উপজেলা নির্বাচনে প্রথম ধাপের ১৫০টি উপজেলার মধ্যে তিনটি পদের (চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান) বিপরীতে ১২টি উপজেলায় একক প্রার্থী থাকায় ১৪ জন বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। গতকাল মঙ্গলবার একাধিক সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ীদের তালিকায় রয়েছেন, দুই চেয়ারম্যান, তিনজন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান ও সাতজন নারী ভাইস চেয়ারম্যান। ইসি কর্মকর্তারা জানান, বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ীর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। কেননা, আগামী ২২ এপ্রিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময়। সেইদিন চূড়ান্ত হবে কতটি উপজেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কতজন প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।
এই নির্বাচনে এরই মধ্যে বাগেরহাট সদর উপজেলা এবং মুন্সীগঞ্জ সদর এ দুটি উপজেলার চেয়ারম্যান পদে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
একই ভাবে উপজেলা ভাইস (পুরুষ) চেয়ারম্যান পদে তিনজন অর্থাৎ কক্সবাজার সদর, হাতিয়া ও সন্দ্বীপ উপজেলায় একজন করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাতজন অর্থাৎ বাগেরহাট সদর উপজেলা, হাতিয়া, বড়লেখা, বালিয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া সদর, মতলব সদর ও দামুড়হুদা উপজেলায় একক প্রার্থী রয়েছেন। এসব উপজেলায় তিনপদে ১৪ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে টিকলে সবাই একক প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হবেন।
এদিকে দেশের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ দুই দলের কোনো একটি নির্বাচনি প্রক্রিয়ার বাইরে থাকলে নির্বাচন হয়ে পড়ে একপেশে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো চলমান উপজেলা নির্বাচনেও এর প্রভাব দেখা গেছে।
এবারের উপজেলা নির্বাচনে অনলাইনে বাধ্যতামূলক মনোয়নপত্র দাখিল করার বিধান করেছে ইসি। সোমবার ছিল মনোয়নপত্র দাখিল করার শেষ সময়।
ইসির তথ্য অনুযায়ী, প্রথমে ধাপে ১ হাজার ৮৯১ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল হয়েছে। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে মোট ৬৯৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭২৪ জন এবং নারীদের জন্য সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৭১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ইসি জানায়, চেয়ারম্যান পদে একটি উপজেলায় একজন প্রার্থী ও সর্বোচ্চ ১১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে চেয়ারম্যান পদে দুইজন করে প্রার্থী রয়েছেন ১৮টি উপজেলায়। আর একজন প্রার্থী দুটি উপজেলায়।
এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে সর্বোচ্চ ১১ জন প্রার্থীর দুটি উপজেলা হচ্ছে, সিলেটের বিশ্বনাথ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল। দ্বিতীয় ১০ জন প্রার্থী রয়েছেন, একটি উপজেলা হচ্ছে, নেত্রকোনার কলমাকান্দা। নয়জন করে প্রার্থী হচ্ছেন, কুড়িগ্রামের রৌমারী, নওগার বদলগাছী, নাটোরের নলডাঙ্গা, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর ও পাবনার বেড়া। আর ৮ জন করে প্রার্থী আছেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া, গোপালগঞ্জ সদর, নওগার মহাদেবপুর, নীলফামারীর ডোমার ও দূর্গাপুর। এছাড়া ৯টি উপজেলায় যথাক্রমে ৭ জন ও ৬ জন করে প্রার্থী, ১৯টা উপজেলায় ৫ জন, ২২টি উপজেলায় ৪ জন, ৩৪টি উপজেলায় ৩ জন করে এবং ১৮টি উপজেলায় ২ জন করে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে শেরপুরের শ্রীবর্দী উপজেলায়, ঝিনাইগাতী উপজেলায় ১২ জন এবং ১০ জন করে সাতক্ষীরার শ্যামনগর, রামগতি ও কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায়। আর সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে সর্বোচ্চ ৮ জন প্রার্থী সিলেটের ঘোড়াঘাট ও যশোরের মনিরামপুর উপজেলায়। দু’দিন প্রার্থিতা যাচাই-বাছাইয়ের পর আগামী ২৩ এপ্রিল প্রার্থিতা প্রত্যাহার ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে বরাদ্দ করা হবে প্রতীক। এর পর থেকেই শুরু হবে টানা ১৫ দিনের প্রচার-প্রচারণা। ভোট অনুষ্ঠিত হবে ৮ মে। আর দ্বিতীয় ধাপের ভোট হবে আগামী ২১ মে।
সবার আগে নির্বাচিত বিএনপি নেত্রী রাহেনা : মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, বিএনপি ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর দিনই দলটির তৃণমূলের এক নেত্রী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা পরিষদে নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন, তিনি মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রাহেনা বেগম। নির্বাচিত হয়েছেন বড়লেখা উপজেলা পরিষদে নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে। অন্য কোনো প্রার্থী না থাকায় নিয়ম মোতাবেক তাকেই ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে বলে মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে জানিয়েছেন বড়লেখা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দীপক কুমার রায়।
রাহেনা বর্তমানেও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন। আবারও পদে থেকে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে খুশি তিনি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়াকে সৌভাগ্য বলে মনে করছেন তিনি। গাংকুল পঞ্চগ্রাম আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক রাহেনা বিএনপির মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদকের পাশাপাশি জেলা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক। তিনি ২০০৯ ও ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান হন। ২০১৯ সালে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তৃতীয় বার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এবারও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দল ভোটে নেই, তাহলে তিনি কেন প্রার্থী হলেনÑ প্রশ্নে রাহেনা বলেন, দলমত নির্বিশেষে সাধারণ ভোটারদের চাপে তিনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।


























