□ আগামী সংসদেই এই আইন পাসের অপেক্ষা
□ স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা আইন পাস হলে সকলের উপকার হবে
স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা আইন ২০২৩ পাস হলে সকলেরই উপকার হবে। এই আইনটি পাস হলে চিকিৎসকরা জরুরিভিত্তিতে রোগীর সেবা দিতে আতঙ্কিত থাকবে না। ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ এলেও তাৎক্ষণিক চিকিৎসককে গ্রেপ্তার না করে তদন্তসাপেক্ষে বিচার করা হবে। তাই এই আইন রোগী, চিকিৎসক, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সকলের উপকারে আসবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আইনটি আগামী সংসদে পাসের অপেক্ষায় রয়েছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় সূত্র জানায়। স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১৯৮২ সালে এই সংক্রান্ত একটি অর্ডিন্যান্স রয়েছে। সেটিকে বর্তমান সময়ের যুগোপোযোগী করে গড়ে তোলার জন্য নতুনভাবে স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা আইন ২০২৩ (খসড়া) প্রস্তুত করা হয়েছে। যা আগামী সংসদেই আইন হিসেবে পাস হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে সংশ্লিষ্টরা। এই আইনের খসড়ায় দেখা যায়, বেসরকারি হাসপাতালে দরিদ্র রোগীদের জন্য শতকরা ৩ ভাগ শয্যা এবং প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্য শতকরা একভাগ শয্যা বিনামূল্যে সংরক্ষণপূর্বক হ্রাসকৃত মূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং অন্যান্য চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সেবা প্রদান করিবে।
আইনে বলা হয়েছে, অন্য আইনে যাই থাকুক না কেন, এই আইনের বিধান লঙ্ঘন বিষয়ে মোবাইল কোর্ট আইনের মাধ্যমে এক বা একাধিক মোবাইল কোর্টকে ক্ষমতা প্রদান করিতে পারিবে। আইনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য সেবাপ্রদানকারী ব্যক্তির প্রতি হুমকি প্রদান, ভীতি প্রদান, দায়িত্ব পালনে বাধাদান, আঘাত করাসহ যেকোন ধরনের অনিষ্ট সাধন বা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কোনো সম্পত্তির ক্ষতিসাধন, বিনষ্ট, ধ্বংস বা উক্তরূপ সম্পত্তি স্বীয় দখলে গ্রহণ অপরাধ হিসেবে গণ্য হইবে এবং উক্ত অপরাধ আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য ও আপোষযোগ্য হইবে। আইনে বলা হয়েছে, যদি কোন স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী ব্যক্তি রোগীর বসার স্থান না রাখেন তাহলে তিনি ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে। আইনে বলা হয়েছে, কোন চিকিৎসক সরকারি হাসপাতালে সেবাদানকালে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিলে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। আইনে বলা হয়েছে, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কোন ব্যক্তিকে কোন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, প্রবেশ, তল্লাশি বা জব্দ করার জন্য বাধা প্রদান করিলে প্রতিষ্ঠান পরিচালনাকারীকে ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা ১ বছর কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবে। আইনে বলা হয়েছে, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কোন চিকিৎসকের ফি, রোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষার চার্জ বা মূল্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গ্রহণ বা প্রদান করিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অনধিক ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন, ব্যক্তির ক্ষেত্রে ১ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড আরোপ হইবে। আইনে বলা হয়েছে, হাসপাতালে চার্জ বা মূল্য ফি এর তালিকা ঠিকমতো টাঙানো না হলে ১ লাখ টাকা জরিমানা বা ৩০ দিন কারাদণ্ড দেয়া যাবে। আইনটি প্রসঙ্গে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)’র সাবেক মহাসচিব ডা. এমএ আজিজ বলেন, এই আইনটা বেশ কয়েকবছর ধরে আলোচনা হচ্ছে। এটা এখনও সংসদে উঠেনি। কখন উঠবে সেটাও জানিনা। এই আইনটা হলে খুব ভালো হয়। এটি হলে চিকিৎসক, রোগী, হাসপাতালের মালিক সবার উপকার হবে। যখন আইনটা নিয়ে কথা শুরু হয় তখন আমরা অনেক সেমিনার সিম্পোজিয়াম করেছি জেলা উপজেলার মানুষদের সঙ্গে। বিভিন্ন অনলাইনে দেওয়া হবে। সবার মতামত নেয়া হয়েছে। তিনটি গ্রুপের স্বার্থ ছিল। চিকিৎসকরা যদি মনে করে, রোগীরা যদি মনে করে এবং প্রতিষ্ঠানের মালিক যদি মনে করে একই আইনের আশ্রয় নিতে পারবে। এটা একটা ভালো আইন। এটা যদি তাড়াতাড়ি পাস হয় তাহলে চিকিৎসকদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি কমে যাবে। রোগীরাও সুন্দর সেবা পাবে এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা আরো গতিশীল হবে। চিকিৎসকদের জন্য ভালো হবে। বিভিন্ন জায়গার অপ্রীতিকর ঘটনাও কমে যাবে। এবং রোগীর স্বজনরাও চাইলে আইনের আশ্রয় নিতে পারবে। কোন অদৃশ্য কারণে এই আইনটা হচ্ছে না আমরা জানি না।
কিন্তু ডাক্তার সমাজ আমরা চাই দ্রুত আইনটা সংসদে পাস হোক। এটা শুধু চিকিৎসক সমাজের জন্য না রোগীদের জন্যও এটা উপহার হবে। এতে রোগী স্বার্থ সংরক্ষিত থাকবে। প্রতিষ্ঠানের মালিক সরকারি বেসরকারি যেই হোক তাদেরও স্বার্থ সুরক্ষা থাকবে এই আইনে। সুতরাং আমরা চাই যে, এই আইনটা দ্রুত পাস হোক। তিনি বলেন, ধরেন কোথাও ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হলে সঙ্গে সঙ্গে ফৌজদারি মামলায় চিকিৎসককে এরেস্ট করে। পরে দেখা গেল এটা প্রমাণিত হয়নি। এই যে ভীতিকর অবস্থায় থাকে চিকিৎসকরা। আমরা চাচ্ছিলাম এই সমস্ত কেসে যে অভিযোগ আসে সেটার তদন্ত হোক। এরেস্ট না করে স্পেসিফিক যে গাইডলাইন আছে তাদের অভিযোগ তদন্ত করা। তদন্তে যদি শাস্তির বিষয় আসে তখন সেটা দেয়া হবে। আইনের বিধানে যা শাস্তি হবে তা হোক আমাদের আপত্তি নেই কিন্তু একটা নিউজ হলেই ভুল চিকিৎসার অভিযোগে চিকিৎসককে এরেস্ট করলে এই জায়গাটা আমাদের চিকিৎসকদের জন্য কমফোর্টেবল না। এটার কারণে চিকিৎসকরাও জরুরি রোগীর চিকিৎসা দিতে অস্বস্তিতে ভোগে। এটা আল্টিমেটলি রোগীর জন্য, মানুষের জন্য ভালো হবে না।
চিকিৎসক ও রোগীদের সুরক্ষায় সংসদে স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন খুব শিগগিরই পাস করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি যেমন চিকিৎসকদের মন্ত্রী, তেমনি রোগীদেরও মন্ত্রী। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন পাস করতে সংসদে বিল উত্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, জীবন চলে গেলে আর ফিরে আসে না। যার যায় সে জানে। তাই রোগীর জীবন নিয়ে কাউকে কোন ধরনের ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসকরা ভালো কাজ করতে চান। তাই চিকিৎসকদের জন্য ভালো পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া হবে। তারা যদি ভালো পরিবেশ না পান, তাহলে চিকিৎসা সেবা কীভাবে দেবেন? তারা চিকিৎসা করছেন, আর মাথার ওপরে ছাদ ভেঙে পড়ছে, এমন হলে হবে না। চিকিৎসকদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, চিকিৎসকদের রোগী দেখার সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। চিকিৎসকদের ফি কত হবে, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনের মাধ্যমে সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আইনটি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, আইনটির বৈঠকে আমার সেভাবে থাকা হয়নি তাই এতে ঠিক কি কি আছে আমি সেভাবে এখন আর বলতে পারছিনা। তবে, আইনটি দ্রুত পাস হলে সবার জন্যই ভালো হবে। ভালোর জন্যই আইনটি করা হচ্ছে।


























