বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি হচ্ছে সকল শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জন্য উম্মুক্ত। এই লাইব্রেরিতে হয় প্রতিদিন শত শত শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পদচারণ। শিক্ষকরা আসে নিজেদের পড়াশোনা ও গবেষণার কাজে, নিতে পারে তথ্য সমৃদ্ধ হাজারো বইয়ের রেফারেন্স। শিক্ষার্থীরাও আসে নিরিবিলি মনোরম পরিবেশে পড়াশোনার জন্য। এখানে আছে প্রতিটি বিভাগের অগণিত লেখকের বই। যেখান থেকে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে বড় করে নিজেদের জ্ঞানের ঝুলি।
কিন্তু এই তীব্র তাপদাহের মাঝে দেশের স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় ও আয়তনে সর্ববৃহৎ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পাঠকক্ষগুলো ও শিক্ষকদের গবেষণার কক্ষগুলোতে ঘুরছেনা বৈদ্যুতিক পাখা এবং নেই পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা। এই তীব্র তাপদাহে শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে পোহাতে হচ্ছে গরমের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। এটা নিয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা যাচ্ছ নানা বিরূপ প্রতিক্রিয়া।
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির কলা, সমাজবিজ্ঞান ও বিজ্ঞান অনুষদের পাঠকক্ষগুলোতে বিদ্যুৎ চলে গেলে বন্ধ থাকে বৈদ্যুতিক পাখাগুলো। রাখছেনা আইপিএস, জেনারেটর বা অন্য কোন ব্যবস্থা। পাখার বাতাস ছাড়া তীব্র তাপদাহে শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিলে বসতে পারছেনা এক মিনিটও। বিদ্যুৎ থাকা অবস্থায়ও পাখাগুলো পুরাতন হওয়ায় বাতাস পাওয়া যাচ্ছে না পর্যাপ্ত।
জানতে চাইলে লাইব্রেরিতে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উদ্ধতন সহকারী কর্মচারী বলেন, এখানে যে আইপিএস গুলো দেওয়া আছে ওটা দিয়ে শুধু বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানো যাবে কিন্তু পাখা চালানোর মত ঐরকম শক্তিশালী না। আমরা লাইব্রেরিতে কর্মতর প্রশাসনকে অনেকবার দরখাস্ত দেওয়ার পরও কোন কাজ হচ্ছেনা।
এতবড় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে ইলেকট্রিক ওয়াটার ফিল্টার মাত্র দুইটি। একটা নিচতলায় কলা পাঠকক্ষের সামনে আরেকটা দোতলায় সমাজবিজ্ঞান পাঠ কক্ষের সামনে। কিন্তু নিচতলায় ইলেকট্রিক ওয়াটার ফিল্টার অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। ঠিক করার মত নেই কোন উদ্যোগ। ইলেকট্রিক ওয়াটার ফিল্টার ছাড়াও নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গায় সাধারণ ছোট ছোট ওয়াটার ফিল্টার দিলেও সেখানে থাকেনা পর্যাপ্ত পানি ফলে শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে এই তীব্র তাপদাহে পানির অভাবে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে পড়তে আসা ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো.আশ্রাফুল ইসলাম বলেন, লাইব্রেরীতে বিদ্যুৎ এর সমস্যা প্রকটভাবে লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশকে বিঘ্নিত করছে।লোডশেডিংয়ে আইপিএস দিয়ে শুধু বাতি জ্বলে, পাখা চলে না। এছড়াও পর্যাপ্ত ফিল্টার না থাকায় পানির স্বল্পতা রয়েছে। গরমে পড়াশোনায় মন বসে না অনেক শিক্ষার্থী লাইব্রেরীতে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলতেছে। এই তাপদাহে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে লাইব্রেরীতে আইপিএস ও পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা অতীব জরুরী।
এই নিয়ে আরেক শিক্ষার্থী মো.আতিক বলেন, এই তীব্র তাপদাহে যখন বিদ্যুৎ চলে যায় তখন লাইব্রেরিতে বসে শিক্ষার্থীদের পড়তে কষ্ট হয়। এতবড় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে নেই কোন আইপিএস বা শক্তিশালী কোন জেনারেটর এবং পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা। প্রশাসনের এই বিষয়গুলো নজর দেওয়া খুব প্রয়োজন। না হলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরিতে আসতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
গ্রন্থাগারিক প্রফেসর ড.মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন ছুটিতে থাকায় দায়িত্বে থাকা উপ-গ্রন্থাগারিক দিল রুকসানা বসুনীয়া বলেন, আমিতো এখানের মূল দায়িত্বে না তবুও আমি অফিসে জানিয়েছি বিদ্যুৎ চলে গেলে সবগুলো পাখা চালানো সম্ভব না হলেও অন্তত দুইটা পাখা যেন চালায় যাতে এই তীব্র তাপদাহ থেকে শিক্ষার্থীরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পায়। চাইলেতো আর সব কিছু একসাথে করা যায় না আমরা আস্তে আস্তে পুরো লাইব্রেরির কক্ষগুলোতে পাওয়ারফুল আইপিএস এর ব্যবস্থা করতেছি। পানির পর্যাপ্ত অভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে জানান, আমরা ছোট ছোট ওয়াটার ফিল্টার দিয়ে ম্যানেজ করতে না পারায় ইলেকট্রিক ওয়াটার ফিল্টার দিয়েছি যেটা অকেজো আছে সেটা শীঘ্রই ঠিক করা হবে।
এই সম্পর্কে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি প্রশাসনিক প্রধান মো.সাইফুর রহমান থেকে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা কাজ করি গ্রন্থাগারিক স্যারের সাথে সমন্বয় করে। পাখাগুলো পুরাতন হওয়ায় গত বছর ইন্জিনিয়ারিং অফিসে দরখাস্ত করে ছয়টি পাখার নতুন ক্যাপাসিটার লাগিয়েছি এইবছরও দরখাস্ত করেছি উনারা এসে ঠিক করে দিবে। যদি পুরাতন পাখা দিয়ে না হয় তাহলে আমরা আবার দরখাস্ত করবো তখন বিষয়টি তারা দেখবে। আর আমাদের লাইব্রেরি কমিটির মিটিংয়ে পাওয়াফুল অটো জেনারেটরের জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে আমরা ইন্জিনিয়ারিং অফিসে চিঠি দিয়েছি আসতে কিছুটা সময় লাগতে পারে সেটা আসলে আশা করি আর কোন সমস্যা হবে না। পানির ব্যবস্থা সম্পর্কে জানান ইলেকট্রিক ওয়াটার ফিল্টারগুলো ঠিক করলে প্রতি চার মাস অন্তর আবার ঠিক করাতে হয় প্রতিবার ঠিক করাতে তিন থেকে চার হাজার টাকা খরছ হচ্ছে তবে বাজেট না থাকায় সব কিছু করতে দেরি হচ্ছে।


























