➤বাংলাদেশের নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে : অমিত শাহ
➤কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে শরীয়াহ আইন কার্যকর করবে : যোগী আদিত্যনাথ
➤মোদিকে একহাত নিলেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী
➤ভোট দিলে মিলবে আইসক্রিম-চাওমিন-জিলাপিও!
বিশ্বের অন্যতম দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ ভারত। দেশটির অর্থনীতি প্রায় সাড়ে ছয় শতাংশ হারে বাড়লেও দেশটির বড় চ্যালেঞ্জ বেকারত্ব। আর চলমান লোকসভা নির্বাচনে এই বেকারত্বের বিষয়টিই সবচেয়ে বড় ইস্যু হিসেবে হাজির হয়েছে। সম্প্রতি ভারতের বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদের মধ্যে জরিপের ভিত্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, অনুপ্রবেশকারীদের হাত থেকে বাংলাকে মুক্ত করতে এখানে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর করা জরুরি। আর এই বাংলাদেশ থেকে নির্যাতিত হয়ে আসা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাগরিকদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। অন্যদিকে কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে এবার গুরুতর অভিযোগ করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তার অভিযোগ, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে দেশে শরীয়াহ আইন বাস্তবায়ন করবে।
ভারতের অর্থনীতি অতি দ্রুত বাড়লেও তা দেশটির তরুণ-যুবাদের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থান তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে। এই অবস্থায় গত ১৬ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিলের মধ্যে চালানো জরিপে ২৬ ভারতীয় অর্থনীতিবিদের মধ্যে ১৫ জনই বলেছেন, বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে বড় সমস্যা বেকারত্ব এবং নতুন যে সরকারই আসবে, তাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে বেকারত্ব মোকাবিলা। জরিপে অংশ নেওয়া বাকি ১১ অর্থনীতিবিদের মধ্যে আটজন বলেছেন, ভারতের সবচেয়ে বড় সমস্যা গ্রামে ভোগ্যপণ্যের বাজার প্রসারিত না হওয়া।
ফ্রান্সভিত্তিক আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সোসিয়েতে জেনেরালের ভারতীয় অর্থনীতিবিদ কুনাল কুন্ডু বলেন, প্রায় এক দশকব্যাপী কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধির পর নিরুৎসাহিত জনশক্তির ক্রমবর্ধমান সংখ্যা ভারতের উৎপাদনে শ্রমশক্তির অংশগ্রহণের হার জনসংখ্যার তুলনামূলক পর্যায়ে এশিয়ার চারটি উদীয়মান অর্থনীতির নিচে ঠেলে দিয়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বর্তমানে কর্মসংস্থানের হার বাড়ানোর চলকগুলোর (অবকাঠামো, উৎপাদন, এবং সরকারি চাকরি) ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেও সেগুলো আজও প্রবৃদ্ধি সূচকে খুব একটা প্রভাব ফেলেনি, যা আরো উদ্বেগজনক। ফলে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া ভারত ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের (তরুণ জনসংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে উৎপাদনে যে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে) ফায়দা তুলতে ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকিতে আছে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি ২০১৪ সালে নির্বাচিত হওয়ার সময় আরো কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে সেই প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেকারত্বের হার ইঙ্গিত করে যে, যথেষ্ট কর্মসংস্থা সৃষ্টি হয়নি।
শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য বলছে, ২০১৩-১৪ সালে বেকারত্বের হার ছিল ৩ দশমিক ৪। এরপর মোদির শাসনামলে কেবল ২০২২-২৩ সালেই এই হার কম ছিল, ৩ দশমিক ২ শতাংশ। মুম্বাইভিত্তিক থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমির মতে, চলতি বছরের মার্চে বেকারত্বের হার ছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশের বেশি। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিজেপি সরকারের খুব বেশি সাফল্য না থাকলেও সরকারের তরফ থেকে বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টার কারণে গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ভারতের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকেও ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ৬ শতাংশ। সব মিলিয়ে গত বছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ।
যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের আলেকজান্দ্রা হারমানের মতে, ২০২৩ সালে (ভারতের অর্থনীতি) যে নজিরবিহীন শক্তিমত্তা দেখিয়েছে সেটিকে স্বতঃসিদ্ধ বলে ধরে নেওয়া ঠিক হবে না। কারণ, গত বছরের যে প্রবৃদ্ধি তা মূলত সরকারের ব্যাপক ব্যয়ের কারণে হয়েছে। তবে আগামী বছরগুলোতে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে চাইলে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে।
এদিকে গত মঙ্গলবার দুপুরে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের করণদীঘিতে রায়গঞ্জ আসনের বিজেপি প্রার্থী কার্তিক চন্দ্র পালের নির্বাচনী জনসভায় ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় আমাদের টার্গেট ৩৫ আসন। আমরা এবার ৩০-৩৫ আসনে পদ্ম ফোটাতে পারব। মমতা ভয় পাচ্ছেন এই রাজ্যে মোদির প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে। যদি সবাই মোদির দিকে চলে যায়। তৃণমূলের গুন্ডাদের উল্টো করে ঝুলিয়ে সোজা করে দেব। মমতার অনেক সাঙ্গপাঙ্গ তো এখন জেলে। এবার আমরা এই বাংলা থেকে কাটমানির কালচার বন্ধ করে দুর্নীতিমুক্ত বাংলা গড়ব। সন্দেশখালীর ঘটনার বিচার হবে। সিএএ কার্যকর হবে। সিএএ ও এনআরসি বন্ধ করতে পারবে না মমতাদি। বাংলাদেশ থেকে নির্যাতিত হয়ে আসা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
অরপদিকে বীরভূমে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী অভিনেত্রী শতাব্দী রায়ের এক নির্বাচনী জনসভায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাংলাজুড়ে এখন ভয় দেখানোর খেলা চালাচ্ছে বিজেপি। চলছে সিএএ-এনআরসি নিয়ে খেলা, মানুষের রুটি রুজি নিয়ে খেলা। বিজেপি কংগ্রেস-বামদলের হাত ধরেছে। চাইছে ওদের ভোট যেন টিএমসিতে না যায়। দার্জিলিং আসনের তৃণমূল প্রার্থী গোপাল লামার সমর্থনে আয়োজিত শিলিগুড়ির এক নির্বাচনী সভায় তৃণমূল প্রার্থীকে জয়ী করার আহ্বান জানিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মিথ্যাবাদী বিজেপির মিথ্যে বুলিতে কান দেবেন না। মমতার উন্নয়নের পক্ষে তৃণমূলের জোড়াফুলে জোট দেবেন। ধর্মান্ধদের একটি ভোটও নয়।
অন্যদিকে গত মঙ্গলবার উত্তর প্রদেশের আমরোহায় এক নির্বাচনী সমাবেশে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, কংগ্রেস ও তাদের সহযোগীরা দেশের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তারা দেশবাসীর কাছে মিথ্যা ইশতেহার প্রকাশ করেছে। আপনারা যদি কংগ্রেসের ইশতেহারের দিকে লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন, তারা এবারের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করলে দেশে শরীয়াহ আইন কার্যকর করবে। আপনারা বলুন, এই দেশ কি ভীমরাও রামজি আম্বেদকর তৈরি সংবিধান নাকি শরীয়াহ আইন দ্বারা পরিচালিত হবে? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নির্বাচনী সমাবেশে বলেছেন কংগ্রেস ইশতেহারে জনগণের সম্পত্তির পুনর্বণ্টন অন্তর্ভুক্ত করেছে। তারা ‘ব্যক্তিগত আইন’ বাস্তবায়ন করবে। তার মানে শরিয়াহ আইন কার্যকর করা হবে কারণ মোদীজি তিন তালাকের প্রথা বন্ধ করে দিয়েছেন। তারা (কংগ্রেস) বলেছে আবার ব্যক্তিগত আইন ফিরিয়ে আনবে। তার মানে তারা শরিয়াহ আইন বাস্তবায়ন করবে…,।
মোদিকে একহাত নিলেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী : কংগ্রেস মহিলাদের মঙ্গলসূত্র খুলে নিতে পিছপা হবে না এবং সংখ্যালঘুদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্তব্যে বিতর্কের ঝড় বইছে দেশে। নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রধানমন্ত্রী ঘৃণা ভাষণ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠছে। সেই আবহেই মোদিকে একহাত নিলেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী। বেঙ্গালুরুতে দলীয় প্রার্থীর হয়ে প্রচারে গিয়ে প্রকাশ্য সভা থেকে মোদিকে প্রিয়ঙ্কা বলেন, কংগ্রেস আপনাদের মঙ্গলসূত্র, সোনা ছিনিয়ে নেবে বলে গত দু’দিন ধরে প্রচার করা হচ্ছে। স্বাধীনতার সাত দশকে ৫৫ বছর কংগ্রেসের সরকার ছিল। এত বছরে কেউ কি আপনাদের মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নিয়েছে? যুদ্ধ চলাকালীন নিজের গয়না দেশকে উৎসর্গ করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। আমার মা এই দেশের জন্য নিজের মঙ্গলসূত্র বিসর্জন করে দিয়েছেন। আসল কথা হলো, এদের (বিজেপি) মহিলাদের সংগ্রাম বোঝার ক্ষমতাই নেই। ১৯৯১ সালে উগ্রপন্থিদের হাতে খুন হন রাজীব গান্ধী। মোদির আক্রমণের জবাব দিতে গিয়ে বাবার প্রাণ বিসর্জনের কথাই স্মরণ করিয়ে দেন প্রিয়ঙ্কা।
ভোট দিলে মিলবে আইসক্রিম-চাওমিন-জিলাপিও! : ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট শেষ। আগামীকাল রয়েছে দ্বিতীয় দফার ভোট। আর এই ভোট চলাকালীন ভোটারদের জন্য বিশেষ ‘পুরস্কার’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মধ্য প্রদেশের ইন্দোর জেলা প্রশাসন। স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, সকাল সকাল ভোট দিতে গেলেই ভোটারদের দেওয়া হবে আইসক্রিম। তা-ও আবার বিনামূল্যে। খাবারের তালিকায় রয়েছে পোহা, জিলাপির পাশাপাশি চাওমিন এবং মাঞ্চুরিয়ানও। তবে বিনামূল্যে খাবার পাওয়ার জন্য রয়েছে বিশেষ শর্ত। জেলা প্রশাসক আশিস সিংহ জানিয়েছেন, সকাল ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে ষাটোর্ধ্ব প্রার্থীদের পাশাপাশি যারা প্রথমবার ভোট দিচ্ছেন, তাদের বিনামূল্যে পোহা এবং জিলাপি দেওয়া হবে। ইন্দোরে যেকোনো নামী খাবারের দোকানে গেলেই এই ‘পুরস্কার’ পাওয়া যাবে। ভোট দেওয়ার পর কালির দাগ দেখালেই ভোটারদের বিনামূল্যে এই খাবার দেওয়া হবে। পোহা এবং জিলিপির সঙ্গে দেওয়া হবে আইসক্রিমও। এছাড়া সকাল ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে যেকোনো ভোটার ভোট দিলেই তাদের বিনামূল্যে দেওয়া হবে চাওমিন এবং মাঞ্চুরিয়ান।
আগামী ১৩ মে ইন্দোরে ভোট। তালিকায় রয়েছে ২৫ লাখের বেশি ভোটারের নাম। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় লোকসভার এই কেন্দ্র থেকে ৬৯ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছিলেন। এ বছরে ভোটদানের হার যেন আরো বৃদ্ধি পায় সে কারণেই বিশেষ পুরস্কারের ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন।


























