◉এবার বিক্ষোভে অক্সফোর্ড-কেমব্রিজের শিক্ষার্থীরা
◉কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান বাতিল
ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে এনে তাঁবু ভেঙে দেওয়া, আটক, হুমকি, ছাত্রত্ব বাতিল- এতকিছুর পরও যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলছেই। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভে অনড় শিক্ষার্থীরা। দেশটির দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে বিক্ষোভ চলছে। মার্কিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে আরো ডজনখানিক দেশে। বিক্ষোভ দমনে বল প্রয়োগ করছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। এই আন্দোলন এখন আর শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতেই সীমাবদ্ধে নেই। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। এবার মার্কিন শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেছেন ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। কেউ স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানের জায়গা পরিবর্তন করছে, কেউ আয়োজনে পরিবর্তন আনছে, আবার কেউ কেউ অনুষ্ঠানই বাতিল করছে।
সর্বশেষ গত রোববার ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় বিক্ষোভকারীদের তাঁবু ভেঙে দিয়েছে পুলিশ। এর আগে গত শনিবার ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁবু ভেঙে দিয়ে অন্তত ২৫ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। একই দিন আর্ট ইনস্টিটিউট অব শিকাগোতে বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে অন্তত ৬৮ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছিল। গাজায় ইসরায়েলের হামলা বন্ধ এবং ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান ও ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে, এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিতে গত ১৭ এপ্রিল নিউইয়র্কে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে তাঁবু গেড়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ইসরায়েলকে যেভাবে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছে, তা বন্ধেরও দাবি জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরুর পর দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও তা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বার্তা সংস্থা এপির হিসাবে, ১৮ এপ্রিল থেকে অন্তত দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থীকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এবার ফিলিস্তিনিদের সংহতি জানিয়ে পথে নেমেছেন ব্রিটেনে ব্রিশ্বের প্রথম সারির দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। বিট্রিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সোমবার সকাল থেকে অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পিট রিভারস মিউজিয়ামের বাইরে অসংখ্য তাঁবু টানানো হয়েছে। যতই সময় গড়াচ্ছে, তাঁবুর সংখ্যা ততই বাড়ছে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংস কলেজের লনেও তাঁবু বসিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, তাদের এই বিক্ষোভের কারণ বিশ্ববিদ্যালয় গাজায় ফিলিস্তিনিদের গণহত্যায় ইসরাইলকে সমর্থন করছে। এদিকে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ আয়োজকরা এক্স-এ এক ভিডিও পোস্ট করে বলেছে, তাদের সদস্যরা তাঁবু, প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে লনের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় যখন গাজায় ইসরাওংেয়লর ফিলিস্তিনি গণহত্যাকে সমর্থন করছে, তখন আমরা অলস বসে থাকব না।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লনেও তাঁবু টানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে ছাত্রনেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানদের কাছে ছয় দফা দাবি সম্বলিত একটি তালিকা একটি বোর্ডে টানিয়ে দিয়েছেন। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে, ইসরায়েল গণহত্যা, বর্ণবাদ ও দখলদারিত্ব রুখতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের উৎস ও প্রাপ্ত অর্থের তথ্য প্রকাশ করতে হবে, বার্কলে’র সঙেু ব্যাংকিং সম্পর্কিত লেনদেন বন্ধ করতে হবে, গাজার শিক্ষা পুনর্গঠনে সহায়তা করতে হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা একটি বিবৃতিতে প্রকাশ করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, মানব সভ্যতার ইতিহাসে সহিংসতা, দখলদারিত্ব এবং ধ্বংসাত্মক ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে সক্রিয় আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্নাতক সমাপনীর মূল অনুষ্ঠান বাতিল করেছে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ১৫ মে স্নাতক সমাপনীর মূল অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। তবে গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা বাতিল করেছে। অর্থাৎ এবার স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে বড় কোনো আয়োজন থাকছে না। ছোট পরিসরে অনুষ্ঠান হবে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র বেন চ্যাং বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে বড় পরিসরে সমাপনী অনুষ্ঠান আয়োজনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। এমন পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মতো আমরাও গভীরভাবে হতাশ। অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি বিকল্প জায়গা খুঁজছিল।
তবে শিক্ষার্থী, তাঁদের পরিবারের সদস্য, অতিথিরাসহ ৫০ হাজারের বেশি মানুষকে ধারণের মতো কোনো জায়গার ব্যবস্থা করা যায়নি। এদিকে সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের প্রধান অনুষ্ঠান বাতিল করেছে। গত সোমবার কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, কীভাবে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা করা হবে, তা নিয়ে তারা ছাত্রনেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। ছোট পরিসরের অনুষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই ম্যানহাটানের ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হবে।


























