাড়া অতিরিক্ত মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো। কেউ চাইলে হালকা মিষ্টিজাতীয় খাবার রাখতে পারেন। তবে তার পরিমাণ যেন খুব বেশি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।”

 

তার দেওয়া অন্যান্য পরামর্শগুলো হল-

 

  • সরাসরি মিষ্টি না খেয়ে মিষ্টি ফল, পুডিং খাওয়া যেতে পারে। ঠিক ইফতারের সময় দুধের তৈরি মিষ্টি খাবার যেমন- পায়েস, সেমাই ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে। প্রয়োজনে ইফতারি শেষে এই ধরনের খাবার খাওয়া যেতে পারে।
  • ইফতারে খেজুর একটি আদর্শ খাবার। মিষ্টি ফল হওয়ায় দ্রুতই রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। এছাড়াও এটি ডাইজেস্টিভ এনজাইম বিতরণকারী হিসেবে কাজ করে যা খাবার হজমে সাহায্য করে।
  • কেবল খেজুরই নয় অন্য যে কোনো ফল ইফতারে রাখুন। এতে শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজের চাহিদা সহজে পূরণ হবে। তাছাড়া ফল আঁশ বহুল হওয়ায় তা অন্যান্য খাবার হজমেও সাহায্য করে।
  • ইফতার ও সেহেরিতে আঁশজাতীয় ফল খাওয়া ভালো। কারণ এই ধরনের ফল বেশিক্ষণ পানি ধরে রাখতে পারে। তাই ফলমূল ও সবজি শরীরকে ‘ডিটক্সিফাইন’ হতে সাহায্য করে। ফলে শরীর সুস্থ থাকে ।
  • এই সময় অতিরিক্ত চা বা কফি এবং কোমল পানীয় পান করা থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ অতিরিক্ত চা ও কফি শরীরের পানি শূন্যতার সৃষ্টি করে। অনেক ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা যায়।
  • ইফতারে পেট ঠাণ্ডা থাকে এমন খাবার যেমন দুধচিড়া বা দই-চিড়া অথবা মুড়ি খাওয়া ভালো। দই পেটের সার্বিক সুস্থতা রক্ষা করতে সাহায্য করে।
  • অনেকে ইফতারে তেহারি, বিরিয়ানি ধরনের খাবার খান। যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কোনোভাবেই এই ধরনের খাবার ইফতারিতে খাওয়া উচিত না। কারণ এইগুলো পেট গরম করে, ফলে নানা রকমের পেটের অসুখ দেখা যায়।
  • তাই সুস্থ থাকতে ইফতারের সময় বেশি করে তরল খাবার ও ফলমূল খেতে হবে।
  • তিনি আরও বলেন, ইফতার শুরু করার সময় খুব বেশি তাড়াহুড়া করে খাওয়া উচিত নয়। একটু সময় নিয়ে ধীরে ধীরে খাওয়া উচিত। প্রথমে, দুতিনটি খেজুর খেয়ে পানি পান করা। তারপর কিছু সময়, আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ মিনিট বিরতি দিয়ে ভারি খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
  • কারণ মস্তিষ্কে খাদ্য সংবেদন পৌঁছাতে একটু সময় লাগে। নির্ধারিত সময়ের আগেই যদি খাওয়া শুরু করা হয় তবে অধিক ভোজনের সম্ভাবনা বেড়ে যায় যা ওজন বাড়ার অন্যতম কারণ।