০৫:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নানামুখী সংকটে দেশের উচ্চশিক্ষা

✧জনবল ও অফিসের পর্যাপ্ত জায়গা সংকটে ইউজিসি
✧ বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ তিন পদে নিয়োগের কোনো সুস্পষ্ট নীতিমালা ও পদ্ধতি নেই
✧নেই একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান
✧ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ সরকারের কাছে নানা সুপারিশ

দেশে উচ্চশিক্ষার চাহিদার সঙ্গে বাড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা। বর্তমানে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষায় প্রায় ৪৮ লাখ শিক্ষার্থী সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করছেন। তবে এসব শিক্ষার্থীর পড়ালেখার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ দেশে উচ্চ-শিক্ষার প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এখনও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রে নানা সমস্যা ও সংকট বিরাজ করছে। খোদ উচ্চ শিক্ষার নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনই (ইউজিসি) জনবল ও অফিসের পর্যাপ্ত জায়গার অভাবসহ নানা সংকটে ভুগছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আইন-নীতি না থাকা, পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের অভাব রয়েছে। এছাড়া নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সরকারের বরাদ্দ দেওয়া সুযোগ-সুবিধাও ঠিকমতো কাজে আসছে না। ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব সংকটের কথা তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানসম্মত শিক্ষা, উচ্চতর গবেষণা, উদ্ভাবন, নতুন জ্ঞান সৃজন ও উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে ১৪ দফা সুপারিশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

 

ইউজিসির সুপারিশে বলা হয়, প্রশাসনিক ও আর্থিকসহ প্রয়োজনীয় কাজের দক্ষতাসম্পন্ন উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং ট্রেজারার না থাকার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা সম্ভব হয় না। ১৯৭৩ সালের আদেশ/আইনে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ ব্যতীত অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে উল্লিখিত তিনটি পদে নিয়োগের কোনো সুস্পষ্ট নীতিমালা ও পদ্ধতি নেই। উক্ত তিনটি পদে যথোপযুক্ত ব্যক্তিকে নিয়োগ প্রদানের জন্য নীতিমালা প্রণয়নপূর্বক কমিশনের সুপারিশের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রয়োজনীয় যোগ্যতাসম্পন্ন খ্যাতনামা শিক্ষকগণের একটি পুল গঠন করা যেতে পারে।

উচ্চশিক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে ইউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার গুণগতমান কাক্সিক্ষত পর্যায়ে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আর্থিক জোগান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই লক্ষ্য অর্জনে কমিশন কর্তৃক প্রণীত ও সরকার কর্তৃক অনুমোদিত স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ফর হায়ার এডুকেশন: ২০১৮-২০৩০ অনুযায়ী উচ্চশিক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধিতে সরকার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।

 

দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে রয়েছে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। গুণগত এবং মানসম্মত আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের র‌্যাঙ্কিংয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছে ইউজিসি। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিং ব্যবস্থার আদলে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের জন্য সরকার জাতীয় পর্যায়ে একটি অভ্যন্তরীণ র‌্যাঙ্কিং ব্যবস্থা প্রবর্তনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে ইউজিসি। আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষা, গবেষণা, পেটেন্ট, সাইটেশন, রেপুটেশন ও বৈশ্বিক সহযোগিতা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে উক্ত র‌্যাঙ্কিং পদ্ধতি প্রবর্তিত হতে পারে এবং এ বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করতে পারে বলে মনে করছে ইউজিসি।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রক এ প্রতিষ্ঠানের সুপারিশে বলা হয়, চলমান চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার লক্ষ্যে উন্নত বিশ্বের আদলে বাংলাদেশের জন্য নীতি ও কৌশল প্রণয়ন করা প্রয়োজন। ইন্ডাস্ট্রি-বিশ্ববিদ্যালয় যৌথ গবেষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ শিক্ষা, গবেষণা, উদ্ভাবন, স্টার্টআপ এবং পণ্যের বাণিজ্যিকীকরণের বিধান রেখে সরকার নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারে। এছাড়াও ইন্ডাস্ট্রির কাজে অভিজ্ঞ পেশাজীবীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।

 

নিজেদের সংকটের কথা তুলে ধরে ইউজিসি জানিয়েছেÑ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের তদারকি, তত্ত্বাবধান এবং উচ্চশিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষায় প্রায় ৪৮ লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। ইউজিসি’র যাবতীয় কার্যক্রম আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ৬ তলা বিশিষ্ট ভবনে পরিচালিত হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিদ্যমান জনবল দিয়ে ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কর্মরত জনবলের জন্য বর্তমান ভবনটিতে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় দাপ্তরিক কাজের জন্য স্থান সংকুলান হচ্ছে না। অন্যদিকে ভবনটির নকশা অনুযায়ী উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কমিশনের কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে পরিচালনার স্বার্থে নতুন অবকাঠামো নির্মাণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

 

অর্থনৈতিক দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। এক্ষেত্রে আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ‘অডিট ম্যানেজমেন্ট এন্ড মনিটরিং সিস্টেম’ বাস্তবায়নের জন্য স্ব-স্ব বিশ্ববিদ্যালয়কে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছে ইউজিসি।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ইউজিসির সুপারিশে বলা হয়েছেÑমাস্টারপ্ল্যানে বিষয়বস্তু, গবেষণাগার, কোন বিষয়ে কতজন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে, ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত কেমন হবে তা উল্লেখ থাকতে হবে। উক্ত মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কৌশলগত শিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবন কর্মপরিকল্পনা থাকতে হবে যা পর্যায়ক্রমে অনুসরণ করে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় গুণগতমান অর্জন নিশ্চিত করবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।

 

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করতে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো কোয়ালিটি এসুরেন্স সেল প্রতিষ্ঠিত হয়নি তা তরান্বিত করা এবং সেলের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে তদারকি করতে বলেছে ইউজিসি। এছাড়াও দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক তৈরি করতে ইউনিভার্সিটি টিচার্স ট্রেনিং একাডেমি, উন্নতমানের গবেষণা করার জন্য সেন্ট্রাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি ও গবেষণার প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র চিহ্নিত করার জন্য ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকারকে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের সুপারিশ করা হয়েছে।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে গবেষণায় প্লেজিয়ারিজম বা চৌর্যবৃত্তির ঘটনা রোধকল্পে জাতীয় পর্যায়ে কোনো নীতিমালা না থাকায় গবেষণাপত্রে চৌর্যবৃত্তির বিষয়টি সংজ্ঞায়িত করা যাচ্ছে না। তাই প্লেজিয়ারিজমবিষয়ক সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করা আবশ্যক। সর্বোপরি, চৌর্যবৃত্তি বন্ধ করার জন্য একটি যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন করে তা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।

স্নাতকদের চাকরির বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য শিক্ষা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা স্থাপন করতে হবে। এক্ষেত্রে তিন থেকে ছয় মাসের বাধ্যতামূলক ও কার্যকরী ইন্টার্নশিপ চালু করলে তা স্নাতকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে এবং তা চাকরিতে প্রবেশ ও ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।

শিক্ষা ও গবেষণাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে মানসম্মত প্রকাশনার কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর/ইনডেক্সড জার্নালে (হাই ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর জার্নাল/কিউ-১/কিউ-২/স্কোপাস ইনডেক্সড জার্নালে) প্রকাশিত হওয়া জরুরি। মানসম্মত প্রকাশনায় শিক্ষকদের উৎসাহিত করার জন্য সরকার বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা প্রদানসহ তরুণ গবেষকদের জন্য বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে পারে বলে মনে করে ইউজিসি।

 

প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়ছেÑ দেশের অভ্যন্তরে পিএইচডি গবেষণার গুণগতমান নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দেশীয় গবেষণাকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন। দেশের মেধাবীরা যাতে গবেষণায় এগিয়ে আসতে পারে সে লক্ষ্যে পিএইচডি বৃত্তির আর্থিক পরিমাণ বৃদ্ধিসহ স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অনুকূলে উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার নিমিত্ত সরকার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।

 

পরবর্তী প্রজন্মকে বিশ্ব নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করা প্রয়োজন। শুধুমাত্র বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, গণিত এবং ব্যবসায় অধ্যয়নই যথেষ্ট নয় বরং মানবিক বিষয়সমূহ অধ্যয়ন আবশ্যক। সাহিত্য, সংগীত, চিত্রকলা, শিল্প ও মানবিক জ্ঞানকাণ্ডের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলো মানুষের সৃজনশীলতা, কল্পনা এবং আবিষ্কারের স্পৃহাকে অনুপ্রাণিত করে। তাই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার জন্য সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করেছে ইউজিসি।

 

এছাড়া উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে বিভিন্ন বিষয়বস্তুতে মাতৃভাষায় শিক্ষা প্রদান ও গবেষণার অবারিত সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলা ভাষায় পাঠ্যবই রচনা ও গবেষণাকর্ম অনুবাদের নিমিত্ত স্ব-স্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি বলে জানিয়েছে ইউজিসি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলেছে প্রতিষ্ঠানটি।

 

দেশের উচ্চশিক্ষার সংকট প্রসঙ্গে ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেছেন, দেশের উচ্চশিক্ষার পরিধি ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। দেশে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৬৩টি। তবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কাক্সিক্ষত মানের শিক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, মানসম্মত শিক্ষাই উন্নয়নের পূর্বশর্ত। উন্নত জাতি বিনির্মাণে টেকসই শিক্ষার বিকল্প নেই। তাই জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের দ্যুতিময় অগ্রযাত্রায় শামিল হওয়া জরুরি। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের শিক্ষাসহ আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে গুণগত মানোন্নয়ন ও উৎকর্ষসাধন আজ সময়ের দাবি। অবশ্য এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা ও জাতীয় আকাক্সক্ষা। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন উচ্চশিক্ষার বিশ্বপরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানসম্মত শিক্ষা, গবেষণা কার্যক্রমের বিস্তার ও পরিপোষণে যুগোপযোগী নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেছেÑ এসব কর্মসূচি যথাসময়ে ও সুচারুরূপে বাস্তবায়িত হলে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকাংশে এগিয়ে যাবে বলে কমিশন আশা করে।

জনপ্রিয় সংবাদ

পানছড়িতে ৩ বিজিবির অভিযানে ভারতীয় গরুসহ চোরাচালানি আটক

নানামুখী সংকটে দেশের উচ্চশিক্ষা

আপডেট সময় : ০৭:২৬:১৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

✧জনবল ও অফিসের পর্যাপ্ত জায়গা সংকটে ইউজিসি
✧ বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ তিন পদে নিয়োগের কোনো সুস্পষ্ট নীতিমালা ও পদ্ধতি নেই
✧নেই একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান
✧ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ সরকারের কাছে নানা সুপারিশ

দেশে উচ্চশিক্ষার চাহিদার সঙ্গে বাড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা। বর্তমানে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষায় প্রায় ৪৮ লাখ শিক্ষার্থী সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করছেন। তবে এসব শিক্ষার্থীর পড়ালেখার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ দেশে উচ্চ-শিক্ষার প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এখনও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রে নানা সমস্যা ও সংকট বিরাজ করছে। খোদ উচ্চ শিক্ষার নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনই (ইউজিসি) জনবল ও অফিসের পর্যাপ্ত জায়গার অভাবসহ নানা সংকটে ভুগছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আইন-নীতি না থাকা, পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের অভাব রয়েছে। এছাড়া নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সরকারের বরাদ্দ দেওয়া সুযোগ-সুবিধাও ঠিকমতো কাজে আসছে না। ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব সংকটের কথা তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানসম্মত শিক্ষা, উচ্চতর গবেষণা, উদ্ভাবন, নতুন জ্ঞান সৃজন ও উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে ১৪ দফা সুপারিশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

 

ইউজিসির সুপারিশে বলা হয়, প্রশাসনিক ও আর্থিকসহ প্রয়োজনীয় কাজের দক্ষতাসম্পন্ন উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং ট্রেজারার না থাকার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা সম্ভব হয় না। ১৯৭৩ সালের আদেশ/আইনে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ ব্যতীত অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে উল্লিখিত তিনটি পদে নিয়োগের কোনো সুস্পষ্ট নীতিমালা ও পদ্ধতি নেই। উক্ত তিনটি পদে যথোপযুক্ত ব্যক্তিকে নিয়োগ প্রদানের জন্য নীতিমালা প্রণয়নপূর্বক কমিশনের সুপারিশের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রয়োজনীয় যোগ্যতাসম্পন্ন খ্যাতনামা শিক্ষকগণের একটি পুল গঠন করা যেতে পারে।

উচ্চশিক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে ইউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার গুণগতমান কাক্সিক্ষত পর্যায়ে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আর্থিক জোগান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই লক্ষ্য অর্জনে কমিশন কর্তৃক প্রণীত ও সরকার কর্তৃক অনুমোদিত স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ফর হায়ার এডুকেশন: ২০১৮-২০৩০ অনুযায়ী উচ্চশিক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধিতে সরকার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।

 

দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে রয়েছে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। গুণগত এবং মানসম্মত আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের র‌্যাঙ্কিংয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছে ইউজিসি। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিং ব্যবস্থার আদলে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের জন্য সরকার জাতীয় পর্যায়ে একটি অভ্যন্তরীণ র‌্যাঙ্কিং ব্যবস্থা প্রবর্তনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে ইউজিসি। আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষা, গবেষণা, পেটেন্ট, সাইটেশন, রেপুটেশন ও বৈশ্বিক সহযোগিতা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে উক্ত র‌্যাঙ্কিং পদ্ধতি প্রবর্তিত হতে পারে এবং এ বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করতে পারে বলে মনে করছে ইউজিসি।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রক এ প্রতিষ্ঠানের সুপারিশে বলা হয়, চলমান চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার লক্ষ্যে উন্নত বিশ্বের আদলে বাংলাদেশের জন্য নীতি ও কৌশল প্রণয়ন করা প্রয়োজন। ইন্ডাস্ট্রি-বিশ্ববিদ্যালয় যৌথ গবেষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ শিক্ষা, গবেষণা, উদ্ভাবন, স্টার্টআপ এবং পণ্যের বাণিজ্যিকীকরণের বিধান রেখে সরকার নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারে। এছাড়াও ইন্ডাস্ট্রির কাজে অভিজ্ঞ পেশাজীবীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।

 

নিজেদের সংকটের কথা তুলে ধরে ইউজিসি জানিয়েছেÑ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের তদারকি, তত্ত্বাবধান এবং উচ্চশিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষায় প্রায় ৪৮ লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। ইউজিসি’র যাবতীয় কার্যক্রম আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ৬ তলা বিশিষ্ট ভবনে পরিচালিত হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিদ্যমান জনবল দিয়ে ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কর্মরত জনবলের জন্য বর্তমান ভবনটিতে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় দাপ্তরিক কাজের জন্য স্থান সংকুলান হচ্ছে না। অন্যদিকে ভবনটির নকশা অনুযায়ী উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কমিশনের কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে পরিচালনার স্বার্থে নতুন অবকাঠামো নির্মাণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

 

অর্থনৈতিক দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। এক্ষেত্রে আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ‘অডিট ম্যানেজমেন্ট এন্ড মনিটরিং সিস্টেম’ বাস্তবায়নের জন্য স্ব-স্ব বিশ্ববিদ্যালয়কে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছে ইউজিসি।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ইউজিসির সুপারিশে বলা হয়েছেÑমাস্টারপ্ল্যানে বিষয়বস্তু, গবেষণাগার, কোন বিষয়ে কতজন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে, ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত কেমন হবে তা উল্লেখ থাকতে হবে। উক্ত মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কৌশলগত শিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবন কর্মপরিকল্পনা থাকতে হবে যা পর্যায়ক্রমে অনুসরণ করে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় গুণগতমান অর্জন নিশ্চিত করবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।

 

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করতে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো কোয়ালিটি এসুরেন্স সেল প্রতিষ্ঠিত হয়নি তা তরান্বিত করা এবং সেলের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে তদারকি করতে বলেছে ইউজিসি। এছাড়াও দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক তৈরি করতে ইউনিভার্সিটি টিচার্স ট্রেনিং একাডেমি, উন্নতমানের গবেষণা করার জন্য সেন্ট্রাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি ও গবেষণার প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র চিহ্নিত করার জন্য ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকারকে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের সুপারিশ করা হয়েছে।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে গবেষণায় প্লেজিয়ারিজম বা চৌর্যবৃত্তির ঘটনা রোধকল্পে জাতীয় পর্যায়ে কোনো নীতিমালা না থাকায় গবেষণাপত্রে চৌর্যবৃত্তির বিষয়টি সংজ্ঞায়িত করা যাচ্ছে না। তাই প্লেজিয়ারিজমবিষয়ক সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করা আবশ্যক। সর্বোপরি, চৌর্যবৃত্তি বন্ধ করার জন্য একটি যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন করে তা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।

স্নাতকদের চাকরির বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য শিক্ষা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা স্থাপন করতে হবে। এক্ষেত্রে তিন থেকে ছয় মাসের বাধ্যতামূলক ও কার্যকরী ইন্টার্নশিপ চালু করলে তা স্নাতকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে এবং তা চাকরিতে প্রবেশ ও ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।

শিক্ষা ও গবেষণাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে মানসম্মত প্রকাশনার কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর/ইনডেক্সড জার্নালে (হাই ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর জার্নাল/কিউ-১/কিউ-২/স্কোপাস ইনডেক্সড জার্নালে) প্রকাশিত হওয়া জরুরি। মানসম্মত প্রকাশনায় শিক্ষকদের উৎসাহিত করার জন্য সরকার বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা প্রদানসহ তরুণ গবেষকদের জন্য বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে পারে বলে মনে করে ইউজিসি।

 

প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়ছেÑ দেশের অভ্যন্তরে পিএইচডি গবেষণার গুণগতমান নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দেশীয় গবেষণাকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন। দেশের মেধাবীরা যাতে গবেষণায় এগিয়ে আসতে পারে সে লক্ষ্যে পিএইচডি বৃত্তির আর্থিক পরিমাণ বৃদ্ধিসহ স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অনুকূলে উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার নিমিত্ত সরকার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।

 

পরবর্তী প্রজন্মকে বিশ্ব নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করা প্রয়োজন। শুধুমাত্র বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, গণিত এবং ব্যবসায় অধ্যয়নই যথেষ্ট নয় বরং মানবিক বিষয়সমূহ অধ্যয়ন আবশ্যক। সাহিত্য, সংগীত, চিত্রকলা, শিল্প ও মানবিক জ্ঞানকাণ্ডের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলো মানুষের সৃজনশীলতা, কল্পনা এবং আবিষ্কারের স্পৃহাকে অনুপ্রাণিত করে। তাই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার জন্য সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করেছে ইউজিসি।

 

এছাড়া উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে বিভিন্ন বিষয়বস্তুতে মাতৃভাষায় শিক্ষা প্রদান ও গবেষণার অবারিত সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলা ভাষায় পাঠ্যবই রচনা ও গবেষণাকর্ম অনুবাদের নিমিত্ত স্ব-স্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি বলে জানিয়েছে ইউজিসি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলেছে প্রতিষ্ঠানটি।

 

দেশের উচ্চশিক্ষার সংকট প্রসঙ্গে ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেছেন, দেশের উচ্চশিক্ষার পরিধি ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। দেশে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৬৩টি। তবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কাক্সিক্ষত মানের শিক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, মানসম্মত শিক্ষাই উন্নয়নের পূর্বশর্ত। উন্নত জাতি বিনির্মাণে টেকসই শিক্ষার বিকল্প নেই। তাই জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের দ্যুতিময় অগ্রযাত্রায় শামিল হওয়া জরুরি। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের শিক্ষাসহ আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে গুণগত মানোন্নয়ন ও উৎকর্ষসাধন আজ সময়ের দাবি। অবশ্য এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা ও জাতীয় আকাক্সক্ষা। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন উচ্চশিক্ষার বিশ্বপরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানসম্মত শিক্ষা, গবেষণা কার্যক্রমের বিস্তার ও পরিপোষণে যুগোপযোগী নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেছেÑ এসব কর্মসূচি যথাসময়ে ও সুচারুরূপে বাস্তবায়িত হলে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকাংশে এগিয়ে যাবে বলে কমিশন আশা করে।