০১:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খেলাপি ঋণ কমানোর পদক্ষেপ জানতে চায় আইএমএফ

বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ ছাড়ে রিজার্ভের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য পূরণে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। খেলাপি ঋণ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক কি ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাটি। এ ছাড়া অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আয় বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে। পাশাপাশি বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে চলতি ও আগামী বাজেটে ব্যয় সংকোচন এবং ভর্তুকি কমিয়ে বাজেট ঘাটতি কম রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার ও সুদের হার বাস্তবায়নে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়েছে।

 

 

 

বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে চলতি ও আগামী বাজেটে ব্যয় সংকোচন এবং ভর্তুকি কমিয়ে বাজেট ঘাটতি কম রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মুদ্রাবিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো এবং বৈদেশিক লেনদেনে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি কাটিয়ে উঠার তাগিদ দিয়েছে আইএমএফ।

 

 

 

 

বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোর গড় খেলাপি ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পদক্ষেপেরে বিষয়ে জানতে চেয়েছে সংস্থাটি। এরই মধ্যে আইএমএফের ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণ ছাড়ে রিজার্ভের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বারবার ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে সুদের হার বাস্তবায়ন, রাজস্ব আয় বাড়ানো ও বাজার ভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় চালু করার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ।

 

 

 

 

তবে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মুদ্রা বিনিময় ও ক্রলিং পেগ বাস্তবায়ন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ায় ক্রলিং পেগ বাস্তবায়ন নিয়ে আপাতত কোনো পরামর্শ দেয়নি বাংলাদেশে অবস্থানরত আইএমএফের প্রতিনিধি দল।

 

 

 

 

বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আর্থিক খাত সংস্কার, খেলাপি ঋণ, সুদের হার বাস্তবায়ন, মুদ্রানীতি, মূল্যস্ফীতি, বিদেশি বাণিজ্যের ভারসাম্য ও আউটলুক, মুদ্রা বাজার ও তারল্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করেছে আইএমএফ। আইএমএফের মিশনের সঙ্গে গত বুধবার আমাদের বৈঠক শুরু হয়েছে। এখন সংস্থাটি আমাদের কাছ থেকে বিশ্লেষণ করার জন্য তথ্যগুলো সংগ্রহ করছে। এরপর হয়তো বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেবে।

 

 

 

বৈঠকে উপস্থিত অর্থ বিভাগের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, শুধু আইএমএফের শর্ত পূরণই নয় দেশের সার্বিক উন্নয়নে রাজস্ব বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। বিষয়টি নিয়ে অনেক বছর থেকে আলোচনা হলেও তেমন উন্নতি হয় নি। বরং ২০১৫ সালের তুলনায় কিছুটা কমে গত কয়েক বছর কর জিডিপির অনুপাত ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এ জন্য করনীতি এবং কর আহরণ কর্তৃপক্ষ আলাদা করার পুরনো আলোচনাও পুনরায় উঠে এসেছে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর আগামীতে সহজ শর্তের এবং কম সুদের বৈদেশিক ঋণ কমে যাবে। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর ঋণের সুদহার বেড়েছে। আগামীতে আরো বাড়বে । বাজেট সহায়তা নিলে বিভিন্ন ধরনের শর্ত বিষয় আসে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়ানো গেলে বাজেট সহায়তা নেওয়ার প্রয়োজন হয় না।

 

 

 

 

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার আরো বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি কিছুটা বাড়ায় এরই মধ্যে চলতি হিসাবে বেশ উন্নতি হয়েছে। তবে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি রয়েই গেছে। চলতি হিসাবে স্থিতিশীলতা রক্ষার পাশাপাশি আর্থিক ঘাটতি কাঠিয়ে উঠার তাগিদ দেওয়া হয়। সার্বিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর ওপর বাড়তি নজর দিতে বলা হয়েছে।

 

 

 

আইএমএফ গত বছরের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণপ্রস্তাব অনুমোদন করে। এরই মধ্যে দুই কিস্তিতে ১১৫ কোটি ৮২ লাখ ডলার ছাড় করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মে মাস নাগাদ তৃতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ডলার ছাড় করা হতে পারে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে পুরো অর্থ দেওয়ার কথা। এ ঋণ কর্মসূচির আওতায় বেশকিছু শর্ত রয়েছে। এর মধ্যে তৃতীয় কিস্তির জন্য গত ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত ৬টি পরিমাণগত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছাড়া পাঁচটি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে সরকার।

জনপ্রিয় সংবাদ

সানজিদা তন্বীর বিয়ের খবর জানালেন ফেসবুকে নিজের হৃদয়গ্রাহী পোস্টে

খেলাপি ঋণ কমানোর পদক্ষেপ জানতে চায় আইএমএফ

আপডেট সময় : ০৭:৫৮:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ ছাড়ে রিজার্ভের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য পূরণে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। খেলাপি ঋণ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক কি ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাটি। এ ছাড়া অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আয় বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে। পাশাপাশি বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে চলতি ও আগামী বাজেটে ব্যয় সংকোচন এবং ভর্তুকি কমিয়ে বাজেট ঘাটতি কম রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার ও সুদের হার বাস্তবায়নে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়েছে।

 

 

 

বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে চলতি ও আগামী বাজেটে ব্যয় সংকোচন এবং ভর্তুকি কমিয়ে বাজেট ঘাটতি কম রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মুদ্রাবিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো এবং বৈদেশিক লেনদেনে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি কাটিয়ে উঠার তাগিদ দিয়েছে আইএমএফ।

 

 

 

 

বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোর গড় খেলাপি ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পদক্ষেপেরে বিষয়ে জানতে চেয়েছে সংস্থাটি। এরই মধ্যে আইএমএফের ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণ ছাড়ে রিজার্ভের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বারবার ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে সুদের হার বাস্তবায়ন, রাজস্ব আয় বাড়ানো ও বাজার ভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় চালু করার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ।

 

 

 

 

তবে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মুদ্রা বিনিময় ও ক্রলিং পেগ বাস্তবায়ন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ায় ক্রলিং পেগ বাস্তবায়ন নিয়ে আপাতত কোনো পরামর্শ দেয়নি বাংলাদেশে অবস্থানরত আইএমএফের প্রতিনিধি দল।

 

 

 

 

বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আর্থিক খাত সংস্কার, খেলাপি ঋণ, সুদের হার বাস্তবায়ন, মুদ্রানীতি, মূল্যস্ফীতি, বিদেশি বাণিজ্যের ভারসাম্য ও আউটলুক, মুদ্রা বাজার ও তারল্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করেছে আইএমএফ। আইএমএফের মিশনের সঙ্গে গত বুধবার আমাদের বৈঠক শুরু হয়েছে। এখন সংস্থাটি আমাদের কাছ থেকে বিশ্লেষণ করার জন্য তথ্যগুলো সংগ্রহ করছে। এরপর হয়তো বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেবে।

 

 

 

বৈঠকে উপস্থিত অর্থ বিভাগের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, শুধু আইএমএফের শর্ত পূরণই নয় দেশের সার্বিক উন্নয়নে রাজস্ব বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। বিষয়টি নিয়ে অনেক বছর থেকে আলোচনা হলেও তেমন উন্নতি হয় নি। বরং ২০১৫ সালের তুলনায় কিছুটা কমে গত কয়েক বছর কর জিডিপির অনুপাত ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এ জন্য করনীতি এবং কর আহরণ কর্তৃপক্ষ আলাদা করার পুরনো আলোচনাও পুনরায় উঠে এসেছে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর আগামীতে সহজ শর্তের এবং কম সুদের বৈদেশিক ঋণ কমে যাবে। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর ঋণের সুদহার বেড়েছে। আগামীতে আরো বাড়বে । বাজেট সহায়তা নিলে বিভিন্ন ধরনের শর্ত বিষয় আসে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়ানো গেলে বাজেট সহায়তা নেওয়ার প্রয়োজন হয় না।

 

 

 

 

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার আরো বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি কিছুটা বাড়ায় এরই মধ্যে চলতি হিসাবে বেশ উন্নতি হয়েছে। তবে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি রয়েই গেছে। চলতি হিসাবে স্থিতিশীলতা রক্ষার পাশাপাশি আর্থিক ঘাটতি কাঠিয়ে উঠার তাগিদ দেওয়া হয়। সার্বিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর ওপর বাড়তি নজর দিতে বলা হয়েছে।

 

 

 

আইএমএফ গত বছরের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণপ্রস্তাব অনুমোদন করে। এরই মধ্যে দুই কিস্তিতে ১১৫ কোটি ৮২ লাখ ডলার ছাড় করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মে মাস নাগাদ তৃতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ডলার ছাড় করা হতে পারে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে পুরো অর্থ দেওয়ার কথা। এ ঋণ কর্মসূচির আওতায় বেশকিছু শর্ত রয়েছে। এর মধ্যে তৃতীয় কিস্তির জন্য গত ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত ৬টি পরিমাণগত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছাড়া পাঁচটি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে সরকার।