◉যাকাতযোগ্য ২৭ হাজার কোটি টাকার বিপরীতে আদায় ১১ কোটি
◉ ১৪ বছরে জমা হয়েছে মাত্র ৬০ কোটি টাকা
◉ চলতি অর্থবছরে টার্গেট ২০ কোটি টাকা
দেশের বিত্তবানদের কাছ থেকে জাকাত আদায় করে তা হতদরিদ্রদের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে বিতরণের জন্য সরকার ১৯৮২ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে যাকাত ফান্ড গঠন করে। কিন্তু তেমন প্রচার-প্রচারণা না থাকা, অধিকাংশ মানুষের আস্থাহীনতাসহ নানা কারণে এ ফান্ডে জাকাত প্রদানে সাড়া পড়ছে না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আদায়কারীদের জন্য ১০ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন সংশ্লিষ্ট ৮০ হাজার মক্তবের ইমামদের যাকাত সংগ্রহে মাঠে নামানো এবং উপজেলা পর্যায়ে প্রচার-প্রচারণা বাড়ানোয় জাকাত আদায়ের পরিমাণ আগের চেয়ে বাড়ছে বলে জানা গেছে।
যাকাত ফান্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতি বছর ২৭ হাজার কোটি টাকা যাকাতযোগ্য সম্পদ রয়েছে। কিন্তু জাকাত দেওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের অধিকাংশই সমপরিমাণ জাকাত দেন না। দিলেও তারা সরকারি এই ফান্ডের মাধ্যমে জাকাত না দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে দেন। সবাই যদি এ ফান্ডের মাধ্যমে জাকাত দেন তাহলে ১৫-২০ বছরে দেশের দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব।
তারা বলছেন, সরকারিভাবে যে জাকাত দেওয়া যায়, বিষয়টি মানুষ জানত না। ২০১৯ সালের পর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রচার-প্রচারণা বাড়ানো এবং আদায়কারীদের ১০ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার পর ফান্ডে জাকাত আদায়ের পরিমাণ বাড়ছে। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে সাড়ে ১১ কোটি টাকা জমা হয়েছে। চলতি বছরে যে গতি দেখা যাচ্ছে তাতে ১৫ কোটি টাকার বেশি আদায় হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ১ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টি। এ ছাড়া লাভজনক ফসলি জমি, গচ্ছিত স্বর্ণালংকার, ব্যাংকিং খাত, বাণিজ্যিক সম্পদ ও শিল্পজাত ব্যবসায় প্রতিশ্রুত লভ্যাংশ হিসাব করলে প্রতি বছর জাকাত আদায় হওয়ার কথা প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু প্রতি বছর কত টাকা জাকাত আদায় হয়, তার সঠিক কোনো তথ্য নেই সরকারের কাছে।
যাকাত ফান্ড ও সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্টের (সিজেডএম) তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর ফসলি জমির মালিক থেকে এক হাজার কোটির বেশি, গচ্ছিত স্বর্ণালংকারে ১৩০ কোটি, ব্যাংকিং খাতে ১৫৩০ কোটি, শিল্প কারখানা থেকে ১২০০ কোটি টাকা জাকাত আদায় করা সম্ভব। এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারিভাবে কেনা সঞ্চয়পত্র ও বন্ড থেকে বছরে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি জাকাত আদায় করা সম্ভব।
তাদের মতে, দেশে যাকাতযোগ্য সম্পদের পরিমাণ ১৩ লাখ কোটি টাকা। এর আড়াই শতাংশ হারে যাকাতের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা। এ যাকাত সঠিকভাবে আদায় করে বণ্টন করা গেলে ১৫ বছরে দেশে জাকাত নেওয়ার মতো কোনো মানুষ পাওয়া যাবে না। কিন্তু দেশের অধিকাংশ মানুষ নিজের মতো করে জাকাত আদায় করে থাকেন। এক্ষেত্রে সরকারি ফান্ডটিকে কার্যকরী করা গেলে জাকাত আদায় যেমন সুশৃঙ্খল হবে তেমনি বণ্টন সুষম হবে। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় জাকাত ফান্ড নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থার সংকট রয়েছে। এ সংকট দূর করতে পারলে জাকাত ফান্ডের মাধ্যমে দেশের দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, যাকাত বোর্ডের মাধ্যমে ১৯৮২ সাল থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত প্রায় ১১ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ৬০ কোটি টাকার জাকাত বণ্টন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ব্যক্তি ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকেও জাকাত দিয়েছে। জাকাত ফান্ড থেকে শিশু হাসপাতাল, সেলাই প্রশিক্ষণ এমন নানা খাতে খরচ করা হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিব মো. আবু সাঈদ বলেন, যাকাত ফান্ডকে শক্তিশালী করতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি বেশি প্রচার ও মানুষের আস্থা তৈরি করতে পারলেই এ ফান্ডের মাধ্যমে দেশের দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব হবে।


























